০৫:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুমিনের অন্তরে আল্লাহর দিদার লাভের আকাঙ্ক্ষা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
  • 39

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ‘কাররামনা বানী আদাম’ বলে তিনি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আর মানুষকে দুনিয়ার বুকে তাঁর খেলাফত ও প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন। বোঝা গেল, আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক যেমনি আবদিয়াত ও দাসত্বের, তেমনি প্রেম ও ভালোবাসা এবং ইশক ও মহব্বতের।
অতএব মানুষের অন্তরে সব কিছুর মায়া ও ভালোবাসার ঊর্ধ্বে থাকবে আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসাÑ এটাই যুক্তির দাবি ও বাস্তবতা। মানুষ যখন তার আল্লাহর যিকির স্মরণ করে তখন যিকিরের নূর তার কলব থেকে সব রকমের অস্থিরতা ও অশান্তি এবং ভয়-ভীতি ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে দেয়। কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন : জেনে রাখ! শুধু আল্লাহর যিকিরেই অন্তর শান্তি লাভ করে। (সূরা রা’দ : ২৮)।
শুধু তাঁর স্মরণেই যদি দিল এতো প্রশান্ত হয় তাহলে আখেরাতে যখন মাওলায়ে কারীমের দীদার লাভ হবে এবং তাঁর জামাল ও সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য নসীব হবে তখন ঈমানদারগণ কী পরিমাণ তৃপ্ত ও পরিতৃপ্ত হবে! কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেন : সেদিন অনেক চেহারা সজীব ও হাস্যোজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরা কিয়ামাহ : ২২-২৩)।
ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) বলেন : আখেরাতে আল্লাহর দীদার লাভ হবেÑ আমি এ আকীদা পোষণ করি। (শরহু উসূলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৮৩)। ইমাম আহমাদ (রাহ.) বলেন : যে বলে, আখিরাতে আল্লাহর দীদার হবে না সে কুফুরী করল। (আশ্ শারীআহ, আর্জুরী, বর্ণনা ৫৭৭)।
সুহাইব রুমী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা আমার কাছে আরো কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারাসমূহ উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় করে দেননি? আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করনেনি? রাসূল (সা.) বলেন, তখন তিনি পর্দা উঠিয়ে দেবেন (তখন তারা অনুভব করবে)। আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে প্রিয় কোনো জিনিস তাদের দেয়া হয়নি। (সহীহ মুসলিম : ১৮১)।
আল্লাহর দীদার অর্জনে সহায়ক আমল : ১. শিরক ও রিয়ামুক্ত আমল। আল্লাহ তা’আলা বলেন : সুতরাং যে নিজ রবের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ : ১১০)। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহ.)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : (আখিরাতে) যে নিজ খালিকের দর্শন লাভ করতে চায় সে যেন নেক আমল করে এবং সেটা মানুষের মাঝে প্রচার না করে। (শরহু উসূলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৯৫)।
২. ফজর ও আসর নামাযের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ। হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, শোনো! তোমরা অবশ্যই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে গিয়ে তোমরা পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা পার তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে নামায আদায়ে পিছপা হয়ো না। অর্থাৎ আসর ও ফজর। (সহীহ মুসলিম : ৬৩৩)।
৩. তাকওয়া অবলম্বন। উমর ইবনে আবদুল আযীয (রাহ.) তাঁর এক গভর্নরের কাছে প্রেরিত চিঠিতে লিখেন : আমি তোমাকে অসিয়ত করছিÑ তুমি আল্লাহকে ভয় করবে ও তাঁর আনুগত্য করবে। তাঁর আদেশকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। আল্লাহ তোমার ওপর যে দ্বীনী দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন এবং তোমাকে তাঁর কিতাবের যেটুকু হিফয করিয়েছেন তার প্রতি যতœবান থাকবে।
মনে রাখবে, তাকওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর ওলীগণ তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই তারা আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন। এর মাধ্যমেই তারা (আখিরাতে) নবীগণের সঙ্গ লাভ করবেন। এর মাধ্যমেই (আখিরাতে) তাদের চেহারা উজ্জ্বল থাকবে এবং তারা তাদের খালিকের দীদার লাভ করবেন। (আরদ আলাল জাহমিয়্যাহ, দারিমী, বর্ণনা ২০২)। ৪. সিয়াম পালন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়, আরেকটি খুশি আপন প্রতিপালকের সাথে মিলিত হওয়ার সময়। (সহীহ মুসলিম : ১৬৪)।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মুমিনের অন্তরে আল্লাহর দিদার লাভের আকাঙ্ক্ষা

Update Time : ০৩:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ‘কাররামনা বানী আদাম’ বলে তিনি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আর মানুষকে দুনিয়ার বুকে তাঁর খেলাফত ও প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন। বোঝা গেল, আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক যেমনি আবদিয়াত ও দাসত্বের, তেমনি প্রেম ও ভালোবাসা এবং ইশক ও মহব্বতের।
অতএব মানুষের অন্তরে সব কিছুর মায়া ও ভালোবাসার ঊর্ধ্বে থাকবে আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসাÑ এটাই যুক্তির দাবি ও বাস্তবতা। মানুষ যখন তার আল্লাহর যিকির স্মরণ করে তখন যিকিরের নূর তার কলব থেকে সব রকমের অস্থিরতা ও অশান্তি এবং ভয়-ভীতি ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে দেয়। কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন : জেনে রাখ! শুধু আল্লাহর যিকিরেই অন্তর শান্তি লাভ করে। (সূরা রা’দ : ২৮)।
শুধু তাঁর স্মরণেই যদি দিল এতো প্রশান্ত হয় তাহলে আখেরাতে যখন মাওলায়ে কারীমের দীদার লাভ হবে এবং তাঁর জামাল ও সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য নসীব হবে তখন ঈমানদারগণ কী পরিমাণ তৃপ্ত ও পরিতৃপ্ত হবে! কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেন : সেদিন অনেক চেহারা সজীব ও হাস্যোজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরা কিয়ামাহ : ২২-২৩)।
ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) বলেন : আখেরাতে আল্লাহর দীদার লাভ হবেÑ আমি এ আকীদা পোষণ করি। (শরহু উসূলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৮৩)। ইমাম আহমাদ (রাহ.) বলেন : যে বলে, আখিরাতে আল্লাহর দীদার হবে না সে কুফুরী করল। (আশ্ শারীআহ, আর্জুরী, বর্ণনা ৫৭৭)।
সুহাইব রুমী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা আমার কাছে আরো কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারাসমূহ উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় করে দেননি? আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে দাখিল করনেনি? রাসূল (সা.) বলেন, তখন তিনি পর্দা উঠিয়ে দেবেন (তখন তারা অনুভব করবে)। আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে প্রিয় কোনো জিনিস তাদের দেয়া হয়নি। (সহীহ মুসলিম : ১৮১)।
আল্লাহর দীদার অর্জনে সহায়ক আমল : ১. শিরক ও রিয়ামুক্ত আমল। আল্লাহ তা’আলা বলেন : সুতরাং যে নিজ রবের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ : ১১০)। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহ.)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : (আখিরাতে) যে নিজ খালিকের দর্শন লাভ করতে চায় সে যেন নেক আমল করে এবং সেটা মানুষের মাঝে প্রচার না করে। (শরহু উসূলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, লালাকাঈ, বর্ণনা ৮৯৫)।
২. ফজর ও আসর নামাযের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ। হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, শোনো! তোমরা অবশ্যই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে গিয়ে তোমরা পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা পার তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে নামায আদায়ে পিছপা হয়ো না। অর্থাৎ আসর ও ফজর। (সহীহ মুসলিম : ৬৩৩)।
৩. তাকওয়া অবলম্বন। উমর ইবনে আবদুল আযীয (রাহ.) তাঁর এক গভর্নরের কাছে প্রেরিত চিঠিতে লিখেন : আমি তোমাকে অসিয়ত করছিÑ তুমি আল্লাহকে ভয় করবে ও তাঁর আনুগত্য করবে। তাঁর আদেশকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। আল্লাহ তোমার ওপর যে দ্বীনী দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন এবং তোমাকে তাঁর কিতাবের যেটুকু হিফয করিয়েছেন তার প্রতি যতœবান থাকবে।
মনে রাখবে, তাকওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর ওলীগণ তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই তারা আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন। এর মাধ্যমেই তারা (আখিরাতে) নবীগণের সঙ্গ লাভ করবেন। এর মাধ্যমেই (আখিরাতে) তাদের চেহারা উজ্জ্বল থাকবে এবং তারা তাদের খালিকের দীদার লাভ করবেন। (আরদ আলাল জাহমিয়্যাহ, দারিমী, বর্ণনা ২০২)। ৪. সিয়াম পালন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়, আরেকটি খুশি আপন প্রতিপালকের সাথে মিলিত হওয়ার সময়। (সহীহ মুসলিম : ১৬৪)।