অপরাধের নানা শাখা বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। নিয়ন্ত্রণ নেই কোনো অপরাধের, তাই থেমে নেই অপরাধচক্রের কলাকৌশলও। কিশোর অপরাধ তারই মধ্যে একটি। দিনে দিনে বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ বেড়েই চলছে। ঢাকার পর চট্টগ্রামে ব্যাপক বিস্তার করেছে কিশোর অপরাধ। এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও নেই কোনো প্রতিকার।
কিশোর অপরাধ বেড়ে যাবার মূল কারন হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইন। কিশোর অপরাধ আইন ও ধারা অনুযায়ী বড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অনেকে । ছাড়া পেয়ে আবার যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধে। কিশোর অপরাধের শেষ দেখবে কোথায় বাংলাদেশ? নাকি মহামারি রূপে ছড়িয়ে যাবে সারা দেশে?
আমাদের জয়বিডি২৪.কম চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান নগরীর উত্তর হালিশহরের সড়াইপাড়া, নাথপাড়া, আব্বাসপাড়া, বি-ব্লক, এইচ-ব্লক ঘুরে বিভিন্ন সোর্স থেকে সংগৃহিত তথ্য থেকে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন।
তবে কিশোর অপরাধের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মাদক পরিবহন। আমাদের প্রতিনিধি সরজমিন ঘুরে জানতে পারেন যে, বিভিন্ন এলাকায় বখাটে কিশোরদের বেশীরভাগ এলাকার বাহিরের অর্থাৎ অন্য জেলার। এসব জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, যশোর সহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পরিবার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য পরিবার নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করছেন।
তবে ইদানিং মাদক পরিবহন ও সেবনের সাথে সাথে এসব কিশোররা মাদক ব্যবসাতে জড়িয়ে পরছে।
এদের মধ্যে উত্তর হালিশহর সড়াইপাড়ার রমজান, আলী, সবুজ, এইচ ব্লকের শাহাজাহান, বাচ্চু, নাথপাড়ার রঞ্জিত, আব্বাসপাড়ার রণি, আলমগীর, বি-ব্লকের কবিরের নাম জানা যায়। তারা প্রত্যেকে কেউ কিশোরগঞ্জ, কেউ যশোর কেউবা ময়মনসিংহ থেকে এসেছে। তাদের পরিবারের সবাই নিম্নবিত্ত এবং কায়িক পরিশ্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট।
জানা যায়, সড়াইপাড়ার ফুতু, হৃদয়, শাহেদুল ইসলাম ঐ এলাকায় থেকে নগরীর সাগড়িকা, অলংকার এলাকায় রমরমা মাদকের প্রসার চালিয়ে যাচ্ছে। এরা নগরীর আরও ৫~৬টি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করছে।
এ তিনজনের নামে পাহাড়তলী থানায় একাধিক মাদক, মারামারি, ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের পর কিছু দিন কিশোর শোধনাগারে থেকে আবার বের হয়ে এসে পুনরায় বেআইনী কাজে জড়িয়ে পরে। এদের ত্রাসে এলাকার কেউ কোন কথা বলতে পারে না।
এদিকে উত্তর হালিশহর বি-ব্লক ২৬ নং ওয়ার্ডের গোপনসূত্রে কিছু কিশোরের নাম শোনা যাচ্ছে, যারা জেলা থেকে জেলাতে মাদক পরিবহন করে বলে অভিয়োগ পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলার মোঃ ইকরামের ছেলে মোঃ কবির মাদক পরিবহন করে থাকে।
এলাকায় খুব বেশী নিজের পরিচিতি না করলেও এলাকায় কবির টেকনাফ ও কুমিল্লা সীমান্ত থেকে ইয়াবা ও গাঁজা পরিবহন করে নগরীর বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করেবেলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এলাকার কিছু রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের মদদে এরা মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছে বলে অভিয়োগ আছে।
মোঃ কবির (১৭), বি-ব্লকের শাহজাহান বেকারী সংলগ্ন স্থান থেকে পরিচালিত হয় ইয়াবা সাপ্লাই
কিশোর কবির বি-ব্লকের শাহজাহান বেকারী এলাকায় বসবাস করে থাকে। সেও তার সাথে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে ৪~৫ জনের একটি গ্রুপ যাদের কাজ হলো নগরীর বিভিন্ন কিশোর মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপ গুলোর মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি করা।
তবে নাথপাড়ার রঞ্জিতের নাম এখন বিশেষ ভাবে আলোচিত চট্টগ্রামের অপরাধজগতে। জানা যায় ১৬ বছরের রঞ্জিত একসময় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী স্টেশনে কুলির কাজ করতো। বিভিন্ন সময় রেলওয়ের জিনিসপত্র চুরির ঘটনায় আটকও হতে শোনা যায়। একটা সময় সে কিছু টোকাইকে নিয়ে গড়ে তোলে একটি ছিনতাই দল। নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলতে থাকে ছিনাতাই ঘটনা, এর মধ্যে গতবছর তাদের আক্রমনে এক পুলিশের কন্সটেবল ছুড়িঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়।
নগরীর নাথপাড়া এলাকার ত্রাশ রঞ্জিত মন্ডল (সামনে একা) ও তার নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং
মূলত: সে ঘটনার পরই রঞ্জিত গ্রুপের নাম আত্মপ্রকাশে আসে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অপরাধ করলেও বয়স ও উপযুক্ত প্রমানের অভাবে রঞ্জিত ও তার দলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে রঞ্জিত গ্রুপ উত্তর হালিশহরের নাথ পাড়ায় নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আব্বাসপাড়ার রণি ও আলমগীর নামে দুই কিশোরের দাপটে দিশেহারা এলাকাবাসী। এরা এলাকার
আব্বাসপাড়ার কিশোর মাদক ব্যবসায়ী রণি ও আলমগীর
আরও কিছু কিশোরদের নিয়ে চলছে নানান অপকর্ম। বিশেষ করে ব্বিাসপাড়া, বারনিঘাট এলাকায় এতের নিয়ন্ত্রনে চলছে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা।
ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সূক্রে জানা যায়, প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী উত্তর হালিশহরএের বিভিন্ন কিশোর গ্রুপগুলোর উপর। এর সত্যতা নিশ্চিৎ করে খুব শিঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
Leave a Reply