০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:১৫:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২
  • 14

লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছেই। কিছুদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে লাশ। সিরাজগঞ্জে শয়নকক্ষ থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। জয়পুরহাট শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুখে স্কচটেপ ও হাত বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। নাটোরে শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় গৃহবধূর লাশ। চুয়াডাঙ্গায় শোয়ার ঘরে স্ত্রীর ও বাথরমে পাওয়া যায় স্বামীর লাশ। খাগড়াছড়িতে রাস্তার পাশ থেকে তরুণের এবং শেরপুরে পুকুর থেকে কিশোরীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। গাজীপুরে পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করে ডোবা ও জঙ্গলে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট থেকে নবদম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। যদিও চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার ক্লু বের করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই নৃশংসতা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেশে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে আট বিভাগে ২০২১ সালে ১৬৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৫৩টি কম। তবে বাস্তব চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে অনেকেই বলছেন। এরআগে ২০২১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১ হাজার ৬৮২টি মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৯০টি কম। গত বছর যে ১৬৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৩৫টি হয়েছে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগে, ২৬টি মিরপুরে, ২৪টি গুলশানে, ১৯টি মতিঝিলে, ১৭টি করে উত্তরা ও তেজগাঁওয়ে, লালবাগে ১৫টি এবং রমনায় ১৩টি  বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

এদিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে ৫১ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ জুলাই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে ৬ বছরের শিশুর সংখ্যা ২১, ৬ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর, ১৯ শিশু ১৩ থেকে ১৮ বছরের। বাকি ৫ শিশুর বয়স জানা যায়নি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কারণে মোট ২৪৮টি শিশু মারা গেছে। এসব ঘটনায়, মোট ১১৪টি মামলা হয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে ১৩ জনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, এ ছাড়াও ৬০ শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে মারা যায় ৬৫ শিশু।

আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক নবদম্পতি লাশ উদ্ধার করা হয়। রাত ১১টার দিকে ওই ভবনের তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে নবদম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়।  তারা হলেন- নোমান (২৮) এবং তার স্ত্রী শামীমা (২২)। পুলিশ জানায়, স্বামীর লাশ সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, আর স্ত্রীর লাশ ছিল মেঝেতে। এটি হত্যার পর আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মুজিব পাটোয়ারী জানান, দারোয়ানের কাছে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কথা থাকলেও সারাদিন না দেয়ায় দারোয়ান রাতে তাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে আশেপাশের লোকজনকে ডেকে আনে। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ভেতরে ঢুকে দুজনকে মৃত অবস্থায় পায়। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুজনের মধ্যে নোমান ঝুলন্ত অবস্থায় এবং শামীমা মেঝেতে পড়ে ছিল। পুলিশ খবর নিয়ে জানতে পেরেছে নোমান ও শামীমার বাড়ি ভোলায়। এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে নানা সমস্যা চলছিল। এ কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর সবুজ বার্নার্ড ঘোষাল (৩১) নামে এক পোশাক শ্রমিকের সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার পানজোড়া এলাকা থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। সবুজ বার্নার্ড কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের ভাসানিয়া গ্রামের অমূল্য বার্নার্ড ঘোষালের ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি চেকার (কিউসি) পদে চাকরি করতেন। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে পূর্বাচল অ্যাপারেলস কারখানার দক্ষিণের ডোবায় কোমরের নিচের অংশ এবং উত্তরের জঙ্গলে দুই হাত পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সাড়ে ১১টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ, আঙুলবিহীন কাটা দুই হাত ও একটি জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করে। তল্লাশি চালিয়ে বিকালে তার বিচ্ছিন্ন মাথা, কোমর থেকে গলা পর্যন্ত ও এক পায়ের কাটা দুটি খ- বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ওইদিন রাতে বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোনও সন্ধান পাননি। পুলিশের ধারনা হত্যাকা-ের পর লাশ টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় শয়নকক্ষ থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাদের হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার (১ অক্টোবর)  বিকেলে উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মবুপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- গ্রামের সুলতান আলীর তৃতীয় স্ত্রী রওশন আরা (৩৫), তাদের বড় ছেলে জিহাদ (১০) এবং ছোট ছেলে ফাহিম (৩)। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম ম-ল, বেলকুচি থানার ওসি তাজমিলুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। বেলকুচি থানার ওসি তাজমিলুর রহমান জানান, একটু ফাঁকা জায়গায় একটি টিনের ঘরের মধ্যে লাশগুলো রয়েছে। ঘরটি বাইরে থেকে শিকল দিয়ে আটকানো ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহতের এক স্বজন খোঁজ নিতে এসে বিকট দুর্গন্ধ পায়। পরে শিকল খোলে লাশ দেখতে পায়।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাট শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুখে স্কচটেপ ও পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে চারটায় শহরের জানিয়ার বাগান মহল্লার রফিকুল আহসানের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ওই গৃহবধূ হলেন, সাজেদা ইসলাম ওরফে সাজু (৩৮)। তার স্বামী হাফিজুল ইসলাম সিলেটের একটি কাগজকলে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। মঙ্গলবার সকালে ছোট মেয়ে আরিফা পরীক্ষা দিতে যায়। বেলা দেড়টার পর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিরে বাসার দরজা খোলা পেয়ে সে সরাসরি নিজের কক্ষে চলে যায়। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মায়ের শয়নকক্ষে গিয়ে মুখে স্কচটেপ ও পিছ মোড়ানো হাত বাঁধা অবস্থায় মায়ে লাশ দেখতে পায়।

২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শোয়ার ঘর থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক জানান, গোপালপুর স্কুলপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে বিউটি বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। বিউটি ওই এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী। নিহতের ভাই মতিয়ার রহমান বলেন, গোপালপুর মুন্সিপাড়া গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে পিন্টু আলী নামে এক ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী তার বোনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হতো।

২৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় বাড়িতে এক দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে; যাদের দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে ধারণা পুলিশের। আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-ওই এলাকার নজির উদ্দিন (৭০) ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৬০)। ওসি বলেন, এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে শিলার বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আলমডাঙ্গা শহরের অন্য একটি এলাকায় স্বামীর সঙ্গে থাকেন। রাতে স্বামী স্ত্রী ছাড়া ওই বাড়িতে অন্য কেউ ছিলো না। পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন তারা।

২৩ জুলাই খাগড়াছড়ির গুইমারায় রাস্তার পাশ থেকে মো. তারেক হোসেন (২১) নামের এক তরুণের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাতিমুড়া এলাকা থেকে লাশ উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। ২৪ জুলাই, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পুকুর থেকে মীম (১৪) নামের এক কিশোরীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মীম ওই গ্রামের মমিন মিয়ার মেয়ে। সে বাকাকুড়া আদর্শগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মীম। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি স্বজনরা। পরে দুপুরে বাড়ির সামনের পুকুরে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশটি ভেসে উঠতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে

Update Time : ০১:১৫:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২

লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছেই। কিছুদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে লাশ। সিরাজগঞ্জে শয়নকক্ষ থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। জয়পুরহাট শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুখে স্কচটেপ ও হাত বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। নাটোরে শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় গৃহবধূর লাশ। চুয়াডাঙ্গায় শোয়ার ঘরে স্ত্রীর ও বাথরমে পাওয়া যায় স্বামীর লাশ। খাগড়াছড়িতে রাস্তার পাশ থেকে তরুণের এবং শেরপুরে পুকুর থেকে কিশোরীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। গাজীপুরে পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করে ডোবা ও জঙ্গলে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট থেকে নবদম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। যদিও চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার ক্লু বের করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই নৃশংসতা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেশে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে আট বিভাগে ২০২১ সালে ১৬৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৫৩টি কম। তবে বাস্তব চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে অনেকেই বলছেন। এরআগে ২০২১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১ হাজার ৬৮২টি মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৯০টি কম। গত বছর যে ১৬৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৩৫টি হয়েছে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগে, ২৬টি মিরপুরে, ২৪টি গুলশানে, ১৯টি মতিঝিলে, ১৭টি করে উত্তরা ও তেজগাঁওয়ে, লালবাগে ১৫টি এবং রমনায় ১৩টি  বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

এদিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে ৫১ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ জুলাই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে ৬ বছরের শিশুর সংখ্যা ২১, ৬ জনের বয়স সাত থেকে ১২ বছর, ১৯ শিশু ১৩ থেকে ১৮ বছরের। বাকি ৫ শিশুর বয়স জানা যায়নি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কারণে মোট ২৪৮টি শিশু মারা গেছে। এসব ঘটনায়, মোট ১১৪টি মামলা হয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে ১৩ জনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, এ ছাড়াও ৬০ শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে মারা যায় ৬৫ শিশু।

আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক নবদম্পতি লাশ উদ্ধার করা হয়। রাত ১১টার দিকে ওই ভবনের তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে নবদম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়।  তারা হলেন- নোমান (২৮) এবং তার স্ত্রী শামীমা (২২)। পুলিশ জানায়, স্বামীর লাশ সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, আর স্ত্রীর লাশ ছিল মেঝেতে। এটি হত্যার পর আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মুজিব পাটোয়ারী জানান, দারোয়ানের কাছে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কথা থাকলেও সারাদিন না দেয়ায় দারোয়ান রাতে তাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে আশেপাশের লোকজনকে ডেকে আনে। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ভেতরে ঢুকে দুজনকে মৃত অবস্থায় পায়। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুজনের মধ্যে নোমান ঝুলন্ত অবস্থায় এবং শামীমা মেঝেতে পড়ে ছিল। পুলিশ খবর নিয়ে জানতে পেরেছে নোমান ও শামীমার বাড়ি ভোলায়। এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে নানা সমস্যা চলছিল। এ কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর সবুজ বার্নার্ড ঘোষাল (৩১) নামে এক পোশাক শ্রমিকের সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার পানজোড়া এলাকা থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। সবুজ বার্নার্ড কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের ভাসানিয়া গ্রামের অমূল্য বার্নার্ড ঘোষালের ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি চেকার (কিউসি) পদে চাকরি করতেন। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে পূর্বাচল অ্যাপারেলস কারখানার দক্ষিণের ডোবায় কোমরের নিচের অংশ এবং উত্তরের জঙ্গলে দুই হাত পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সাড়ে ১১টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ, আঙুলবিহীন কাটা দুই হাত ও একটি জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করে। তল্লাশি চালিয়ে বিকালে তার বিচ্ছিন্ন মাথা, কোমর থেকে গলা পর্যন্ত ও এক পায়ের কাটা দুটি খ- বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ওইদিন রাতে বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোনও সন্ধান পাননি। পুলিশের ধারনা হত্যাকা-ের পর লাশ টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় শয়নকক্ষ থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাদের হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার (১ অক্টোবর)  বিকেলে উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মবুপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- গ্রামের সুলতান আলীর তৃতীয় স্ত্রী রওশন আরা (৩৫), তাদের বড় ছেলে জিহাদ (১০) এবং ছোট ছেলে ফাহিম (৩)। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম ম-ল, বেলকুচি থানার ওসি তাজমিলুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। বেলকুচি থানার ওসি তাজমিলুর রহমান জানান, একটু ফাঁকা জায়গায় একটি টিনের ঘরের মধ্যে লাশগুলো রয়েছে। ঘরটি বাইরে থেকে শিকল দিয়ে আটকানো ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহতের এক স্বজন খোঁজ নিতে এসে বিকট দুর্গন্ধ পায়। পরে শিকল খোলে লাশ দেখতে পায়।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাট শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুখে স্কচটেপ ও পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে চারটায় শহরের জানিয়ার বাগান মহল্লার রফিকুল আহসানের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ওই গৃহবধূ হলেন, সাজেদা ইসলাম ওরফে সাজু (৩৮)। তার স্বামী হাফিজুল ইসলাম সিলেটের একটি কাগজকলে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। মঙ্গলবার সকালে ছোট মেয়ে আরিফা পরীক্ষা দিতে যায়। বেলা দেড়টার পর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিরে বাসার দরজা খোলা পেয়ে সে সরাসরি নিজের কক্ষে চলে যায়। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মায়ের শয়নকক্ষে গিয়ে মুখে স্কচটেপ ও পিছ মোড়ানো হাত বাঁধা অবস্থায় মায়ে লাশ দেখতে পায়।

২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শোয়ার ঘর থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক জানান, গোপালপুর স্কুলপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে বিউটি বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। বিউটি ওই এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী। নিহতের ভাই মতিয়ার রহমান বলেন, গোপালপুর মুন্সিপাড়া গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে পিন্টু আলী নামে এক ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী তার বোনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হতো।

২৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় বাড়িতে এক দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে; যাদের দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে ধারণা পুলিশের। আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-ওই এলাকার নজির উদ্দিন (৭০) ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৬০)। ওসি বলেন, এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে শিলার বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আলমডাঙ্গা শহরের অন্য একটি এলাকায় স্বামীর সঙ্গে থাকেন। রাতে স্বামী স্ত্রী ছাড়া ওই বাড়িতে অন্য কেউ ছিলো না। পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন তারা।

২৩ জুলাই খাগড়াছড়ির গুইমারায় রাস্তার পাশ থেকে মো. তারেক হোসেন (২১) নামের এক তরুণের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাতিমুড়া এলাকা থেকে লাশ উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। ২৪ জুলাই, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পুকুর থেকে মীম (১৪) নামের এক কিশোরীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মীম ওই গ্রামের মমিন মিয়ার মেয়ে। সে বাকাকুড়া আদর্শগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মীম। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি স্বজনরা। পরে দুপুরে বাড়ির সামনের পুকুরে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশটি ভেসে উঠতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।