১০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে একই বাসায় মিলল ২ বোনের রক্তাক্ত মরদেহ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩
  • 27

রাজধানীর হাজারীবাগের কালীনগর এলাকার একটি বাসা থেকে দুই বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বোনের মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় ছিল। রোববার মধ্যরাতে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত দুই বোনের নাম জেসমিন আক্তার (৪৪) ও নাসরিন আক্তার (৩০)। জেসমিনের লাশ গলকাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। এ সময় নাসরিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বড় বোন জেসমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই বোনই ছিলেন অবিবাহিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

পুলিশ জানায়, রোববার মধ্যরাতে হাজারীবাগের কালীনগর এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে দুই বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

দু’জনের শরীরেই ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একজনকে হত্যা করে আরেকজন আত্মহত্যা করেছেন।
নিহতদের ভাই নাজির বলেন, আমার দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। একজন আট বছর আরেক জন তিন বছর ধরে। দুই বোনই শিক্ষিত। বোন ইডেনে পড়েছে। এই মানসিক সমস্যার কারণে আমি এবং আমার মা কোহিনূর বেগম তাদের একসঙ্গে থাকতাম। আমার বাবা অনেক আগে মারা যান। বোনরা কোনো চাকরি করতো না। অসুস্থতার কারণে বাসায় থাকতো। আমি নিজেও ওদের এই অবস্থা দেখে বিয়ে করিনি। যাতে আমার বোনদের কোনো সমস্যা না হয়। তিনভাই বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার একটি ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকান আছে। এখান থেকে যা আয় হয় সেটি দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলতো আমাদের। আমাদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে। ঘটনাটি হঠাৎ করে ঘটেছে। তখন আমি দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার যাওয়ার আগে বিশ মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলে। আমার মায়ের বয়স ৭০ বছর। মা এবং দুই বোন মিলে একরুমে ঘুমাতো। আর আমি পাশের রুমে ঘুমাতাম। ঘটনার আগে নাকি মা’কে পাশের রুমে গিয়ে বসতে বলে। সে তো বয়স্ক মানুষ যা বলেছে সেটি শুনে সে পাশের রুমে গিয়ে বসে ছিল। আগে কখনো তাদের মধ্যে এই ধরনের অস্থিরতা দেখিনি।

তিনি বলেন, আমার ছোট বোন নাসরিন কয়েকদিন ধরে জ্বরে অসুস্থ ছিল। এরপর থেকে তার মেজাজ একটু খিটখিটে দেখা যেতো। আমি বাসায় যখন যাই তখন ছোট বোনটা জীবিত ছিল। হাত-পা কাটা ছিল। এ সময় বলে, ‘আমি শয়তানকে শেষ করে দিয়েছি এখন আমি নিজে শেষ হবো। ৯৯৯ কল দিয়েছি একটু পর পুলিশ আসবে। আমাকে মেডিকেলে নিয়ে কোনো লাভ হবে না কারণ আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ এরপর পুলিশকে খবর দেই। দুই জনের মধ্যে কোনো ঝগড়া হতো না। বড় বোন জেসমিন আগে থেকেই তেমন কোনো কথা বলতো না। খেতে দিলে খেতো আর টিভি দেখতো। কিছুক্ষণ পরপর একলা একলা চিল্লাপাল্লা করে আবার থেমে যেতো। এমন ঘটনা ঘটাবে সেটি যদি আগে বুঝতাম তাহলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসতাম। এখন কি বলবো বোন দুইটা অসুস্থ থাকলেও চোখের সামনে থাকতো। যাদের জন্য আমি জীবনের সবকিছু করলাম। বাবা মারা যাওয়ার পরে সব দায়িত্ব ছিল আমার।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদ আলী বলেন, হাজারীবাগের ওই ফ্ল্যাটে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দুই বোন জেসমিন ও নাসরিন থাকতেন। ঘটনার সময় তাদের ভাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। তার ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ মা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাদের চিকিৎসাও চলছিল। তাদের বিয়ে হয়নি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একজনকে হত্যা করে আরেকজন আত্মহত্যা করেছেন। তবে তদন্তের আগে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। দুই বোনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ: আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজধানীতে একই বাসায় মিলল ২ বোনের রক্তাক্ত মরদেহ

Update Time : ০৩:২৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

রাজধানীর হাজারীবাগের কালীনগর এলাকার একটি বাসা থেকে দুই বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বোনের মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় ছিল। রোববার মধ্যরাতে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত দুই বোনের নাম জেসমিন আক্তার (৪৪) ও নাসরিন আক্তার (৩০)। জেসমিনের লাশ গলকাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। এ সময় নাসরিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বড় বোন জেসমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত দুই বোনই ছিলেন অবিবাহিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

পুলিশ জানায়, রোববার মধ্যরাতে হাজারীবাগের কালীনগর এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে দুই বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

দু’জনের শরীরেই ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একজনকে হত্যা করে আরেকজন আত্মহত্যা করেছেন।
নিহতদের ভাই নাজির বলেন, আমার দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। একজন আট বছর আরেক জন তিন বছর ধরে। দুই বোনই শিক্ষিত। বোন ইডেনে পড়েছে। এই মানসিক সমস্যার কারণে আমি এবং আমার মা কোহিনূর বেগম তাদের একসঙ্গে থাকতাম। আমার বাবা অনেক আগে মারা যান। বোনরা কোনো চাকরি করতো না। অসুস্থতার কারণে বাসায় থাকতো। আমি নিজেও ওদের এই অবস্থা দেখে বিয়ে করিনি। যাতে আমার বোনদের কোনো সমস্যা না হয়। তিনভাই বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার একটি ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকান আছে। এখান থেকে যা আয় হয় সেটি দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলতো আমাদের। আমাদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে। ঘটনাটি হঠাৎ করে ঘটেছে। তখন আমি দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার যাওয়ার আগে বিশ মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলে। আমার মায়ের বয়স ৭০ বছর। মা এবং দুই বোন মিলে একরুমে ঘুমাতো। আর আমি পাশের রুমে ঘুমাতাম। ঘটনার আগে নাকি মা’কে পাশের রুমে গিয়ে বসতে বলে। সে তো বয়স্ক মানুষ যা বলেছে সেটি শুনে সে পাশের রুমে গিয়ে বসে ছিল। আগে কখনো তাদের মধ্যে এই ধরনের অস্থিরতা দেখিনি।

তিনি বলেন, আমার ছোট বোন নাসরিন কয়েকদিন ধরে জ্বরে অসুস্থ ছিল। এরপর থেকে তার মেজাজ একটু খিটখিটে দেখা যেতো। আমি বাসায় যখন যাই তখন ছোট বোনটা জীবিত ছিল। হাত-পা কাটা ছিল। এ সময় বলে, ‘আমি শয়তানকে শেষ করে দিয়েছি এখন আমি নিজে শেষ হবো। ৯৯৯ কল দিয়েছি একটু পর পুলিশ আসবে। আমাকে মেডিকেলে নিয়ে কোনো লাভ হবে না কারণ আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ এরপর পুলিশকে খবর দেই। দুই জনের মধ্যে কোনো ঝগড়া হতো না। বড় বোন জেসমিন আগে থেকেই তেমন কোনো কথা বলতো না। খেতে দিলে খেতো আর টিভি দেখতো। কিছুক্ষণ পরপর একলা একলা চিল্লাপাল্লা করে আবার থেমে যেতো। এমন ঘটনা ঘটাবে সেটি যদি আগে বুঝতাম তাহলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসতাম। এখন কি বলবো বোন দুইটা অসুস্থ থাকলেও চোখের সামনে থাকতো। যাদের জন্য আমি জীবনের সবকিছু করলাম। বাবা মারা যাওয়ার পরে সব দায়িত্ব ছিল আমার।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদ আলী বলেন, হাজারীবাগের ওই ফ্ল্যাটে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দুই বোন জেসমিন ও নাসরিন থাকতেন। ঘটনার সময় তাদের ভাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। তার ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ মা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাদের চিকিৎসাও চলছিল। তাদের বিয়ে হয়নি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একজনকে হত্যা করে আরেকজন আত্মহত্যা করেছেন। তবে তদন্তের আগে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। দুই বোনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।