০১:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪, ৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক চট্টগ্রামেই ধুকছে পোশাকশিল্প

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
  • 49

জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও আন্তর্জাতিক পোশাক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক কারখানাগুলোর টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ডলার সংকট এবং অস্থিতিশীল আর্থিক পরিস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসানীতি’ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ’ বিশ্বের বড় বাজার হারানোর শঙ্কা। এর মধ্যে গ্যাসের তীব্য সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে বিদেশে বাজার হারানোর শঙ্কা, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি; অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং গ্যাস সংকট পোশাক শিল্পে যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শ্রমিকরা কোথাও না কোথাও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোন করছেন; বিদেশী কার্যাদেশ না পাওয়ায় একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডলারের অভাবে অনেকে আবার ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। চরম সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার। রাজনৈতিক কারণে ওই সব বাজার ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যেই গ্রাস-বিদ্যুতের ঘাটতি গোটা শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় অঞ্চল চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সভার এলাকার এই শিল্প কারখানার চালচিত্র, শ্রমিকদের অবস্থা এবং উদ্বেগ উৎকন্ঠার চিত্র তুলে ধরেছেন ইনবিলাব প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রামকে বলা হয় গার্মেন্টস শিল্পের আতুরঘর। সেই চট্টগ্রামেই ধুকছে দেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক খাত। বৈশি^ক মন্দায় ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি কমেছে। দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। তাতে লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কোন মতো টিকে আছে আরো কিছু কারখানা। নীরবে শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত আছে। মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে অনেক শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছেন। অনেকে পেশা বদল করছেন। কারখানা মালিকের কাছ থেকে পাওনা বুঝে নিয়ে সে টাকায় নিজে নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন অনেক শ্রমিক। ছাঁটাই কিংবা স্বেচ্ছায় শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর শুণ্য পদ পূরণ করা হচ্ছে না। পোশাক কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। নতুন কারখানা চালু তো দূরের কথা বিদ্যমান কারখানাও পুরো দমে চালু রাখা যাচ্ছে না।

কারখানার কিছু ইউনিট চালু রেখে কোনমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকেরা। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম থেকেই গোড়াপত্তন হয়েছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির। ‘দেশ গার্মেন্টস’ দিয়ে শুরু এই খাতের যাত্রা। এক সময় ছোট বড় মিলিয়ে আট শতাধিক কারখানা ছিল। ‘৯০-এর দশকেও দেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ৪০ শতাংশের বেশি হিস্যা ছিল চট্টগ্রামের। সেটি ধীরে ধীরে কমছে। বিজিএমইএর হিসাবে এখন চালু কারখানার সংখ্যা ৪০০। এরমধ্যে সরাসরি পণ্য রফতানি করে ২৯০টির মতো কারখানা। বাকিগুলো অন্যের হয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে পোশাক উৎপাদনের কাজ করে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক মাসে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। অনেক কারখানা মালিক নীরবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছেন। কোন কোন কারখানায় মাসের পর বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে কোন কোন এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মিছিল সমাবেশ হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা নীরবেই কারখানা ছেড়ে গেছেন। মালিক পক্ষ কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। কাজ নেই, বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়ার অবস্থাও নেই। এ অবস্থায় নিজ থেকে চলে গেছেন অনেক শ্রমিক।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বৈশি^ক মন্দায় পোশাক রফতানি কেবলিই কমছে। চলতি মাসের ২২ দিনে আগের মাসের তুলনায় চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ এবং ঢাকা থেকে রফতানি ৯ শতাংশ কমেছে। রফতানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে উৎপাদন ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। অনেক কারখানার একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক পেশা বদল করে চলে গেছে। অনেকে শহরের জীবন ছেড়ে গ্রামে চাষাবাদ করছে। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন। নতুন করে শ্রমিক নিয়োগও প্রায় বন্ধ। দেশে গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কারখানা মালিকেরা লোকশানের মুখে পড়েছেন। দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত মূল্য পরিশোধ করেও গ্যাস, বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনে গ্যাস সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহনসহ সব খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোশাক খাতে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেকে উৎপাদন কমিয়ে পোশাকে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। বিদেশে বাজার ধরে রাখার এই প্রচেষ্টা সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কঠিন সময় অতিক্রম করছে পোশাক খাত।

গাজীপুর থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুর জেলা একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। এ এলাকার টঙ্গী, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরে রয়েছে শত শত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে গার্মেন্টস মালিকরা সময়মতো বেতন পরিশোধ করতে না পারায় এখানে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। একাধিক প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সময় মতো কাঁচামাল সরবরাহ না হওয়া, গ্যাস সংকট, বিদেশি ভায়ার কমে যাওয়ায় তারা অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কারণে সময় মতো শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে এরই মধ্যে গাজীপুরের একাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বেতন না দিয়ে এসব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়ার কারণে বকেয়া বেতন আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন আদায়ের চেষ্টা করছে। গাজীপুরে গত দু’দিনে বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতনের দাবিতে পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে।

গত সোমবার গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বকেয়া বেতন, ভাতা, ঈদ বোনাস, অর্জিত ছুটি ও মাতৃকালীন সুবিধার টাকা পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। অপরদিকে সোমবার সকালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে মহাসড়কের উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

নারায়নগঞ্জ থেকে মোক্তার হোসেন মোল্লা জানান, দেশের পোশাক খাত শুধু সংকটেই নয়, মহাসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় আবেগের বশবতি হয়ে এই মূহূর্তে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এছাড়া, গত ২৩ অক্টোবর কালিয়াকৈর, মৌচাক ও তন্দ্রায় রাস্তায় নেমে ভাঙচুরকারীরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যে সকল দেশি-বিদেশিরা সহ্য করতে পারছেনা তাদের ইন্ধনে হয়েছে দাবি করে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রথমত পোশাশ শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে এক খারাপ পরিস্থিতিতে যাচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও ঢামাডোলের কারণে আমাদের সেল কম, অর্ডার কমের জটিলতা আছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই আছে। দেশীয় সম্যাসা যদি বলি যে ব্যাংকগুলো প্রচন্ডরকমভাবে সমস্যা চলছে। উপরন্ত সামনে নির্বাচন কেন্দ্রীক একটা অস্থিতিশীল ও শঙ্কার পরিবেশ আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যবসায়ী এবং বায়ারদেও দিকে থেকেও। এখন কিন্তু পিক সিজন ব্যবসায়ীদের জন্যে। এই পিক সিজনের সময়ও আমারা আমাদের ক্যাপাসিটির ৪০-৫০ ভাগ লেস ক্যাপাসিটিতে রান করতে হচ্ছে বিধায় ব্যাংকের সাথে সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বর্তমানে পোশাক শিল্প মহাসংকট চলছে। একজন শিল্পমালিক নিজের জীবনের ৩৬/৩৭ অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, আমি বলব বর্তমান সময় পোশাক খাত শুধু সংকটে নয়, মহাসংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। তারওপর শ্রমিকদের এই বেতন বৃদ্ধির দাবি কোন পরিস্তিতিতেই পরিবেশ বান্ধব নয়, উপযুক্ত সময় নয়। ২০১০ সালে ১২ বছর পরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৩ সালে আমরা সরকারকে চিঠি দিয়ে বেতন পূণনির্ধারণের কথা বলেছি। তারপর ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বাড়ানো হয়েছে। এবার আবার ২০২৩ সালে নির্বাচনের আগে দিয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠছে। তাহলে কি আমি এটাকে পলিটিক্যাল স্টান্ড হচ্ছেনা ? রাজনৈতিক বিবেচনায় যদি ইমোশনালি কোন বেতন নির্ধারণ করা হয়, তাহলে এটা শ্রমিকদের জন্যে মঙ্গলজনক তো নয়ই বরং এটা শ্রমিকদের জন্যে আরো খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আসবে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে শ্রমিকরা চাকুরি হারাবে, বেতন পাবেনা। এই শ্রমিকগুলো অন্য কোথাও অন্য চাকুরি পাবেনা ফলে তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করবে। তিনি বলেন চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর নারয়ণগঞ্জ টান বাজার প্রিমিয়ার ব্যাংকের টানবাজার শাখায় ৪০ ফেক্টরির মালিক ও ব্যাংকের এডিশনাল এমডি ও ম্যানেজারসহ হেড অফিসের লোকজনদের নিয়ে মিটিং করেন। যেখানে প্রত্যেকে নানা রকমের সংকটের মধ্যে আছে বলে জানান। তাই এই পরিস্থিতিতে বেতন বৃদ্ধি কোন অবস্থাতেই এই শিল্পের জন্যে সুফল বয়ে আনবে না।

পাশ^বর্তী দেশ ভারত ও চীনের উদাহরন টেনে তিনি বলেন, এ সকল দেশে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদন করেও এ্যাপারেলস বা পোশাক খাতে টিকতে পারছেনা। বেতন বৃদ্ধি করছে না। আর আমরা পোশাক শিল্পের সকল কাঁচামাল আমদানি করে কিভাবে বেতন আরো বৃদ্ধি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখব তা আমার বোধগম্য না।

গত ২৩ অক্টোবর কালিয়াকৈর, মৌচাক ও তন্দ্র বেল্টের মধ্যে রাস্তায় নামলো, ভাঙচুর হলো, কারা এরা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমিতো স্টেট বলব , প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিগত সময়ে দেশের অর্থনৈতিক যে সমৃদ্ধি হয়েছে বা হচ্ছে তা অনেক দেশী-বিদেশীরা সহ্য করতে না পেরে তাদের উন্ধনে এ সকল অস্থিতিশিল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের শানাক্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। এক কথায় বলব, এই মূহূর্তে শ্রমিকদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শিল্পের জন্যে আত্মঘাতি।

সাভার (ঢাকা) থেকে সেলিম আহমেদ জানান, ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার গার্মেন্টস সেক্টরে নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের আশংকার পায়তারা করছে ভুইফোর কিছু শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকদের নূন্যনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে শ্রমিকদের উস্কে দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু স্থানীয় শ্রমিক সংগঠন নূন্যতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি তূলে শ্রমিকদের একত্রিত করে প্রায়ই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছে। তবে এসব আন্দোলন নিয়ে কারখান ভেতরে কোন অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে বিদ্যমান বিভন্ন সংকট নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজী হয়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা শ্রমিকদের উস্কানি দেইনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পোশাক শ্রমিকদের কষ্টের কথা তুলে ধরে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা এবং বেসিক ৬৫% মজুরি ঘোষণার দাবি জানাই। এ ছাড়াও পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ, ৫ টি গ্রেডে মজুরি নির্ধারন, অভিজ্ঞ অপারেটরদের জন্য ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, জুনিয়র অপারেটরদের জন্য ২৬ হাজার টাকা এবং পাঁচ নাম্বার গ্রেটে হেলপারদের জন্য ২৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ, ন্যায্য মূল্যের রেশনিং চালু ও শিল্পাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশু নিরাপত্তা, শিক্ষা, ডে-কেয়ার সেন্টার ব্যবস্থা, আবাসন নির্মাণ, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্ব কল্যাণ ছুটি ছয় মাস আইন পাস করা, ইপিজেডকে শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার শ্রম আইন নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, শ্রম আদালতে দায়ের করা মামলা ১৫০ দিনের মধ্যে নিস্পত্তি, কর্মস্থলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছি।

একাধিক পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় শ্রমিকনেতারাই তাদের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির ডাক দেন। যেসকল শ্রমিকরা স্থানিয় শ্রমিক সংগঠনের সদস্য তাদের নিয়েই নেতারা আন্দোলন করছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক চট্টগ্রামেই ধুকছে পোশাকশিল্প

Update Time : ০১:৪৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও আন্তর্জাতিক পোশাক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক কারখানাগুলোর টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ডলার সংকট এবং অস্থিতিশীল আর্থিক পরিস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসানীতি’ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ’ বিশ্বের বড় বাজার হারানোর শঙ্কা। এর মধ্যে গ্যাসের তীব্য সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে বিদেশে বাজার হারানোর শঙ্কা, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি; অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং গ্যাস সংকট পোশাক শিল্পে যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শ্রমিকরা কোথাও না কোথাও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোন করছেন; বিদেশী কার্যাদেশ না পাওয়ায় একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডলারের অভাবে অনেকে আবার ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। চরম সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার। রাজনৈতিক কারণে ওই সব বাজার ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যেই গ্রাস-বিদ্যুতের ঘাটতি গোটা শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় অঞ্চল চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সভার এলাকার এই শিল্প কারখানার চালচিত্র, শ্রমিকদের অবস্থা এবং উদ্বেগ উৎকন্ঠার চিত্র তুলে ধরেছেন ইনবিলাব প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রামকে বলা হয় গার্মেন্টস শিল্পের আতুরঘর। সেই চট্টগ্রামেই ধুকছে দেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক খাত। বৈশি^ক মন্দায় ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি কমেছে। দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। তাতে লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কোন মতো টিকে আছে আরো কিছু কারখানা। নীরবে শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত আছে। মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে অনেক শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছেন। অনেকে পেশা বদল করছেন। কারখানা মালিকের কাছ থেকে পাওনা বুঝে নিয়ে সে টাকায় নিজে নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন অনেক শ্রমিক। ছাঁটাই কিংবা স্বেচ্ছায় শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর শুণ্য পদ পূরণ করা হচ্ছে না। পোশাক কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। নতুন কারখানা চালু তো দূরের কথা বিদ্যমান কারখানাও পুরো দমে চালু রাখা যাচ্ছে না।

কারখানার কিছু ইউনিট চালু রেখে কোনমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকেরা। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম থেকেই গোড়াপত্তন হয়েছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির। ‘দেশ গার্মেন্টস’ দিয়ে শুরু এই খাতের যাত্রা। এক সময় ছোট বড় মিলিয়ে আট শতাধিক কারখানা ছিল। ‘৯০-এর দশকেও দেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ৪০ শতাংশের বেশি হিস্যা ছিল চট্টগ্রামের। সেটি ধীরে ধীরে কমছে। বিজিএমইএর হিসাবে এখন চালু কারখানার সংখ্যা ৪০০। এরমধ্যে সরাসরি পণ্য রফতানি করে ২৯০টির মতো কারখানা। বাকিগুলো অন্যের হয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে পোশাক উৎপাদনের কাজ করে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক মাসে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। অনেক কারখানা মালিক নীরবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছেন। কোন কোন কারখানায় মাসের পর বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে কোন কোন এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মিছিল সমাবেশ হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা নীরবেই কারখানা ছেড়ে গেছেন। মালিক পক্ষ কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। কাজ নেই, বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়ার অবস্থাও নেই। এ অবস্থায় নিজ থেকে চলে গেছেন অনেক শ্রমিক।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বৈশি^ক মন্দায় পোশাক রফতানি কেবলিই কমছে। চলতি মাসের ২২ দিনে আগের মাসের তুলনায় চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ এবং ঢাকা থেকে রফতানি ৯ শতাংশ কমেছে। রফতানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে উৎপাদন ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। অনেক কারখানার একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক পেশা বদল করে চলে গেছে। অনেকে শহরের জীবন ছেড়ে গ্রামে চাষাবাদ করছে। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন। নতুন করে শ্রমিক নিয়োগও প্রায় বন্ধ। দেশে গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কারখানা মালিকেরা লোকশানের মুখে পড়েছেন। দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত মূল্য পরিশোধ করেও গ্যাস, বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনে গ্যাস সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ আর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহনসহ সব খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোশাক খাতে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেকে উৎপাদন কমিয়ে পোশাকে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। বিদেশে বাজার ধরে রাখার এই প্রচেষ্টা সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কঠিন সময় অতিক্রম করছে পোশাক খাত।

গাজীপুর থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুর জেলা একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। এ এলাকার টঙ্গী, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরে রয়েছে শত শত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে গার্মেন্টস মালিকরা সময়মতো বেতন পরিশোধ করতে না পারায় এখানে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। একাধিক প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সময় মতো কাঁচামাল সরবরাহ না হওয়া, গ্যাস সংকট, বিদেশি ভায়ার কমে যাওয়ায় তারা অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কারণে সময় মতো শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে এরই মধ্যে গাজীপুরের একাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বেতন না দিয়ে এসব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়ার কারণে বকেয়া বেতন আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন আদায়ের চেষ্টা করছে। গাজীপুরে গত দু’দিনে বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতনের দাবিতে পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে।

গত সোমবার গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বকেয়া বেতন, ভাতা, ঈদ বোনাস, অর্জিত ছুটি ও মাতৃকালীন সুবিধার টাকা পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। অপরদিকে সোমবার সকালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে মহাসড়কের উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

নারায়নগঞ্জ থেকে মোক্তার হোসেন মোল্লা জানান, দেশের পোশাক খাত শুধু সংকটেই নয়, মহাসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় আবেগের বশবতি হয়ে এই মূহূর্তে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এছাড়া, গত ২৩ অক্টোবর কালিয়াকৈর, মৌচাক ও তন্দ্রায় রাস্তায় নেমে ভাঙচুরকারীরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যে সকল দেশি-বিদেশিরা সহ্য করতে পারছেনা তাদের ইন্ধনে হয়েছে দাবি করে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রথমত পোশাশ শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে এক খারাপ পরিস্থিতিতে যাচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও ঢামাডোলের কারণে আমাদের সেল কম, অর্ডার কমের জটিলতা আছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই আছে। দেশীয় সম্যাসা যদি বলি যে ব্যাংকগুলো প্রচন্ডরকমভাবে সমস্যা চলছে। উপরন্ত সামনে নির্বাচন কেন্দ্রীক একটা অস্থিতিশীল ও শঙ্কার পরিবেশ আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যবসায়ী এবং বায়ারদেও দিকে থেকেও। এখন কিন্তু পিক সিজন ব্যবসায়ীদের জন্যে। এই পিক সিজনের সময়ও আমারা আমাদের ক্যাপাসিটির ৪০-৫০ ভাগ লেস ক্যাপাসিটিতে রান করতে হচ্ছে বিধায় ব্যাংকের সাথে সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বর্তমানে পোশাক শিল্প মহাসংকট চলছে। একজন শিল্পমালিক নিজের জীবনের ৩৬/৩৭ অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, আমি বলব বর্তমান সময় পোশাক খাত শুধু সংকটে নয়, মহাসংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। তারওপর শ্রমিকদের এই বেতন বৃদ্ধির দাবি কোন পরিস্তিতিতেই পরিবেশ বান্ধব নয়, উপযুক্ত সময় নয়। ২০১০ সালে ১২ বছর পরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৩ সালে আমরা সরকারকে চিঠি দিয়ে বেতন পূণনির্ধারণের কথা বলেছি। তারপর ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বাড়ানো হয়েছে। এবার আবার ২০২৩ সালে নির্বাচনের আগে দিয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠছে। তাহলে কি আমি এটাকে পলিটিক্যাল স্টান্ড হচ্ছেনা ? রাজনৈতিক বিবেচনায় যদি ইমোশনালি কোন বেতন নির্ধারণ করা হয়, তাহলে এটা শ্রমিকদের জন্যে মঙ্গলজনক তো নয়ই বরং এটা শ্রমিকদের জন্যে আরো খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আসবে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে শ্রমিকরা চাকুরি হারাবে, বেতন পাবেনা। এই শ্রমিকগুলো অন্য কোথাও অন্য চাকুরি পাবেনা ফলে তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করবে। তিনি বলেন চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর নারয়ণগঞ্জ টান বাজার প্রিমিয়ার ব্যাংকের টানবাজার শাখায় ৪০ ফেক্টরির মালিক ও ব্যাংকের এডিশনাল এমডি ও ম্যানেজারসহ হেড অফিসের লোকজনদের নিয়ে মিটিং করেন। যেখানে প্রত্যেকে নানা রকমের সংকটের মধ্যে আছে বলে জানান। তাই এই পরিস্থিতিতে বেতন বৃদ্ধি কোন অবস্থাতেই এই শিল্পের জন্যে সুফল বয়ে আনবে না।

পাশ^বর্তী দেশ ভারত ও চীনের উদাহরন টেনে তিনি বলেন, এ সকল দেশে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদন করেও এ্যাপারেলস বা পোশাক খাতে টিকতে পারছেনা। বেতন বৃদ্ধি করছে না। আর আমরা পোশাক শিল্পের সকল কাঁচামাল আমদানি করে কিভাবে বেতন আরো বৃদ্ধি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখব তা আমার বোধগম্য না।

গত ২৩ অক্টোবর কালিয়াকৈর, মৌচাক ও তন্দ্র বেল্টের মধ্যে রাস্তায় নামলো, ভাঙচুর হলো, কারা এরা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমিতো স্টেট বলব , প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিগত সময়ে দেশের অর্থনৈতিক যে সমৃদ্ধি হয়েছে বা হচ্ছে তা অনেক দেশী-বিদেশীরা সহ্য করতে না পেরে তাদের উন্ধনে এ সকল অস্থিতিশিল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের শানাক্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। এক কথায় বলব, এই মূহূর্তে শ্রমিকদের বেতন-মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শিল্পের জন্যে আত্মঘাতি।

সাভার (ঢাকা) থেকে সেলিম আহমেদ জানান, ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার গার্মেন্টস সেক্টরে নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের আশংকার পায়তারা করছে ভুইফোর কিছু শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকদের নূন্যনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে শ্রমিকদের উস্কে দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু স্থানীয় শ্রমিক সংগঠন নূন্যতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি তূলে শ্রমিকদের একত্রিত করে প্রায়ই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছে। তবে এসব আন্দোলন নিয়ে কারখান ভেতরে কোন অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে বিদ্যমান বিভন্ন সংকট নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজী হয়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা শ্রমিকদের উস্কানি দেইনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পোশাক শ্রমিকদের কষ্টের কথা তুলে ধরে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা এবং বেসিক ৬৫% মজুরি ঘোষণার দাবি জানাই। এ ছাড়াও পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ, ৫ টি গ্রেডে মজুরি নির্ধারন, অভিজ্ঞ অপারেটরদের জন্য ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, জুনিয়র অপারেটরদের জন্য ২৬ হাজার টাকা এবং পাঁচ নাম্বার গ্রেটে হেলপারদের জন্য ২৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ, ন্যায্য মূল্যের রেশনিং চালু ও শিল্পাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশু নিরাপত্তা, শিক্ষা, ডে-কেয়ার সেন্টার ব্যবস্থা, আবাসন নির্মাণ, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্ব কল্যাণ ছুটি ছয় মাস আইন পাস করা, ইপিজেডকে শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার শ্রম আইন নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, শ্রম আদালতে দায়ের করা মামলা ১৫০ দিনের মধ্যে নিস্পত্তি, কর্মস্থলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছি।

একাধিক পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় শ্রমিকনেতারাই তাদের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির ডাক দেন। যেসকল শ্রমিকরা স্থানিয় শ্রমিক সংগঠনের সদস্য তাদের নিয়েই নেতারা আন্দোলন করছে।