০২:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশা ও অবৈধ হকার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেবে চসিক

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
  • 25

চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারি রিকশা এবং রাস্তা ও ফুটপাত থেকে অবৈধ হকার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
আজ রোববার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চসিকের বর্তমান পরিষদের ৩৩তম সাধারণ সভায় বক্তারা দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ এবং অবৈধ হকারদের দৌরাত্ম রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে এ মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে হকার প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘হকার সবসময় ছিল। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ফুটপাতগুলো টাইলস করে দেয়া হয়েছে তাদের ব্যবসা করার জন্য। আর রাস্তায় ভ্যানগাড়ির কারণে প্রচ- জ্যাম হচ্ছে। হকারদের জন্য শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলেও ঢুকতে পারে না। অনেকে হকার পুনর্বাসনের কথা বলেন। পূর্বে হকার পুনর্বাসন কোন সুফল বয়ে আনেনি। এর আগে হকারদের জহুর হকার মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ পেয়েই অনেকে দোকান বিক্রি করে আবারো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেন। এ কারণে, শুক্র ও শনিবার আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার পক্ষে আমি।’
পে-পার্কিং বিষয়ে মেয়র বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বেশ কিছু বড় মার্কেট কাস্টমারদের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেয়ায় গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করায় প্রচ- জ্যাম হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলব এসব মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে। ইতোমধ্যে ডিসি ট্রাফিক আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা ঠিক করেছি চসিক ও ট্রাফিক বিভাগ একসাথে পে-পার্কিং বাস্তবায়নে কাজ করবে এবং নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর ব্রেক অত শক্তিশালী নয়, আবার ছোট বাচ্চারাও চালায় অনেক সময়। সাথে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয়ের বিষয়টি তো আছেই। এজন্য সোলার রিকশা চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অযান্ত্রিক যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম চলছে, এটি শেষ হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আইনি কোন বাধা আছে কী না তা আমরা পর্যালোচনা করে অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলে যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। চসিকে পেষণে কর্মরত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী পিএসসি বিএল ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিবেগের নিয়ন্ত্রক সেন্সর ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
চসিক, জনপ্রতিনিধি এবং ট্রাফিক বিভাগ সমি¥লিতভাবে কাজ করে হকারদের অবৈধ দখল ও ব্যাটারি রিকশা কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে সিএমপির এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এবং জিইসি খুবই জনবহুল এলাকা। এ দু’টি এলাকায় ফুটওভার ব্িরজসহ শহরজুড়ে জেব্রা-ক্রসিং বাড়াতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
সুপেয় জলের ব্যবস্থা করতে ওয়াসার প্রতি আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় লবণাক্ততার জন্য পানি খাওয়া দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছে না। আবার একসময়ের সুপেয় পানির উৎস পুকুর-দিঘিগুলোও নেই। এ জন্য ওয়াসাকে জলাবায়ু পরিবর্তন ও নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি কাউন্সিলরদের বলব, আপনাদের এলাকায় যেসব নালা-কালভার্টের নিচে ওয়াসা-টিএন্ডটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপ গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সেগুলো অপসারণ করুন।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, সুপেয় জল সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। চসিকের সাধারণ সভায় উথ্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। অনুমতি ছাড়া সড়ক কর্তনকারী ঠিকাদার ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইনের লিকেজ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরাতন কিছু ওয়াসার পাইপ নালা ও বক্স কালভার্টের  ভিতর ছিল সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশা নিধনের পর্যাপ্ত মেডিসিন ক্রয় করা হয়েছে, বাড়ানো হচ্ছে জনবল। শুষ্ক মৌসুমে ৬ মাস কাজ করলে আগামী বছর ভাল ফল পাওয়া যাবে।
স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ: আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশা ও অবৈধ হকার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেবে চসিক

Update Time : ১০:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারি রিকশা এবং রাস্তা ও ফুটপাত থেকে অবৈধ হকার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
আজ রোববার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চসিকের বর্তমান পরিষদের ৩৩তম সাধারণ সভায় বক্তারা দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ এবং অবৈধ হকারদের দৌরাত্ম রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে এ মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে হকার প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘হকার সবসময় ছিল। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ফুটপাতগুলো টাইলস করে দেয়া হয়েছে তাদের ব্যবসা করার জন্য। আর রাস্তায় ভ্যানগাড়ির কারণে প্রচ- জ্যাম হচ্ছে। হকারদের জন্য শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলেও ঢুকতে পারে না। অনেকে হকার পুনর্বাসনের কথা বলেন। পূর্বে হকার পুনর্বাসন কোন সুফল বয়ে আনেনি। এর আগে হকারদের জহুর হকার মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ পেয়েই অনেকে দোকান বিক্রি করে আবারো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেন। এ কারণে, শুক্র ও শনিবার আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার পক্ষে আমি।’
পে-পার্কিং বিষয়ে মেয়র বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বেশ কিছু বড় মার্কেট কাস্টমারদের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেয়ায় গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করায় প্রচ- জ্যাম হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলব এসব মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে। ইতোমধ্যে ডিসি ট্রাফিক আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা ঠিক করেছি চসিক ও ট্রাফিক বিভাগ একসাথে পে-পার্কিং বাস্তবায়নে কাজ করবে এবং নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর ব্রেক অত শক্তিশালী নয়, আবার ছোট বাচ্চারাও চালায় অনেক সময়। সাথে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয়ের বিষয়টি তো আছেই। এজন্য সোলার রিকশা চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অযান্ত্রিক যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম চলছে, এটি শেষ হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আইনি কোন বাধা আছে কী না তা আমরা পর্যালোচনা করে অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলে যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। চসিকে পেষণে কর্মরত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী পিএসসি বিএল ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিবেগের নিয়ন্ত্রক সেন্সর ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
চসিক, জনপ্রতিনিধি এবং ট্রাফিক বিভাগ সমি¥লিতভাবে কাজ করে হকারদের অবৈধ দখল ও ব্যাটারি রিকশা কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে সিএমপির এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এবং জিইসি খুবই জনবহুল এলাকা। এ দু’টি এলাকায় ফুটওভার ব্িরজসহ শহরজুড়ে জেব্রা-ক্রসিং বাড়াতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
সুপেয় জলের ব্যবস্থা করতে ওয়াসার প্রতি আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় লবণাক্ততার জন্য পানি খাওয়া দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছে না। আবার একসময়ের সুপেয় পানির উৎস পুকুর-দিঘিগুলোও নেই। এ জন্য ওয়াসাকে জলাবায়ু পরিবর্তন ও নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি কাউন্সিলরদের বলব, আপনাদের এলাকায় যেসব নালা-কালভার্টের নিচে ওয়াসা-টিএন্ডটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপ গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সেগুলো অপসারণ করুন।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, সুপেয় জল সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। চসিকের সাধারণ সভায় উথ্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। অনুমতি ছাড়া সড়ক কর্তনকারী ঠিকাদার ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইনের লিকেজ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরাতন কিছু ওয়াসার পাইপ নালা ও বক্স কালভার্টের  ভিতর ছিল সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশা নিধনের পর্যাপ্ত মেডিসিন ক্রয় করা হয়েছে, বাড়ানো হচ্ছে জনবল। শুষ্ক মৌসুমে ৬ মাস কাজ করলে আগামী বছর ভাল ফল পাওয়া যাবে।
স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।