১২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শেষ তাণ্ডব শুরু করেছে :রিজভী।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
  • 26

পতন্মুখ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শেষ তাণ্ডব শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদ হিসেবে যদি জনগনের পালস বুঝতে পারতেন, তাহলে বিরোধী দলের ওপর দমনের মাত্রা এত তীব্র করতে পারতেন না। এক নায়ক ফ্যাসিস্ট শাসকরা অন্ধত্ব আর মোহে হারিয়ে ফেলেন তার দৃষ্টিপথ। আমি অবৈধ শাসকগোষ্ঠির সংশ্লিষ্ট সকলকে বলতে চাই ‘সূর্যের আলো হাত দিয়ে বলো রুধীতে পারে কি কেউ, আমাদের ধরে ঠেকানো যাবে না গণ-জোয়ারের ঢেউ।’

সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি ঘোষিত ও গণতন্ত্রকামী সমমনা দলগুলো সমর্থিত অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণে দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও ভয়ের যুদ্ধকালীন উদ্বিগ্নতা বিরাজমান। জনসমাজে এক ভয়াল আতঙ্ক যেন ছায়াঘন নীরব নিস্তব্ধতায় ঝিমিয়ে থাকা পরিবেশ বিরাজ করছে। গ্রেফতার ও বাড়ি-ঘরে হামলা চলছে নিরন্তরভাবে। বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতারের আতঙ্ক, নিরুদ্দেশ হওয়া সন্তানের জন্য মা-বাবার আহাজারি, হামলা ভাঙচুর হওয়ার আক্রমণের ভয় ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় উৎপীড়নের নানামুখী পৈশাচিক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানকে গতকাল বেলা ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে মহাখালী ওয়ারলেস গেইট থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেলেও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না, মুগদা থানার ৭নং ওয়ার্ডের যুবদলের সদস্য সচিব মো. মাসুদ রানার খোঁজ নেই গত কয়েকদিন ধরে। গোয়েন্দা পুলিশ এদের তুলে নিয়ে যায় কিন্তু বারবার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা অস্বীকার করছে। এটা এক ভয়ানক অস্বীকৃতি পুলিশের। এভাবে অসংখ্য ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি, সাবেক এমপি, জনপ্রতিনিধিদের গুম করা হয়েছে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে।’

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের, সুষ্ঠু ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে থাকলেই আওয়ামী সরকারের শুরু হয় গুম ও ক্রসফায়ারের উৎসবের ঋতু। তারা শুরু করে আগুন নিয়ে খেলা। বাসে আগুন দিয়ে দায় চাপায় গণতন্ত্রের স্বপক্ষে বিপ্লবী কর্মীদের নামে। যার অসংখ্য ভুরি ভুরি প্রমাণ এখন মানুষের হাতে হাতে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই সমাবেশে জমায়েত হয়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে সমাবেশকে ভণ্ডুল করে দেয়। বিএনপির একজন নেতা পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ সহিংসতায় পুলিশের একজন সদস্য নিহত হন।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সন্ত্রাসীদেরকে আড়াল করে দলের মহাসচিবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের ওপর দায় চাপিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণের ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী শাসকগোষ্ঠি পুরনো কৌশল অবলম্বন করে গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে ও দলদাস সাংবাদিককে হাতের মুঠোয় নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে ঢালাও অপ-প্রচার করে যাচ্ছে। আর বিএনপি’র নেতাদেরকে গ্রেফতার করে প্রায় অসংখ্য নেতা-কর্মীকে ঘর ছাড়া করে তারা পরিকল্পিত নাশকতা করে বিএনপি’র বিরুদ্ধে একতরফা দায় চাপাচ্ছে।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবেই ক্ষুদ্রত্বের অপরাধের কলুষতার চর্চা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে না। কর্তৃত্ববাদের প্রতিভুদের টিকে থাকতে হয় মিথ্যা প্রচারের দ্বারা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট আওয়ামী অফিসের সামনে। গত ৪ তারিখে রাত সাড়ে নয়টায় দক্ষিণ গেটের সামনে বাসে আগুন লাগানো হয়। সেখানে অনেকেই দেখেছে যারা বাসে আগুন দিয়েছে তারা দৌড়ে আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতরে ঢুকেছে। নানা ঘটনায় এ ধরনের দৃশ্য প্রত্যহ দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র নাগরিক স্বাধীনতাসহ গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কালিমা লেপন করার জন্য আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নি সন্ত্রাসের কাহিনী সাজানো হচ্ছে। কারণ, মিডিয়া তাদের হাতে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের হাতে, আদালত তাদের কব্জায় সেই কারণে সহজেই বিএনপির কোনো নেতার নামে পরিকল্পিত নাশসকতার ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা অত্যন্ত সহজ। কারণ গ্রেফতারের ইন্সট্রুমেন্ট সরকারের হাতে।’

কারাগারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জ কারাগারে যাদের আটক রাখা হয়েছে সে সমস্ত নেতা-কর্মীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারছে না। কারাগারের ভিতর প্রতিটি ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের ঠেসে ঠেসে রাখা হয়েছে। যে ওয়ার্ডে ১০-১৫ জনের বেশি বন্দিকে রাখা যায় না সেখানে একটি ওয়ার্ডে ৪০-৫০ জন বন্দিকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনে রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাহিরে বের হতে দেয় না। আওয়ামী ফ্যাসিজমের ছোবলে বন্দিদেরও নিস্তার নেই।’

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার লেলিহান ক্রোধের চিতায় গণতন্ত্রকামী মানুষকে পুড়িয়ে ফেলার আয়োজন চলছে। আওয়ামী লীগ অতীতে গণতন্ত্রের পক্ষে গলাবাজি করে একদলীয় ডিটেকটরশিপ বাকশাল কায়েম করেছিল। গত ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে হীন উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। জনগণের ভোটের অধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে নিষ্ঠুর ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। জনগণ তাদের একতরফা নির্বাচনের পায়তারার সুযোগ আর দিবে না। দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিদ্ব্যজ্জনস বদরুদ্দীন ওমর সম্প্রতি একটি লেখায় বলেছিলেন “নির্বাচন বর্জন যথেষ্ট নয়, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।” এবার আবারও একদলীয় নির্বাচনের কোনো তামাশা হতে দেবো না দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান গণবিরোধী সরকার সবকিছু ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ভারসাম্য, সার্বভৌমের শক্তি, বৈদেশিক সম্পর্ক। এখন গোটা জাতির প্রত্যেকটি নাগরিকের উপর লক্ষাধিক টাকার উপরে ঋণ রয়েছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চলছে তীব্র মাত্রায়। প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার রিজার্ভ কমছে। মুদ্রাস্ফীতি ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি। চিরকালীন সস্তা খাদ্যপণ্য কিনতেও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে ১২ দেশে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সারাদেশকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে। মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা হয় সরকারি দলের সংসদ সদস্য। সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগের বেপরোয়া যৌথ বাহিনীর দাপট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরকে জুড়ে দিয়ে যৌথভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। শিক্ষাকে সর্বজনীন না করে দলীয়করণ করে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যর্থাথই বলেছেন “শিক্ষার সর্বনাশের জন্য রাষ্ট্র দায়ী”।’

রিজভী বলেন, ‘সবকিছু নষ্ট, ধ্বংস করেছে সরকার, ভোট, নির্বাচন থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু শব্দটি অসহ্য মনে হয় শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনা পছন্দ করেন বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতি। সহজেই তিনি ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে পারেন। তিনি রাষ্ট্র ও সমাজকে “পলায়ন ও নির্বাাসনের আবহের মধ্যে রাখতে ভালোবাসেন” ইনক্লোসিভ বা সবাইকে নিয়ে স্বচ্ছ রাজনীতি তার কাছে অসহনীয় মনে হয়। নৌকা প্রতিক পেলেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়। ভোটারদের বাধাঁ দেওয়া, নৌকা মার্কার পক্ষে প্রকাশ্যে সীল মারা, প্রশাসনের কারচুপিতে প্রকাশ্য অংশহগ্রহণ বর্তমান আওয়ামী নির্বাচনের সংস্কৃতি। এই রকম অনাচারমূলক অবস্থা দেশকে মহা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশকে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক ভয়ানক পাঁকের মধ্যে।’

Tag :
About Author Information

৫০০ টাকার জন্য শিশুকে ব্রহ্মপুত্রে ফেলে দিলো কিশোর।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শেষ তাণ্ডব শুরু করেছে :রিজভী।

Update Time : ০৯:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

পতন্মুখ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শেষ তাণ্ডব শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদ হিসেবে যদি জনগনের পালস বুঝতে পারতেন, তাহলে বিরোধী দলের ওপর দমনের মাত্রা এত তীব্র করতে পারতেন না। এক নায়ক ফ্যাসিস্ট শাসকরা অন্ধত্ব আর মোহে হারিয়ে ফেলেন তার দৃষ্টিপথ। আমি অবৈধ শাসকগোষ্ঠির সংশ্লিষ্ট সকলকে বলতে চাই ‘সূর্যের আলো হাত দিয়ে বলো রুধীতে পারে কি কেউ, আমাদের ধরে ঠেকানো যাবে না গণ-জোয়ারের ঢেউ।’

সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি ঘোষিত ও গণতন্ত্রকামী সমমনা দলগুলো সমর্থিত অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণে দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও ভয়ের যুদ্ধকালীন উদ্বিগ্নতা বিরাজমান। জনসমাজে এক ভয়াল আতঙ্ক যেন ছায়াঘন নীরব নিস্তব্ধতায় ঝিমিয়ে থাকা পরিবেশ বিরাজ করছে। গ্রেফতার ও বাড়ি-ঘরে হামলা চলছে নিরন্তরভাবে। বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতারের আতঙ্ক, নিরুদ্দেশ হওয়া সন্তানের জন্য মা-বাবার আহাজারি, হামলা ভাঙচুর হওয়ার আক্রমণের ভয় ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় উৎপীড়নের নানামুখী পৈশাচিক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানকে গতকাল বেলা ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে মহাখালী ওয়ারলেস গেইট থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেলেও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না, মুগদা থানার ৭নং ওয়ার্ডের যুবদলের সদস্য সচিব মো. মাসুদ রানার খোঁজ নেই গত কয়েকদিন ধরে। গোয়েন্দা পুলিশ এদের তুলে নিয়ে যায় কিন্তু বারবার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা অস্বীকার করছে। এটা এক ভয়ানক অস্বীকৃতি পুলিশের। এভাবে অসংখ্য ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি, সাবেক এমপি, জনপ্রতিনিধিদের গুম করা হয়েছে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে।’

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের, সুষ্ঠু ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে থাকলেই আওয়ামী সরকারের শুরু হয় গুম ও ক্রসফায়ারের উৎসবের ঋতু। তারা শুরু করে আগুন নিয়ে খেলা। বাসে আগুন দিয়ে দায় চাপায় গণতন্ত্রের স্বপক্ষে বিপ্লবী কর্মীদের নামে। যার অসংখ্য ভুরি ভুরি প্রমাণ এখন মানুষের হাতে হাতে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই সমাবেশে জমায়েত হয়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে সমাবেশকে ভণ্ডুল করে দেয়। বিএনপির একজন নেতা পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ সহিংসতায় পুলিশের একজন সদস্য নিহত হন।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সন্ত্রাসীদেরকে আড়াল করে দলের মহাসচিবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের ওপর দায় চাপিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণের ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী শাসকগোষ্ঠি পুরনো কৌশল অবলম্বন করে গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে ও দলদাস সাংবাদিককে হাতের মুঠোয় নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে ঢালাও অপ-প্রচার করে যাচ্ছে। আর বিএনপি’র নেতাদেরকে গ্রেফতার করে প্রায় অসংখ্য নেতা-কর্মীকে ঘর ছাড়া করে তারা পরিকল্পিত নাশকতা করে বিএনপি’র বিরুদ্ধে একতরফা দায় চাপাচ্ছে।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবেই ক্ষুদ্রত্বের অপরাধের কলুষতার চর্চা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে না। কর্তৃত্ববাদের প্রতিভুদের টিকে থাকতে হয় মিথ্যা প্রচারের দ্বারা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট আওয়ামী অফিসের সামনে। গত ৪ তারিখে রাত সাড়ে নয়টায় দক্ষিণ গেটের সামনে বাসে আগুন লাগানো হয়। সেখানে অনেকেই দেখেছে যারা বাসে আগুন দিয়েছে তারা দৌড়ে আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতরে ঢুকেছে। নানা ঘটনায় এ ধরনের দৃশ্য প্রত্যহ দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র নাগরিক স্বাধীনতাসহ গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কালিমা লেপন করার জন্য আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নি সন্ত্রাসের কাহিনী সাজানো হচ্ছে। কারণ, মিডিয়া তাদের হাতে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের হাতে, আদালত তাদের কব্জায় সেই কারণে সহজেই বিএনপির কোনো নেতার নামে পরিকল্পিত নাশসকতার ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা অত্যন্ত সহজ। কারণ গ্রেফতারের ইন্সট্রুমেন্ট সরকারের হাতে।’

কারাগারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জ কারাগারে যাদের আটক রাখা হয়েছে সে সমস্ত নেতা-কর্মীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারছে না। কারাগারের ভিতর প্রতিটি ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের ঠেসে ঠেসে রাখা হয়েছে। যে ওয়ার্ডে ১০-১৫ জনের বেশি বন্দিকে রাখা যায় না সেখানে একটি ওয়ার্ডে ৪০-৫০ জন বন্দিকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনে রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাহিরে বের হতে দেয় না। আওয়ামী ফ্যাসিজমের ছোবলে বন্দিদেরও নিস্তার নেই।’

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার লেলিহান ক্রোধের চিতায় গণতন্ত্রকামী মানুষকে পুড়িয়ে ফেলার আয়োজন চলছে। আওয়ামী লীগ অতীতে গণতন্ত্রের পক্ষে গলাবাজি করে একদলীয় ডিটেকটরশিপ বাকশাল কায়েম করেছিল। গত ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে হীন উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। জনগণের ভোটের অধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে নিষ্ঠুর ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। জনগণ তাদের একতরফা নির্বাচনের পায়তারার সুযোগ আর দিবে না। দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিদ্ব্যজ্জনস বদরুদ্দীন ওমর সম্প্রতি একটি লেখায় বলেছিলেন “নির্বাচন বর্জন যথেষ্ট নয়, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।” এবার আবারও একদলীয় নির্বাচনের কোনো তামাশা হতে দেবো না দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান গণবিরোধী সরকার সবকিছু ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ভারসাম্য, সার্বভৌমের শক্তি, বৈদেশিক সম্পর্ক। এখন গোটা জাতির প্রত্যেকটি নাগরিকের উপর লক্ষাধিক টাকার উপরে ঋণ রয়েছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চলছে তীব্র মাত্রায়। প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার রিজার্ভ কমছে। মুদ্রাস্ফীতি ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি। চিরকালীন সস্তা খাদ্যপণ্য কিনতেও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে ১২ দেশে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সারাদেশকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে। মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা হয় সরকারি দলের সংসদ সদস্য। সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগের বেপরোয়া যৌথ বাহিনীর দাপট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরকে জুড়ে দিয়ে যৌথভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। শিক্ষাকে সর্বজনীন না করে দলীয়করণ করে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যর্থাথই বলেছেন “শিক্ষার সর্বনাশের জন্য রাষ্ট্র দায়ী”।’

রিজভী বলেন, ‘সবকিছু নষ্ট, ধ্বংস করেছে সরকার, ভোট, নির্বাচন থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু শব্দটি অসহ্য মনে হয় শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনা পছন্দ করেন বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতি। সহজেই তিনি ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে পারেন। তিনি রাষ্ট্র ও সমাজকে “পলায়ন ও নির্বাাসনের আবহের মধ্যে রাখতে ভালোবাসেন” ইনক্লোসিভ বা সবাইকে নিয়ে স্বচ্ছ রাজনীতি তার কাছে অসহনীয় মনে হয়। নৌকা প্রতিক পেলেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়। ভোটারদের বাধাঁ দেওয়া, নৌকা মার্কার পক্ষে প্রকাশ্যে সীল মারা, প্রশাসনের কারচুপিতে প্রকাশ্য অংশহগ্রহণ বর্তমান আওয়ামী নির্বাচনের সংস্কৃতি। এই রকম অনাচারমূলক অবস্থা দেশকে মহা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশকে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক ভয়ানক পাঁকের মধ্যে।’