১১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল সনদে শিক্ষকতা করছেন কুড়িগ্রামের কয়েকজন, ধরা পড়েও বহাল তবিয়তে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:২২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 36

জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য জেলা শিক্ষা অফিসারের দাবি, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে জাল সনদ দিয়ে কম্পিউটারের শিক্ষকতা শুরু করেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা। তার এমপিও হয় ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। এছাড়াও উপজেলার কাশিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের শিক্ষক আসমা খাতুনের সনদটিও জাল। ২০১৩ সালে যোগদান করলেও এমপিও হয়নি তার।

গত বছর ২৪ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য পত্র দেয় (স্মারক নং-০৫.৪৭.৪৯০০.০১৫.০২.০১৪.২১-১৩৩)। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। নিবন্ধন সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেয়া হয় (স্মারক নং-০৫.৪৭.৪৯১৮.০০০.০২.০৬১.২১.৬৮)।

জাল সনদভুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদরারাসার শরীরচর্চার সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদেরও। তিনিও এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন। তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে আছেন জেলার অনেক শিক্ষক। জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে কোনো চিঠি বা নির্দেশনা আসেনি।

এছাড়াও ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে এখনও চাকরি করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন অনেকে। নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজে গ্রন্থাগার পদে এই সনদে চাকরি করছেন হালিমা খাতুন। সনদ অনুযায়ী তিনি ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ২০২১ সালে ১০৫ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদের তালিকা প্রকাশ করে (স্মারক নং- ডিআইএ/এনটিআরসিএ/ রাজশাহী/৯৭৭ তারিখ-২৯সেপ্টেম্বর ২০১৬)। এনটিআরসিএর সহকারি পরিচালক (শিক্ষাতত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ৪, ৬ থেকে ২১, ২৫, ২৬, ২৮ থেকে ৩২, ৩৫ থেকে ৪২, ৪৪ থেকে ৬৪ এবং ৬৭ থেকে ১০৫ নং তালিকাভুক্ত ব্যক্তিগণ জাল সনদের আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিতে জেলার শিক্ষা অফিসার নির্দেশ দেয়া হয় ওই চিঠিতে।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসরিন সুলতানার দাবি, তিনি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯ সালে এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এগুলো জাল কিনা সে বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে এখন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারছেন তার সনদটি সঠিক নয়। তবে অন্য অভিযুক্ত শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, তার সনদটি সঠিক। কীভাবে জাল সনদের তালিকায় নাম এসেছে সেটি তার জানা নেই।

তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন, স্বীকার করে সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অডিট হলেও জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। এছাড়াও বেতন ভাতা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত চিঠি না আসায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলছেন, জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসিএ থেকে সনদ যাচাইয়ের কোনো নিদের্শনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও তালিকভুক্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুপারিশ করে কোনো চিঠিও পাননি বলে জানালেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।

Tag :
About Author Information

৫০০ টাকার জন্য শিশুকে ব্রহ্মপুত্রে ফেলে দিলো কিশোর।

জাল সনদে শিক্ষকতা করছেন কুড়িগ্রামের কয়েকজন, ধরা পড়েও বহাল তবিয়তে

Update Time : ১০:২২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য জেলা শিক্ষা অফিসারের দাবি, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে জাল সনদ দিয়ে কম্পিউটারের শিক্ষকতা শুরু করেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা। তার এমপিও হয় ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। এছাড়াও উপজেলার কাশিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের শিক্ষক আসমা খাতুনের সনদটিও জাল। ২০১৩ সালে যোগদান করলেও এমপিও হয়নি তার।

গত বছর ২৪ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য পত্র দেয় (স্মারক নং-০৫.৪৭.৪৯০০.০১৫.০২.০১৪.২১-১৩৩)। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। নিবন্ধন সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেয়া হয় (স্মারক নং-০৫.৪৭.৪৯১৮.০০০.০২.০৬১.২১.৬৮)।

জাল সনদভুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদরারাসার শরীরচর্চার সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদেরও। তিনিও এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন। তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে আছেন জেলার অনেক শিক্ষক। জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে কোনো চিঠি বা নির্দেশনা আসেনি।

এছাড়াও ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে এখনও চাকরি করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন অনেকে। নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজে গ্রন্থাগার পদে এই সনদে চাকরি করছেন হালিমা খাতুন। সনদ অনুযায়ী তিনি ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ২০২১ সালে ১০৫ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদের তালিকা প্রকাশ করে (স্মারক নং- ডিআইএ/এনটিআরসিএ/ রাজশাহী/৯৭৭ তারিখ-২৯সেপ্টেম্বর ২০১৬)। এনটিআরসিএর সহকারি পরিচালক (শিক্ষাতত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ৪, ৬ থেকে ২১, ২৫, ২৬, ২৮ থেকে ৩২, ৩৫ থেকে ৪২, ৪৪ থেকে ৬৪ এবং ৬৭ থেকে ১০৫ নং তালিকাভুক্ত ব্যক্তিগণ জাল সনদের আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিতে জেলার শিক্ষা অফিসার নির্দেশ দেয়া হয় ওই চিঠিতে।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসরিন সুলতানার দাবি, তিনি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯ সালে এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এগুলো জাল কিনা সে বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে এখন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারছেন তার সনদটি সঠিক নয়। তবে অন্য অভিযুক্ত শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, তার সনদটি সঠিক। কীভাবে জাল সনদের তালিকায় নাম এসেছে সেটি তার জানা নেই।

তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন, স্বীকার করে সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অডিট হলেও জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। এছাড়াও বেতন ভাতা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত চিঠি না আসায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলছেন, জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসিএ থেকে সনদ যাচাইয়ের কোনো নিদের্শনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও তালিকভুক্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুপারিশ করে কোনো চিঠিও পাননি বলে জানালেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।