১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একনজরে তিন দিনের অবরোধ থেকে কী পেলো বিএনপি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
  • 18

বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে সামনে ‘পরিস্থিতি বুঝে আরো শক্ত কর্মসূচির দিতে যেতে চাইছে।

দলটির নেতারা প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করছেন ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা ও সংগঠকদের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিল, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল ছিল ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কম’।

দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সারা দেশে সাঁড়াশি আক্রমণ চলছে। এর মধ্যেও মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া এই তিনদিন বের হয়নি। এর মানেই হলো মানুষ অবরোধকে সমর্থন দিয়েছে। এটিই আমাদের অর্জন।’

এদিকে অবরোধের মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও সাফজয়ী অধিনায়ক ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে বলে তথ্য দিয়েছে বিএনপি।

দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরেও মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ আমাদের কর্মসূচিতে দেখছি। সামনেও পরিস্থিতির আলাকে দাবি আদায়ের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আমরা সফল করবো।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন হরতাল পালন শেষে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে যা রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়ার কথা।

তিন দিনের অবরোধ থেকে কী পেলো বিএনপি
মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে দলের মধ্যেই অনেকে মূল্যায়ন করছেন যে এ অবরোধ কেমন হলো কিংবা এ থেকে দল কী অর্জন করল।

দলের নেতারা বলছেন ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও দেশজুড়ে যে যেখানেই পেরেছে রাস্তায় নেমেছে অবরোধ সফলের জন্য। এটিই তাদের বড় অর্জন এবং তাদের কাছে মনে হয়েছে সাধারণ মানুষও খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি বলেই ঢাকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ ছিল না।

সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে আর পুলিশের সাথে মিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাস্তায় অবস্থান করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকাতেই মানুষজন রাস্তায় নামেনি খুব একটা। এটাই বিএনপির সাফল্য।

তার মতে বিএনপিকে সরকার বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতই আক্রমণের মুখে রাখুক না কেন, এই অবরোধই বার্তা দিয়েছে মানুষ ভোটের অধিকারের দাবিতে বিএনপির সাথে একমত।

সেলিমা রহমান আরো বলেন, তাই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলো সফলের মাধ্যমেই জনগণ সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবে।

অর্থাৎ বিএনপি নেতারা মনে করছেন অবরোধের মতো কর্মসূচি সফল করতে তাদের নেতারা রাস্তায় খুব একটা নামতে না পারলেও তিনদিন যে সড়ক মহাসড়কে চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিল, এটাই দলটির বড় ‘সাফল্য’।

২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর থেকেই ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের খবর আসছে।

ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে ‘অতি মাত্রায় শক্তিপ্রয়োগ’ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারকে আহ্বানও জানিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো ‘একটি একতরফা’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখেই সরকার এমন মারমুখী হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা। সে কারণে বিএনপিও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বুঝে আরো ‘শক্ত কর্মসূচির’ দিকে এগুতে চাইছে।

কায়সার কামাল বলেন, অবরোধের সমর্থনে মানুষ রাস্তায় আসছে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ জোরালো হচ্ছে। সবাই ভোটের অধিকার চায়। সামনে পরিস্থিতিই করণীয় নির্ধারণ করে দিবে। আমাদের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি জনগণই সফল করবে। নিপীড়ন করে সরকার কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

শক্ত কর্মসূচি আসলে কী

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন তফসিল ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপির কর্মসূচির মাত্রা তত বাড়বে।

যদিও প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের পর ১০-১২ নভেম্বরের দিকে সর্বাত্মক অবরোধের দিকে যাওয়ার চিন্তা করেছিল দলটির নীতিনির্ধারকরা।

কিন্তু ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মীর্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের ব্যাপক গ্রেফতারের পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে সরাসরি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

আগামী রবি ও সোমবারের অবরোধ শেষে ৭ নভেম্বর দলটির নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এরপর আবারো হরতাল-অবরোধের মাধ্যমেই আগামী সপ্তাহ পার করবে দলটি।

এ সপ্তাহে সরকারের অবস্থান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ কিংবা এর পরের সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানালে ওই দিনকে ঘিরে এবং এর আগে ও পরে কী ধরণের কর্মসূচি পালন করা যায় তা নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকার রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে গুম, খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে, কিন্তু আমাদেরকেও লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে। এর তো কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা আসলে জনগণই ঠিক করবে তারা কীভাবে দাবি আদায় করবে!’

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তা হলো তারা মনে করেন তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আরো জোরালো করে তুলতে পারবেন এবং এর জের ধরে সরকার ব্যাপকভাবে চাপের মুখে পড়বে বলেই তাদের ধারণা।

ইসির আমন্ত্রণে ক্ষোভ
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আর ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।

এখনকার বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চলতি মাসের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করলে এই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে গণ্য হবে।

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে।

এই নির্বাচনটি যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক দিন ধরেই সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে।

এজন্য তারা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ চাইলেও বিএনপির সাথে সংলাপে বসার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিএনপিও বলেছেন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেই কেবল তারা সংলাপে আগ্রহী।

এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চূড়ান্ত সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার কমিশনের একজন কর্মচারী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এসেছেন। তবে কার্যালয়টি বন্ধ থাকায় এবং সেখানে দলের কেউ না থাকায় চিঠিটি তালাবদ্ধ গেটের ভেতরেই রেখে এসেছেন তিনি।

একে তামাশা হিসেবে আখ্যায়িত করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তালিকা অনুসারে শুধু নির্বাচনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে মাত্র। তার সাথে আবার কীসের সংলাপ?’

সূত্র : বিবিসি

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ: আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একনজরে তিন দিনের অবরোধ থেকে কী পেলো বিএনপি

Update Time : ১১:১২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে সামনে ‘পরিস্থিতি বুঝে আরো শক্ত কর্মসূচির দিতে যেতে চাইছে।

দলটির নেতারা প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ তারা মনে করছেন ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা ও সংগঠকদের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিল, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল ছিল ‘তুলনামূলকভাবে অনেক কম’।

দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সারা দেশে সাঁড়াশি আক্রমণ চলছে। এর মধ্যেও মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া এই তিনদিন বের হয়নি। এর মানেই হলো মানুষ অবরোধকে সমর্থন দিয়েছে। এটিই আমাদের অর্জন।’

এদিকে অবরোধের মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও সাফজয়ী অধিনায়ক ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে বলে তথ্য দিয়েছে বিএনপি।

দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরেও মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ আমাদের কর্মসূচিতে দেখছি। সামনেও পরিস্থিতির আলাকে দাবি আদায়ের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আমরা সফল করবো।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরে নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন হরতাল পালন শেষে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে যা রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়ার কথা।

তিন দিনের অবরোধ থেকে কী পেলো বিএনপি
মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে দলের মধ্যেই অনেকে মূল্যায়ন করছেন যে এ অবরোধ কেমন হলো কিংবা এ থেকে দল কী অর্জন করল।

দলের নেতারা বলছেন ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও দেশজুড়ে যে যেখানেই পেরেছে রাস্তায় নেমেছে অবরোধ সফলের জন্য। এটিই তাদের বড় অর্জন এবং তাদের কাছে মনে হয়েছে সাধারণ মানুষও খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি বলেই ঢাকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ ছিল না।

সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে আর পুলিশের সাথে মিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাস্তায় অবস্থান করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকাতেই মানুষজন রাস্তায় নামেনি খুব একটা। এটাই বিএনপির সাফল্য।

তার মতে বিএনপিকে সরকার বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতই আক্রমণের মুখে রাখুক না কেন, এই অবরোধই বার্তা দিয়েছে মানুষ ভোটের অধিকারের দাবিতে বিএনপির সাথে একমত।

সেলিমা রহমান আরো বলেন, তাই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলো সফলের মাধ্যমেই জনগণ সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবে।

অর্থাৎ বিএনপি নেতারা মনে করছেন অবরোধের মতো কর্মসূচি সফল করতে তাদের নেতারা রাস্তায় খুব একটা নামতে না পারলেও তিনদিন যে সড়ক মহাসড়কে চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিল, এটাই দলটির বড় ‘সাফল্য’।

২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর থেকেই ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের খবর আসছে।

ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে ‘অতি মাত্রায় শক্তিপ্রয়োগ’ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারকে আহ্বানও জানিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো ‘একটি একতরফা’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখেই সরকার এমন মারমুখী হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা। সে কারণে বিএনপিও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বুঝে আরো ‘শক্ত কর্মসূচির’ দিকে এগুতে চাইছে।

কায়সার কামাল বলেন, অবরোধের সমর্থনে মানুষ রাস্তায় আসছে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ জোরালো হচ্ছে। সবাই ভোটের অধিকার চায়। সামনে পরিস্থিতিই করণীয় নির্ধারণ করে দিবে। আমাদের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি জনগণই সফল করবে। নিপীড়ন করে সরকার কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

শক্ত কর্মসূচি আসলে কী

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন তফসিল ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসবে বিএনপির কর্মসূচির মাত্রা তত বাড়বে।

যদিও প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের পর ১০-১২ নভেম্বরের দিকে সর্বাত্মক অবরোধের দিকে যাওয়ার চিন্তা করেছিল দলটির নীতিনির্ধারকরা।

কিন্তু ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মীর্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের ব্যাপক গ্রেফতারের পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে সরাসরি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

আগামী রবি ও সোমবারের অবরোধ শেষে ৭ নভেম্বর দলটির নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এরপর আবারো হরতাল-অবরোধের মাধ্যমেই আগামী সপ্তাহ পার করবে দলটি।

এ সপ্তাহে সরকারের অবস্থান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ কিংবা এর পরের সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানালে ওই দিনকে ঘিরে এবং এর আগে ও পরে কী ধরণের কর্মসূচি পালন করা যায় তা নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকার রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে গুম, খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে, কিন্তু আমাদেরকেও লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে। এর তো কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা আসলে জনগণই ঠিক করবে তারা কীভাবে দাবি আদায় করবে!’

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তা হলো তারা মনে করেন তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আরো জোরালো করে তুলতে পারবেন এবং এর জের ধরে সরকার ব্যাপকভাবে চাপের মুখে পড়বে বলেই তাদের ধারণা।

ইসির আমন্ত্রণে ক্ষোভ
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আর ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।

এখনকার বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চলতি মাসের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করলে এই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে গণ্য হবে।

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে।

এই নির্বাচনটি যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক দিন ধরেই সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে।

এজন্য তারা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ চাইলেও বিএনপির সাথে সংলাপে বসার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিএনপিও বলেছেন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেই কেবল তারা সংলাপে আগ্রহী।

এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চূড়ান্ত সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার কমিশনের একজন কর্মচারী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এসেছেন। তবে কার্যালয়টি বন্ধ থাকায় এবং সেখানে দলের কেউ না থাকায় চিঠিটি তালাবদ্ধ গেটের ভেতরেই রেখে এসেছেন তিনি।

একে তামাশা হিসেবে আখ্যায়িত করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তালিকা অনুসারে শুধু নির্বাচনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে মাত্র। তার সাথে আবার কীসের সংলাপ?’

সূত্র : বিবিসি