০১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতু : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিশিল্প নতুন মাত্রা পাবে কুয়াকাটা-সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২
  • 33

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু প্রথম দিন শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্র গণপরিবহনে সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফের দুপুরের মধ্যেই শরীয়তপুর ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম বাসে করে ঢাকায় গিয়ে নাস্তা করেছি। স্যানিটারির মালামাল কিনে আবার সেই বাসেই সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুর এসেছি। শরীয়তপুর থেকে গতকাল ঢাকার পথে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসটি সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুর পৌঁছায় বেলা দু’টায়। মিহির চন্দ্র বলেন, গাড়ি থেকে নেমে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম আমি ঠিক আছি কি না। আসলে সেতু দিয়ে পার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় বুঝাতে পারব না।
শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা মো. ইয়াকুব আলী, মিরাশার চাষি বাজার থেকে নিয়মিত কাঁচামাল কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর গতকাল তিনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সবজি বিক্রি করতে। ইয়াকুব বলেন, এতো দিন ফেরিতে করে মালামাল নিতাম। ঘাটে বাসে থাকতে থাকতে সবজির কালার নষ্ট হয়ে যেতে। কম দাম পেতাম। অনেক সময় লোকসান হতো। এখন সবজি নিয়ে আর ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না। এখন রওনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে বিক্রি করে ফিরতে পারব। আর লোকসান হবে না।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টায় রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে। আগে আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে ট্রাকগুলোর ৮-১০ ঘণ্টা লাগত। কখনো কখনো যানজটে কয়েকদিনও লাগত। মালামাল অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতো। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক  মাকসুদ আলম খান জানান, ভোমরাবন্দর থেকে সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব ট্রাকগুলোতে ফল, শুকনা মরিচ, পাথর ও সিরামিক কসমেটিকসের র’ ম্যাটেরিয়ালস ছিল। ভোমরা থেকে রওনা হয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় এসব ট্রাকগুলো রাজধানীতে পৌঁছে গেছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমাদের এতদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্রের ঢাকায় কেনাকাটা করে আবার দুপুরে ফেরা, শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় এসে শবজি বিক্রির সুযোগ বা ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মালামাল নিয়ে অসার সুযোগই নয়; দেশের বাণিজ্য পাবে এক নতুন রূপ। অল্প সময়ের মধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান, ডাব, মুড়ি, তরমুজ, মাছ, আমসহ বিভিন্ন পণ্য দ্রুত ঢাকার বাজারে প্রবেশ করবে।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে অর্থনীতিতে প্রায় ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা পদ্মা সেতু নির্মাণ খরচের দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ওইসব এলাকায় শস্য উৎপাদন বাড়বে।ওই এলাকায় পর্যটন ব্যাপক বাড়বে। বিশেষ করে সুন্দরবনে চাপ বাড়বে। ওই এলাকা থেকে পণ্যবাহী যে ট্রাকগুলো ঢাকা আসা যাওয়া করে তার খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। ফলে ওই এলাকায় বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি পাবে।

গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। সকাল ৬টায় সেতুর গেট খোলার আগ পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য এখন পর্যন্ত ৭টি বুথের মধ্যে ৫টি বুথ ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের দুটি লেন পণ্য বোঝাই ট্রাকের জন্য এবং অন্যটি মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সেতুর টোল বুথে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল থেকে টোল সময় লাগছে কম। তবে, সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায়ে গড়ে এক মিনিটেরও কম সময় লাগছে বলে জানান তারা। এদিকে, জাজিরা পয়েন্টের মোট ৬টি বুথে এখন গাড়ি প্রতি ৩০ সেকেন্ড করে সময় লাগছে টোল আদায়ে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে গতকাল ভোরে যানবাহনের যে দীর্ঘসারি তৈরি হয়েছিল, তা অবশ্য কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

প্রমত্তা পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের সেতু। সেতু হওয়ায় বদলে যাবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা। দেশের বাণিজ্য পাবে এক নতুন রূপ। বিশেষ করে যশোর-খুলনা-পটুয়াখালী এলাকার স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে নতুন এক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেবে। সাধারণ অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কাঠামোতে আসবে বড় রকমের পরিবর্তন।

বাংলাদেশের ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে প্রধান দুটি স্থলবন্দর হচ্ছে বেনাপোল ও ভোমরা। এই দুটি স্থলবন্দর থেকেই দেশের এক-তৃতীয়াংশ পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি হয়েছে ৬৬ লাখ টন পণ্য। একই অর্থবছরে মোট ১২টি স্থলবন্দর থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ টন। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় ভোমরা-বেনাপোল কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাদ সাধল পদ্মা নদী। নদী পার হয়ে আরিচা কিংবা মাওয়া যেদিক দিয়েই আসা হোক না কেন, প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। পাড়ি দেয়া এই পথও সুগম নয়। ফেরির জন্য মাঝেমধ্যে কয়েক দিন পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। এতে বেড়ে যায় খরচ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয় শ্লথ।

একই দশা খুলনার মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রাবন্দরে। কনটেইনার নিয়ে রাজধানীতে আসতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। কিন্তু এবার পদ্মা সেতু বদলে দিচ্ছে সেই চিরাচরিত বাণিজ্যিক রূপ। পদ্মা সেতু হওয়ায় কমে আসবে সময় ও অর্থ দুয়েরই অপচয়। যেখানে ফেরি পাড় হতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেত, সেখানে কয়েক টন পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলো মাত্র ছয় মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে।

কেবল বন্দর নয়, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। ঢাকার বাজারের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চল থেকে সহজে এদিকে সবজি কিংবা অন্য পচনশীল পণ্য আসতে পারে না। এ ক্ষেত্রে রাজধানী শহরকে নির্ভর করতে হয় উত্তরবঙ্গ কিংবা আশপাশের জেলাগুলোর ওপর। অন্যদিকে ব্যাপক ফলনের পরও দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা লাভের মুখ দেখেন না। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ায় দু-পক্ষেরই সুবিধা হবে। ঢাকার বাজারে কমে আসবে পণ্যের দাম ও সংকট, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা পাবেন কাক্সিক্ষত মুনাফা।

এতে যশোরের সবজি ও ফুল, বরিশালের ধান, ডাব, মুড়ি ও অন্যান্য ফসল, পটুয়াখালীর তরমুজ, ভোলার মাছ, সাতক্ষীরার আম, খুলনার ফসল খুব সহজেই ঢাকার বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। কেবল বাজার নয়, বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের চিত্র। বিশেষ করে কুয়াকাটা ও সুন্দরবন পর্যটন খাতে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে পারবে। পুরোনো পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন পর্যটন আকর্ষণ। বিশেষ করে বরগুনার তালতলী ও পাথরঘাটার সমুদ্র সৈকতগুলো দিনকে দিন পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন একমাত্রা যোগ করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে বদলে গেছে এর আশপাশের এলাকার চিত্র। একসময়ের অনুন্নত শরীয়তপুর দিনকে দিন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যার মূল উপজীব্য পদ্মা সেতু। বিশেষ করে জাজিরা প্রান্তে শরীয়তপুরে জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ক’দিন আগেও এ এলাকায় প্রতি বিঘা জমি বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ লাখ টাকায়। এখন জমির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। শরীয়তপুর এলাকা ঘিরে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে এরই মধ্যে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে শুরু করেছে সরকার। বিশেষ করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু ঘিরে আঞ্চলিক বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বেনাপোল, ভোমরা ও বুড়িমারীÑ এই তিনটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ২ হাজার ৯০৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকও হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়বে। বর্তমান সক্ষমতায় ওই দুটি বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে দৈনিক ৩৭০টি পণ্যবাহী ট্রাক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় আরও এক হাজার ট্রাক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। একইভাবে ভোমরায় আরও ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো হবে। বেনাপোল বন্দরে ৯০ বিঘা ও ভোমরায় ৬০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে গুদামঘর, টার্মিনাল, আধুনিক কেমিক্যাল গুদাম, সেবা ভবন ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এসব কাজ শেষ করা হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, পদ্মার ওপারের ২১টি জেলায় ১৩৩টি উপজেলা আছে। এসব উপজেলার মধ্যে ৫৩টি উচ্চ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ২৯টি বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া ৪২টি উপজেলা মধ্যম দারিদ্র্য এবং ৩৮টি নিম্ন দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের পর খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেশি। এ দুটি বিভাগে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে সাড়ে ২৭ ও ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুসারে, পদ্মা সেতু হলে এসব অঞ্চলের দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, খোদ পদ্মা সেতুই দেশের জিডিপি বাড়াবে ২ শতাংশ, কেবল দক্ষিণাঞ্চলেরই জিডিপি বাড়বে আড়াই শতাংশ। ‘ভালোভাবে হিসাব করা’ একটি টোল হারের মাধ্যমে আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সরকার আশা করছে। আশা করা যাচ্ছে, নবনির্মিত পদ্মা সেতুই হবে বাংলাদেশের ডেলটা প্ল্যানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সোপান।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) এক কর্মকর্তা বলেন, টোলের হার একটি গণনা পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে দেশের বৃহত্তম সেতুটির নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি বলেন, সেতুটি অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে, বিদেশি ঋণ বা যেকোনো ধরনের অনুদান বাতিল করে, অর্থ মন্ত্রণালয় বিবিএকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ‘আমাদের ৩৫ বছরের মধ্যে এক শতাংশ সুদের হারে পরিশোধ করতে হবে।’

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পদ্মা সেতু : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিশিল্প নতুন মাত্রা পাবে কুয়াকাটা-সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প

Update Time : ১২:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু প্রথম দিন শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্র গণপরিবহনে সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফের দুপুরের মধ্যেই শরীয়তপুর ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম বাসে করে ঢাকায় গিয়ে নাস্তা করেছি। স্যানিটারির মালামাল কিনে আবার সেই বাসেই সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুর এসেছি। শরীয়তপুর থেকে গতকাল ঢাকার পথে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসটি সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুর পৌঁছায় বেলা দু’টায়। মিহির চন্দ্র বলেন, গাড়ি থেকে নেমে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম আমি ঠিক আছি কি না। আসলে সেতু দিয়ে পার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় বুঝাতে পারব না।
শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা মো. ইয়াকুব আলী, মিরাশার চাষি বাজার থেকে নিয়মিত কাঁচামাল কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর গতকাল তিনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সবজি বিক্রি করতে। ইয়াকুব বলেন, এতো দিন ফেরিতে করে মালামাল নিতাম। ঘাটে বাসে থাকতে থাকতে সবজির কালার নষ্ট হয়ে যেতে। কম দাম পেতাম। অনেক সময় লোকসান হতো। এখন সবজি নিয়ে আর ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না। এখন রওনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে বিক্রি করে ফিরতে পারব। আর লোকসান হবে না।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টায় রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে। আগে আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে ট্রাকগুলোর ৮-১০ ঘণ্টা লাগত। কখনো কখনো যানজটে কয়েকদিনও লাগত। মালামাল অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতো। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক  মাকসুদ আলম খান জানান, ভোমরাবন্দর থেকে সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব ট্রাকগুলোতে ফল, শুকনা মরিচ, পাথর ও সিরামিক কসমেটিকসের র’ ম্যাটেরিয়ালস ছিল। ভোমরা থেকে রওনা হয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় এসব ট্রাকগুলো রাজধানীতে পৌঁছে গেছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমাদের এতদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্রের ঢাকায় কেনাকাটা করে আবার দুপুরে ফেরা, শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় এসে শবজি বিক্রির সুযোগ বা ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মালামাল নিয়ে অসার সুযোগই নয়; দেশের বাণিজ্য পাবে এক নতুন রূপ। অল্প সময়ের মধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান, ডাব, মুড়ি, তরমুজ, মাছ, আমসহ বিভিন্ন পণ্য দ্রুত ঢাকার বাজারে প্রবেশ করবে।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে অর্থনীতিতে প্রায় ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা পদ্মা সেতু নির্মাণ খরচের দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ওইসব এলাকায় শস্য উৎপাদন বাড়বে।ওই এলাকায় পর্যটন ব্যাপক বাড়বে। বিশেষ করে সুন্দরবনে চাপ বাড়বে। ওই এলাকা থেকে পণ্যবাহী যে ট্রাকগুলো ঢাকা আসা যাওয়া করে তার খরচ কমবে এবং সময় বাঁচবে। ফলে ওই এলাকায় বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি পাবে।

গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। সকাল ৬টায় সেতুর গেট খোলার আগ পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য এখন পর্যন্ত ৭টি বুথের মধ্যে ৫টি বুথ ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের দুটি লেন পণ্য বোঝাই ট্রাকের জন্য এবং অন্যটি মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সেতুর টোল বুথে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল থেকে টোল সময় লাগছে কম। তবে, সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায়ে গড়ে এক মিনিটেরও কম সময় লাগছে বলে জানান তারা। এদিকে, জাজিরা পয়েন্টের মোট ৬টি বুথে এখন গাড়ি প্রতি ৩০ সেকেন্ড করে সময় লাগছে টোল আদায়ে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে গতকাল ভোরে যানবাহনের যে দীর্ঘসারি তৈরি হয়েছিল, তা অবশ্য কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

প্রমত্তা পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের সেতু। সেতু হওয়ায় বদলে যাবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা। দেশের বাণিজ্য পাবে এক নতুন রূপ। বিশেষ করে যশোর-খুলনা-পটুয়াখালী এলাকার স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে নতুন এক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেবে। সাধারণ অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কাঠামোতে আসবে বড় রকমের পরিবর্তন।

বাংলাদেশের ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে প্রধান দুটি স্থলবন্দর হচ্ছে বেনাপোল ও ভোমরা। এই দুটি স্থলবন্দর থেকেই দেশের এক-তৃতীয়াংশ পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি হয়েছে ৬৬ লাখ টন পণ্য। একই অর্থবছরে মোট ১২টি স্থলবন্দর থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ টন। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় ভোমরা-বেনাপোল কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাদ সাধল পদ্মা নদী। নদী পার হয়ে আরিচা কিংবা মাওয়া যেদিক দিয়েই আসা হোক না কেন, প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। পাড়ি দেয়া এই পথও সুগম নয়। ফেরির জন্য মাঝেমধ্যে কয়েক দিন পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। এতে বেড়ে যায় খরচ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয় শ্লথ।

একই দশা খুলনার মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রাবন্দরে। কনটেইনার নিয়ে রাজধানীতে আসতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। কিন্তু এবার পদ্মা সেতু বদলে দিচ্ছে সেই চিরাচরিত বাণিজ্যিক রূপ। পদ্মা সেতু হওয়ায় কমে আসবে সময় ও অর্থ দুয়েরই অপচয়। যেখানে ফেরি পাড় হতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেত, সেখানে কয়েক টন পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলো মাত্র ছয় মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে।

কেবল বন্দর নয়, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। ঢাকার বাজারের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চল থেকে সহজে এদিকে সবজি কিংবা অন্য পচনশীল পণ্য আসতে পারে না। এ ক্ষেত্রে রাজধানী শহরকে নির্ভর করতে হয় উত্তরবঙ্গ কিংবা আশপাশের জেলাগুলোর ওপর। অন্যদিকে ব্যাপক ফলনের পরও দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা লাভের মুখ দেখেন না। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ায় দু-পক্ষেরই সুবিধা হবে। ঢাকার বাজারে কমে আসবে পণ্যের দাম ও সংকট, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা পাবেন কাক্সিক্ষত মুনাফা।

এতে যশোরের সবজি ও ফুল, বরিশালের ধান, ডাব, মুড়ি ও অন্যান্য ফসল, পটুয়াখালীর তরমুজ, ভোলার মাছ, সাতক্ষীরার আম, খুলনার ফসল খুব সহজেই ঢাকার বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। কেবল বাজার নয়, বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের চিত্র। বিশেষ করে কুয়াকাটা ও সুন্দরবন পর্যটন খাতে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে পারবে। পুরোনো পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন পর্যটন আকর্ষণ। বিশেষ করে বরগুনার তালতলী ও পাথরঘাটার সমুদ্র সৈকতগুলো দিনকে দিন পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন একমাত্রা যোগ করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে বদলে গেছে এর আশপাশের এলাকার চিত্র। একসময়ের অনুন্নত শরীয়তপুর দিনকে দিন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যার মূল উপজীব্য পদ্মা সেতু। বিশেষ করে জাজিরা প্রান্তে শরীয়তপুরে জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ক’দিন আগেও এ এলাকায় প্রতি বিঘা জমি বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ লাখ টাকায়। এখন জমির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। শরীয়তপুর এলাকা ঘিরে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে এরই মধ্যে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে শুরু করেছে সরকার। বিশেষ করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু ঘিরে আঞ্চলিক বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বেনাপোল, ভোমরা ও বুড়িমারীÑ এই তিনটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ২ হাজার ৯০৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকও হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়বে। বর্তমান সক্ষমতায় ওই দুটি বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে দৈনিক ৩৭০টি পণ্যবাহী ট্রাক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় আরও এক হাজার ট্রাক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। একইভাবে ভোমরায় আরও ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো হবে। বেনাপোল বন্দরে ৯০ বিঘা ও ভোমরায় ৬০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে গুদামঘর, টার্মিনাল, আধুনিক কেমিক্যাল গুদাম, সেবা ভবন ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এসব কাজ শেষ করা হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, পদ্মার ওপারের ২১টি জেলায় ১৩৩টি উপজেলা আছে। এসব উপজেলার মধ্যে ৫৩টি উচ্চ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ২৯টি বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া ৪২টি উপজেলা মধ্যম দারিদ্র্য এবং ৩৮টি নিম্ন দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের পর খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেশি। এ দুটি বিভাগে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে সাড়ে ২৭ ও ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুসারে, পদ্মা সেতু হলে এসব অঞ্চলের দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, খোদ পদ্মা সেতুই দেশের জিডিপি বাড়াবে ২ শতাংশ, কেবল দক্ষিণাঞ্চলেরই জিডিপি বাড়বে আড়াই শতাংশ। ‘ভালোভাবে হিসাব করা’ একটি টোল হারের মাধ্যমে আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সরকার আশা করছে। আশা করা যাচ্ছে, নবনির্মিত পদ্মা সেতুই হবে বাংলাদেশের ডেলটা প্ল্যানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সোপান।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) এক কর্মকর্তা বলেন, টোলের হার একটি গণনা পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে দেশের বৃহত্তম সেতুটির নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি বলেন, সেতুটি অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে, বিদেশি ঋণ বা যেকোনো ধরনের অনুদান বাতিল করে, অর্থ মন্ত্রণালয় বিবিএকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ‘আমাদের ৩৫ বছরের মধ্যে এক শতাংশ সুদের হারে পরিশোধ করতে হবে।’