০৮:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসছে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুন ২০২২
  • 48

আসছে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত। নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতে ঝুলে থাকায় আপাতত স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।

এজন্য প্রার্থী ঠিক করা ও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে দলটি। ইতিমধ্যে নেতাদের বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী জোট হলেও জামায়াত নিজেদের শক্তি নিয়েই আলাদা নির্বাচন করবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রমতে, জামায়াত নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জন্য দলের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জতুল্লাহ। এই কমিটি সারা দেশের রুকন, ওয়ার্ড সভাপতিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। সেখানে সবাই যাদের পক্ষে বেশি ভোট দিয়েছেন তাদেরকেই ওই আসনের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করছে জামায়াত। চলতি সপ্তাহে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে প্রায় ১৫০টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মূলত জামায়াত ১৯৯১ সালের নির্বাচনের ফরম্যাটেই এগোতে চাইছে। দলটির নেতাদের ভাষ্য- ৯১ সালে জামায়াত কারও সঙ্গে জোট না করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। একপর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ট দলগুলো সরকার গঠনের জন্য জামায়াতের সহযোগিতা চাইলে তারা বিএনপিকে সমর্থন দেয়। পরে বিএনপি সরকার গঠন করে।
দলটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি জামায়াত ছেড়ে দিচ্ছে এমন আলোচনা আছে। এই বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত নেতাদেরও অনানুষ্ঠানিক কিছু আলোচনা হয়েছে। জামায়াতকে আলাদা কর্মসূচি দেয়ার বিষয়েও বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিএনপি’র চলমান সংলাপে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সবার সঙ্গেই বৈঠক হবে। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ হবে। তাদের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে। সবার সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে। আর ২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করিনি। এই জোটের কী হবে, সেটা এই আলোচনার মধ্যদিয়ে ফাইনালাইজড্‌ (চূড়ান্ত) করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশের আসনগুলোতে এককভাবে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরজন্য তৃণমূলের প্রতিটা নেতাকর্মীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে বেশকিছু আসন রয়েছে যেখানে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতেরও হ্যাভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। ওই জায়গাগুলোতেও জামায়াত ছাড়তে চাইবে না। সেখানে স্থানীয় নেতারা জোটের পক্ষেও মত দিচ্ছেন না।
দলটির আরেক নেতা বলেন, মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা নীরব থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে জামায়াত। বর্তমান অবস্থায় আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। এজন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। যাই হোক এই সরকারকে হটাতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তবে আন্দোলন কোন পর্যায়ে হবে এটা এখনো পরিষ্কার নয়। এই সরকারের পতনের জন্য মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় থাকবে জামায়াত।
তিনি বলেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য একটাই, তা হচ্ছে এই সরকারের পতন। এ লক্ষ্যে রাজপথে সব জোট বিলুপ্ত করে যদি যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে সমর্থন থাকবে জামায়াতের।
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশের ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত বিষয়টা এ রকম নয়। আমাদের স্বাভাবিক নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে। জামায়াত শুরু থেকে নির্বাচনমুখী দল হওয়ার কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা সারা বছরই চলমান। সামনে কতগুলো আসনে নির্বাচন করবে জামায়াত এটা আরও পরে জানানো হবে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর ৩০০ আসনে দলীয় কার্যক্রম চালানো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা হিসেবে আনা যাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। কাজেই এই জোট যতক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুখে যে যত কথাই বলুক সেটা কোনো লাভ হবে না। জোট যতক্ষণ সমষ্টিগতভাবে আছে আমরা জোটে আছি। তবে জোট যদি আগামীদিনে চলমান না থাকে তখন জামায়াত নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী তার ভবিষ্যতে নির্বাচনী রাজনীতি কীভাবে করবে সেটা ঠিক করবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. রেজাউল করিম বলেন, নির্বাচন থেকে আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আওয়ামী দুঃশাসন থেকে এই জাতিকে মুক্ত করা। সেই লক্ষ্যে সকল বিরোধীদল যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে ৩শ’ রুপির গয়না ৬ কোটিতে বিক্রি করে মার্কিন নারীর সঙ্গে প্রতারণা।

আসছে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত।

Update Time : ০৪:০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুন ২০২২

আসছে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত। নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতে ঝুলে থাকায় আপাতত স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।

এজন্য প্রার্থী ঠিক করা ও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে দলটি। ইতিমধ্যে নেতাদের বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী জোট হলেও জামায়াত নিজেদের শক্তি নিয়েই আলাদা নির্বাচন করবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রমতে, জামায়াত নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জন্য দলের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জতুল্লাহ। এই কমিটি সারা দেশের রুকন, ওয়ার্ড সভাপতিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। সেখানে সবাই যাদের পক্ষে বেশি ভোট দিয়েছেন তাদেরকেই ওই আসনের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করছে জামায়াত। চলতি সপ্তাহে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে প্রায় ১৫০টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মূলত জামায়াত ১৯৯১ সালের নির্বাচনের ফরম্যাটেই এগোতে চাইছে। দলটির নেতাদের ভাষ্য- ৯১ সালে জামায়াত কারও সঙ্গে জোট না করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। একপর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ট দলগুলো সরকার গঠনের জন্য জামায়াতের সহযোগিতা চাইলে তারা বিএনপিকে সমর্থন দেয়। পরে বিএনপি সরকার গঠন করে।
দলটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি জামায়াত ছেড়ে দিচ্ছে এমন আলোচনা আছে। এই বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত নেতাদেরও অনানুষ্ঠানিক কিছু আলোচনা হয়েছে। জামায়াতকে আলাদা কর্মসূচি দেয়ার বিষয়েও বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিএনপি’র চলমান সংলাপে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সবার সঙ্গেই বৈঠক হবে। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ হবে। তাদের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে। সবার সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে। আর ২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করিনি। এই জোটের কী হবে, সেটা এই আলোচনার মধ্যদিয়ে ফাইনালাইজড্‌ (চূড়ান্ত) করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশের আসনগুলোতে এককভাবে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরজন্য তৃণমূলের প্রতিটা নেতাকর্মীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে বেশকিছু আসন রয়েছে যেখানে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতেরও হ্যাভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। ওই জায়গাগুলোতেও জামায়াত ছাড়তে চাইবে না। সেখানে স্থানীয় নেতারা জোটের পক্ষেও মত দিচ্ছেন না।
দলটির আরেক নেতা বলেন, মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা নীরব থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে জামায়াত। বর্তমান অবস্থায় আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। এজন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। যাই হোক এই সরকারকে হটাতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তবে আন্দোলন কোন পর্যায়ে হবে এটা এখনো পরিষ্কার নয়। এই সরকারের পতনের জন্য মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় থাকবে জামায়াত।
তিনি বলেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য একটাই, তা হচ্ছে এই সরকারের পতন। এ লক্ষ্যে রাজপথে সব জোট বিলুপ্ত করে যদি যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে সমর্থন থাকবে জামায়াতের।
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশের ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত বিষয়টা এ রকম নয়। আমাদের স্বাভাবিক নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে। জামায়াত শুরু থেকে নির্বাচনমুখী দল হওয়ার কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা সারা বছরই চলমান। সামনে কতগুলো আসনে নির্বাচন করবে জামায়াত এটা আরও পরে জানানো হবে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর ৩০০ আসনে দলীয় কার্যক্রম চালানো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা হিসেবে আনা যাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। কাজেই এই জোট যতক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুখে যে যত কথাই বলুক সেটা কোনো লাভ হবে না। জোট যতক্ষণ সমষ্টিগতভাবে আছে আমরা জোটে আছি। তবে জোট যদি আগামীদিনে চলমান না থাকে তখন জামায়াত নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী তার ভবিষ্যতে নির্বাচনী রাজনীতি কীভাবে করবে সেটা ঠিক করবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. রেজাউল করিম বলেন, নির্বাচন থেকে আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আওয়ামী দুঃশাসন থেকে এই জাতিকে মুক্ত করা। সেই লক্ষ্যে সকল বিরোধীদল যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।