০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২
  • 47

বিএনপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জানিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও আগের রাতে ভোট ডাকাতির কারণে ওই নির্বাচনে বিএনপির ভূমিধ্বস পরাজয় হয় বলে দাবি দলটির নেতাদের। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, বাধা প্রদানের অভিযোগে বর্তমান সরকার ও নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপি। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের একাধিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলটির নেতাদের উপলব্ধি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া যেটি বলেছিলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’।

এবার তাই কোন মিষ্টি কথায় না ভুলে, সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে এক দফা দাবিতে অনড় থাকতে চায় বিএনপি নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। টালবাহানার মধ্যে আর কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেব না। দেশের গণতান্ত্রিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলও প্রহসনের কোনো র্নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে কি যাবে না তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। কোন দল ক্ষমতায় যাবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। তার আগে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরে পেতে হবে। ভোটের মাধ্যমে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। এই ফয়সালা রাজপথে হতে হবে। রাজপথ ছাড়া এই ফয়সালা হবে না।

গয়েশ্বর রায় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে প্রস্তুতি নেয়া। এর আগে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না এবং এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে কোনো প্রহসন করতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ আরেকটি ভুয়া নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। তারা যদি আবারও যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে একেবারে কাগজে-কলমে এই দেশ বিক্রি করে দেবে। এই বিক্রির জন্য শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। কিন্তু এটা হতে দিতে পারি না। আর কোন মানুষের জীবন নিয়ে শেখ হাসিনাকে খেলতে দিতে পারি না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, এদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই দলীয় সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন তখন সুষ্ঠু হবে যখন নির্দলীয় সরকার গঠিত হবে। বিএনপি সেই লক্ষ্যেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, ২০১৮ পরবর্তী সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির বোধদয় হয়েছে এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে না এবং নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কোন কিছু করতে পারবে না। তাই বর্তমান সরকার ও সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরণের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছে বার্তা দেয়া হয় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজামউদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া নতুন গঠিত হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় প্রেসিডেন্টের সংলাপও বর্জন করে বিএনপি। আর নির্বাচন কমিশনের চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও যায়নি দলটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যতবারই নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ততবারই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাবে যদি হাসিনা না থাকে, হাসিনাকে রেখে বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে চেয়েছিল। আমরা সেখানে যাইনি কারণ আমরা নির্বাচন কমিশন বুঝি না, নির্বাচন কমিশন চিনি না, মানি না। আমরা চাই এই সরকার থাকবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন হবে। সেই নির্বাচনে আমরা যাব। আব্বাস বলেন, বিএনপিকে ছাড়া আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না। বাংলাদেশে কারো সাধ্য নেই বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করা। সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবো না। ক্ষমতা ছাড়তে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।

বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বিএনপি এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোন বিকল্প কিছু ভাবছে না। দলের নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকে এবং চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও এই ইস্যুতে একই মতামত এসেছে। তাই বিএনপির এখন এক দফা দাবি বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তারা আরও বলেন, সরকার এই দাবি সহজে মেনে নেবে না। এজন্য আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথেই এগুচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে আনা হচ্ছে। সক্রিয় করা হচ্ছে ১/১১’র সময় সংস্কারপন্থী ও দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদেরকেও। এছাড়া যেসব রাজনৈতিক দল বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তাদের সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনেরও রূপরেখা সাজাচ্ছে বিএনপি।

এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্যে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করে একটা আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্যে আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক দলের সাথে আলোচনা শেষ হয়েছে। আমরা অল্প দিনের মধ্যে এই আলোচনা শেষ করতে পারবো। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের একটি পার্লামেন্ট গঠন করার ব্যাপারে আমরা আন্দোলন করার বিষয়ে একমত হয়েছি।

এদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে বাধা দেয়া হবে না, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন। ঘোষণা করুন যে, আপনি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবেন। তাহলে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই। তা না করে এই সমস্ত হালকা কথা বলে লাভ নেই, এই সমস্ত চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নেই। আমাদের একটাই কথা- পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে ৩শ’ রুপির গয়না ৬ কোটিতে বিক্রি করে মার্কিন নারীর সঙ্গে প্রতারণা।

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।

Update Time : ০৪:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জানিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও আগের রাতে ভোট ডাকাতির কারণে ওই নির্বাচনে বিএনপির ভূমিধ্বস পরাজয় হয় বলে দাবি দলটির নেতাদের। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, বাধা প্রদানের অভিযোগে বর্তমান সরকার ও নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপি। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের একাধিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলটির নেতাদের উপলব্ধি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া যেটি বলেছিলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’।

এবার তাই কোন মিষ্টি কথায় না ভুলে, সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে এক দফা দাবিতে অনড় থাকতে চায় বিএনপি নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। টালবাহানার মধ্যে আর কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেব না। দেশের গণতান্ত্রিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলও প্রহসনের কোনো র্নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে কি যাবে না তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। কোন দল ক্ষমতায় যাবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। তার আগে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরে পেতে হবে। ভোটের মাধ্যমে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। এই ফয়সালা রাজপথে হতে হবে। রাজপথ ছাড়া এই ফয়সালা হবে না।

গয়েশ্বর রায় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে প্রস্তুতি নেয়া। এর আগে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না এবং এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে কোনো প্রহসন করতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ আরেকটি ভুয়া নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। তারা যদি আবারও যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে একেবারে কাগজে-কলমে এই দেশ বিক্রি করে দেবে। এই বিক্রির জন্য শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। কিন্তু এটা হতে দিতে পারি না। আর কোন মানুষের জীবন নিয়ে শেখ হাসিনাকে খেলতে দিতে পারি না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, এদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই দলীয় সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন তখন সুষ্ঠু হবে যখন নির্দলীয় সরকার গঠিত হবে। বিএনপি সেই লক্ষ্যেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, ২০১৮ পরবর্তী সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির বোধদয় হয়েছে এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে না এবং নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কোন কিছু করতে পারবে না। তাই বর্তমান সরকার ও সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরণের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছে বার্তা দেয়া হয় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজামউদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া নতুন গঠিত হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় প্রেসিডেন্টের সংলাপও বর্জন করে বিএনপি। আর নির্বাচন কমিশনের চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও যায়নি দলটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যতবারই নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ততবারই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাবে যদি হাসিনা না থাকে, হাসিনাকে রেখে বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে চেয়েছিল। আমরা সেখানে যাইনি কারণ আমরা নির্বাচন কমিশন বুঝি না, নির্বাচন কমিশন চিনি না, মানি না। আমরা চাই এই সরকার থাকবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন হবে। সেই নির্বাচনে আমরা যাব। আব্বাস বলেন, বিএনপিকে ছাড়া আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না। বাংলাদেশে কারো সাধ্য নেই বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করা। সরকারকে আমরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবো না। ক্ষমতা ছাড়তে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।

বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বিএনপি এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোন বিকল্প কিছু ভাবছে না। দলের নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকে এবং চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও এই ইস্যুতে একই মতামত এসেছে। তাই বিএনপির এখন এক দফা দাবি বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তারা আরও বলেন, সরকার এই দাবি সহজে মেনে নেবে না। এজন্য আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথেই এগুচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে আনা হচ্ছে। সক্রিয় করা হচ্ছে ১/১১’র সময় সংস্কারপন্থী ও দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদেরকেও। এছাড়া যেসব রাজনৈতিক দল বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তাদের সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনেরও রূপরেখা সাজাচ্ছে বিএনপি।

এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্যে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করে একটা আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্যে আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক দলের সাথে আলোচনা শেষ হয়েছে। আমরা অল্প দিনের মধ্যে এই আলোচনা শেষ করতে পারবো। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের একটি পার্লামেন্ট গঠন করার ব্যাপারে আমরা আন্দোলন করার বিষয়ে একমত হয়েছি।

এদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে বাধা দেয়া হবে না, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন। ঘোষণা করুন যে, আপনি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবেন। তাহলে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই। তা না করে এই সমস্ত হালকা কথা বলে লাভ নেই, এই সমস্ত চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নেই। আমাদের একটাই কথা- পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।