১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভ্রমন পীপাসু‌দের চো‌খে পাংকুড় দ্বীপের রূপ আর সৌন্দর্য

মালয়েশিয়ার পাংকুড় দ্বীপের রূপ আর সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। সমুদ্র উপভোগের জন্য যারা উন্মুখ হয়ে থাকেন তারা নির্দ্বিধায় পাংকুড় ভ্রমণে যেতে পারেন। পুরো দ্বীপজুড়ে সবুজের ছড়াছড়ি। এরই মাঝে পাহাড় আর সমুদ্রের অসাধারণ মিতালি।

রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ২৪৫ কিলোমিটার দূরের এ দ্বীপটি পেরাক রাজ্যেরই একটি শহর। ১৮ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে জনসংখ্যা মাত্র ২৫ হাজার। এখানকার স্থানীয় নাগরিকেরা খুব সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। সহজ-সরল প্রকৃতির স্থানীয়রা আপনাকে সবধরনের সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।

আমরা সকাল সাড়ে নয়টায় কুয়ালালামপুর থেকে রওয়ানা হয়েছি। যাত্রা সঙ্গী ৪ জন, পরিবহন হিসাবে ছিলো মবিন ভাইয়ের হাই হাইল্যাক্স। কুয়ালালামপুর থেকে ইপো হয়ে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ম্যারিনা আইল্যান্ড ফেরিঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় চার ঘণ্টা। তবে ফেরির জন্য অপেক্ষার সময়টা একেবারে বৃথা যায়নি।

ইচ্ছে করলে আপনি কুয়ালালামপুরের টিবিএস বাস স্টপ থেকে বাসে করেও সহজেই আসতে পারেন। নামতে হবে সবশেষ লুমুট বাস স্টপে। সেখান থেকে হাঁটা দূরত্বের ফেরিঘাটে পৌঁছে, আসতে পারেন পাংকুড়ে। লুমুট থেকে পাংকুড় যাওয়া আসার ফেরি টিকিট ১৬ রিঙ্গিত এবং ম্যারিনা আইল্যান্ড থেকে ১৪ রিঙ্গিত। ঘাটে পৌঁছে আমাদের মতো আপনিও গাড়ি ভাড়া করতে পারেন, সেজন্য আপনার ড্রাংভিং লাইসেন্স কিংবা অন্যান্য কাগজপত্রেরও প্রয়োজন হবে না। গাড়ি ভাড়া আলোচনা সাপেক্ষে, ১২০ থেকে ১৮০ রিঙ্গিতের মধ্যে। গাড়ির পরিবর্তে মোটর বাইকও সস্তায় পাবেন ফেরি ঘাটেই।

থাকার জন্য আমরা অনলাইন বুকিং এ আস্থা না রেখে নিজেরাই সমুদ্র উপকূলে সাশ্রয়ী মূল্যে দারুণ একটি রিসোর্ট খুঁজে নিলাম। পড়ন্ত বিকেলে হেলে পড়া সূর্যটা যখন পাহাড়ের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে তখন আমরা সমুদ্র স্নানে। শান্ত সমুদ্রে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটালাম, মাঝে রাতের খাবারটাও সেরে নিলাম।

পুরো পাংকুড় ঘুরে আসতে আপনার ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। তবে পাংকুড়ের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস আর ঐহিত্য, ঘুরতে এসে তারই স্বাক্ষী হলাম আমরা।

১৭৪৮ সালে এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসেন ডাচরা ১৮৭৬ সালে দুর্গও গড়ে তোলেন তারা, নিষিদ্ধ করেন মালয়েশিয়ানদের এই দ্বীপে প্রবেশের। পরবর্তিতে ডাচদের হটিয়ে দীপটি পুনরুদ্ধার করেন মালয়রা, ভেঙ্গে ফেলেন সে দুর্গ। তবে ইতিহাসের স্মৃতি হিসাবে পুনর্নির্মাণ করেন ডাচদের আদলে তৈরি সে দুর্গের একটি নিদর্শন।

এই স্থাপনা ছাড়াও সমুদ্রের মাঝে ভাসমান মসজিদও মন কেড়েছে আমাদের। রাত ও দিনে মসজিদ দেখার পাশাপাশি বদ্ধদের মন্দিরেও বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি আমরা।

পাংকুড়ের মানুষের জীবন-যাত্রা ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তবে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করেও জীবিকা নির্ভর করেন অনেকে। দ্বীপটির রিসোর্টগুলোতে বাংলাদেশিরা কর্মরত আছেন। এছাড়া সবজি ও অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত আছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি।

দ্বীপটিকে ঘিরে রয়েছে আরো ছোট ছোট কয়েকটি উপদ্বীপ। নৌকা, স্পীডবোর্ড অথবা শীপে করে সেসব দ্বীপ ভ্রমণের রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ। আমরা তেলুক নিপা সী-বিচ থেকে গিয়াম, মেন্তাগোর ও সিম্পানসহ কয়েকটি উপদ্বীপে যাওয়ার একটি প্যাকেজ উপভোগ করেছি। আপনি ইচ্ছে করলে পাছির বোগাক এবং কোরাল বীচ থেকেও এ প্যাকেজগুলো নিতে পারেন। পাংকুড়ে ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হয়েছে হেটে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়ার। তবে এসময়ে অবশ্যই পায়ে জুতা রাখবেন, না হলে পায়ের নিচে পাথর এবং জোকের মতো এক প্রজাতির প্রাণী পড়তে পারে যা সত্যি অস্বস্তিকর। তবে সকাল ১১টা থেকে ১টার মধ্যে ফিরে না আসলে আমাদের মতো আপনাকেও বাড়তি টাকা খরচ করে ফিরতে হতে পারে।

দু’দিনের পাংকুড় ভ্রমণের শেষ দিনটা সমুদ্র উপকুলে অলস সময় পার করেছি। অবশ্য রাতে টোল ফ্রি চকোলেটের মার্কেট, কাপড়ের দোকান ও সৈকতের সী ফুড দারুণ উপভোগ করেছি আমরা। তবে পরিকল্পনা মাফিক গেলে একদিনেও দারুণ পাংকুড় ট্যুর করতে পারেন আপনি। পাংকুড়ের শান্ত সী-বিচে কুমিরের আনাগোনা আছে বলে শুনেছি আমরা, এজন্য একটু সাবধানতা অবলম্বন করেই চলবেন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ভ্রমন পীপাসু‌দের চো‌খে পাংকুড় দ্বীপের রূপ আর সৌন্দর্য

Update Time : ০১:০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

মালয়েশিয়ার পাংকুড় দ্বীপের রূপ আর সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। সমুদ্র উপভোগের জন্য যারা উন্মুখ হয়ে থাকেন তারা নির্দ্বিধায় পাংকুড় ভ্রমণে যেতে পারেন। পুরো দ্বীপজুড়ে সবুজের ছড়াছড়ি। এরই মাঝে পাহাড় আর সমুদ্রের অসাধারণ মিতালি।

রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ২৪৫ কিলোমিটার দূরের এ দ্বীপটি পেরাক রাজ্যেরই একটি শহর। ১৮ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে জনসংখ্যা মাত্র ২৫ হাজার। এখানকার স্থানীয় নাগরিকেরা খুব সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। সহজ-সরল প্রকৃতির স্থানীয়রা আপনাকে সবধরনের সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।

আমরা সকাল সাড়ে নয়টায় কুয়ালালামপুর থেকে রওয়ানা হয়েছি। যাত্রা সঙ্গী ৪ জন, পরিবহন হিসাবে ছিলো মবিন ভাইয়ের হাই হাইল্যাক্স। কুয়ালালামপুর থেকে ইপো হয়ে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ম্যারিনা আইল্যান্ড ফেরিঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় চার ঘণ্টা। তবে ফেরির জন্য অপেক্ষার সময়টা একেবারে বৃথা যায়নি।

ইচ্ছে করলে আপনি কুয়ালালামপুরের টিবিএস বাস স্টপ থেকে বাসে করেও সহজেই আসতে পারেন। নামতে হবে সবশেষ লুমুট বাস স্টপে। সেখান থেকে হাঁটা দূরত্বের ফেরিঘাটে পৌঁছে, আসতে পারেন পাংকুড়ে। লুমুট থেকে পাংকুড় যাওয়া আসার ফেরি টিকিট ১৬ রিঙ্গিত এবং ম্যারিনা আইল্যান্ড থেকে ১৪ রিঙ্গিত। ঘাটে পৌঁছে আমাদের মতো আপনিও গাড়ি ভাড়া করতে পারেন, সেজন্য আপনার ড্রাংভিং লাইসেন্স কিংবা অন্যান্য কাগজপত্রেরও প্রয়োজন হবে না। গাড়ি ভাড়া আলোচনা সাপেক্ষে, ১২০ থেকে ১৮০ রিঙ্গিতের মধ্যে। গাড়ির পরিবর্তে মোটর বাইকও সস্তায় পাবেন ফেরি ঘাটেই।

থাকার জন্য আমরা অনলাইন বুকিং এ আস্থা না রেখে নিজেরাই সমুদ্র উপকূলে সাশ্রয়ী মূল্যে দারুণ একটি রিসোর্ট খুঁজে নিলাম। পড়ন্ত বিকেলে হেলে পড়া সূর্যটা যখন পাহাড়ের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে তখন আমরা সমুদ্র স্নানে। শান্ত সমুদ্রে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটালাম, মাঝে রাতের খাবারটাও সেরে নিলাম।

পুরো পাংকুড় ঘুরে আসতে আপনার ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। তবে পাংকুড়ের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস আর ঐহিত্য, ঘুরতে এসে তারই স্বাক্ষী হলাম আমরা।

১৭৪৮ সালে এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসেন ডাচরা ১৮৭৬ সালে দুর্গও গড়ে তোলেন তারা, নিষিদ্ধ করেন মালয়েশিয়ানদের এই দ্বীপে প্রবেশের। পরবর্তিতে ডাচদের হটিয়ে দীপটি পুনরুদ্ধার করেন মালয়রা, ভেঙ্গে ফেলেন সে দুর্গ। তবে ইতিহাসের স্মৃতি হিসাবে পুনর্নির্মাণ করেন ডাচদের আদলে তৈরি সে দুর্গের একটি নিদর্শন।

এই স্থাপনা ছাড়াও সমুদ্রের মাঝে ভাসমান মসজিদও মন কেড়েছে আমাদের। রাত ও দিনে মসজিদ দেখার পাশাপাশি বদ্ধদের মন্দিরেও বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি আমরা।

পাংকুড়ের মানুষের জীবন-যাত্রা ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তবে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করেও জীবিকা নির্ভর করেন অনেকে। দ্বীপটির রিসোর্টগুলোতে বাংলাদেশিরা কর্মরত আছেন। এছাড়া সবজি ও অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত আছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি।

দ্বীপটিকে ঘিরে রয়েছে আরো ছোট ছোট কয়েকটি উপদ্বীপ। নৌকা, স্পীডবোর্ড অথবা শীপে করে সেসব দ্বীপ ভ্রমণের রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ। আমরা তেলুক নিপা সী-বিচ থেকে গিয়াম, মেন্তাগোর ও সিম্পানসহ কয়েকটি উপদ্বীপে যাওয়ার একটি প্যাকেজ উপভোগ করেছি। আপনি ইচ্ছে করলে পাছির বোগাক এবং কোরাল বীচ থেকেও এ প্যাকেজগুলো নিতে পারেন। পাংকুড়ে ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হয়েছে হেটে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়ার। তবে এসময়ে অবশ্যই পায়ে জুতা রাখবেন, না হলে পায়ের নিচে পাথর এবং জোকের মতো এক প্রজাতির প্রাণী পড়তে পারে যা সত্যি অস্বস্তিকর। তবে সকাল ১১টা থেকে ১টার মধ্যে ফিরে না আসলে আমাদের মতো আপনাকেও বাড়তি টাকা খরচ করে ফিরতে হতে পারে।

দু’দিনের পাংকুড় ভ্রমণের শেষ দিনটা সমুদ্র উপকুলে অলস সময় পার করেছি। অবশ্য রাতে টোল ফ্রি চকোলেটের মার্কেট, কাপড়ের দোকান ও সৈকতের সী ফুড দারুণ উপভোগ করেছি আমরা। তবে পরিকল্পনা মাফিক গেলে একদিনেও দারুণ পাংকুড় ট্যুর করতে পারেন আপনি। পাংকুড়ের শান্ত সী-বিচে কুমিরের আনাগোনা আছে বলে শুনেছি আমরা, এজন্য একটু সাবধানতা অবলম্বন করেই চলবেন।