০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১২ বছর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলকেস ড্রাইভার গ্রেফতার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 19

রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় বাসু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলকেসকে (৫২) প্রায় ১২ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশাল মহানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

বাসু হত্যায় চার মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে সাভারে আজাহার ও সানুকেও হত্যা করে আলকেস। এই দীর্ঘ সময়ে ছদ্মবেশে পলাতক থেকে আরও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছে সে। যার মধ্যে বাস চাপায় হত্যাসহ ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক। র‌্যাব জানায়, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাই চিনু ও বাসুর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেই জমির ঘটনা নিয়ে ২০১২ সালে আলকেস আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে বাসুর ওপর হামলা চালায়। বাসুকে গুলি করে হত্যা করে।

মামলার বিবরণ দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার বাসু মিয়া ও তার বড় ভাই চিনু মিয়ার নামে শাহ আলী থানা এলাকার নবাবেরবাগের চটপারি এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। যা আজগর আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বাৎসরিকভাবে লিজ দেওয়া ছিল। কিন্তু এক সময় আসামি আজগর আলী প্রতারণামূলকভাবে জাল দলিল করে নিজের নামে নিয়ে নেয় এবং পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে অবৈধভাবে স্থানীয় একটি মৎস্যজীবী সমিতির নামে হস্তান্তর করে। জমির মালিকানা নিয়ে চিনু এবং বাসু মিয়ার সঙ্গে সেই সমিতির বিরোধের সৃষ্টি হয়।

২০১২ সালের ১৪ মে বাসু মিয়া তাদের নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি দিতে গেলে সমিতির সদস্য আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদম আলী ও লেবুসহ ছয় থেকে সাত জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় আসামি আলকেসের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র গুলি করলে বাসুর মাথার বাম পাশে লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তী সময়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আদালত বিচার কাজ পরিচালনা শেষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজ নামের ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং কদম আলী ও লেবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসামি আলকেসের বিরুদ্ধে বাসু হত্যা মামলা দায়ের পর চার মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা শুরু করে আলকেস। এই ব্যবসা করতে গিয়ে বাসু হত্যা মামলার আসামি আজাহার ও শানুর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তার। পরে সেই বিরোধের জেরে সাভার এলাকায় নির্মমভাবে শানু ও আজহারকে হত্যা করা হয়। এই মামলাতেও আকলেস সাভার থানায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

এছাড়াও শাহ আলী থানায় ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টুক্ত পলাতক আসামি সে। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সে নিজে আত্মগোপনে চলে যায়। ১২ বছর ধরে ঠিকানা পরিবর্তন করে, বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিল সে।

একপর্যায়ে বরিশাল গিয়ে ট্রাকে চালকে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে সে। পরে ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয় তার। এই পেশাতে এসেও বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত হয়। এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানী থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা হলে সে পালিয়ে কুয়াকাটা মাছ ধরা ট্রলারে কাজ শুরু করে।

সেখান থেকে পরে ফিরে এসে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত আসামি আলকেস গত দেড় বছর ধরে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে আসছিল।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

১২ বছর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলকেস ড্রাইভার গ্রেফতার

Update Time : ০৫:৩০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় বাসু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলকেসকে (৫২) প্রায় ১২ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশাল মহানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

বাসু হত্যায় চার মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে সাভারে আজাহার ও সানুকেও হত্যা করে আলকেস। এই দীর্ঘ সময়ে ছদ্মবেশে পলাতক থেকে আরও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছে সে। যার মধ্যে বাস চাপায় হত্যাসহ ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক। র‌্যাব জানায়, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাই চিনু ও বাসুর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেই জমির ঘটনা নিয়ে ২০১২ সালে আলকেস আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে বাসুর ওপর হামলা চালায়। বাসুকে গুলি করে হত্যা করে।

মামলার বিবরণ দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার বাসু মিয়া ও তার বড় ভাই চিনু মিয়ার নামে শাহ আলী থানা এলাকার নবাবেরবাগের চটপারি এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। যা আজগর আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বাৎসরিকভাবে লিজ দেওয়া ছিল। কিন্তু এক সময় আসামি আজগর আলী প্রতারণামূলকভাবে জাল দলিল করে নিজের নামে নিয়ে নেয় এবং পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে অবৈধভাবে স্থানীয় একটি মৎস্যজীবী সমিতির নামে হস্তান্তর করে। জমির মালিকানা নিয়ে চিনু এবং বাসু মিয়ার সঙ্গে সেই সমিতির বিরোধের সৃষ্টি হয়।

২০১২ সালের ১৪ মে বাসু মিয়া তাদের নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি দিতে গেলে সমিতির সদস্য আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদম আলী ও লেবুসহ ছয় থেকে সাত জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় আসামি আলকেসের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র গুলি করলে বাসুর মাথার বাম পাশে লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তী সময়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আদালত বিচার কাজ পরিচালনা শেষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজ নামের ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং কদম আলী ও লেবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসামি আলকেসের বিরুদ্ধে বাসু হত্যা মামলা দায়ের পর চার মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা শুরু করে আলকেস। এই ব্যবসা করতে গিয়ে বাসু হত্যা মামলার আসামি আজাহার ও শানুর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় তার। পরে সেই বিরোধের জেরে সাভার এলাকায় নির্মমভাবে শানু ও আজহারকে হত্যা করা হয়। এই মামলাতেও আকলেস সাভার থানায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

এছাড়াও শাহ আলী থানায় ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টুক্ত পলাতক আসামি সে। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সে নিজে আত্মগোপনে চলে যায়। ১২ বছর ধরে ঠিকানা পরিবর্তন করে, বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিল সে।

একপর্যায়ে বরিশাল গিয়ে ট্রাকে চালকে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে সে। পরে ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয় তার। এই পেশাতে এসেও বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত হয়। এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানী থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা হলে সে পালিয়ে কুয়াকাটা মাছ ধরা ট্রলারে কাজ শুরু করে।

সেখান থেকে পরে ফিরে এসে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত আসামি আলকেস গত দেড় বছর ধরে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে আসছিল।