০৫:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হু করে বাড়ছে চালের দাম। পাইকার, মিলার আর কোম্পানির কালো থাবাকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:০২:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • 29

বাজারে অস্থিরতা। ভোক্তাদের নাভিশ্বাস। মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। এরই মধ্যে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। পাইকার, মিলার আর কোম্পানির কালো থাবাকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা। খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বড় বড় ছয়টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করেছেন। মিলাররাও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন। তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ‘কালো থাবা’র কারণেই চালের দাম বাড়ছে।

শুক্রবার সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে সরু চাল কিছুদিন আগেও ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়ে ৫৫-৫৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে।আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। যদিও কিছুদিন আগে তা ৪৬-৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে নাজিরশাইল চাল এক সপ্তাহ আগেও ৬৫ টাকায় পাওয়া যেত অথচ এখন তা কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৭৫ টাকায় ঠেকেছে ।

দামের বৃদ্ধি প্রসঙ্গে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা। তারা বলছেন, চাল দামের বৃদ্ধিতে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো যোগসাজশ নেই। পাইকার থেকে যেই দামে ক্রয় করেন সে অনুযায়ী ২-৩ টাকা লাভে তা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। কাওরান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির চাল ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, বিভিন্ন চালের কোম্পানি তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা চাল মজুত করে রাখেন। এরপর তাদের সুবিধামতো দাম বৃদ্ধি করে দেয়। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের বেশি দামে কিনে সেভাবেই বিক্রি করতে হয়। বরিশাল রাইস এজেন্সির জাহিদ হাসান বলেন, চালের কোম্পানি বিভিন্নভাবে কারসাজি করে। তারা চাল গুদামে রেখে দেয়। এরপর নিজেরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। নইলে এই সময়ে দাম বাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর সবসময় তারা ধানের দাম বাড়ছে, খরচ বাড়ছে এসব অজুহাত দেয়। সবুজবাগ থানাধীন রাজারবাগের আল-হারামাইনসের খুচরা ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আমরা পাইকারদের থেকে চাল কিনি। তারা বলে, চালের সংকট আছে। তাই মিলাররা দাম বাড়াইছে। পাইকারদের কাছে সকালে গেলে এক রেট বিকালে গেলে আরেক রেট দেয়।

চাল দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন চালকল মালিকরা। তারা বলছেন, মিল থেকে কখনই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাল অতিরিক্ত মজুত করে দাম বৃদ্ধি করছে। তাই ভরা মৌসুমেও চালের দাম এতো বেড়েছে। দেশের চালকল মালিকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম লায়েক আলী মানবজমিনকে বলেন, মিলে চালের দাম সবসময় কম থাকে। এখন এখানে দাম কম। যদি বিক্রির মোকামে দাম বেশি থাকে তাহলে সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। আমরা ঠিকই কম দামে দিচ্ছি। কিন্তু মোকামে কি হচ্ছে তা জানি না। আবার খুচরায়ও ৫-৭ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এই তদারকি কেউ করে না। সবাই মিলারদের দোষ দেয়। ধানের দাম কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম কমে যাচ্ছে। ধানের দাম ১০০-১৫০ টাকা কমে গেছে। চালের দামও কমবে।
ভরা মৌসুমে কখনই চালের বাজার এতো অস্থীতিশীল ছিল না মন্তব্য করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, ধান-চালের ব্যবসা করে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেশের সেরা সেরা শিল্পপতিরা এই ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। ভরা মৌসুমে চালের চাহিদা যেখানে পাঁচ গাড়ি হওয়ার কথা সেখানে ২০ গাড়ি হচ্ছে। কারণ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ গাড়ি বাজারে ছেড়ে ১৫ গাড়ি মজুত করছে। এ কারণেই চালের কৃত্রিম চাহিদা বাড়ছে। বাজার অস্থীতিশীল হচ্ছে। মধ্যবিত্ত চালের ব্যবসায়ীরা সীমিত মূল্যধনে ধীরে ধীরে পণ্য কিনে ব্যবসা করে। তাই তারা চালের মজুত করতে পারে না। এতে বাজার সহনীয় পর্যায় থাকে। কিন্তু প্রভাবশালী করপোরেট ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে অনেক মাল কিনে মজত করছে। এতেই বাজার এমন হচ্ছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

হু করে বাড়ছে চালের দাম। পাইকার, মিলার আর কোম্পানির কালো থাবাকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা।

Update Time : ০৩:০২:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

বাজারে অস্থিরতা। ভোক্তাদের নাভিশ্বাস। মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। এরই মধ্যে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। পাইকার, মিলার আর কোম্পানির কালো থাবাকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা। খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বড় বড় ছয়টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করেছেন। মিলাররাও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন। তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ‘কালো থাবা’র কারণেই চালের দাম বাড়ছে।

শুক্রবার সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে সরু চাল কিছুদিন আগেও ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়ে ৫৫-৫৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে।আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। যদিও কিছুদিন আগে তা ৪৬-৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে নাজিরশাইল চাল এক সপ্তাহ আগেও ৬৫ টাকায় পাওয়া যেত অথচ এখন তা কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৭৫ টাকায় ঠেকেছে ।

দামের বৃদ্ধি প্রসঙ্গে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা। তারা বলছেন, চাল দামের বৃদ্ধিতে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো যোগসাজশ নেই। পাইকার থেকে যেই দামে ক্রয় করেন সে অনুযায়ী ২-৩ টাকা লাভে তা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। কাওরান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির চাল ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, বিভিন্ন চালের কোম্পানি তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা চাল মজুত করে রাখেন। এরপর তাদের সুবিধামতো দাম বৃদ্ধি করে দেয়। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের বেশি দামে কিনে সেভাবেই বিক্রি করতে হয়। বরিশাল রাইস এজেন্সির জাহিদ হাসান বলেন, চালের কোম্পানি বিভিন্নভাবে কারসাজি করে। তারা চাল গুদামে রেখে দেয়। এরপর নিজেরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। নইলে এই সময়ে দাম বাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আর সবসময় তারা ধানের দাম বাড়ছে, খরচ বাড়ছে এসব অজুহাত দেয়। সবুজবাগ থানাধীন রাজারবাগের আল-হারামাইনসের খুচরা ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আমরা পাইকারদের থেকে চাল কিনি। তারা বলে, চালের সংকট আছে। তাই মিলাররা দাম বাড়াইছে। পাইকারদের কাছে সকালে গেলে এক রেট বিকালে গেলে আরেক রেট দেয়।

চাল দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন চালকল মালিকরা। তারা বলছেন, মিল থেকে কখনই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাল অতিরিক্ত মজুত করে দাম বৃদ্ধি করছে। তাই ভরা মৌসুমেও চালের দাম এতো বেড়েছে। দেশের চালকল মালিকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম লায়েক আলী মানবজমিনকে বলেন, মিলে চালের দাম সবসময় কম থাকে। এখন এখানে দাম কম। যদি বিক্রির মোকামে দাম বেশি থাকে তাহলে সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। আমরা ঠিকই কম দামে দিচ্ছি। কিন্তু মোকামে কি হচ্ছে তা জানি না। আবার খুচরায়ও ৫-৭ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এই তদারকি কেউ করে না। সবাই মিলারদের দোষ দেয়। ধানের দাম কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম কমে যাচ্ছে। ধানের দাম ১০০-১৫০ টাকা কমে গেছে। চালের দামও কমবে।
ভরা মৌসুমে কখনই চালের বাজার এতো অস্থীতিশীল ছিল না মন্তব্য করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, ধান-চালের ব্যবসা করে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেশের সেরা সেরা শিল্পপতিরা এই ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। ভরা মৌসুমে চালের চাহিদা যেখানে পাঁচ গাড়ি হওয়ার কথা সেখানে ২০ গাড়ি হচ্ছে। কারণ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ গাড়ি বাজারে ছেড়ে ১৫ গাড়ি মজুত করছে। এ কারণেই চালের কৃত্রিম চাহিদা বাড়ছে। বাজার অস্থীতিশীল হচ্ছে। মধ্যবিত্ত চালের ব্যবসায়ীরা সীমিত মূল্যধনে ধীরে ধীরে পণ্য কিনে ব্যবসা করে। তাই তারা চালের মজুত করতে পারে না। এতে বাজার সহনীয় পর্যায় থাকে। কিন্তু প্রভাবশালী করপোরেট ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে অনেক মাল কিনে মজত করছে। এতেই বাজার এমন হচ্ছে।