০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানের পিতার পরিচয়ের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 20

একমাত্র সন্তানের বয়স বাড়তে বাড়তে ছয় ছুঁয়েছে, তবুও ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি স্কুলে। কারণ সন্তানের বাবা হিসেবে কাউকে দেখাতে পারছেন না মা সুমী আক্তার। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। সন্তানের পিতৃপরিচয় চেয়ে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সুমী আক্তার।

জানা যায়, সুমীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বশির হাওলাদারের। নিজের প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে সুমীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন বশির। কিন্তু পরে সুমী অন্তঃসত্তা হওয়ার পর তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেননি বশির।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা সবাই জানেন সুমী ও বশির হাওলাদারের দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু আইনি জটিলতা ও বশিরের ক্ষমতা ও আর্থিক দম্ভে সবাই এখন অসহায়। কেউ দাঁড়াচ্ছেন না সুমীর পাশে।

এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ হলেও, বশির সুমীকে মেনে না নেয়ায় এখনও স্বামীর বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। সন্তান স্বাধীন বাবা বলে ডাকতে পারেনি বশিরকে। তাই প্রশাসন ও মানবাধিকার পরিষদের কাছে আইনি সহায়তা চাইছেন সুমী। দাবি করেছেন স্ত্রীর অধিকার।

কলাপাড়ার খেপুপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসায় সুমী যখন ফাজিলের (ডিগ্রি) ছাত্রী তখন টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের তৎকালীন ইউপি মেম্বার বশির উদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন বশির তার প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন রাখেন। সেই ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে।

এক পর্যায়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি সুমীকে বিয়ে করেন এবং পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।

সুমী বিয়ের বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা প্রথমে মেনে নেননি। তবে পরে তার পরিবার বিয়েটি মেনে নেন। এরপর বশির প্রায়ই কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নে তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যেতেন।

২০১৬ সালে সুমী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বশিরের প্রথম স্ত্রীর খবর প্রকাশ পায়। এরপর বশির উদ্দিন সটকে পড়েন। সুমীকে স্ত্রী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন।

কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সুমী আক্তার পটুয়াখালী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন। নিজেকে অসহায় দাবি করে ছয় বছরের পুত্রসন্তানসহ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনের সহায়তা চেয়েছেন সুমী আক্তার।

সুমী বলেন, গত ছয় বছর ধরে ঘুমাতে পারছেন সন্তানের কি হবে এ চিন্তায়। তার লিভার ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না তার বাবা স্বাধীনকে মেনে না নেয়ায়। এখন মানুষ তার দিকে আঙ্গুল তুলছে। পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।

সুমীর স্বজনরা বলেন, ছোট সন্তান নিয়ে সুমী এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন। গত ছয় বছর ধরে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে আদালত ও পথে পথে ঘুরছেন। তার কারণে এখন পরিবার প্রায় নিঃস্ব। ছোট স্বাধীন বাবা বাবা করলেও গত ছয় বছরে একদিনও তাকে দেখতে আসেননি বশির।

আরও পড়ুন: হাসছেন অপু বিশ্বাস, কাঁদলেন বুবলী!

সুমী ও বশিরের বিয়ের বিষয়টি জানতেন টিয়াখালী ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি সদস্য ও বশিরের স্বজনরা। তারা জানান, তাদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে পরিষদে একাধিক সালিশ বসেছিলো। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বশির এই বিয়ে ও সন্তানকে মানতে অস্বীকার করেন।

বশিরের ভাতিজা জানান, তার চাচীকে নিয়ে বসির যখন কলাপাড়া পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন অনেকদিন তিনি বাজার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বশির হাওলাদার জানান তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাই এ বিষয়ে কথা বলবেন না বলে সংযোগটি কেটে দেন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

সন্তানের পিতার পরিচয়ের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে

Update Time : ১০:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

একমাত্র সন্তানের বয়স বাড়তে বাড়তে ছয় ছুঁয়েছে, তবুও ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি স্কুলে। কারণ সন্তানের বাবা হিসেবে কাউকে দেখাতে পারছেন না মা সুমী আক্তার। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। সন্তানের পিতৃপরিচয় চেয়ে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সুমী আক্তার।

জানা যায়, সুমীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বশির হাওলাদারের। নিজের প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে সুমীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন বশির। কিন্তু পরে সুমী অন্তঃসত্তা হওয়ার পর তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেননি বশির।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা সবাই জানেন সুমী ও বশির হাওলাদারের দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু আইনি জটিলতা ও বশিরের ক্ষমতা ও আর্থিক দম্ভে সবাই এখন অসহায়। কেউ দাঁড়াচ্ছেন না সুমীর পাশে।

এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ হলেও, বশির সুমীকে মেনে না নেয়ায় এখনও স্বামীর বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। সন্তান স্বাধীন বাবা বলে ডাকতে পারেনি বশিরকে। তাই প্রশাসন ও মানবাধিকার পরিষদের কাছে আইনি সহায়তা চাইছেন সুমী। দাবি করেছেন স্ত্রীর অধিকার।

কলাপাড়ার খেপুপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসায় সুমী যখন ফাজিলের (ডিগ্রি) ছাত্রী তখন টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের তৎকালীন ইউপি মেম্বার বশির উদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন বশির তার প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন রাখেন। সেই ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে।

এক পর্যায়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি সুমীকে বিয়ে করেন এবং পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।

সুমী বিয়ের বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা প্রথমে মেনে নেননি। তবে পরে তার পরিবার বিয়েটি মেনে নেন। এরপর বশির প্রায়ই কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নে তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যেতেন।

২০১৬ সালে সুমী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বশিরের প্রথম স্ত্রীর খবর প্রকাশ পায়। এরপর বশির উদ্দিন সটকে পড়েন। সুমীকে স্ত্রী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন।

কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সুমী আক্তার পটুয়াখালী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন। নিজেকে অসহায় দাবি করে ছয় বছরের পুত্রসন্তানসহ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনের সহায়তা চেয়েছেন সুমী আক্তার।

সুমী বলেন, গত ছয় বছর ধরে ঘুমাতে পারছেন সন্তানের কি হবে এ চিন্তায়। তার লিভার ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না তার বাবা স্বাধীনকে মেনে না নেয়ায়। এখন মানুষ তার দিকে আঙ্গুল তুলছে। পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।

সুমীর স্বজনরা বলেন, ছোট সন্তান নিয়ে সুমী এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন। গত ছয় বছর ধরে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে আদালত ও পথে পথে ঘুরছেন। তার কারণে এখন পরিবার প্রায় নিঃস্ব। ছোট স্বাধীন বাবা বাবা করলেও গত ছয় বছরে একদিনও তাকে দেখতে আসেননি বশির।

আরও পড়ুন: হাসছেন অপু বিশ্বাস, কাঁদলেন বুবলী!

সুমী ও বশিরের বিয়ের বিষয়টি জানতেন টিয়াখালী ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি সদস্য ও বশিরের স্বজনরা। তারা জানান, তাদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে পরিষদে একাধিক সালিশ বসেছিলো। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বশির এই বিয়ে ও সন্তানকে মানতে অস্বীকার করেন।

বশিরের ভাতিজা জানান, তার চাচীকে নিয়ে বসির যখন কলাপাড়া পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন অনেকদিন তিনি বাজার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বশির হাওলাদার জানান তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাই এ বিষয়ে কথা বলবেন না বলে সংযোগটি কেটে দেন।