১১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:১৪:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২
  • 17

গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তিনি একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে মালদ্বীপে গেছেন। সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে যাবেন। গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ডেইলি মিররের এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপে পালিয়ে গেছেন। মালদ্বীপের সূত্রগুলো বলছে গোতাবায়া সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যাবেন। ডেইলি মিরর, বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টার্স।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে মালদ্বীপে গেছেন গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে। এদিকে গোতাবায়াকে মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে ভারত সহায়তা করেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা অস্বীকার করেছে দেশটি। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় দূতাবাসের টুইটার পেজে বলা হয়েছে, এ খবর ‘প্রকৃতভাবে ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক’। গত শনিবার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছাড়ার পর গোতাবায়া রাজাপক্ষে কোথায় ছিলেন, তা জানা যাচ্ছিল না। গতকাল বুধবার জানা গেল, গতকাল রাতে তিনি শ্রীলঙ্কা ছেড়ে মালদ্বীপে পৌঁছেছেন। প্রেসিডেন্টের পদ থেকে আজ বুধবার পদত্যাগপত্র শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর কথা জানিয়েছেন দেশটির স্পিকার। এদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে মালদ্বীপে গতকাল মধ্যরাতে পৌঁছেছেন বলে দেশটির ভারতীয় হাইকমিশনের টুইটার পেজে বলা হয়েছে। গোতাবায়াকে মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা ‘প্রকৃতভাবে ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক’ বলেছে ভারত।

গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢোকেন। এরপর এদিন রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। ঘোষণা অনুযায়ী বুধবারই তাঁর পদত্যাগের কথা। এর আগে তিনি দেশ ছাড়লেন।

গোতাবায়াকে বের করে দিতে মালদ্বীপে বিক্ষোভ : শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে মালদ্বীপ থেকে বের করে দিতে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মালদ্বীপের নাগরিক এবং প্রবাসী শ্রীলঙ্কানরা দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ করে গোতাবায়াকে বের করে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।  গতকাল বুধবার মালদ্বীপের টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধানের বরাতে এই খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর অনলাইন। ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৩টার দিকে সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে স্ত্রী এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে পালিয়ে যান। মালদ্বীপ থেকে তিনি কোথায় যেতে চান তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সাংবিধানিক বিধান নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন শঙ্কা থেকেই তিনি দেশ ছাড়তে চাচ্ছিলেন। তার শঙ্কা ছিলো পদত্যাগের পর নতুন প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এর আগে সোমবারও তিনি আকাশ ও সমুদ্রপথে দেশত্যাগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে দেশ ছাড়তে দেয়া হয়নি।

গোতাবায়ার পদত্যাগ : প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বুধবারই পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে।  স্পিকার বলেছেন, আগের ঘোষণামতে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন। তাঁকে প্রেসিডেন্ট এ কথা জানিয়েছেন।

আগেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৩ জুলাই তিনি পদত্যাগ করবেন। গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্য গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিক্ষোভকারীদের দখলে : শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বর্তমানে তাঁর কার্যালয়ে নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। তবে তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে থাকা বিবিসির সাংবাদিক টেসা ওং জানান, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যান। তাঁরা কার্যালয়ের ফটক ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রাঙ্গণ এখন বিক্ষোভকারীতে পরিপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখন বিক্ষোভকারীদের দখলে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেয়া বিক্ষোভকারীরা আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। তাঁরা সেখানে সেলফি তুলছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভেতরে ঢোল বাজিয়ে, চিৎকার করে নানান স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে বলছেন, ‘রনিল পাগল’, ‘গোতাবায়া পাগল।’ বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ভবনের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা সেখানে দাঁড়িয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বারান্দায় শিখা জ্বালিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলোচনায় ৩ নাম : অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালদ্বীপে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত মঙ্গলবার রাতে একটি সামরিক বিমানে তিনি পালিয়ে মালদ্বীপে যান। এখন শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও পদ থেকে সরে যেতে চান। তিনি অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ২০ জুলাই পার্লামেন্ট সদস্যদের গোপন ভোটে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মাত্র একবার পদ শূন্য হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের ১ মে প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন।

গোতাবায়া পদত্যাগ করলে তাঁর জায়গায় সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন তিনজন। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি ডালেস আলাহাপেরুমা ও বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা। পার্লামেন্ট ২০ জুলাই গোপন ভোট হবে। রনিল বিক্রমাসিংহে বাকি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। এসএলপিপির একটি অংশ তাঁকে সমর্থন করে যাচ্ছে। তবে এসএলপিপির আরেকটি অংশ তাঁকে সে পদে রাখতে চায় না। তাঁকে রুখতে তারা বদ্ধপরিকর। এসএলপিপির এ অংশের সমর্থন আছে ডালেস আলাহাপেরুমার প্রতি। এর আগে রাজনৈতিক দল এসজেবি তাদের প্রার্থী হিসেবে সাজিদ প্রেমাদাসার নাম ঘোষণা করেছে। যে প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। গত শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢোকেন।

দেশত্যাগের আগে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সোমবার তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেন বলে জানা গেছে। গোতাবায়া পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই কর্মকর্তা পদত্যাগপত্রটি স্পিকারের কাছে হস্তান্তর করবেন। গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে ১৩ জুলাই থেকে।

রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট : এর আগে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার। শ্রীলঙ্কার স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিতে। সংবিধানের ৩৭ ধারার ১ অনুচ্ছেদের আওতায় এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনে শ্রীলঙ্কার চলমান অস্থিরতা নিয়ে দেয়া লাইভ আপডেটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রনিল বিক্রমাসিংহকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি গোতাবায়া। এমনকি গোতাবায়ার সম্প্রতি দেয়া সব ঘোষণাই হয় পার্লামেন্টের স্পিকার, না হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে আসছে।

এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে গণআন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ । তাঁরা গোতাবায়া ও রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়, স্পিকারের এ ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীরা কী প্রতিক্রিয়া দেখান। গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গোতাবায়ার দেশ ছেড়ে পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গতকাল দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোতেও কারফিউ বলবৎ থাকবে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ থামাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

উচ্ছৃঙ্খল আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। শ্রীলঙ্কা অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটের প্রেক্ষাপটে গত মার্চ মাসে দেশটির হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন।

গত শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী গোতাবায়ার বাসভবনে ঢুকে পড়েন। এদিন রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোতেও কারফিউ বলবৎ থাকবে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ থামাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার স্থগিত : নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। এই পরিস্থিতিতে দেশটির জাতীয় টেলিভিশন রুপাভিহিনির সম্প্রচার স্থগিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কার্যালয়ে ভিড় জমালে প্রকৌশলীরা সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি অনলাইন শ্রীলঙ্কার চলমান অস্থিরতা নিয়ে দেয়া লাইভ আপডেটে এই তথ্য দিয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

Update Time : ০৩:১৪:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২

গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তিনি একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে মালদ্বীপে গেছেন। সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে যাবেন। গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ডেইলি মিররের এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপে পালিয়ে গেছেন। মালদ্বীপের সূত্রগুলো বলছে গোতাবায়া সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যাবেন। ডেইলি মিরর, বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টার্স।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে মালদ্বীপে গেছেন গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে। এদিকে গোতাবায়াকে মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে ভারত সহায়তা করেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা অস্বীকার করেছে দেশটি। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় দূতাবাসের টুইটার পেজে বলা হয়েছে, এ খবর ‘প্রকৃতভাবে ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক’। গত শনিবার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছাড়ার পর গোতাবায়া রাজাপক্ষে কোথায় ছিলেন, তা জানা যাচ্ছিল না। গতকাল বুধবার জানা গেল, গতকাল রাতে তিনি শ্রীলঙ্কা ছেড়ে মালদ্বীপে পৌঁছেছেন। প্রেসিডেন্টের পদ থেকে আজ বুধবার পদত্যাগপত্র শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর কথা জানিয়েছেন দেশটির স্পিকার। এদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে মালদ্বীপে গতকাল মধ্যরাতে পৌঁছেছেন বলে দেশটির ভারতীয় হাইকমিশনের টুইটার পেজে বলা হয়েছে। গোতাবায়াকে মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা ‘প্রকৃতভাবে ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক’ বলেছে ভারত।

গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢোকেন। এরপর এদিন রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। ঘোষণা অনুযায়ী বুধবারই তাঁর পদত্যাগের কথা। এর আগে তিনি দেশ ছাড়লেন।

গোতাবায়াকে বের করে দিতে মালদ্বীপে বিক্ষোভ : শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে মালদ্বীপ থেকে বের করে দিতে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মালদ্বীপের নাগরিক এবং প্রবাসী শ্রীলঙ্কানরা দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ করে গোতাবায়াকে বের করে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।  গতকাল বুধবার মালদ্বীপের টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধানের বরাতে এই খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর অনলাইন। ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৩টার দিকে সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে স্ত্রী এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে পালিয়ে যান। মালদ্বীপ থেকে তিনি কোথায় যেতে চান তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তারে সাংবিধানিক বিধান নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন শঙ্কা থেকেই তিনি দেশ ছাড়তে চাচ্ছিলেন। তার শঙ্কা ছিলো পদত্যাগের পর নতুন প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এর আগে সোমবারও তিনি আকাশ ও সমুদ্রপথে দেশত্যাগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে দেশ ছাড়তে দেয়া হয়নি।

গোতাবায়ার পদত্যাগ : প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বুধবারই পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে।  স্পিকার বলেছেন, আগের ঘোষণামতে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন। তাঁকে প্রেসিডেন্ট এ কথা জানিয়েছেন।

আগেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৩ জুলাই তিনি পদত্যাগ করবেন। গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্য গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিক্ষোভকারীদের দখলে : শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বর্তমানে তাঁর কার্যালয়ে নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। তবে তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে থাকা বিবিসির সাংবাদিক টেসা ওং জানান, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যান। তাঁরা কার্যালয়ের ফটক ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রাঙ্গণ এখন বিক্ষোভকারীতে পরিপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখন বিক্ষোভকারীদের দখলে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেয়া বিক্ষোভকারীরা আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। তাঁরা সেখানে সেলফি তুলছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভেতরে ঢোল বাজিয়ে, চিৎকার করে নানান স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে বলছেন, ‘রনিল পাগল’, ‘গোতাবায়া পাগল।’ বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ভবনের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা সেখানে দাঁড়িয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বারান্দায় শিখা জ্বালিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলোচনায় ৩ নাম : অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালদ্বীপে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত মঙ্গলবার রাতে একটি সামরিক বিমানে তিনি পালিয়ে মালদ্বীপে যান। এখন শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও পদ থেকে সরে যেতে চান। তিনি অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ২০ জুলাই পার্লামেন্ট সদস্যদের গোপন ভোটে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মাত্র একবার পদ শূন্য হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের ১ মে প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন।

গোতাবায়া পদত্যাগ করলে তাঁর জায়গায় সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন তিনজন। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি ডালেস আলাহাপেরুমা ও বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা। পার্লামেন্ট ২০ জুলাই গোপন ভোট হবে। রনিল বিক্রমাসিংহে বাকি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। এসএলপিপির একটি অংশ তাঁকে সমর্থন করে যাচ্ছে। তবে এসএলপিপির আরেকটি অংশ তাঁকে সে পদে রাখতে চায় না। তাঁকে রুখতে তারা বদ্ধপরিকর। এসএলপিপির এ অংশের সমর্থন আছে ডালেস আলাহাপেরুমার প্রতি। এর আগে রাজনৈতিক দল এসজেবি তাদের প্রার্থী হিসেবে সাজিদ প্রেমাদাসার নাম ঘোষণা করেছে। যে প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। গত শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢোকেন।

দেশত্যাগের আগে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সোমবার তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেন বলে জানা গেছে। গোতাবায়া পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই কর্মকর্তা পদত্যাগপত্রটি স্পিকারের কাছে হস্তান্তর করবেন। গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে ১৩ জুলাই থেকে।

রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট : এর আগে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার। শ্রীলঙ্কার স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিতে। সংবিধানের ৩৭ ধারার ১ অনুচ্ছেদের আওতায় এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনে শ্রীলঙ্কার চলমান অস্থিরতা নিয়ে দেয়া লাইভ আপডেটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। রনিল বিক্রমাসিংহকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি গোতাবায়া। এমনকি গোতাবায়ার সম্প্রতি দেয়া সব ঘোষণাই হয় পার্লামেন্টের স্পিকার, না হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে আসছে।

এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে গণআন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ । তাঁরা গোতাবায়া ও রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়, স্পিকারের এ ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীরা কী প্রতিক্রিয়া দেখান। গত মঙ্গলবার রাতে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গোতাবায়ার দেশ ছেড়ে পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গতকাল দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোতেও কারফিউ বলবৎ থাকবে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ থামাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

উচ্ছৃঙ্খল আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। শ্রীলঙ্কা অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটের প্রেক্ষাপটে গত মার্চ মাসে দেশটির হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন।

গত শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী গোতাবায়ার বাসভবনে ঢুকে পড়েন। এদিন রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী কলম্বোতেও কারফিউ বলবৎ থাকবে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ থামাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার স্থগিত : নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। এই পরিস্থিতিতে দেশটির জাতীয় টেলিভিশন রুপাভিহিনির সম্প্রচার স্থগিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কার্যালয়ে ভিড় জমালে প্রকৌশলীরা সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি অনলাইন শ্রীলঙ্কার চলমান অস্থিরতা নিয়ে দেয়া লাইভ আপডেটে এই তথ্য দিয়েছে।