০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • 34

রায় শোনার পর পুত্র হারানোর কষ্টে আবরারের মায়ের আর্তনাদ।

আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। আবরার হত্যার পর তাদের ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে আলোচিত এ মামলার রায় ঘিরে সকালে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপওার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়। জোরদার করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। আদালত পাড়ার প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা।

জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকান্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো।

এদিকে আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিল। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক। সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।

মৃত্যুদন্ডের ২০ আসামি

বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ),

সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এসএম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি

বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।

পলাতক তিনজন হচ্ছে- এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

মামলা বৃত্তান্ত

আবরারকে যে রাতে হত্যা করা হয়, তার পরদিন ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তার বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ওইবছর ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ নভেম্বর পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের মধ্যে একজন পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মামলাটি পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তর করে আদেশ জারি হয়। বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত বছরের ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। কারাগারে থাকা ২২ আসামি গত ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তিন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।

এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। এ মামলার চার্জ গঠনের সময় শব্দগত ত্রুটি থাকায় ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ তা সংশোধনের আবেদন করে। পরদিন ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

তদন্তের বিবরণ

আবরার ছিলেন বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। মামলার আসামিদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার ২১ জনের মধ্যে আটজন আদালতে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আবরারকে কীভাবে ক্রিকেট স্টাম্প আর স্কিপিং রোপ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল, সেই ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে আসে তাদের জবানবন্দিতে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আবরারকে ওই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভোরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবরার ফেইসবুকে তার শেষ পোস্টে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই যে ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে ‘শিবির সন্দেহে’ আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠে এলে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়।

গতবছর ১৩ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দেয়ার আগে হত্যার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তৈরি করা একটি ভিডিও সাংবাদিকদের দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। আবরারকে কেবল শিবির সন্দেহে ডেকে নেয়া হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল- সেই প্রশ্ন সেদিন পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে করেছিলেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, শিবির হিসেবে সন্দেহের বিষয়টি ছিল আবরারের ওপর নির্যাতনের একটি কারণ। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।

ছোটখাট বিষয়ে কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করলে, কিংবা কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বললে, কিংবা সালাম না দেয়ার কারণেও এই র‌্যাগিংয়ের নামে, মানে অন্যদের, নতুন যারা আসবে, তাদের আতঙ্কিত করে রাখার জন্যই তারা এই কাজগুলো করে অভ্যস্ত। এসব বিষয় হল বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেখার কথা। কিন্তু তদন্তে পুলিশ হল কর্তৃপক্ষের এক ধরনের ব্যর্থতা দেখতে পেয়েছে বলে সেদিন জানান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল।

মনিরুল সেদিন বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে, রাত ১০টার পর আবরারকে নির্যাতন করা শুরু হয় এবং রাত ২টা ৫০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে যদি তাকে হাসপাতালে নেয়া হতো তাহলে হয়তো এমন পরিণতি হতো না। শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়, সেই কক্ষের আবাসিক ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে, যদিও এজাহারে তার নাম ছিল না।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মনিরুল সেদিন বলেন, অমিত সাহা এর আগেও একজনকে পিটিয়েছে। আবরারকে মারপিটের সময় সে উপস্থিত না থাকলেও তাকে ডেকে আনাসহ তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে তাকে আসামির তালিকায় প্রথম দিকে রাখা হয়েছে। আবরারকে কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালানোর আগে দুই দিন শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিন এবং ওই হলের অতিথি কক্ষে বৈঠক হয়েছিল বলে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় ক্যান্টিনের বৈঠকে আটজন ছিলেন। পরদিন রাত ১০টায় অতিথি কক্ষের বৈঠকে আবরারকে মেরে হল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুই বৈঠকে মোট ১২ জন ছিলেন। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির, ইফতি মোশাররফ সকাল, আকাশ হোসেন, মুজতবা রাফিদ, অমিত সাহা, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সামছুল আরেফিন রাফাত, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, মুনতাসির আল জেমি, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম এবং এএসএম নাজমুস সাদাত।

ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকলেও মেহেদী হাসান রাসেল এবং মুনতাসির ফুয়াদ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রাসেল শেরেবাংলা হলের দোতলায় নামিয়ে রাখা আবরারের মৃতদেহ তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলার জন্য বুয়েটের চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন। আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে নেমে ১০ দফা দাবি তোলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমর্থন প্রকাশ করেন। তাদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবরার হত্যার আসামিদের সাময়িক বহিষ্কার এবং হলগুলোতে নির্যাতন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

Update Time : ১২:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। আবরার হত্যার পর তাদের ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে আলোচিত এ মামলার রায় ঘিরে সকালে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপওার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়। জোরদার করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। আদালত পাড়ার প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা।

জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকান্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো।

এদিকে আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিল। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক। সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।

মৃত্যুদন্ডের ২০ আসামি

বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ),

সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এসএম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি

বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।

পলাতক তিনজন হচ্ছে- এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

মামলা বৃত্তান্ত

আবরারকে যে রাতে হত্যা করা হয়, তার পরদিন ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তার বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ওইবছর ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ নভেম্বর পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের মধ্যে একজন পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মামলাটি পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তর করে আদেশ জারি হয়। বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত বছরের ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। কারাগারে থাকা ২২ আসামি গত ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তিন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।

এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। এ মামলার চার্জ গঠনের সময় শব্দগত ত্রুটি থাকায় ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ তা সংশোধনের আবেদন করে। পরদিন ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

তদন্তের বিবরণ

আবরার ছিলেন বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। মামলার আসামিদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার ২১ জনের মধ্যে আটজন আদালতে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আবরারকে কীভাবে ক্রিকেট স্টাম্প আর স্কিপিং রোপ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল, সেই ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে আসে তাদের জবানবন্দিতে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার পর আবরারকে ওই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভোরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবরার ফেইসবুকে তার শেষ পোস্টে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই যে ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে ‘শিবির সন্দেহে’ আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠে এলে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়।

গতবছর ১৩ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দেয়ার আগে হত্যার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তৈরি করা একটি ভিডিও সাংবাদিকদের দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। আবরারকে কেবল শিবির সন্দেহে ডেকে নেয়া হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল- সেই প্রশ্ন সেদিন পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে করেছিলেন একজন সাংবাদিক। উত্তরে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, শিবির হিসেবে সন্দেহের বিষয়টি ছিল আবরারের ওপর নির্যাতনের একটি কারণ। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।

ছোটখাট বিষয়ে কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করলে, কিংবা কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বললে, কিংবা সালাম না দেয়ার কারণেও এই র‌্যাগিংয়ের নামে, মানে অন্যদের, নতুন যারা আসবে, তাদের আতঙ্কিত করে রাখার জন্যই তারা এই কাজগুলো করে অভ্যস্ত। এসব বিষয় হল বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেখার কথা। কিন্তু তদন্তে পুলিশ হল কর্তৃপক্ষের এক ধরনের ব্যর্থতা দেখতে পেয়েছে বলে সেদিন জানান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল।

মনিরুল সেদিন বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে, রাত ১০টার পর আবরারকে নির্যাতন করা শুরু হয় এবং রাত ২টা ৫০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে যদি তাকে হাসপাতালে নেয়া হতো তাহলে হয়তো এমন পরিণতি হতো না। শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়, সেই কক্ষের আবাসিক ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে, যদিও এজাহারে তার নাম ছিল না।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মনিরুল সেদিন বলেন, অমিত সাহা এর আগেও একজনকে পিটিয়েছে। আবরারকে মারপিটের সময় সে উপস্থিত না থাকলেও তাকে ডেকে আনাসহ তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে তাকে আসামির তালিকায় প্রথম দিকে রাখা হয়েছে। আবরারকে কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালানোর আগে দুই দিন শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিন এবং ওই হলের অতিথি কক্ষে বৈঠক হয়েছিল বলে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় ক্যান্টিনের বৈঠকে আটজন ছিলেন। পরদিন রাত ১০টায় অতিথি কক্ষের বৈঠকে আবরারকে মেরে হল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুই বৈঠকে মোট ১২ জন ছিলেন। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির, ইফতি মোশাররফ সকাল, আকাশ হোসেন, মুজতবা রাফিদ, অমিত সাহা, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সামছুল আরেফিন রাফাত, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, মুনতাসির আল জেমি, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম এবং এএসএম নাজমুস সাদাত।

ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকলেও মেহেদী হাসান রাসেল এবং মুনতাসির ফুয়াদ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রাসেল শেরেবাংলা হলের দোতলায় নামিয়ে রাখা আবরারের মৃতদেহ তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলার জন্য বুয়েটের চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন। আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে নেমে ১০ দফা দাবি তোলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমর্থন প্রকাশ করেন। তাদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবরার হত্যার আসামিদের সাময়িক বহিষ্কার এবং হলগুলোতে নির্যাতন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।