০৩:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিমানের বহরে নতুন উড়োজাহাজ কতটা প্রয়োজন?

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩
  • 24

সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য ইউরোপীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমান বহরের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার না করে নতুন উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত?

অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলছেন, উড়োজাহাজ কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি হয়েছে কেবল নীতিগত সিদ্ধান্ত। কারিগরি কমিটির যাচাই বাছাই শেষে আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

বিমানের বর্তমান বহরে আছে ২১টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন, ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন এবং পাঁচটি ড্যাশ এইট মডেলের উড়োজাহাজ।

এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনারগুলো টানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় উড়তে সক্ষম। এ ধরনের উড়োজাহাজ লং হউল হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজগুলো মধ্যম ও স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে ব্যবহার করা হয়। আর ড্যাশ এইট উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয় স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিমান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে পরিবহন করেছে ২০ লাখ ৫৮ হাজার যাত্রী। এ সময় তাদের উড়োজাহাজের প্রায় ৭ লাখ আসন ছিল ফাঁকা। অর্থাৎ, বিমান তার সক্ষমতার মাত্র ৭৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে।

কার্গো পরিবহনের জন্য বিমানের ডেডিকেটেড বা নির্দিষ্ট কোনো উড়োজাহাজ নেই। যাত্রীবাহি উড়োজাহাজের ভল্টে কার্গো পরিবহন করে বিমান। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের বর্তমান কার্গো ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ লাখ টন। কিন্তু ২০২২ সালে বিমান পরিবহন করেছে ২৮ হাজার টন কার্গো, যা তার সক্ষমতার মাত্র ৬ শতাংশ।

এ অবস্থায় পরিকল্পনা ছাড়াই নতুন উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিমানের সাবেক পরিচালক ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘আমাকে বললে বলব যে, কোনো ফ্লিটে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করা স্বাগত জানানোর মতোই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে যেভাবে যাত্রী বাড়ছে, তাতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে উড়োজাহাজ দরকার। সেদিক থেকে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। বিমানের জন্য ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে এর সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে কিনা, আমি জানি না। বিমানও আগে বলেনি যে, তাদের উড়োজাহাজ প্রয়োজন।’

লং ডিসটেন্স ফ্লাইটের কথা বলে ২০০৮ সালে ১০টি উড়োজহাহাজ কেনা হলেও সেই লক্ষ্য আজও পূরণ করতে পারেনি বিমান। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘২০০৮ সালে বোয়িংয়ের ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হয়েছিল। তখন এটা করা হয়েছিল এই ভিশনে যে, বিমান নিউইয়র্কে ফ্লাইট করবে, ইউরোপে ফ্লাইট বাড়াবে বা অন্য ডেস্টিনেশনে যাবে। কিন্তু আজকে এই উড়োজাহাজ আসার পরও আমরা নিউইয়র্ক যেতে পারিনি। তারপর অন্য নতুন ডেস্টিনেশন বলতে টরন্টোতে মাত্র ফ্লাইট শুরু করা গেছে। এ ছাড়া নতুন গন্তব্য কিন্তু আসেনি।’

এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলো লং ডিসটেন্সে চলার উড়োজাহাজ। কিন্তু এগুলো এখন ঢাকা-সিলেট-লন্ডন, চট্টগ্রাম-জেদ্দা-দুবাই রুটে চালানো হচ্ছে। এতে এগুলোর লাইফস্প্যান কমছে। এখন নতুন উড়োজাহাজ আনব; কিন্তু এগুলো কোথায় ব্যবহার করব। এগুলোর সম্ভাব্যতা আগে জানতে হবে। এখনও তেমন কিছু আমরা দেখিনি।’

বিমানের বহরে অবশ্য এয়ারবাস নতুন কিছু নয়। আগেও দুটি এয়ারবাস এ-৩১০ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করে যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান। সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বছরখানেক আগে সেগুলোকে বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম মনে করছেন বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর সাথে সমন্বয় করে বহর পরিকল্পনা করতে পারবে এয়ারলাইন্সটি। একইসঙ্গে ডেডিকেটেড কার্গো ফ্লাইট চালুর আগে বাজারে অভিজ্ঞতা ঝালিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্লিট বাড়াতে হবে, এটা ঠিক। এয়ারবাসে ক্ষতির কিছু নেই। এখানে সুবিধা হলো এয়ারবাসের সাথে তাদের বার্গেইনিং পয়েন্টটা ভালো হবে। সেখানে হয়তো ডিলটা ভালো হবে। এয়ারবাস বিমানে আগেও ছিল। সেই কাঠামো তাদের আছে। অর্থাৎ, এয়ারবাসের রক্ষণাবেক্ষণ দক্ষতা তাদের থাকার কথা। প্রশ্ন হলো তারা কী ধরনের উড়োজাহাজ কিনবে?যেটা শোনা যাচ্ছে, তারা এ-৩৫০ কিনবে। এটা হলো লং দূরপাল্লার উড়োজাহাজ। এর ক্যাপাসিটিও অনেক ভালো। তাদের তো কখনো কার্গো ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছিল না। এই প্রথম তারা যাচ্ছে। কিন্তু এ পর্যায়ে যে মার্কেটিংটা থাকার কথা, সেটি তাদের নেই। এর জন্য ছোট বা মিডহউল এয়ারক্রাফট নিতে পারত।’

এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আগে আশপাশের মার্কেটগুলো ধরলে তাদের চর্চাটা বাড়ত। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে কম্বিনেশন করে করতে পারে। লং হউল এয়ারক্রাফট নিয়ে শর্ট হউল চালালে এটা ভায়াবল হবে না।’

অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, উড়োজাহাজ কেনার কেবল নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কী ধরনের এবং কতগুলো উড়োজাহাজ কেনা হবে, তা টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরে এটা নিয়ে এয়ারবাসের সাথে আলোচনা হয়েছে। আপাতত পরিকল্পনা হয়েছে। এখনও কেনার সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। নীতিগত একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পর কমিটি বসবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পনার মধ্যে কার্গো ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুটোই আছে। এটাও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কী দামে কেনা হবে বা কোন ধরনের উড়োজাহাজ কেনা হবে, এগুলো নিয়ে কমিটি বসবে। সবকিছু ঠিক করে তারপর হবে।’

যদিও এ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান এখন পর্যন্ত বিদ্যমান বহরের পূর্ণ সক্ষমতাই কাজে লাগাতে পারেনি। যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতার ৭৬ শতাংশ, আর পণ্য পরিবহনে মাত্র ৬ শতাংশ কাজে লাগানো প্রতিষ্ঠানটি নতুন উড়োজাহাজ কেন কিনছে, তা তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘আমাদের এটাও চিন্তা করতে হবে নতুন উড়োজাহাজ এনে এটাকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করব। তাদের এখন যেগুলো আছে সেগুলোরও কিন্তু পূর্ণসক্ষমতা ব্যবহার হচ্ছে না।’

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বিমানের বহরে নতুন উড়োজাহাজ কতটা প্রয়োজন?

Update Time : ০৬:৪০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩

সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য ইউরোপীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমান বহরের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার না করে নতুন উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত?

অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলছেন, উড়োজাহাজ কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি হয়েছে কেবল নীতিগত সিদ্ধান্ত। কারিগরি কমিটির যাচাই বাছাই শেষে আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

বিমানের বর্তমান বহরে আছে ২১টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন, ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন এবং পাঁচটি ড্যাশ এইট মডেলের উড়োজাহাজ।

এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনারগুলো টানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় উড়তে সক্ষম। এ ধরনের উড়োজাহাজ লং হউল হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজগুলো মধ্যম ও স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে ব্যবহার করা হয়। আর ড্যাশ এইট উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয় স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিমান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে পরিবহন করেছে ২০ লাখ ৫৮ হাজার যাত্রী। এ সময় তাদের উড়োজাহাজের প্রায় ৭ লাখ আসন ছিল ফাঁকা। অর্থাৎ, বিমান তার সক্ষমতার মাত্র ৭৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে।

কার্গো পরিবহনের জন্য বিমানের ডেডিকেটেড বা নির্দিষ্ট কোনো উড়োজাহাজ নেই। যাত্রীবাহি উড়োজাহাজের ভল্টে কার্গো পরিবহন করে বিমান। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের বর্তমান কার্গো ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ লাখ টন। কিন্তু ২০২২ সালে বিমান পরিবহন করেছে ২৮ হাজার টন কার্গো, যা তার সক্ষমতার মাত্র ৬ শতাংশ।

এ অবস্থায় পরিকল্পনা ছাড়াই নতুন উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিমানের সাবেক পরিচালক ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘আমাকে বললে বলব যে, কোনো ফ্লিটে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করা স্বাগত জানানোর মতোই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে যেভাবে যাত্রী বাড়ছে, তাতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে উড়োজাহাজ দরকার। সেদিক থেকে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। বিমানের জন্য ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে এর সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে কিনা, আমি জানি না। বিমানও আগে বলেনি যে, তাদের উড়োজাহাজ প্রয়োজন।’

লং ডিসটেন্স ফ্লাইটের কথা বলে ২০০৮ সালে ১০টি উড়োজহাহাজ কেনা হলেও সেই লক্ষ্য আজও পূরণ করতে পারেনি বিমান। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘২০০৮ সালে বোয়িংয়ের ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হয়েছিল। তখন এটা করা হয়েছিল এই ভিশনে যে, বিমান নিউইয়র্কে ফ্লাইট করবে, ইউরোপে ফ্লাইট বাড়াবে বা অন্য ডেস্টিনেশনে যাবে। কিন্তু আজকে এই উড়োজাহাজ আসার পরও আমরা নিউইয়র্ক যেতে পারিনি। তারপর অন্য নতুন ডেস্টিনেশন বলতে টরন্টোতে মাত্র ফ্লাইট শুরু করা গেছে। এ ছাড়া নতুন গন্তব্য কিন্তু আসেনি।’

এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলো লং ডিসটেন্সে চলার উড়োজাহাজ। কিন্তু এগুলো এখন ঢাকা-সিলেট-লন্ডন, চট্টগ্রাম-জেদ্দা-দুবাই রুটে চালানো হচ্ছে। এতে এগুলোর লাইফস্প্যান কমছে। এখন নতুন উড়োজাহাজ আনব; কিন্তু এগুলো কোথায় ব্যবহার করব। এগুলোর সম্ভাব্যতা আগে জানতে হবে। এখনও তেমন কিছু আমরা দেখিনি।’

বিমানের বহরে অবশ্য এয়ারবাস নতুন কিছু নয়। আগেও দুটি এয়ারবাস এ-৩১০ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করে যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান। সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বছরখানেক আগে সেগুলোকে বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম মনে করছেন বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর সাথে সমন্বয় করে বহর পরিকল্পনা করতে পারবে এয়ারলাইন্সটি। একইসঙ্গে ডেডিকেটেড কার্গো ফ্লাইট চালুর আগে বাজারে অভিজ্ঞতা ঝালিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্লিট বাড়াতে হবে, এটা ঠিক। এয়ারবাসে ক্ষতির কিছু নেই। এখানে সুবিধা হলো এয়ারবাসের সাথে তাদের বার্গেইনিং পয়েন্টটা ভালো হবে। সেখানে হয়তো ডিলটা ভালো হবে। এয়ারবাস বিমানে আগেও ছিল। সেই কাঠামো তাদের আছে। অর্থাৎ, এয়ারবাসের রক্ষণাবেক্ষণ দক্ষতা তাদের থাকার কথা। প্রশ্ন হলো তারা কী ধরনের উড়োজাহাজ কিনবে?যেটা শোনা যাচ্ছে, তারা এ-৩৫০ কিনবে। এটা হলো লং দূরপাল্লার উড়োজাহাজ। এর ক্যাপাসিটিও অনেক ভালো। তাদের তো কখনো কার্গো ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছিল না। এই প্রথম তারা যাচ্ছে। কিন্তু এ পর্যায়ে যে মার্কেটিংটা থাকার কথা, সেটি তাদের নেই। এর জন্য ছোট বা মিডহউল এয়ারক্রাফট নিতে পারত।’

এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আগে আশপাশের মার্কেটগুলো ধরলে তাদের চর্চাটা বাড়ত। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে কম্বিনেশন করে করতে পারে। লং হউল এয়ারক্রাফট নিয়ে শর্ট হউল চালালে এটা ভায়াবল হবে না।’

অবশ্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, উড়োজাহাজ কেনার কেবল নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কী ধরনের এবং কতগুলো উড়োজাহাজ কেনা হবে, তা টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরে এটা নিয়ে এয়ারবাসের সাথে আলোচনা হয়েছে। আপাতত পরিকল্পনা হয়েছে। এখনও কেনার সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। নীতিগত একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পর কমিটি বসবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পনার মধ্যে কার্গো ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুটোই আছে। এটাও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কী দামে কেনা হবে বা কোন ধরনের উড়োজাহাজ কেনা হবে, এগুলো নিয়ে কমিটি বসবে। সবকিছু ঠিক করে তারপর হবে।’

যদিও এ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান এখন পর্যন্ত বিদ্যমান বহরের পূর্ণ সক্ষমতাই কাজে লাগাতে পারেনি। যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতার ৭৬ শতাংশ, আর পণ্য পরিবহনে মাত্র ৬ শতাংশ কাজে লাগানো প্রতিষ্ঠানটি নতুন উড়োজাহাজ কেন কিনছে, তা তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘আমাদের এটাও চিন্তা করতে হবে নতুন উড়োজাহাজ এনে এটাকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করব। তাদের এখন যেগুলো আছে সেগুলোরও কিন্তু পূর্ণসক্ষমতা ব্যবহার হচ্ছে না।’