০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবী কেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-১

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 29

মহান রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়া করে, মায়া করে এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে এর ‘খলীফা’ নিযুক্ত করেছেন। মানুষ এই পৃথিবীতে কিভাবে চলবে এবং পৃথিবীকে কিভাবে চালাবে সেই দিকনির্দেশনাও কুরআনুল কারীমে বিস্তারিতভাবে প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমালংঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। (সূরা আন্ নাহল : আয়াত-৯০)।

এই আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ পাক দুনিয়ার খলীফা মানুষকে তিনটি বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন। (এক) আদল, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা। (দুই) ইহসান, সদাচরণ এবং (তিন) আত্মীয়স্বজনকে দান করা। এবং তিনটি বিষয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। (এক) ফাহসা, অশ্লীলতা, (দুই) মুনকার, অসৎ কাজ এবং (তিন) বাগই, জুলুম, সীমালংঘন।

এই আয়াত সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : এটি হচ্ছে কুরআনুল কারীমের ব্যাপকতর অর্থবোধক একটি আয়াত। কোনো কোনো সাহাবী এই আয়াত শ্রবণ করেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। হযরত উসমান ইবনে মাসউন (রা.) বলেন, শুরুতে আমি মানুষের মুখে শুনে ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি দরদ ও মায়া বদ্ধমূল ছিল না।

একদিন আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির ছিলাম। হঠাৎ তাঁর ওপর ওহী নাযিলের লক্ষণ প্রতিভাত হলো। বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় অবস্থার পর তিনি বললেন : আল্লাহর দূত এসেছিলেন এবং এই আয়াত আমার ওপর নাযিল হয়েছে। হযরত উসমান ইবনে মাসউন (রা.) বলেন : এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এবং আয়াতে কারীমা শ্রবণ করে আমার অন্তরে ঈমান অটল, অবিচল ও বদ্ধমূল হয়ে গেল। এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান ও মহব্বত আমার মনে গেড়ে বসল। (মুসনাদে আহমাদ : ১/৩১৮)।

তিনি ছিলেন স্বীয় গোত্রের সর্দার। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত দাবি ও ইসলাম প্রচারের সংবাদ শুনে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আগমন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু গোত্রের লোকেরা বলল, আপনি গোত্রের প্রধান। আপনার নিজের যাওয়া সমীচীন হবে না। তিনি বললেন : তাহলে গোত্র হতে দু’জন লোক মনোনীত করো, তারা সেখানে গমন করবে এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আমাদের জানাবে। মনোনীত দু’ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল : আমরা আকসাম ইবনে সাইফীর পক্ষ থেকে দু’টি বিষয় জানতে এসেছি। প্রশ্ন দু’টি হলো আপনি কে এবং আপনি কি?

রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বললেন : আমি আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মাদ। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বললেন : আমি আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ ও তাঁর রাসূল। তারপর তিনি সূরা নাহলের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন : ‘ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরু বিল্ আদলি ওয়াল ইহসান’। উভয় দূত অনুরোধ করলÑ এই কালেমাগুলো আমাদের আবার শোনানো হোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াতটি কয়েকবার তিলাওয়াত করলেন। ফলে, আয়াতটি দূতদ্বয়ের মুখস্ত হয়ে গেল। তারপর দূতদ্বয় আকসাম ইবনে সায়ফীর কাছে প্রত্যাবর্তন করে উল্লেখিত আয়াতটি শোনাল। আয়াতটি শুনেই আকসাম বলে উঠল : এর দ্বারা বোঝা যায় যে, তিনি উত্তম চরিত্র ও স্বভাবের আদেশ প্রদান করেন এবং মন্দ ও নিন্দনীয় চরিত্র অবলম্বন করতে নিষেধ করেন। তোমরা সবাই তাঁর ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করো, যাতে তোমরা অন্যদের অগ্রে থাকার সৌভাগ্য লাভে ধন্য হও এবং পেছনে অনুসারী হয়ে না থাকা। (ইবনে কাসির)।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পৃথিবী কেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-১

Update Time : ১২:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

মহান রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়া করে, মায়া করে এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে এর ‘খলীফা’ নিযুক্ত করেছেন। মানুষ এই পৃথিবীতে কিভাবে চলবে এবং পৃথিবীকে কিভাবে চালাবে সেই দিকনির্দেশনাও কুরআনুল কারীমে বিস্তারিতভাবে প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমালংঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। (সূরা আন্ নাহল : আয়াত-৯০)।

এই আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ পাক দুনিয়ার খলীফা মানুষকে তিনটি বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন। (এক) আদল, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা। (দুই) ইহসান, সদাচরণ এবং (তিন) আত্মীয়স্বজনকে দান করা। এবং তিনটি বিষয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। (এক) ফাহসা, অশ্লীলতা, (দুই) মুনকার, অসৎ কাজ এবং (তিন) বাগই, জুলুম, সীমালংঘন।

এই আয়াত সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : এটি হচ্ছে কুরআনুল কারীমের ব্যাপকতর অর্থবোধক একটি আয়াত। কোনো কোনো সাহাবী এই আয়াত শ্রবণ করেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। হযরত উসমান ইবনে মাসউন (রা.) বলেন, শুরুতে আমি মানুষের মুখে শুনে ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি দরদ ও মায়া বদ্ধমূল ছিল না।

একদিন আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির ছিলাম। হঠাৎ তাঁর ওপর ওহী নাযিলের লক্ষণ প্রতিভাত হলো। বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় অবস্থার পর তিনি বললেন : আল্লাহর দূত এসেছিলেন এবং এই আয়াত আমার ওপর নাযিল হয়েছে। হযরত উসমান ইবনে মাসউন (রা.) বলেন : এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এবং আয়াতে কারীমা শ্রবণ করে আমার অন্তরে ঈমান অটল, অবিচল ও বদ্ধমূল হয়ে গেল। এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান ও মহব্বত আমার মনে গেড়ে বসল। (মুসনাদে আহমাদ : ১/৩১৮)।

তিনি ছিলেন স্বীয় গোত্রের সর্দার। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত দাবি ও ইসলাম প্রচারের সংবাদ শুনে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আগমন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু গোত্রের লোকেরা বলল, আপনি গোত্রের প্রধান। আপনার নিজের যাওয়া সমীচীন হবে না। তিনি বললেন : তাহলে গোত্র হতে দু’জন লোক মনোনীত করো, তারা সেখানে গমন করবে এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আমাদের জানাবে। মনোনীত দু’ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল : আমরা আকসাম ইবনে সাইফীর পক্ষ থেকে দু’টি বিষয় জানতে এসেছি। প্রশ্ন দু’টি হলো আপনি কে এবং আপনি কি?

রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বললেন : আমি আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মাদ। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বললেন : আমি আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ ও তাঁর রাসূল। তারপর তিনি সূরা নাহলের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন : ‘ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরু বিল্ আদলি ওয়াল ইহসান’। উভয় দূত অনুরোধ করলÑ এই কালেমাগুলো আমাদের আবার শোনানো হোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াতটি কয়েকবার তিলাওয়াত করলেন। ফলে, আয়াতটি দূতদ্বয়ের মুখস্ত হয়ে গেল। তারপর দূতদ্বয় আকসাম ইবনে সায়ফীর কাছে প্রত্যাবর্তন করে উল্লেখিত আয়াতটি শোনাল। আয়াতটি শুনেই আকসাম বলে উঠল : এর দ্বারা বোঝা যায় যে, তিনি উত্তম চরিত্র ও স্বভাবের আদেশ প্রদান করেন এবং মন্দ ও নিন্দনীয় চরিত্র অবলম্বন করতে নিষেধ করেন। তোমরা সবাই তাঁর ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করো, যাতে তোমরা অন্যদের অগ্রে থাকার সৌভাগ্য লাভে ধন্য হও এবং পেছনে অনুসারী হয়ে না থাকা। (ইবনে কাসির)।