০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 28

চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কলোনিতে একটি পরিত্যক্ত বাসা থেকে সাত বছর বয়সী এক মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৭ সপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজের পর সকালে মেয়েটির লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পোর্ট কলোনির ৮ নম্বর সড়কের মুখে একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ।

মৃত সুরমা আক্তার (৭) নগরীর বড়পোল এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. কাউছারের মেয়ে। তার মা হোসনে আরা গৃহকর্মী। কাউছারের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।

জানা গেছে, সুরমার খালা জ্যোৎস্না বেগমের বাসাও বড়পোল এলাকায়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে খালার বাসায় যাবার জন্য সুরমা নিজ বাসা থেকে বের হয়েছিল।

জ্যোৎস্না বেগম  বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে বলেছিল, আমি খালার বাসায় ভাত খেয়ে ফিরব। মা বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরতে। বড়পোল এলাকায় রাস্তায় আসার পর এক রিকশাচালক সুরমাকে ডেকে বলে, তুমি আমার সঙ্গে গেলে তোমাকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে দেব। এসময় সুরমাদের প্রতিবেশি এক মেয়েও সেখানে ছিল। সে রিকশাওয়ালাকে বলে, আঙ্কেল আমিও আপনার সঙ্গে যাব, আমাকেও বিরিয়ানি কিনে দেন। কিন্তু রিকশাচালক শুধু সুরমাকে রিকশায় তুলে দ্রুত চলে যায়।’

‘প্রতিবেশি মেয়েটি বাসায় ফিরে এ ঘটনা সুরমার মাকে জানায়। তখন আমার বোন দ্রুত রাস্তায় যায়। খোঁজাখুঁজি শুরু করে। কোথাও না পেয়ে আমাদের জানায়। আমরাও সেখানে যাই। পুরো এলাকায় খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও তাকে না পেয়ে রাত ৯টার দিকে সন্ধান চেয়ে মাইকিং শুরু করি। কিন্তু রাতভর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে একটি মেয়ের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা এখানে আসি’— বলেন জ্যোৎস্না বেগম।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়ের লাশের অদূরে দাঁড়িয়ে বাবা কাউছার, মা হোসনে আরাসহ স্বজনরা অঝোরে কাঁদছেন। হোসনে আরা বারবার বলছেন— ‘আমার বুকের ধন আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমার মেয়ের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাকে কেন মারল, কারা মারল, আমি বিচার চাই।’

মো. কাউছার  বলেন, ‘একটা রিকশাচালক বিরিয়ানি কিনে দেবার কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে পোর্ট কলোনিতে আসে। এরপর তাকে সারারাত নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

পুলিশ সুরমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে। তবে কীভাবে খুন করা হয়েছে এবং ধর্ষণের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার  বলেন, ‘শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে, তবে গলায় সে ধরনের দাগ তেমন দেখা যায়নি। শরীরেও তেমন জখমের কোনো চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, ধর্ষণের সময়ই অল্পবয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।’

নগর পুলিশের বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবুল কালাম সহীদ  বলেন, ‘মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে এটা আমরা আলামত দেখে নিশ্চিত হয়েছি। তবে আমাদের ধারণা, খুনের আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা একেবারে প্রাথমিক ধারণা। সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা একটা মতামত দেবে। এছাড়া ধর্ষণের বিষয় এবং কিভাবে খুন করা হয়েছে সেটা ময়নাতদন্তে জানা যাবে।’

মৃত সুরমার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজন রিকশা চালককে শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই কিশোর মজুমদার।

এদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পোর্ট কলোনির বিভিন্ন ব্লকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি পরিত্যক্ত বাসা আছে। এসব বাসায় সন্ধ্যার পর মাদকের আসর বসে। নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপও সেখানে হয়। পোর্ট কলোনির বাসিন্দা চট্টগ্রাম বন্দরের চাকুরিজীবীরা বখাটে, মাদকসেবীদের উৎপাতে অতীষ্ঠ।

সূত্র :  সারাবাংলা

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার

Update Time : ০৭:২৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কলোনিতে একটি পরিত্যক্ত বাসা থেকে সাত বছর বয়সী এক মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৭ সপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজের পর সকালে মেয়েটির লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পোর্ট কলোনির ৮ নম্বর সড়কের মুখে একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ।

মৃত সুরমা আক্তার (৭) নগরীর বড়পোল এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. কাউছারের মেয়ে। তার মা হোসনে আরা গৃহকর্মী। কাউছারের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।

জানা গেছে, সুরমার খালা জ্যোৎস্না বেগমের বাসাও বড়পোল এলাকায়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে খালার বাসায় যাবার জন্য সুরমা নিজ বাসা থেকে বের হয়েছিল।

জ্যোৎস্না বেগম  বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে বলেছিল, আমি খালার বাসায় ভাত খেয়ে ফিরব। মা বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরতে। বড়পোল এলাকায় রাস্তায় আসার পর এক রিকশাচালক সুরমাকে ডেকে বলে, তুমি আমার সঙ্গে গেলে তোমাকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে দেব। এসময় সুরমাদের প্রতিবেশি এক মেয়েও সেখানে ছিল। সে রিকশাওয়ালাকে বলে, আঙ্কেল আমিও আপনার সঙ্গে যাব, আমাকেও বিরিয়ানি কিনে দেন। কিন্তু রিকশাচালক শুধু সুরমাকে রিকশায় তুলে দ্রুত চলে যায়।’

‘প্রতিবেশি মেয়েটি বাসায় ফিরে এ ঘটনা সুরমার মাকে জানায়। তখন আমার বোন দ্রুত রাস্তায় যায়। খোঁজাখুঁজি শুরু করে। কোথাও না পেয়ে আমাদের জানায়। আমরাও সেখানে যাই। পুরো এলাকায় খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও তাকে না পেয়ে রাত ৯টার দিকে সন্ধান চেয়ে মাইকিং শুরু করি। কিন্তু রাতভর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে একটি মেয়ের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আমরা এখানে আসি’— বলেন জ্যোৎস্না বেগম।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়ের লাশের অদূরে দাঁড়িয়ে বাবা কাউছার, মা হোসনে আরাসহ স্বজনরা অঝোরে কাঁদছেন। হোসনে আরা বারবার বলছেন— ‘আমার বুকের ধন আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমার মেয়ের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাকে কেন মারল, কারা মারল, আমি বিচার চাই।’

মো. কাউছার  বলেন, ‘একটা রিকশাচালক বিরিয়ানি কিনে দেবার কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে পোর্ট কলোনিতে আসে। এরপর তাকে সারারাত নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

পুলিশ সুরমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে। তবে কীভাবে খুন করা হয়েছে এবং ধর্ষণের বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার  বলেন, ‘শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে, তবে গলায় সে ধরনের দাগ তেমন দেখা যায়নি। শরীরেও তেমন জখমের কোনো চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, ধর্ষণের সময়ই অল্পবয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।’

নগর পুলিশের বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবুল কালাম সহীদ  বলেন, ‘মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে এটা আমরা আলামত দেখে নিশ্চিত হয়েছি। তবে আমাদের ধারণা, খুনের আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা একেবারে প্রাথমিক ধারণা। সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা একটা মতামত দেবে। এছাড়া ধর্ষণের বিষয় এবং কিভাবে খুন করা হয়েছে সেটা ময়নাতদন্তে জানা যাবে।’

মৃত সুরমার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজন রিকশা চালককে শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই কিশোর মজুমদার।

এদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পোর্ট কলোনির বিভিন্ন ব্লকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি পরিত্যক্ত বাসা আছে। এসব বাসায় সন্ধ্যার পর মাদকের আসর বসে। নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপও সেখানে হয়। পোর্ট কলোনির বাসিন্দা চট্টগ্রাম বন্দরের চাকুরিজীবীরা বখাটে, মাদকসেবীদের উৎপাতে অতীষ্ঠ।

সূত্র :  সারাবাংলা