১০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪, ১১ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চাকরি না পেয়ে এখন চাকরিদাতা সফল কৃষি উদ্যোক্তা রবি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:২৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২
  • 37

রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে রবিউল ইসলাম চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে সোনার হরিণের দেখা পাননি তিনি। এরপর ফল ফসলের চাষের মাধ্যমে তিনি নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিগত ২০ বছরের ব্যবধানে তিনি হয়েছেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

কাজে আন্তরিকতার মাধ্যমে এখন কমপক্ষে ৬ একরের অধিক জমিতে নানান ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ রয়েছে তার।

এ বছরও ফলচাষ থেকে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা আসবে বলে তার আশা। ফলে তিনি এখন অন্য বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত। আর্থিকভাবে স্বনির্ভর আত্মপ্রত্যয়ী যুবক রবিউল ইসলাম রবি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী মন্ডলের ছেলে।

এলাকার সকলে তাকে শ্রেষ্ঠ ফলচাষী হিসেবে চেনে। রবিউল ইসলামের ভাষ্য, উৎপাদনমুখী কোন কাজই ছোট বা লোকসানের নয়। অবিচল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিশ্রম করলে যে কোন মানুষই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে রবিউলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়- চারপাশে মালটা, ড্রাগন, কদবেল, বিভিন্ন দেশী বিদেশী জাতের কয়েক প্রকারের আমসহ নানা ধরনের ফল ফলাদির বাগানের মধ্যে তাদের বসতঘর। চারপাশ ঘিরে ২৪-২৫ বিঘা জমির মধ্যে বেশির ভাগই বানিজ্যিকভাবে এ ফলগুলোর চাষ করা হয়েছে।

অবশিষ্ঠ জমিতে লাগানো রয়েছে নানা সবজি, মসলা জাতীয় ও প্রয়োজনীয় ঔষধী গাছপালা। ক্ষেতে এখনও ড্রাগন,মালটা ও অসময়ের কাঠিমন জাতের আম গাছে গাছে ঝুলছে। আর মাসিক বেতনভুক্ত ৯ জন কৃষি শ্রমিক ফল বাগানগুলোতে কাজ করছে।

রবিউল ইসলাম রবি জানান, ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সেজো। ছোটবেলা থেকেই তিনি ফলের গাছ লাগাতে ভাল বাসতেন। লেখাপড়া শেষে যোগ্যতা অনুসারে চাকুরী না হওয়ায় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নিজের স্বাধীন কর্মসংস্থান তৈরী করে জীবন পার করবেন। মনের সে জেদ তিনি কাজে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, বসতভিটের পাশের বেশ কয়েক বিঘা জমিতে এক সময়ে অন্য ফসলের চাষ হতো। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে শুরু করেন বানিজ্যিকভাবে ফলচাষ।

এভাবে বিগত প্রায় ২০ বছরের ব্যবধানে লাভের টাকায় পাশের আরও কয়েক বিঘা জমি কিনে ফলচাষের আওতায় এনেছেন। বর্তমানে ফলচাষের অধিনে তার জমির পরিমান এখন ২৪ বিঘা। এরমধ্যে এখন ৯ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের মালটা, ৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন,৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ রয়েছে। তার ভাষ্য, এ পর্যন্ত বানিজ্যিকভাবে যত রকমের ফলের চাষ করেছেন তার মধ্যে কাটিমন আম চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক।

কাটিমন আম চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, আজ থেকে ৩ বছর আগে জীবননগর থেকে প্রতিটি ২৫০ টাকা দরে চারা কিনে মোট ১৭২ শতক জমিতে রোপন করেন। পরের বছর থেকেই আম ধরা শুরু হয়। তিনি বলেন এ বছর মোট ৫৭০ টি গাছের মধ্যে ২৪৩ টিতে আম ধরেছে। যা এখনও গাছে ঝুলে আছে।

তিনি বলেন, এ বছর এ পর্যন্ত ৫০ মন আম প্রতিকেজি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। এখনও কমপক্ষে ৫০ মন আম গাছে ঝুলে আছে। তিনি বলেন এ বছরই যাবতীয় খরচ উঠিয়ে এখন লাভের মুখ দেখছেন।

তিনি বলেন, কাটিমন আম গাছে বছরে ৩ বার ফল ধরে । এ আম অনেক সুস্বাদু ও অসময়ে পাওয়া যায়। ফলে মৌসুমের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে একটি আম বাগান থেকে কমপক্ষে ১৭-১৮ বছর আম পাওয়া সম্ভব।

তিনি তার দীর্ঘ ফলচাষের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, এ পর্যন্ত সব ধরনের ফলচাষেই তিনি লাভ করেছেন তবে অল্প সময়ের কাটিমন জাতের আমে অতিমাত্রায় লাভ পেয়েছেন। আগামীতে আরও কয়েক বিঘা জমিতে এ জাতের আম চাষ বাড়াবেন বলে ভাবছেন।

রবিউলের মেজো ভাই আতাউর রহমান জানান, তার ছোট ভাই রবিউল লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীর পিছে ছুটে ব্যর্থ হয়ে সৌখিন ফল ও ফসলের চাষ শুরু করেন। বাড়ির চারপাশের জমিতে দারুচিনি, তেজপাতা, আশফল, লটকন, কদবেল, চালতা, বেদানা, জলপাই, লিচু, আম, জাফরান, বেল, পেয়ারা, জাম, করমচা,আমড়া, আমলকীসহ বিভিন্ন ঔষধী জাতীয় প্রয়োজনীয় গাছপালা রয়েছে তার। রয়েছে নানা ধরনের সবজি গাছ। কিন্ত বেশি নজরে এসেছে বানিজ্যিক ফসল কাটিমন আম।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মোহায়মেন আক্তার জানান,এ উপজেলার শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলাম অত্যন্ত যতœসহকারে বিভিন্ন ফল ফলাদির চাষ করে থাকেন। তার বিভিন্ন ফলের চাষ পরিদর্শনে কয়েকবার গেছেন। প্রয়োজন মত কৃষি অফিস পরামর্শ প্রদান করে থাকেন বলে জানান এ কৃষিবিদ।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

চাকরি না পেয়ে এখন চাকরিদাতা সফল কৃষি উদ্যোক্তা রবি

Update Time : ১২:২৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২

রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে রবিউল ইসলাম চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে সোনার হরিণের দেখা পাননি তিনি। এরপর ফল ফসলের চাষের মাধ্যমে তিনি নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিগত ২০ বছরের ব্যবধানে তিনি হয়েছেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

কাজে আন্তরিকতার মাধ্যমে এখন কমপক্ষে ৬ একরের অধিক জমিতে নানান ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ রয়েছে তার।

এ বছরও ফলচাষ থেকে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা আসবে বলে তার আশা। ফলে তিনি এখন অন্য বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত। আর্থিকভাবে স্বনির্ভর আত্মপ্রত্যয়ী যুবক রবিউল ইসলাম রবি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী মন্ডলের ছেলে।

এলাকার সকলে তাকে শ্রেষ্ঠ ফলচাষী হিসেবে চেনে। রবিউল ইসলামের ভাষ্য, উৎপাদনমুখী কোন কাজই ছোট বা লোকসানের নয়। অবিচল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিশ্রম করলে যে কোন মানুষই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে রবিউলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়- চারপাশে মালটা, ড্রাগন, কদবেল, বিভিন্ন দেশী বিদেশী জাতের কয়েক প্রকারের আমসহ নানা ধরনের ফল ফলাদির বাগানের মধ্যে তাদের বসতঘর। চারপাশ ঘিরে ২৪-২৫ বিঘা জমির মধ্যে বেশির ভাগই বানিজ্যিকভাবে এ ফলগুলোর চাষ করা হয়েছে।

অবশিষ্ঠ জমিতে লাগানো রয়েছে নানা সবজি, মসলা জাতীয় ও প্রয়োজনীয় ঔষধী গাছপালা। ক্ষেতে এখনও ড্রাগন,মালটা ও অসময়ের কাঠিমন জাতের আম গাছে গাছে ঝুলছে। আর মাসিক বেতনভুক্ত ৯ জন কৃষি শ্রমিক ফল বাগানগুলোতে কাজ করছে।

রবিউল ইসলাম রবি জানান, ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সেজো। ছোটবেলা থেকেই তিনি ফলের গাছ লাগাতে ভাল বাসতেন। লেখাপড়া শেষে যোগ্যতা অনুসারে চাকুরী না হওয়ায় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নিজের স্বাধীন কর্মসংস্থান তৈরী করে জীবন পার করবেন। মনের সে জেদ তিনি কাজে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, বসতভিটের পাশের বেশ কয়েক বিঘা জমিতে এক সময়ে অন্য ফসলের চাষ হতো। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে শুরু করেন বানিজ্যিকভাবে ফলচাষ।

এভাবে বিগত প্রায় ২০ বছরের ব্যবধানে লাভের টাকায় পাশের আরও কয়েক বিঘা জমি কিনে ফলচাষের আওতায় এনেছেন। বর্তমানে ফলচাষের অধিনে তার জমির পরিমান এখন ২৪ বিঘা। এরমধ্যে এখন ৯ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের মালটা, ৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন,৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ রয়েছে। তার ভাষ্য, এ পর্যন্ত বানিজ্যিকভাবে যত রকমের ফলের চাষ করেছেন তার মধ্যে কাটিমন আম চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক।

কাটিমন আম চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, আজ থেকে ৩ বছর আগে জীবননগর থেকে প্রতিটি ২৫০ টাকা দরে চারা কিনে মোট ১৭২ শতক জমিতে রোপন করেন। পরের বছর থেকেই আম ধরা শুরু হয়। তিনি বলেন এ বছর মোট ৫৭০ টি গাছের মধ্যে ২৪৩ টিতে আম ধরেছে। যা এখনও গাছে ঝুলে আছে।

তিনি বলেন, এ বছর এ পর্যন্ত ৫০ মন আম প্রতিকেজি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। এখনও কমপক্ষে ৫০ মন আম গাছে ঝুলে আছে। তিনি বলেন এ বছরই যাবতীয় খরচ উঠিয়ে এখন লাভের মুখ দেখছেন।

তিনি বলেন, কাটিমন আম গাছে বছরে ৩ বার ফল ধরে । এ আম অনেক সুস্বাদু ও অসময়ে পাওয়া যায়। ফলে মৌসুমের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে একটি আম বাগান থেকে কমপক্ষে ১৭-১৮ বছর আম পাওয়া সম্ভব।

তিনি তার দীর্ঘ ফলচাষের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, এ পর্যন্ত সব ধরনের ফলচাষেই তিনি লাভ করেছেন তবে অল্প সময়ের কাটিমন জাতের আমে অতিমাত্রায় লাভ পেয়েছেন। আগামীতে আরও কয়েক বিঘা জমিতে এ জাতের আম চাষ বাড়াবেন বলে ভাবছেন।

রবিউলের মেজো ভাই আতাউর রহমান জানান, তার ছোট ভাই রবিউল লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীর পিছে ছুটে ব্যর্থ হয়ে সৌখিন ফল ও ফসলের চাষ শুরু করেন। বাড়ির চারপাশের জমিতে দারুচিনি, তেজপাতা, আশফল, লটকন, কদবেল, চালতা, বেদানা, জলপাই, লিচু, আম, জাফরান, বেল, পেয়ারা, জাম, করমচা,আমড়া, আমলকীসহ বিভিন্ন ঔষধী জাতীয় প্রয়োজনীয় গাছপালা রয়েছে তার। রয়েছে নানা ধরনের সবজি গাছ। কিন্ত বেশি নজরে এসেছে বানিজ্যিক ফসল কাটিমন আম।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মোহায়মেন আক্তার জানান,এ উপজেলার শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলাম অত্যন্ত যতœসহকারে বিভিন্ন ফল ফলাদির চাষ করে থাকেন। তার বিভিন্ন ফলের চাষ পরিদর্শনে কয়েকবার গেছেন। প্রয়োজন মত কৃষি অফিস পরামর্শ প্রদান করে থাকেন বলে জানান এ কৃষিবিদ।