১২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত অ‌র্থে নি‌জের জন্য জ‌মি কিন‌লেন ইউএনও।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৪১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১
  • 32

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ করে দেওয়া। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় গত ও চলতি অর্থ বছরে ১২৪ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এসব ঘরের তালিকা তৈরি ও গৃহনির্মাণ করে দেন রাজীবপুরের সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া ইউএনও মেহেদী হাসান। মেম্বার চেয়ারম্যানদের না জানিয়ে তাদের নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত সবগুলো গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন ইউএনও। গৃহনির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ওই বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা।

আজ শুক্রবার উপজেলার তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বদলি হওয়া ইউএনও গৃহহীনের টাকা দিয়ে ঠাকুরগাঁয়ে মেইন রাস্তার সঙ্গে বাড়ি করার জন্য কোটি টাকা খরচ করে জমি কিনেছেন। রাজীবপুরের ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গৃহহীনদের ঠকিয়ে অবৈধভাবে আয় করা ওই টাকা তিনি কামাই করে নিয়ে গেছেন।

গত ১৭ মে তাকে রাজীবপুর থেকে অবমুক্ত করা হলেও তিনি এখানে থেকে ব্যাক ডেটে (পূর্বের তারিখে) অনেক ফাইলে স্বাক্ষর করে টাকা তুলে আজ শুক্রবার কাউকে না জানিয়ে জুম্মা নামাজের আগে বৃষ্টির মধ্যে রাজীবপুর ত্যাগ করেন বলে জানান সদর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল।

তিনি অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গৃহহীনদের টাকা তিনি ভুয়া বিল-ভাউচারে তুলে নিয়েছেন। এমন চারটি পরিবার রয়েছে যাদের নামে ঘর নির্মাণ দেখানো হয়েছে কিন্তু বাস্তবে তাদের বাড়িতে ঘর উঠেনি। আমি এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ইউএনও ওইসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজীবপুর উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। উপজেলা ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইউএনওর নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, ভূমিহীন নেত্রী হাফিজা বেগম, আব্দুর রশীদ, ফুল মিয়াসহ অনেকেই।

সদর ইউনিয়নের সদস্য ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে অথচ আমি কিছুই জানি না। আমার নামে ১৬ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে আমাকে জানিয়ে।’ একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়া ও আবু বক্কর অভিযোগ করেন, গত ১৫ জানুয়ারি আমাদের নামের ৬ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে তোলা হয়। আব্দুল বারী নামের আরেক সদস্য বলেন, ‘আমার নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে কয়েক দফায় ২০ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে। ইউএনও স্যার তার লোক দিয়ে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন।’

সদর ইউনিয়নের সকল সদস্য অভিযোগ করেন, আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে কোটি টাকার ব্যবসা করেন ইউএনও। নির্মাণ করে দেওয়া ঘরগুলো এক মাসেই ফেটে ভেঙে যাচ্ছে। খুবই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এমনটা হয়েছে।

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু অভিযোগ করেন কুড়িগ্রামের প্রত্যাহার হওয়া ডিসি সুলতানা পারভীনের প্রভাব খাটিয়ে ইউএনও স্যার ওই দুর্নীতি করেছেন। তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে তার নিজের এলাকার মিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিকদের রাজীবপুরে এসে নিম্নমানের কাজ করেন। আমাদের এলাকার নির্মাণ শ্রমিকদের বঞ্চিত করেন তিনি। যার বাড়িতে ঘর দেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের খাবারের ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের খরচও আদায় করেন ওই ইউএনও। একই ধরনের অভিযোগ করেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও।

রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৫টি এবং চলতি অর্থবছরে ৬৯টি বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা সবগুলো ঘর নির্মাণ বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাধ্যমে ঘরগুলো নির্মাণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও ইউএনও তা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ‘গৃহনির্মাণ কাজগুলো ইউএনও স্যার একা করছেন। আমাকে বিল ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে বলেছে আমি দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

অভিযোগগুলো নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যান মেম্বারদের ঘর নির্মাণের দায়িত্ব দিলে তারা দুর্নীতি করতেন। এ কারণে ঘরগুলো আমি এবং আমার নিজস্ব কিছু লোক দ্বারা করে দিয়েছি। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন তিনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বাণিজ্য করিনি। তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু ঘর নেই-এমন কয়েকজনের স্বজনদের বাড়িতে ওই ঘর করে দেওয়া হয়েছে।’

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত অ‌র্থে নি‌জের জন্য জ‌মি কিন‌লেন ইউএনও।

Update Time : ০৯:৪১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ করে দেওয়া। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় গত ও চলতি অর্থ বছরে ১২৪ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এসব ঘরের তালিকা তৈরি ও গৃহনির্মাণ করে দেন রাজীবপুরের সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া ইউএনও মেহেদী হাসান। মেম্বার চেয়ারম্যানদের না জানিয়ে তাদের নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত সবগুলো গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন ইউএনও। গৃহনির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ওই বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা।

আজ শুক্রবার উপজেলার তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বদলি হওয়া ইউএনও গৃহহীনের টাকা দিয়ে ঠাকুরগাঁয়ে মেইন রাস্তার সঙ্গে বাড়ি করার জন্য কোটি টাকা খরচ করে জমি কিনেছেন। রাজীবপুরের ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গৃহহীনদের ঠকিয়ে অবৈধভাবে আয় করা ওই টাকা তিনি কামাই করে নিয়ে গেছেন।

গত ১৭ মে তাকে রাজীবপুর থেকে অবমুক্ত করা হলেও তিনি এখানে থেকে ব্যাক ডেটে (পূর্বের তারিখে) অনেক ফাইলে স্বাক্ষর করে টাকা তুলে আজ শুক্রবার কাউকে না জানিয়ে জুম্মা নামাজের আগে বৃষ্টির মধ্যে রাজীবপুর ত্যাগ করেন বলে জানান সদর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল।

তিনি অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গৃহহীনদের টাকা তিনি ভুয়া বিল-ভাউচারে তুলে নিয়েছেন। এমন চারটি পরিবার রয়েছে যাদের নামে ঘর নির্মাণ দেখানো হয়েছে কিন্তু বাস্তবে তাদের বাড়িতে ঘর উঠেনি। আমি এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ইউএনও ওইসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজীবপুর উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। উপজেলা ভূমিহীন সংগঠনের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইউএনওর নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, ভূমিহীন নেত্রী হাফিজা বেগম, আব্দুর রশীদ, ফুল মিয়াসহ অনেকেই।

সদর ইউনিয়নের সদস্য ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে অথচ আমি কিছুই জানি না। আমার নামে ১৬ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে আমাকে জানিয়ে।’ একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়া ও আবু বক্কর অভিযোগ করেন, গত ১৫ জানুয়ারি আমাদের নামের ৬ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে তোলা হয়। আব্দুল বারী নামের আরেক সদস্য বলেন, ‘আমার নামে গৃহনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে কয়েক দফায় ২০ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে। ইউএনও স্যার তার লোক দিয়ে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন।’

সদর ইউনিয়নের সকল সদস্য অভিযোগ করেন, আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে কোটি টাকার ব্যবসা করেন ইউএনও। নির্মাণ করে দেওয়া ঘরগুলো এক মাসেই ফেটে ভেঙে যাচ্ছে। খুবই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এমনটা হয়েছে।

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু অভিযোগ করেন কুড়িগ্রামের প্রত্যাহার হওয়া ডিসি সুলতানা পারভীনের প্রভাব খাটিয়ে ইউএনও স্যার ওই দুর্নীতি করেছেন। তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে তার নিজের এলাকার মিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিকদের রাজীবপুরে এসে নিম্নমানের কাজ করেন। আমাদের এলাকার নির্মাণ শ্রমিকদের বঞ্চিত করেন তিনি। যার বাড়িতে ঘর দেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের খাবারের ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের খরচও আদায় করেন ওই ইউএনও। একই ধরনের অভিযোগ করেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও।

রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাবিটা (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার) ও টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৫টি এবং চলতি অর্থবছরে ৬৯টি বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা সবগুলো ঘর নির্মাণ বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাধ্যমে ঘরগুলো নির্মাণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও ইউএনও তা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ‘গৃহনির্মাণ কাজগুলো ইউএনও স্যার একা করছেন। আমাকে বিল ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে বলেছে আমি দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

অভিযোগগুলো নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যান মেম্বারদের ঘর নির্মাণের দায়িত্ব দিলে তারা দুর্নীতি করতেন। এ কারণে ঘরগুলো আমি এবং আমার নিজস্ব কিছু লোক দ্বারা করে দিয়েছি। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন তিনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বাণিজ্য করিনি। তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু ঘর নেই-এমন কয়েকজনের স্বজনদের বাড়িতে ওই ঘর করে দেওয়া হয়েছে।’