০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘ওসির বউ’ পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৩৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • 24

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্যুৎ অপচয়, অনিয়মিত অফিস করা-সহ বেশ কিছু অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানাকে বঙ্গমাতা হলে বদলি করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হলের হল প্রভোস্ট নুসরাত শারমিন তানিয়া।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) নিজ দপ্তরে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় অফিস কক্ষে ফ্যান চলার একটি ভিডিওসহ অনিয়মিত অফিস করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেইজে প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকদের সংগঠন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশের পর উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে সংগঠনটির সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিচার দেন।

যেখানে বলতে শোনা গেছে, সাংবাদিকরা কি জানে না যে, আমি ‘ওসির বউ’। আমি কি করতে পারি, ওরা জানে না?

মূহুর্তেই তার এই বক্তব্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিপরীতে সন্ধ্যায় ‘ওসির বউ’ পরিচয় দেয়া রেবেকা সুলতানাকে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে মেয়েদের হলে বদলি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নজরে ছিলেন এই কর্মকর্তা। উপাচার্য নিজেও এটি নজরদারিতে রেখেছিলেন। অনেকগুলো অভিযোগ মিলেই তাকে দেয়া হলো এই স্ট্যান্ড রিলিজ।

এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভবনে আধিপত্য বিস্তার করে একটি বলয় গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। বারবার তার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসলেও প্রশাসন তার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

তবে ‘ওসির বউ’ পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের শাসানো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সাংবাদিকদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করিনি। আমার কোনও প্রশাসনিক সিন্ডিকেট নেই। আমি একজন ছোট কর্মকর্তা, অফিস করি নিয়মিত। আমি ছুটিতে আছি, এই সময়ে আমার রুমে কিছু হলে- সেটার জন্য আমি দায়ী না।

একইসঙ্গে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ভিসি আর রেজিস্ট্রার-এর রুমেও তো খালি অবস্থায় বিদ্যুৎ-এর ব্যবহার হয়। কই তখন তো কথা ওঠে না!

অভিযোগের বিষয়টি এই কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও তার একটি কল রেকর্ড গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। যেখানে নিজেকে ‘ওসির বউ’ দাবী করে সাংবাদিকদের শাসিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে।

সেই কথোপকথনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা কি (সাংবাদিকরা) জানেনা, আমি দারোগা, ওসি’র বউ? আমি কি করতে পারি, এরা কি বোঝে না? কিছু বলি না দেখে সাহস বাইড়া গেছে?’

এদিকে, স্ট্যান্ড রিলিজ-এর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানাকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বদলি করে বঙ্গমাতা হলে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকায় নিজের মতো করে কাজ করেন তিনি। ছুটি না নিয়ে অফিস না করলেও আলোচনায় আসলে পেছনের তারিখ দিয়ে দেখায় যে, তিনি ছুটির আবেদন করেই ছুটিতে ছিলেন। রেজিস্ট্রার দপ্তরের বস ও বড় আপা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, বদলি হওয়া উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ-এর স্ত্রী।

অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর পরিচয় ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রশাসনকে চাপের মুখে রেখে অনেককে বদলিও করাতেন এই কর্মকর্তা।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

‘ওসির বউ’ পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার

Update Time : ০৭:৩৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্যুৎ অপচয়, অনিয়মিত অফিস করা-সহ বেশ কিছু অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানাকে বঙ্গমাতা হলে বদলি করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হলের হল প্রভোস্ট নুসরাত শারমিন তানিয়া।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) নিজ দপ্তরে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় অফিস কক্ষে ফ্যান চলার একটি ভিডিওসহ অনিয়মিত অফিস করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেইজে প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকদের সংগঠন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশের পর উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে সংগঠনটির সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিচার দেন।

যেখানে বলতে শোনা গেছে, সাংবাদিকরা কি জানে না যে, আমি ‘ওসির বউ’। আমি কি করতে পারি, ওরা জানে না?

মূহুর্তেই তার এই বক্তব্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিপরীতে সন্ধ্যায় ‘ওসির বউ’ পরিচয় দেয়া রেবেকা সুলতানাকে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে মেয়েদের হলে বদলি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নজরে ছিলেন এই কর্মকর্তা। উপাচার্য নিজেও এটি নজরদারিতে রেখেছিলেন। অনেকগুলো অভিযোগ মিলেই তাকে দেয়া হলো এই স্ট্যান্ড রিলিজ।

এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভবনে আধিপত্য বিস্তার করে একটি বলয় গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। বারবার তার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসলেও প্রশাসন তার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

তবে ‘ওসির বউ’ পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের শাসানো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সাংবাদিকদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করিনি। আমার কোনও প্রশাসনিক সিন্ডিকেট নেই। আমি একজন ছোট কর্মকর্তা, অফিস করি নিয়মিত। আমি ছুটিতে আছি, এই সময়ে আমার রুমে কিছু হলে- সেটার জন্য আমি দায়ী না।

একইসঙ্গে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ভিসি আর রেজিস্ট্রার-এর রুমেও তো খালি অবস্থায় বিদ্যুৎ-এর ব্যবহার হয়। কই তখন তো কথা ওঠে না!

অভিযোগের বিষয়টি এই কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও তার একটি কল রেকর্ড গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। যেখানে নিজেকে ‘ওসির বউ’ দাবী করে সাংবাদিকদের শাসিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে।

সেই কথোপকথনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা কি (সাংবাদিকরা) জানেনা, আমি দারোগা, ওসি’র বউ? আমি কি করতে পারি, এরা কি বোঝে না? কিছু বলি না দেখে সাহস বাইড়া গেছে?’

এদিকে, স্ট্যান্ড রিলিজ-এর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানাকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বদলি করে বঙ্গমাতা হলে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকায় নিজের মতো করে কাজ করেন তিনি। ছুটি না নিয়ে অফিস না করলেও আলোচনায় আসলে পেছনের তারিখ দিয়ে দেখায় যে, তিনি ছুটির আবেদন করেই ছুটিতে ছিলেন। রেজিস্ট্রার দপ্তরের বস ও বড় আপা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, বদলি হওয়া উপ-রেজিস্ট্রার রেবেকা সুলতানা জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ-এর স্ত্রী।

অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর পরিচয় ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রশাসনকে চাপের মুখে রেখে অনেককে বদলিও করাতেন এই কর্মকর্তা।