১১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আহা, বিদেশ জীবন! প্রসঙ্গ যেখা‌নে ইউ‌রো ফাইনাল।

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫০:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
  • 42

আহা, বিদেশ জীবন!

ইউরো ফুটবল ফাইনাল দেখার পর আবারো বার বার মনে হচ্ছে বিষয়টা।

দূর থেকে মনে হয় কতো ভালো আছি। সবাই ভাবে আলো-ঝলমলে রঙিন জীবন আমাদের।

এইসব দেখে দেশে থাকা বেশিরভাগ মানুষ বিদেশে আসতে চায়। আমি নিজেই প্রতিদিন কতো শত মেসেজ আর ই-মেইল পাই। সবাই বিদেশ আসতে চায়।

আমি বিদেশে আসার বিরোধী নই। যারা বিদেশে পড়তে, থাকতে কিংবা চাকরি করতে আসতে চায়, আমি বরং তাদের উৎসাহ দেই।

কিন্তু মুদ্রার উল্টো পাশটাও জানা উচিত।

আমি এর আগেও পত্রিকায় এই নিয়ে একটা লেখা লিখেছি। আমার ধারণা আমরা যারা বিদেশে থাকি, তারা সব সময় বিদেশের সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে পারি না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশে থাকা মানুষদের কাছে আলো-ঝলমলে জীবনটাই তুলে ধরি। মানুষ ভাবে- এরা তো অনেক সুখে আছে। কতো টাকা এদের। কতো সুন্দর বাড়ি-ঘর। রঙিন গাড়ি, গ্রামে বাড়ি বানিয়েছে ইত্যাদি।

বিদেশে থাকা সবার অবস্থা কিন্তু এমন ভালো নয়। এরপরও ধরে নিলাম অনেক দিন থাকার পর হয়ত একটা সময় ভাগ্য বদলায়। কিন্তু মুদ্রার অপর পাশ?

তারা কি আদৌ সুখি?

ইংল্যান্ড- ইতালির ইউরো ফুটবল ফাইনালে ব্ল্যাক ইংলিশ খেলোয়াড়রা পেনাল্টি মিস করার পর ব্রিটিশ’রা যেভাবে বর্ণবাদী মনোভাব নিয়ে এই খেলোয়াড়দের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে; তাতে ওই খেলোয়াড়দের কেমন মনে হচ্ছে আমার ঠিক জানা নেই।

যে দেশকে বলা হয় সভ্যতার ধারক ও বাহক; সেই দেশের মানুষরা কিনা এদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলছে। কেউ বলছে ব্ল্যাক কিভাবে ইংলিশ হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো এই খেলোয়াড়দের নিয়ে এমন কিছু নেই লিখছে না ওরা!

অথচ প্রতিদিন খেলা শুরু হবার আগে এই ইংলিশ খেলোয়াড়রা বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে হাঁটু গেঁড়ে প্রতিবাদ করে এসছে।

যতক্ষণ ভালো খেলেছে; ততক্ষণ ওরা ইংলিশ। যেই না খারাপ খেলেছে; তখন ওরা ব্ল্যাক। ওরা কি করে ইংলিশ হয়!

আমার নিজের অভিজ্ঞতাই তো আর কম হলো না। নিজের জীবনের অর্ধেকটা সময় আমি ইউরোপে থাকছি। ১৭ বছর অনেক লম্বা সময়। সুইডেন, নেদারল্যান্ডস এবং ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করেছি। এখন এস্তনিয়ার পড়াচ্ছি।

এই ১৭ বছরে কতো কি অভিজ্ঞতা হলো। এইসব অভিজ্ঞতা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। স্রেফ উপলব্ধি করা যায়। কাজের জায়গায় গেলে কিংবা কোথাও গেলে আমাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়- তুমি কিন্তু আমাদের চাইতে আলাদা!

অনেকেই ভাবে- আমি হয়ত এদের মতো হতে পারবো না কিন্তু পরিবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ সন্তানরা পারবে।সন্তানরা তো এইসব দেশে জন্মেছে কিংবা এখানেই বড় হচ্ছে। ওদের সমস্যা হবে না।

স্রেফ চিন্তা করে দেখুন ব্রিটিশ ব্ল্যাক ওই খেলোয়াড়দের কথা। ওরা কিন্তু ইংল্যান্ডেই জন্মেছে। ইংল্যান্ডই ওদের দেশ। নামকরা খেলোয়াড়। বিশ্ব জুড়ে ওদের নাম ডাক।

এরপরও রক্ষা হয়নি। শেষমেশ ওদের পরিচয় হয়েছে- ওরা ব্ল্যাক।

আমি জানি না ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশে থাকা বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা কেমন। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা আমাকে জানান দিচ্ছে- রাস্তায় বের হলে আমার পরিচয় হচ্ছে- আমি স্রেফ একজন ইমিগ্রেন্ট।

অর্থাৎ এইসব দেশে ইমিগ্রেন্টদের নানান স্ট্যাটাস প্র্যাকটিসের কোন সুযোগ নেই। সবাই এক। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, নামকরা খেলোয়াড় হন কিংবা অতি সাধারণ শ্রমিক হন; রাস্তায় বের হলে আপনি বিদেশি। কারন আপনি দেখতে অন্য রকম।

আমি লেখক হতে পেরেছি কিনা জানি; তবে লেখালেখি তো করি। শব্দ নিয়েই আমার কাজ। সেই আমার পক্ষেই এই অনুভূতি লিখে জানান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমি জানি; কতো গভীরে এই অনুভূতি।

আমরা যারা বিদেশে থাকি; একটা জীবন আমাদের কেটে যাচ্ছে শুধু এটা ভেবে- শেষ সময়ে দেশে ফিরব। এই দেশ তো আমার নয়।

আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেকে এসে বলবেন- তাহলে আপনি কেন বিদেশে থাকছেন?

আমি স্রেফ আমার কথা বলতে পারি। আমার পরিবারে কেউ বিদেশে সেটেল হয়নি। ভাই-বোনরা বিদেশে এসছে। পড়াশুনা করে দেশে চলে গিয়েছে। এমনকি বোনের মেয়েরাও বিদেশে এসে পড়াশুনা করে সবাই চলে গিয়েছে। কেউ একদিনের জন্যও বেশি সময় বিদেশে থাকেনি।

আমার একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে আমি হয়ত ভাবি- আমার জন্য বিদেশ ভালো। কিছু জন্মগত সমস্যা তো আর আমি চাইলেও সমাধান করতে পারব না। সেই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি আমি অতি অবশ্যই দেশে চলে যাবো।

তাই বলে কি আমি বিদেশে আসার বিপক্ষে?

অবশ্যই না। পড়াশুনা, চাকরি কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে আসুন। সমস্যা নেই। তাছাড়া দেশেও তো সমস্যার অভাব নেই। মানুষ চাকরি পায় না। নানান দুর্নীতি ইত্যাদি আরও কতো কি।

বিদেশে আসুন। সমস্যা নেই। কিন্তু দুই পাশটা জেনে আসুন। আমরা যারা বিদেশে থাকি, আপনারা আমাদের স্রেফ আলো-ঝলমলে দিকটাই দেখেন। কারন বিদেশে থাকা এই আমরা আপনাদের সেটাই দেখাই।

কেন দেখাই সেটা কী জানেন?

আমি কিন্তু ইমিগ্রেন্টদের নিয়েই গবেষণা করি।

সেই গবেষণা আমাকে জানান দিচ্ছে- আমাদের মতো ইমিগ্রেন্টরা এইসব দেশে যেই মর্যাদা পাওয়ার কথা, সেটা আমরা পাই না। যেই সম্মান টুকু আমাদের পাওয়া দরকার সেটা আমরা পাই না। আমরা এখানে নানান শ্রেণী-পেশার মানুষও থাকি। সেই নানান স্ট্যাটাস প্র্যাকটিসও আমরা এখানে করতে পারি না। দিন শেষে রাস্তায় বের হলে কিংবা এই সব সমাজে আমাদের পরিচয়- আমরা ইমিগ্রেন্ট।

এই জন্য আমাদের মতো ইমিগ্রেন্টরা সেই মর্যাদা টুকু নিজ দেশে থাকা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পেতে চায়। সেই সম্মান টুকু অন্য বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পেতে চায়। সেটা পেতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা পুরো চিত্রটা তুলে ধরি না।

বিদেশে এসে কঠিন পরিশ্রম (হাড় ভাঙা পরিশ্রম), আত্মীয়-পরিজনহীন জীবন এবং আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা এই আমরা তখন আপনাদের কাছে আমাদের আলো-ঝলমলে জীবনটা দেখাই। যাতে করে একটু মর্যাদা, একটু সম্মান পাওয়া যায়। যেটা হয়ত আমরা এই সমাজে পাই না।

আমি বরং ইংলিশ সেই ব্ল্যাক ফুটবল খেলোয়াড়, যে কিনা পেনাল্টি মিস করেছে; তার উক্তি তুলে ধরছি। আজ সে বলছে

– “আমি আমার পেনাল্টি মিস করার জন্য ক্ষমা চাইছি। কিন্তু আমি কখনো ক্ষমা চাইবো না- ‘আমি কে’ এই জন্য।

এইবার বুঝে নিন। পৃথিবীর সব চাইতে সভ্য দেশ ইংল্যান্ড (আমার যদিও এটা বলতে আপত্তি আছে); সেই দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে কিনা বলতে হচ্ছে- ‘আমি কে’ এই জন্য আমি ক্ষমা চাইব না।

এটাই আমাদের জীবন। এভাবেই এক জীবন আমরা পার করে দিচ্ছি। অন্তত আমি দিচ্ছি।

গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সা দেখা যায়। যেটা দেখা যায় না, সেটা হচ্ছে প্রতিদিন নিয়ম করে নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাওয়া। যেখানে আমাকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে হয়- আমি আসলে কে? আমার পরিচয় কি?

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আহা, বিদেশ জীবন! প্রসঙ্গ যেখা‌নে ইউ‌রো ফাইনাল।

Update Time : ১২:৫০:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১

আহা, বিদেশ জীবন!

ইউরো ফুটবল ফাইনাল দেখার পর আবারো বার বার মনে হচ্ছে বিষয়টা।

দূর থেকে মনে হয় কতো ভালো আছি। সবাই ভাবে আলো-ঝলমলে রঙিন জীবন আমাদের।

এইসব দেখে দেশে থাকা বেশিরভাগ মানুষ বিদেশে আসতে চায়। আমি নিজেই প্রতিদিন কতো শত মেসেজ আর ই-মেইল পাই। সবাই বিদেশ আসতে চায়।

আমি বিদেশে আসার বিরোধী নই। যারা বিদেশে পড়তে, থাকতে কিংবা চাকরি করতে আসতে চায়, আমি বরং তাদের উৎসাহ দেই।

কিন্তু মুদ্রার উল্টো পাশটাও জানা উচিত।

আমি এর আগেও পত্রিকায় এই নিয়ে একটা লেখা লিখেছি। আমার ধারণা আমরা যারা বিদেশে থাকি, তারা সব সময় বিদেশের সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে পারি না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশে থাকা মানুষদের কাছে আলো-ঝলমলে জীবনটাই তুলে ধরি। মানুষ ভাবে- এরা তো অনেক সুখে আছে। কতো টাকা এদের। কতো সুন্দর বাড়ি-ঘর। রঙিন গাড়ি, গ্রামে বাড়ি বানিয়েছে ইত্যাদি।

বিদেশে থাকা সবার অবস্থা কিন্তু এমন ভালো নয়। এরপরও ধরে নিলাম অনেক দিন থাকার পর হয়ত একটা সময় ভাগ্য বদলায়। কিন্তু মুদ্রার অপর পাশ?

তারা কি আদৌ সুখি?

ইংল্যান্ড- ইতালির ইউরো ফুটবল ফাইনালে ব্ল্যাক ইংলিশ খেলোয়াড়রা পেনাল্টি মিস করার পর ব্রিটিশ’রা যেভাবে বর্ণবাদী মনোভাব নিয়ে এই খেলোয়াড়দের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে; তাতে ওই খেলোয়াড়দের কেমন মনে হচ্ছে আমার ঠিক জানা নেই।

যে দেশকে বলা হয় সভ্যতার ধারক ও বাহক; সেই দেশের মানুষরা কিনা এদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলছে। কেউ বলছে ব্ল্যাক কিভাবে ইংলিশ হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো এই খেলোয়াড়দের নিয়ে এমন কিছু নেই লিখছে না ওরা!

অথচ প্রতিদিন খেলা শুরু হবার আগে এই ইংলিশ খেলোয়াড়রা বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে হাঁটু গেঁড়ে প্রতিবাদ করে এসছে।

যতক্ষণ ভালো খেলেছে; ততক্ষণ ওরা ইংলিশ। যেই না খারাপ খেলেছে; তখন ওরা ব্ল্যাক। ওরা কি করে ইংলিশ হয়!

আমার নিজের অভিজ্ঞতাই তো আর কম হলো না। নিজের জীবনের অর্ধেকটা সময় আমি ইউরোপে থাকছি। ১৭ বছর অনেক লম্বা সময়। সুইডেন, নেদারল্যান্ডস এবং ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করেছি। এখন এস্তনিয়ার পড়াচ্ছি।

এই ১৭ বছরে কতো কি অভিজ্ঞতা হলো। এইসব অভিজ্ঞতা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। স্রেফ উপলব্ধি করা যায়। কাজের জায়গায় গেলে কিংবা কোথাও গেলে আমাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়- তুমি কিন্তু আমাদের চাইতে আলাদা!

অনেকেই ভাবে- আমি হয়ত এদের মতো হতে পারবো না কিন্তু পরিবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ সন্তানরা পারবে।সন্তানরা তো এইসব দেশে জন্মেছে কিংবা এখানেই বড় হচ্ছে। ওদের সমস্যা হবে না।

স্রেফ চিন্তা করে দেখুন ব্রিটিশ ব্ল্যাক ওই খেলোয়াড়দের কথা। ওরা কিন্তু ইংল্যান্ডেই জন্মেছে। ইংল্যান্ডই ওদের দেশ। নামকরা খেলোয়াড়। বিশ্ব জুড়ে ওদের নাম ডাক।

এরপরও রক্ষা হয়নি। শেষমেশ ওদের পরিচয় হয়েছে- ওরা ব্ল্যাক।

আমি জানি না ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশে থাকা বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা কেমন। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা আমাকে জানান দিচ্ছে- রাস্তায় বের হলে আমার পরিচয় হচ্ছে- আমি স্রেফ একজন ইমিগ্রেন্ট।

অর্থাৎ এইসব দেশে ইমিগ্রেন্টদের নানান স্ট্যাটাস প্র্যাকটিসের কোন সুযোগ নেই। সবাই এক। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, নামকরা খেলোয়াড় হন কিংবা অতি সাধারণ শ্রমিক হন; রাস্তায় বের হলে আপনি বিদেশি। কারন আপনি দেখতে অন্য রকম।

আমি লেখক হতে পেরেছি কিনা জানি; তবে লেখালেখি তো করি। শব্দ নিয়েই আমার কাজ। সেই আমার পক্ষেই এই অনুভূতি লিখে জানান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমি জানি; কতো গভীরে এই অনুভূতি।

আমরা যারা বিদেশে থাকি; একটা জীবন আমাদের কেটে যাচ্ছে শুধু এটা ভেবে- শেষ সময়ে দেশে ফিরব। এই দেশ তো আমার নয়।

আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেকে এসে বলবেন- তাহলে আপনি কেন বিদেশে থাকছেন?

আমি স্রেফ আমার কথা বলতে পারি। আমার পরিবারে কেউ বিদেশে সেটেল হয়নি। ভাই-বোনরা বিদেশে এসছে। পড়াশুনা করে দেশে চলে গিয়েছে। এমনকি বোনের মেয়েরাও বিদেশে এসে পড়াশুনা করে সবাই চলে গিয়েছে। কেউ একদিনের জন্যও বেশি সময় বিদেশে থাকেনি।

আমার একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে আমি হয়ত ভাবি- আমার জন্য বিদেশ ভালো। কিছু জন্মগত সমস্যা তো আর আমি চাইলেও সমাধান করতে পারব না। সেই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি আমি অতি অবশ্যই দেশে চলে যাবো।

তাই বলে কি আমি বিদেশে আসার বিপক্ষে?

অবশ্যই না। পড়াশুনা, চাকরি কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে আসুন। সমস্যা নেই। তাছাড়া দেশেও তো সমস্যার অভাব নেই। মানুষ চাকরি পায় না। নানান দুর্নীতি ইত্যাদি আরও কতো কি।

বিদেশে আসুন। সমস্যা নেই। কিন্তু দুই পাশটা জেনে আসুন। আমরা যারা বিদেশে থাকি, আপনারা আমাদের স্রেফ আলো-ঝলমলে দিকটাই দেখেন। কারন বিদেশে থাকা এই আমরা আপনাদের সেটাই দেখাই।

কেন দেখাই সেটা কী জানেন?

আমি কিন্তু ইমিগ্রেন্টদের নিয়েই গবেষণা করি।

সেই গবেষণা আমাকে জানান দিচ্ছে- আমাদের মতো ইমিগ্রেন্টরা এইসব দেশে যেই মর্যাদা পাওয়ার কথা, সেটা আমরা পাই না। যেই সম্মান টুকু আমাদের পাওয়া দরকার সেটা আমরা পাই না। আমরা এখানে নানান শ্রেণী-পেশার মানুষও থাকি। সেই নানান স্ট্যাটাস প্র্যাকটিসও আমরা এখানে করতে পারি না। দিন শেষে রাস্তায় বের হলে কিংবা এই সব সমাজে আমাদের পরিচয়- আমরা ইমিগ্রেন্ট।

এই জন্য আমাদের মতো ইমিগ্রেন্টরা সেই মর্যাদা টুকু নিজ দেশে থাকা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পেতে চায়। সেই সম্মান টুকু অন্য বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পেতে চায়। সেটা পেতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা পুরো চিত্রটা তুলে ধরি না।

বিদেশে এসে কঠিন পরিশ্রম (হাড় ভাঙা পরিশ্রম), আত্মীয়-পরিজনহীন জীবন এবং আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা এই আমরা তখন আপনাদের কাছে আমাদের আলো-ঝলমলে জীবনটা দেখাই। যাতে করে একটু মর্যাদা, একটু সম্মান পাওয়া যায়। যেটা হয়ত আমরা এই সমাজে পাই না।

আমি বরং ইংলিশ সেই ব্ল্যাক ফুটবল খেলোয়াড়, যে কিনা পেনাল্টি মিস করেছে; তার উক্তি তুলে ধরছি। আজ সে বলছে

– “আমি আমার পেনাল্টি মিস করার জন্য ক্ষমা চাইছি। কিন্তু আমি কখনো ক্ষমা চাইবো না- ‘আমি কে’ এই জন্য।

এইবার বুঝে নিন। পৃথিবীর সব চাইতে সভ্য দেশ ইংল্যান্ড (আমার যদিও এটা বলতে আপত্তি আছে); সেই দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে কিনা বলতে হচ্ছে- ‘আমি কে’ এই জন্য আমি ক্ষমা চাইব না।

এটাই আমাদের জীবন। এভাবেই এক জীবন আমরা পার করে দিচ্ছি। অন্তত আমি দিচ্ছি।

গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সা দেখা যায়। যেটা দেখা যায় না, সেটা হচ্ছে প্রতিদিন নিয়ম করে নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাওয়া। যেখানে আমাকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে হয়- আমি আসলে কে? আমার পরিচয় কি?