০১:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগের দামেই খুলনার বাজারে বিক্রি হচ্ছে তেল ও গ্যাস

সরকার গ্যাস ও তেলের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও খুলনার বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দাম বৃদ্ধির সংবাদের পরপরই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলেও দাম কমার পর তা বাস্তবায়ন করতে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন তারা। মহানগরীর বাজারের বর্তমান এ চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. সামসুর রহমান বলেন, ৩ অক্টোবর ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তারপর চার দিন অতিবাহিত হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবার নতুন করে পাম ওয়েলের দাম কমানো হয়। প্রতি লিটার ১২৫ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৪৪ টাকায়। অন্যদিকে সরকার চিনির দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও খুলনায় পরেরদিন তা বিক্রি হচ্ছে আরও ২ টাকা বাড়িয়ে ৯২ টাকায়।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, ‘আয় বাড়েনি, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। বেড়েছে বাসা ভাড়াও। ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বেড়েছে। জীবন চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার নগরীর বাজারগুলোতে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে ৫ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকা ও খোলা এককেজি সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ সরকার ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৪ টাকা ও খোলা তেলে প্রতি লিটারে ১৭ টাকা দাম কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দেয়। সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৫৮ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৮০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।

অন্যদিকে এলপিজি বোতলের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারের আদেশ না মেনে ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন গ্যাসের সিলিন্ডার।

নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শাহীন বলেন, ‘২০২০ সালের শেষের দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দোহাই দিয়ে বাড়ানো হয় ভোজ্য তেলের দাম। পরে বাড়ানো হয় গ্যাসের দামও। কিন্তু এখন তো আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের কোনো সংকট নেই, তাহলে কেন এখনও বর্ধিত দরে বিক্রি করা হচ্ছে পণ্যটি। এছাড়া সরকার গ্যাসের বোতলের দাম কমালেও আমাদের কাছ থেকে ঠিকই বেশি দাম রাখছেন ব্যবসায়ীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশটা আজ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। এরা যেভাবে চাইছে সেভাবেই চলছে সব কার্যক্রম। তেলের লিটার এখনও ১৯২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরকার নতুন দর নির্ধারণ করে দিলেও বর্ধিত দরেই বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য।’

দিনমজুর আনারুল বলেন, ‘সব জিনিষের দর বেড়েছে। বাড়েনি পারিশ্রমিক। বেশি টাকা চাইলে মহাজনরা কাজে নিতে চায় না। পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল মিলাতে পারছি না। পাম ওয়েলের দাম কমেছে ৮ টাকা জেনে বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি দোকানদার বেশি দামেই বিক্রি করছেন তেল।’

রূপসা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার ভোজ্য তেলের নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা এখনও দাম কমায়নি। ব্যবসায়ীরা এখনও বেশি দরে তেল বিক্রি করছেন। উপায়ন্তু না পেয়ে বেশি দরেই তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহিনুর আলম বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। কারো বিরুদ্ধে ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের বেশি দাম রাখার অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আগের দামেই খুলনার বাজারে বিক্রি হচ্ছে তেল ও গ্যাস

Update Time : ১২:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০২২

সরকার গ্যাস ও তেলের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও খুলনার বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দাম বৃদ্ধির সংবাদের পরপরই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলেও দাম কমার পর তা বাস্তবায়ন করতে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছেন তারা। মহানগরীর বাজারের বর্তমান এ চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. সামসুর রহমান বলেন, ৩ অক্টোবর ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তারপর চার দিন অতিবাহিত হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবার নতুন করে পাম ওয়েলের দাম কমানো হয়। প্রতি লিটার ১২৫ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৪৪ টাকায়। অন্যদিকে সরকার চিনির দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও খুলনায় পরেরদিন তা বিক্রি হচ্ছে আরও ২ টাকা বাড়িয়ে ৯২ টাকায়।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, ‘আয় বাড়েনি, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। বেড়েছে বাসা ভাড়াও। ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বেড়েছে। জীবন চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার নগরীর বাজারগুলোতে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে ৫ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকা ও খোলা এককেজি সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ সরকার ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৪ টাকা ও খোলা তেলে প্রতি লিটারে ১৭ টাকা দাম কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দেয়। সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৫৮ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৮০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।

অন্যদিকে এলপিজি বোতলের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারের আদেশ না মেনে ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন গ্যাসের সিলিন্ডার।

নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শাহীন বলেন, ‘২০২০ সালের শেষের দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দোহাই দিয়ে বাড়ানো হয় ভোজ্য তেলের দাম। পরে বাড়ানো হয় গ্যাসের দামও। কিন্তু এখন তো আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের কোনো সংকট নেই, তাহলে কেন এখনও বর্ধিত দরে বিক্রি করা হচ্ছে পণ্যটি। এছাড়া সরকার গ্যাসের বোতলের দাম কমালেও আমাদের কাছ থেকে ঠিকই বেশি দাম রাখছেন ব্যবসায়ীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশটা আজ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। এরা যেভাবে চাইছে সেভাবেই চলছে সব কার্যক্রম। তেলের লিটার এখনও ১৯২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরকার নতুন দর নির্ধারণ করে দিলেও বর্ধিত দরেই বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য।’

দিনমজুর আনারুল বলেন, ‘সব জিনিষের দর বেড়েছে। বাড়েনি পারিশ্রমিক। বেশি টাকা চাইলে মহাজনরা কাজে নিতে চায় না। পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল মিলাতে পারছি না। পাম ওয়েলের দাম কমেছে ৮ টাকা জেনে বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি দোকানদার বেশি দামেই বিক্রি করছেন তেল।’

রূপসা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার ভোজ্য তেলের নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা এখনও দাম কমায়নি। ব্যবসায়ীরা এখনও বেশি দরে তেল বিক্রি করছেন। উপায়ন্তু না পেয়ে বেশি দরেই তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহিনুর আলম বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। কারো বিরুদ্ধে ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের বেশি দাম রাখার অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।