1. [email protected] : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  2. [email protected] : rahad :
২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকবে।ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য | JoyBD24
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ড. ইউনূসের আত্মসম্মান নেই বলে বিবৃতি ভিক্ষা করছেন’: প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ফলপ্রসূ হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকা নাগরিকদের জন্যে সীমান্ত পুনরায় খুলে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে: ওবায়দুল কাদের। ব্রিকস সম্মেলন শেষে আজ দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পানি জমতে না দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব : মেয়র তাপস। রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয়: মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করলো নিজ মেয়ে। যমুনা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ এক বৃদ্ধ। এনবিআর নারী কর্মকর্তাকে অপহরণের পেছনে সাবেক স্বামী।

২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকবে।ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দুই-তিন মাস নয়, আগামী ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালের আগে ঠিক হবে না। বাংলাদেশ সহসা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণ করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা হলো সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির প্রবণতার কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। ২০১৫-১৬ সালের কোনো তথ্য নেই। তারপরও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমরা জানতে পারি। বাংলাদেশের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। এ বৈষম্য শুধু আয় বৈষম্য নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য খুবই প্রকট। এ বৈষম্য ভোগ পর্যন্ত গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য ভোগ বৈষম্য আরও ব্যাপকভাবে আসবে। যা আগামী প্রজন্মের পুষ্টিহীনতায় আঘাত করতে পারে। একই সঙ্গে আমি আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে অর্থনীতির কোনো সুরাহা দেখছি না। আমি মনে করি যারা এখনও বলছেন আগামী ২ মাসের মধ্যে অর্থনীতি ঠিক হবে, চালের দাম ঠিক হবে। তারা কোনো উপকারী মন্তব্য করছেন না। তারা চট জলদি রাজনৈতিক চিন্তা থেকে মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। এটার ফলে বাজারে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে সরকারি স্বচ্ছ পদক্ষেপই একমাত্র বাজারকে স্থিতিশীল করতে পারে। তবে অর্থনীতিতে চাপ থাকলেও সঙ্কট নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

গতকাল অর্থনৈতিক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নিয়মিত ডায়ালগ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালেয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। প্রায় দুই ঘণ্টার প্রাণবন্ত আলোচনায় অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, ফলে টাকা পাচারের প্রবণতা বাড়ে বলে মনে করেন। কাঠামোগত সংস্কার না হলে এটি ঠেকানো সম্ভব নয়। তিনি বরেন, অর্থনীতির রোগ নির্ণয় হয়েছে। এবং এ বিষয়ে ঐকমত্যও আছে। এখন দরকার নিরাময়। কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, তার উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এ মুহূর্তে জিডিপি সংযত করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান কাজ হবে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল সমস্যা আর্থিক খাত, তথা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা। টাকার অভাবে জ্বালানিতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিতে পারছে না সরকার। অথচ, আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে মেতে আছি। ‘আমি বলব, উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে দরিদ্র সরকার। সঙ্কট মোকাবিলায় রাজস্ব আহরণে বেশি মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।’

গত এক দশকে বাংলাদেশের অনেক সাফল্য আছে বলে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এ সময় নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, এলডিসির তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে বড় উলম্ফন এবং ভৌত অবকাঠামো খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি অর্থনীতিতে নানা বিচ্যুতি হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় চার ধরনের বিচ্যুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমত, আমাদের যে জিডিপি হয়েছে, তা মূলত সরকারি খাতের বিনিয়োগ নির্ভর। ব্যক্তি খাতে তেমন বিনিয়োগই হয়নি। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টিকে এভাবে বলা যায়: প্লেন এক ইঞ্জিন দিয়ে চলছে, দ্বিতীয় ইঞ্জিন নেই। ফলে এই প্লেন বেশি দূর যেতে পারবে না।

দ্বিতীয় বিচ্যুতি হচ্ছে, আর্থিক খাতে দুর্বলতা। জাতীয় আয় বেড়েছে, অথচ রাজস্ব আহরণ সেভাবে হয়নি। বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করে যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। আয় কম, ব্যয় কম। ফলে ঘাটতিও কম। তৃতীয় বিচ্যুতি ভৌত অবকাঠামো খাতকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সেভাবে হয়নি। ২০ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে জিডিপি ২ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জিডিপির এক শতাংশের নিচে। মূলত, রাজনৈতিক ফায়দার কারণে সরকার অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে। ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, অর্থনীতিতে এসব বিচ্যুতি শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকে। তারা প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারেনি। বিশেষ গোষ্ঠীদেরকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতাসক্ষম মেধাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানসম্মত বেসরকারি খাত গড়ে না তুলতে পারলে টেকসই উন্নয়ন হবে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমরা দেখেছি, কীভাবে বিদ্যুৎ খাতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এখন এলএনজির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। এভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে অর্থনীতিতে বিচারহীনতার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। অতি মূল্যায়িত উন্নয়ন প্রকল্পে একই সুবিধা দেয়া হয়েছে, যার দায় এসে পড়েছে জনগণের উপরে। সিপিডির এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশে অর্থনীতিতে প্রারম্ভিক লুণ্ঠন শুরু হয় আশির দশকে। শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থা গঠন করে বেনামে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতির সূচনা হয়, যা আজও অব্যাহত আছে। তার মতে, লুণ্ঠনের আরেকটি উৎস পুঁজিবাজার। এখানে অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তৃতীয় লুণ্ঠন হচ্ছে অতিমূল্যায়িত সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া। ফলে বাংলাদেশে এ মুহূর্তে খেটে খাওয়া উদ্যোক্তা শ্রেণি খুবই কম বলে মনে করেন তিনি। গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকলে, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি বৈষম্য বাড়ে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়, তাহলে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী দুই-তিন মাস মাসের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের ধারণা ঠিক নয়। এ ধরনের মন্তব্যে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আগামী ২০২৪ সালের আগে পরিস্থিতির স্বাভাবিক হবে না।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পট আর্থিকভাবে লাভজনক কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হবে না আমরা কখনও এ কথা বলিনি। আমরা এর অর্থায়ন পদ্ধতি নিয়ে বলেছিলাম। পদ্মা সেতুর জন্য অবশ্যই বর্তমান সরকার প্রশংসা দাবি রাখে। তিনি বলেন, বিনিময় হার বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার সঙ্গে অর্থ পাচারের সংযোগ থাকতে পারে। জ্বালানি তেলের দাম ৩৪ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত অনৈতিক অব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হওয়া, কর আহরণের দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য, অর্থনীতির প্রধান বিচ্যুতি। এসব বিচ্যুতি ঠিক মোকাবিলা করা না গেলে পরবর্তী উত্তরণ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে অর্জন হয়েছে সেটিও টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে এবং বিশ্বে এ রকম পরিস্থিতি হতে পারে তা আগেই বলা হয়েছিল। পাশাপাশি এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি স্থিতিকরণ কর্মসূচি জরুরি উল্লেখ করা হয়েছিল। যে কারণে জিডিপির অভিলাষ সংযত করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক ও বৈদেশিক লেনদেন নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিনিময় হার এবং মূল্যস্ফীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দ্রুত শেষ হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা বৈদেশিক লেনদেনে নয়। মূল সমস্যা আর্থিক খাতের দুর্বলতা। প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ না হওয়া। যে কারণে জ্বালানিতে ভর্তুকি, দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি মূলত রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ দ্বারা ধাবিত। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। জিডিপির ২৩ বা ২৪ শতাংশে আটকে আছে। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ৫ থেকে ৬ শতাংশ থেকে ৭ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও হয়নি। এফডিআই জিডিপির এক শতাংশের নিচে। যা গতিশীল অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট নয়। ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি হলে সেগুলোর সুবিধা নিয়ে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা ঘটেনি। বাংলাদেশের অবস্থা এক ইঞ্জিনে চলা উড়োজাহাজের মতো। যে বেশি দূর যেতে পারে না। কিছু দূর চলার পর রানওয়ে খুঁজতে থাকে। তিনি বলেন, এক দশক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে। এর অর্থ আয় বাড়ছে। তাহলে কর সংগ্রহ হচ্ছে না কেন? তাহলে কি সংগ্রহ করা হচ্ছে না নাকি হিসাবের গরমিল আছে। কর সংগ্রহ করতে না পারার কারণে এখন আমদানি করা যাচ্ছে না। খাদ্য সহায়তা বাড়ানো যাচ্ছে না। শুল্ক কমাতে পারছে না। পরোক্ষ কর থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হচ্ছে বেশি। যা সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2012 joybd24
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Joybd24