হালিশহর থানা ছাত্রলীগ কমিটিতে অছাত্র কিশোর গ্যাংদের দাপট, বিব্রত মহানগর। ভিডিও সহ

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ-ছাত্রলীগ রাজনৈতিক অঙ্গনে হালিশহর থানা যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতি বরারবরই আলোচিত সমালোচিত। সর্বশেষ হালিশহর থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে কিছু বিতর্কিত ও কিশোর গ্যাংয়ের ক্যাডাররা স্থান পাওয়া নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পরতে হয় থানার সিনিয়র নেতা কর্মীদের।

অছাত্র ও পেশায় কাঠ মিস্ত্রি এখন হালিশহর থানা ছাত্রলীগ কমিটির সিনিয়র সদস্য
সর্বশেষ হালিশহর থানার ইউনিট ছাত্রলীগ কমিটিতে কিছু সদস্যের পোষ্ট পাওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় দলের অভ্যন্তরে। অত্র ওয়ার্ডের সিনিয়র তৃণমূল নেতাদের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিতর্কিত ঐসব সদস্যদের থানা ছাত্রলীগ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। সম্প্রতি হালিশহর থানা ছাত্রলীগ কমিটিতে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় স্কুল ছেড়ে দেওয়া মোঃ আশিক নামে এক অছাত্রকে পোষ্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ নং ওয়ার্ডে ব্যাপক সমালোচনা ও কৌতুকের সৃষ্টি হয়। এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী আশিক এক কিশোরকে ছুড়িকাঘাত মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে বের হয়। এছাড়া তার ও তার সাথের সহোচরদের বিরুদ্ধে এলাকার স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের বিভিন্ন সময়ে উত্তক্ত করার অভিযোগ আছে। সম্প্রতি হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সদস্য বখাটে আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে হালিশহর আব্বাস পাড়ার এক মেয়েকে উত্যক্ত ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা যায়, হালিশহর থানা ছাত্রলীগ কমিটির সদস্য এই আশিকুর রহমান একজন অছাত্র, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। এসংক্রান্ত কিছু ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক এই আশিক ও তার কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে দিশেহারা এলাকাবাসী। কিন্তু এই আশিকে কে বা কারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে তা জানতে সরজমিন তদন্তে বের হয়ে আসেএেলাকার কিছু গডফাদারদের নাম। এসব গডফাদাররা বর্তমান মহানগর আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পোষ্টধারী নেতা।

হালিশহর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এলাকায় বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে সমালোচিত নাহিদুল ইসলাম মজুমদারের সাথে কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য আশিকুর রহমান
জানা যায়, আশিক ও তার সাথের আরও অনেক কিশোরদের নিয়ন্ত্রন করে বর্তমান হালিশহর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি মো: নাহিদুল ইসলাম মজুমদার, মহনগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য বিতর্কিত ক্যাসিনো সম্রাট ও ইয়াবা ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ দীঘল, বর্তমান হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জিতু ও একাধিক চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষন, অস্ত্র ও মাদক মামলার আসামি কথিত যুবলীগ নেতা মিল্টন।
বর্তমান হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইয়াবা ব্যবসায়ী ফরহাদ উদ্দিন জিতুর সাথে আশিক সহ এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা
যেকারণে এসব কিশোররা দাপিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। ভয়ে তাদের কেউ বিরুদ্ধে কিছু বলে না।
বিভিন্ন সময়ে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে স্কুল ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করা হতে শুরু করে তাদের রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করা, রাতে অনলাইনে বিভিন্ন মেয়েদের মোবাইলে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করা, অশ্লীল ছবি/ভিডিও পাঠানো, এমনকি বিভিন্ন মেয়েদের রুমে জোর করে ডাকা এই আশিকুর রহমান ও তার সঙ্গিদের চিরাচরিত কাজ। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি এমনকি বেশ কয়েবার বিভিন্ন প্রতিবাদকারীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই আশিকুর রহমান ও তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগেও এদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এক ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে মামলা খেয়ে জেলে যায় বখাটে আশিক। এইধরনের বখাটে কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেদের থানা কমিটির পোস্টে এনে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুনামক্ষুন্ন করছে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন সংশ্লিষ্ট থানা ওয়ার্ডের বিভিন্ন সিনিয়র নেতারা।
কথিত যুবলীগ নেতা ও হত্যা চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মিল্টনের সাথে আশিকুর রহমান
এছাড়া এই আশিকুর রহমান বর্তমান হালিশহর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম মজুমদারের অতি ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়।
হালিশহরে কিশোর গ্যাংগ গুলোর পিছনে অর্থায়ন করে বলে অভিযোগ আছে আজাদ হোসেন মুন্নার বিরূদ্ধে
এলাকায় নাহিদুল ইসলাম মজুমদার উচ্চ সুদে টাকা ঋণ দিয়ে অনেক পরিবারকে সর্বসান্ত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বি-ব্লকে তার নিজের বিল্ডিং বাড়ীতে বিভিন্ন স্থান হতে নারীদের এনে দেহ ব্যবসা করতো বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়। বেশ কিছু দিন আগে এলাকায় নাহিদুল ইসলামের অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে তার বাড়িতে পুলিশের অভিযান চলে। ঐ অভিযানে তার বাড়ি হতে পতিতা সহ খদ্দের ধরা পরে। কিন্তু এতো অপরাধ ও বাজে চরিত্রের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নাহিদুল ইসলামকে হালিশহর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ দেয়া হয় মহানগর থেকে। এতে বিষ্মিত ও লজ্জ্বিত এলাকার তৃণমূল নেতা কর্মীরা।
এদিকে কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব গডফাদারদের সাথে ঘনিষ্ঠ এক ব্যাক্তির নাম উঠে আসে। মো: আজাদ হোসেন মুন্না নামে এই কয়েল ব্যবসায়ী যে কিনা এসব কুখ্যাত যুবলীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে চলা কিশোর গ্যাং গুলো পেছনে অর্থায়ন করছে। এই মুন্নার নামে খুব অল্প সময়ে ধনী হবার বিষয়টিও খুব রহস্য জনক, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় কয়েল ব্যবসার আড়ালে সালেহ আহমেদ দীঘল ও মিল্টনের সাথে মুন্নার রয়েছে ইয়াবার ব্যবসা। বি-ব্লক ৩ নং রোডের ৪ নং লেইনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যায়ে ৬ তলার একটি বিলাশ বহুল ভবন তৈরী করে মুন্না। সন্ত্রাসী আশিকুর রহমান ও এলাকায় তার অর্থায়নে চলা কিশোর গ্যাং গুলোর সাথে রয়েছে অতি ঘনিষ্ঠতা।
এদিকে হালিশহর বি-ব্লকের ২৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ অধিবাসীদের অনেকেই ক্ষোভের সাথে জানান, এই এলাকার ছাত্রলীগের নামধারী কিশোর ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হয় এসব বখাটে ছাত্রলীগ নামধারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। হালিশহর হাউজিং স্কুলের পড়ুয়া অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীর ছাত্ররা এসব অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। স্কুলের সময় স্কুলের ইউনিফর্ম পরে এলাকার বিভিন্ন লেইনের মুখে এসব ছাত্ররা হইহুল্লোরে ব্যাস্ত থাকে। সন্ধ্যা নামতে দলবেঁধে বিভিন্ন লেইনের মাথায় প্রকাশ্যে ধুমপান করা, মোবাইলে বিভিন্ন জনের সাথে উচ্চস্বরে অশ্লিল ভাষায় কথা বলা, মধ্যরাত পর্যন্ত চিৎকার চেঁচামেচি এলাকায় নিত্যনৈর্বক্তিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকায় আশিকুর রহমান ও তার গডফাদারদের দাপট কতদিন চলবে এবং এদের অরাজকতা এলাকাবাসী কবে মুক্তি পাবে তা কেউ জানেন না।সাধারণ এলাকাবাসীরা এদের বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান। এদের হাতে জিম্মি ছাত্রলীগের নামধারী এই আশিকুর রহমান ও তার কিশোরগ্যাং গ্রুপের সবার শাস্তির জোরদার দাবি জানান সর্বস্তরের এলাকাবাসীরা।