অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের জেরে শ্রীলঙ্কার পর এবার দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কায় মিয়ানমার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে দিন দিন প্রকট হচ্ছে ডলারের ঘাটতি। রিজার্ভ বাড়াতে মরিয়া জান্তা সরকার সম্প্রতি ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের বিদেশি ঋণ পরিশোধ না করার নির্দেশ দিয়েছে। ভোজ্যতেল, ওষুধসহ বিভিন্ন জরুরি পণ্য আমদানির উপরেও আরোপ হয়েছে কড়াকড়ি।
করোনার কারণে গত বছর মিয়ানমারের অর্থনীতি সংকোচিত হয় ১৮ শতাংশ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিলে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতা বাড়ে।
মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াতের দাম ধরে রাখতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিএম গত মার্চ পর্যন্ত ৫৩ কোটি ডলার বাজারে ছাড়ে। তবে এতে সুফল না পাওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা কিয়াতে রূপান্তর বাধ্যতামূলক করা হয়। ডলারের দাম নির্ধারণ হয় ১৮৫০ কিয়াত। এদিকে বাজারে ডলার কিনতে ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে ২৪০০ কিয়াত পর্যন্ত ।গত সপ্তাহে এক আদেশে স্থানীয় ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সিবিএম। এর ফলে আটকে গেছে বৈদেশিক লেনদেন।
ব্লুুমবার্গের তথ্যমতে, মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার। বিলাসদ্রব্যের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো জরুরি পণ্যের আমদানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে মিয়ানমার। সরকারি ভাষ্যমতে, প্রতি বছর ৭০০ কোটি ডলার ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হয় দেশটিকে। মিয়ানমারের মোট ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের জেরে এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে নরওয়ের টেলিনর এবং জ্বালানি খাতের ফরাসি জায়ান্ট টোটাল। উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে জাপানে সুজুকি এবং কোরিয়ার হুন্দাই মোটরস। মিয়ানমারের এ বছর ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের। তবে মার্কিন রেটিং প্রতিষ্ঠান ফিচ সলুশনস জানিয়েছে, দেশটির জিডিপি বাড়বে না, বরং কমবে ৫.৫ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের শঙ্কা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বন্ধ করায় মিয়ানমারের নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।