1. [email protected] : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  2. [email protected] : rahad :
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা পরায় হেনস্তার যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। | JoyBD24
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা পরায় হেনস্তার যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২

কিছু দিন পর পরই দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা ও হিজাব পরার কারণে হেনস্থার ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। হাইকোর্টের রুল থাকা সত্ত্বেও এসব ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। দেশের ১৫টি জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা পরায় হেনস্তার যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই সাথে বোরকা বা হিজাব পরা সাংবিধানিক অধিকার বলেও মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।  এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ইলিয়াছ আলী ম-ল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী ইলিয়াছ আলী ম-ল। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেয়।

আদেশে শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ধর্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বোরকা ও হিজাব পরায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হয়রানি করাকে কেন বে আইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে এর আগে ২০১৯ সালের ১ জুলাই রুল জারি করেছিল হাইকোর্টের আলাদা একটি বেঞ্চ।

একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ/প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই রিটেরই একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বা বোরকা পরার কারণে নির্যাতন ও হেনস্থার বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে নিন্মে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো।

হিজাব পরায় ১৮ ছাত্রীকে পেটালেন হিন্দু শিক্ষিকা : নওগাঁর মহাদেবপুরে হিজাব পরে স্কুলে আসার কারণে ১৮ ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটানোর ঘটনায় তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম আমোদিনি পাল। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াও। জানা যায়, ওই ঘটনার জের ধরে অভিভাবকরা ৭ এপ্রিল দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নির্যাতনের শিকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে জানান, ৬ এপ্রিল দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজার পড়ে স্কুলে এসেছে এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদেরকে জানিয়ে দেন যে ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না।

ঢং করে আসচো। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পড়ে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্কুলে হিজাব পড়ে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। পরদিন সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব না পড়ায় স্কুলছাত্রীদের পিটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মিরসরাইয়ের হিজাব পরায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ (জেবি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। এদিকে প্রধান শিক্ষক পরদিন এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে হিজাব পরে ক্লাশে আসতে পারবে বলে ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় চলতি বছর ২৯ মার্চ সকালে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসে ওই শিক্ষার্থীসহ আরও তিনজন। বেলা ১১টায় এ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া তাদের ডেকে হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিজাব খুলতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেত্রাঘাত করে প্রধান শিক্ষক। এরপর মুহূর্তেই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করে।

এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ওই ছাত্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে অভিভাবক শিক্ষার্থীকে ওই স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে প্রধান শিক্ষকের কাছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চান। এসময় তিনি কিছুটা নমনিয় হয়ে বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত হিজাব পড়লে অসুবিধা নেই। তবে আগামী বর্ষে আর পারবে না।

শিক্ষার্থী অভিভাবকেদের জানান ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে প্রায়ই প্রধান শিক্ষক হিজাব পড়ে স্কুলে আসলে নানান ঝামেলা করতো। এর আগে আরও কয়েকজন সহপাঠীকে হিজাব না পড়তে বাধ্য করে।

অবশ্য হিজাবের জন্য শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে তুষার কান্তি বড়ুয়া জানান, তিনি মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করেননি।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্রীরা যদি হিজাব পড়তে চায় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুর রহমান জানান, জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ড্রেস নির্ধারণ করে

দিতে পারবেন কিন্তু কেউ হিজাব পড়লে তাতে বাধা দিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চন্দনাইশে স্কুল ছাত্রীকে কটূক্তি : চট্টগ্রামের চন্দনাইশে সাতবাড়ীয়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির পাঁচজন ছাত্রী বোরকা ও নেকাব পড়ে ক্লাসে আসায় অশ্লীল মন্তব্য করেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। চলতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি দশম শ্রেণির ইংরেজি প্রথমপত্র ক্লাসে এ ঘটনা ঘটলে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি গড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে। এদিন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া, রিপা আকতার, কলি আকতার, জান্নাতুল নাঈম ও এ্যাভি আকতার বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহাকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার বড়ুয়া ইংরেজি প্রথমপত্র ক্লাসে কয়েকজন ছাত্রীকে বোরকা ও নেকাব পড়া অবস্থায় দেখলে কেন পড়েছে বলে চিৎকার করে অশ্লীল গালিগালাজ ও বাজে মন্তব্য করে। ভবিষ্যতে পড়ে আসলে স্কুল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে। এ সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীদের কান্নায় ক্লাসে উপস্থিত সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। অভিযোগে ইতিপূর্বে অনেক ছাত্রীদের এ ধরনের হেনস্তা করার কথাও উল্লেখ আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2012 joybd24
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Joybd24