০৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লোড শেডিংয়ের কবলে দেশ ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২
  • 22

বিদ্যুত-বিভ্রাটে-অস্ট্রেলিয়া

ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। শুধু রাজধানী নয় প্রায় জেলাতেই দিনে রাতে চলছে লোড শেডিং। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোড শেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন,  সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিদ্যুতের সফলতার কথা বলছে, তাহলে এতো বিদ্যুৎ গেলো কোথায় ?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারাদেশেই বেড়েছে লোডশেডিং। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধিতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রান্নার চুলাতেও কমেছে গ্যাসের সরবরাহ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ে ভুগছেন সারাদেশের মানুষ।

সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। ফলে গ্যাস সরবরাহ গত কয়েক দিনে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে কমাতে হয়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। একইভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, “গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের উচ্চমূল্য এবং সরবরাহ সব দেশকেই সমস্যায় ফেলেছে। বিষয়টি আমাদেরকেও বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। দুই দিন ধরে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত। বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৪০ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে। সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)।

সরকারি এ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গত মাসে স্পট থেকে তিনটি কার্গো (জাহাজ) এসেছে। দিনে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হয়েছে। এ মাসে কয়েক দিন ধরে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। মূলত, রোববার থেকে সরবরাহ এমন কমে যায়। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে শিল্প কারখানায় : গ্যাসের সংকটে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রান্নার গ্যাসের সংকট যেমন হচ্ছে তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায়। সেই সঙ্গে কিছু কিছু শিল্প এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে কেবল গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা ভালো। গ্যাস সংকটের কারণে শিফট কমিয়ে ও ইউনিট বন্ধ করে সমন্বয় করছেন বলে দাবি করছেন তৈরি পোশাক, সিরামিকস, রড ও সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। গাজীপুরে স্থাপিত দেশের সিরামিক খাতের বড় প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল সিরামিকসের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিকস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গ্রেট ওয়াল সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল হুদা বলেন, গ্যাসের চাপ ঠিকমতো না পাওয়ায় জুন মাসে ১৫ দিনের মতো কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। চলতি মাসে সংকট আরো বেড়েছে। তিন শিফটের কারখানা কোনো রকমে এক শিফটে চালু রাখছি।

নারায়ণগঞ্জের এনজি ফেব্রিকস লিমিটেড, শাহ ফতেহউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডসহ অন্তত পাঁচটি কারখানার তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে গ্যাসের  চাপ শূন্য থেকে দুইয়ের মধ্যে ছিল। একাধিক শিল্প মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় তাদের উদ্বেগ বাড়ছে এবং তারা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছেন। টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে গতরাতে সংগঠনটির নেতারা রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সভা করেছেন। তারা ইস্যুটির দ্রুত সমাধান চেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন লিটল স্টার স্পিনিং মিলস লিমিটেডের খোরশেদ আলম।

ঢাকায় ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং

এদিকে গ্যাসের অভাবে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বিতরণ কোম্পানি। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে দিনে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আবার বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে জ্বালানি নির্ভর বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও।

তাই সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা ও কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ বেশ কিছু এলাকায় সোমবার ৪-৫ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেখেছেন নাগরিকরা। সোমবার ঢাকায় চাহিদার চেয়ে ৩০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। দিনে এ সংস্থার চাহিদা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রাজধানীর আরেকটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর সরবরাহ কমেছে দিনে ১৫০ মেগাওয়াট। এ সংস্থার দিনে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। গতকাল থেকে এ পরিস্থিতি চলছে বলে জানান তিনি।

ঢাকার বাইরে সর্বত্র ভোগান্তি

উত্তরবঙ্গে শিল্প এলাকায় বগুড়ায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৮২ মেগাওয়াট। কিন্তু সোমবার জেলাটিতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪২ মেগাওয়াট। বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা ও শ্যামলী হোটেলের পরিচালক তাহমিনা পারভীন শ্যামলী জানান, দিনে ১০ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। কখনো পাঁচ মিনিট কখনো ১ ঘণ্টা পর পর এমনটি চলছে। ফলে হোটেলের ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নষ্ট হওয়ার পথে।

বগুড়ার মতোই খারাপ পরিস্থিতি ঢাকার বাইরের সব জেলায়। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার সরবরাহ কমেছে ৮৫১ মেগাওয়াট। তারা বলছেন, সারা দেশেই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয়। এছাড়া রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে বেড়েছে লোডশেডিং। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বরিশালের পটুয়াখালী, ঝালকাঠিতে দিনে সাত থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।

জানা গেছে, শতভাগ বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। প্রতিদিন সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার কথা প্রচার করা হচ্ছে। এখন গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গ্রামের অন্ধকার কাটছেই না। হাজার হাজার সংযোগ দেয়া হলেও বিদ্যুতের অভাবে এখনো দেশের বেশির ভাগ গ্রামে রাতে হ্যারিকেন জ্বালানো হয়। বাজারে কেরোসিন তেল ও মোমবাতির বিক্রিও বেশি। কারণ রাজধানী ঢাকায় দিনে তিন থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ চলে গেলেও গ্রামে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে। গ্রামের মানুষ রসিকতা করে বলে থাকেন ‘বিদ্যুৎ যায় না আসে’। ঝড়বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে গেছে দুই থেকে তিনদিন বিদ্যুতের দেখা পায় না গ্রামাঞ্চলের মানুষ।

খুলনাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। হঠাৎ করে গণ তিনদিন ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। দিনের পাশাপাশি গভীর রাতেও বিদ্যুতের লুকোচুরি চলছে। ২১ জেলায় ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের একদিনে ১৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্যাস ও ডিজেলের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ওজোপাডিকোর সূত্রে জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ ২১ জেলায় গ্রাহক রয়েছে ১৪ লাখ ২৮ হাজার। সোমবার (৪ জুলাই) পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ১৩৪ মেগাওয়াট। এরমধ্যে দিনে অফপিক আওয়ারে ৭৬ মেগাওয়াট এবং রাতে পিক আওয়ারে ৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়।

বিএল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির সাফিন বলেন, দিনে-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতি হচ্ছে। আর ভ্যাপসা গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। ফ্রিজ-টেলিভিশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে বিদ্যুতের সমস্যায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমেছে। গণ তিনদিন এমন চলছে। এটা শুধু খলনায় নয়, সারাদেশে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্যাস এবং ডিজেলের সংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ কমেছে। দ্রুত এই অবস্থার অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।

অপরদিকে খুলনাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কোনো কোনো এলাকায় একটানা এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম ছাড়া শহর এলাকাতেও ইদানীং লোডশেডিং আবারও দেখা দিয়েছে। গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও শহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। লোডশেডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) খুলনা সদর দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার শহর অঞ্চলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। খুলনায় আমাদের প্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। ২১ জেলায় মোট ৫৮০ মেটাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর ঘাটতি আছে ৩০-৩৫ মেটাওয়াট। আর খুলনায় ঘাটতি আছে ১২ মেগাওয়াট। এটা ফিক্সড থাকে না, ওঠানামা করে।

বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার জনজীবন। সকাল হতে না হতেই সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সময় গড়িয়ে দুপুর আসতে না আসতেই সেই তাপদাহ রীতিমত অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোড শের্ডিং এর কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। শুধু পল্লী বিদ্যুৎ নয় নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর গ্রাহকরাও বর্তমানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত দু’দিন থেকে শহরের ফিডারগুলোর গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে। দীর্ঘ সময়ের শাট ডাউনের কারণে বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। গাইবান্ধা শহরের জেলা পরিষদ মোড়ের ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যবসায়ী শামিম রহমান জানান গণ কয়েকদিন দিন হলো দোকানে বিদ্যুৎ থাকছে না ফলে ফটোকপিসহ অনলাইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি না। গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফ খাঁ বাসুদেব পুর গ্রামের গরুর খামারী মর্জিনা বেগম জানান আমার খামারে ৮ টি বিদেশি জাতের গরু আছে। এগুলোর জন্য ২৪ ঘন্টা ফ্যানের বাতাস দিতে হয় কিন্তু গণ এক মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারনে গরু গুলো আমার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দিনের মধ্যে তিন চারবার গোসল করাতে হচ্ছে।

গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, তারা ৫২ টি ফিডারের মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলার ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার গ্রাহককে সেবা দিয়ে আসছে। বিপুল সংখ্যক এসব গ্রাহকের বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হলেও পল্লী বিদ্যুৎ মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকো সুত্রে জানা যায় তাদের ১৩ টি ফিডারের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও অরক্ষিত বৈদ্যুতিক লাইনের কারনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

  কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। গণ কয়েকদিনের উপজেলার সব কটি লাইনে লোডশেডিং মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েই চলছে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলায় দুর্বিষহ যন্ত্রনায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের এই বিপর্যয় বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিসের ডিজিএম কায়সার আলম।  সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাযায়, এই লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়েল্ডিং, ঝালাই, বিদ্যুৎ চালিত মোটর, মেকানিক ও যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কাজ ঠিক মতো করতে পারছেনা। ঘনঘন লোডশেডিং আর তীব্র গরমে জনগন অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছে।  উপজেলার চরভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের অটোচালক ইয়াকুব, সোলায়মান জয়মনিরহাট ইউনিয়নের মুকুল ও শফিকুল বলেন, ‘দিনে-রাতে বিদ্যুৎ কতবার আসে যায় তার কোন হিসেব নেই। আমরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাই, কিন্তু লোড শেডিং থাকায় রাতে চার্জ দিতে পারিনা। এতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে ইনকাম করতে না পারলে সংসারের খরচ চালাব কিভাবে। আবার সামনে ঈদ। পরিবারের খরচ মিটাবো কিভাবে?

উত্তরের জেলা দিনাজপুর হঠাৎ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন দিন-রাতে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দীর্ঘদিন বিদ্যুতের এমন সমস্যা ছিল না। হঠাৎ কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তার কোনো সদুত্তর মিলছে না। জেলাজুড়ে গণ ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই ভয়াবহ বিপর্যয়। একবার বিদ্যুৎ গেলে আসার কোন সময় থাকছে না। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ মিলছে মাত্র ১২-১৪ ঘণ্টা! বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার ব্যাপারে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ বিভাগ কোনো সঠিক কথা বলতে পারছে না। কেবল দিনাজপুর জেলা নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও বিদ্যুতের এমন নাকাল অবস্থা বলে খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে মানুষের কষ্ট বর্ণনাতীত।

দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে ৩ দিনেরও বেশি সময় থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। এতে অফিসে-আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। জেনারেটর, আইপিএস ও ইউপিএস কোনো কিছুই দিয়েই অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি স্বাভাবিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। পচতে শুরু করেছে বাড়ির ফ্রিজের মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ফলমূলও। ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যা নেই, রাত নেই- বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে প্রতি আধাঘণ্টা পর পর। কোনো কোনো এলাকায় আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পরপর লোডশেডিং দিচ্ছে নেসকো। দিনাজপুর বাহাদুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন- দিনাজপুরে এমন বিদ্যুৎ সংকট তিনি এর আগে কখনও দেখেননি। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা বেলায় দিনাজপুর শহর যেন এক ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়। সামনে ঈদ-অথচ এমন সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

নেসকো সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৬০ মেগাওয়াট। দিনাজপুর নেসকো লিঃ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর মোট চাহিদা ২০ মেগাওয়াট আর সরবরাহ পাচ্ছে ১১ মেগাওয়াট। একইভাবে দিনাজপুর নেসকো লিঃ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর মোট চাহিদা ২২ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গণ কয়েকদিন ধরে জেলায় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক বিদ্যুৎ বা তার থেকেও কম। ফলে দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলেও অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীনই থাকছে দিনাজপুর।

ভ্যাপসা গুমোট গরমের মধ্যে স্মরণকালের ভয়াবাহ লোড শেডিং চলছে। ফলে ভূতুড়ে অন্ধকারে কলারোয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ভেপসা গরমের তীব্রতায় বৃদ্ধদের হাপানি আর শিশুর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। জানা গেছে, গণ ১৫ দিন যাবত উপজেলা সদরের বাইরে ক্রমান্বয়ে বিদ্যুত সংকট অসহনীয় হয়ে উঠছে। আর বিগণ ৪ দিন যাবত বিদ্যুত সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত একঘণ্টা বিদ্যুত থাকলে পরে এক ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে না। তারপর বিকাল সাড়ে ৫ টার পরে বিগণ দুইদিন যাবত রাত ১০ টার আগে একাধিক দফায় ১ ঘণ্টার বেশী বিদ্যুত পাওয়া যায় না। আর কোন দিন সারা রাতের পরে ভোরে; কোন দিন সকাল ৭ টার পরে বিদ্যুত আসে। আর শুরু হয় আগে দিনের মত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অফ অনের খেলা। এদিকে নিত্য সন্ধ্যার আগে লোড শেডিং শুরু হওয়ায় অন্ধকারের কারণে মানুষ হাট বাজার ছেড়ে ঘরে ফেরায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। সূত্র:-সংগ্রাম

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

লোড শেডিংয়ের কবলে দেশ ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

Update Time : ০৩:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২

ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। শুধু রাজধানী নয় প্রায় জেলাতেই দিনে রাতে চলছে লোড শেডিং। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোড শেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন,  সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিদ্যুতের সফলতার কথা বলছে, তাহলে এতো বিদ্যুৎ গেলো কোথায় ?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারাদেশেই বেড়েছে লোডশেডিং। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধিতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রান্নার চুলাতেও কমেছে গ্যাসের সরবরাহ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ে ভুগছেন সারাদেশের মানুষ।

সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। ফলে গ্যাস সরবরাহ গত কয়েক দিনে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে কমাতে হয়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। একইভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, “গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের উচ্চমূল্য এবং সরবরাহ সব দেশকেই সমস্যায় ফেলেছে। বিষয়টি আমাদেরকেও বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। দুই দিন ধরে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত। বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৪০ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে। সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)।

সরকারি এ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গত মাসে স্পট থেকে তিনটি কার্গো (জাহাজ) এসেছে। দিনে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হয়েছে। এ মাসে কয়েক দিন ধরে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। মূলত, রোববার থেকে সরবরাহ এমন কমে যায়। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে শিল্প কারখানায় : গ্যাসের সংকটে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রান্নার গ্যাসের সংকট যেমন হচ্ছে তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায়। সেই সঙ্গে কিছু কিছু শিল্প এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে কেবল গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা ভালো। গ্যাস সংকটের কারণে শিফট কমিয়ে ও ইউনিট বন্ধ করে সমন্বয় করছেন বলে দাবি করছেন তৈরি পোশাক, সিরামিকস, রড ও সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। গাজীপুরে স্থাপিত দেশের সিরামিক খাতের বড় প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল সিরামিকসের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিকস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গ্রেট ওয়াল সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল হুদা বলেন, গ্যাসের চাপ ঠিকমতো না পাওয়ায় জুন মাসে ১৫ দিনের মতো কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। চলতি মাসে সংকট আরো বেড়েছে। তিন শিফটের কারখানা কোনো রকমে এক শিফটে চালু রাখছি।

নারায়ণগঞ্জের এনজি ফেব্রিকস লিমিটেড, শাহ ফতেহউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডসহ অন্তত পাঁচটি কারখানার তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে গ্যাসের  চাপ শূন্য থেকে দুইয়ের মধ্যে ছিল। একাধিক শিল্প মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় তাদের উদ্বেগ বাড়ছে এবং তারা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছেন। টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে গতরাতে সংগঠনটির নেতারা রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সভা করেছেন। তারা ইস্যুটির দ্রুত সমাধান চেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন লিটল স্টার স্পিনিং মিলস লিমিটেডের খোরশেদ আলম।

ঢাকায় ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং

এদিকে গ্যাসের অভাবে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বিতরণ কোম্পানি। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে দিনে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আবার বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে জ্বালানি নির্ভর বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও।

তাই সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা ও কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ বেশ কিছু এলাকায় সোমবার ৪-৫ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেখেছেন নাগরিকরা। সোমবার ঢাকায় চাহিদার চেয়ে ৩০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। দিনে এ সংস্থার চাহিদা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রাজধানীর আরেকটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর সরবরাহ কমেছে দিনে ১৫০ মেগাওয়াট। এ সংস্থার দিনে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। গতকাল থেকে এ পরিস্থিতি চলছে বলে জানান তিনি।

ঢাকার বাইরে সর্বত্র ভোগান্তি

উত্তরবঙ্গে শিল্প এলাকায় বগুড়ায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৮২ মেগাওয়াট। কিন্তু সোমবার জেলাটিতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪২ মেগাওয়াট। বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা ও শ্যামলী হোটেলের পরিচালক তাহমিনা পারভীন শ্যামলী জানান, দিনে ১০ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। কখনো পাঁচ মিনিট কখনো ১ ঘণ্টা পর পর এমনটি চলছে। ফলে হোটেলের ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নষ্ট হওয়ার পথে।

বগুড়ার মতোই খারাপ পরিস্থিতি ঢাকার বাইরের সব জেলায়। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার সরবরাহ কমেছে ৮৫১ মেগাওয়াট। তারা বলছেন, সারা দেশেই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয়। এছাড়া রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে বেড়েছে লোডশেডিং। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বরিশালের পটুয়াখালী, ঝালকাঠিতে দিনে সাত থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।

জানা গেছে, শতভাগ বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। প্রতিদিন সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার কথা প্রচার করা হচ্ছে। এখন গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গ্রামের অন্ধকার কাটছেই না। হাজার হাজার সংযোগ দেয়া হলেও বিদ্যুতের অভাবে এখনো দেশের বেশির ভাগ গ্রামে রাতে হ্যারিকেন জ্বালানো হয়। বাজারে কেরোসিন তেল ও মোমবাতির বিক্রিও বেশি। কারণ রাজধানী ঢাকায় দিনে তিন থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ চলে গেলেও গ্রামে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে। গ্রামের মানুষ রসিকতা করে বলে থাকেন ‘বিদ্যুৎ যায় না আসে’। ঝড়বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে গেছে দুই থেকে তিনদিন বিদ্যুতের দেখা পায় না গ্রামাঞ্চলের মানুষ।

খুলনাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। হঠাৎ করে গণ তিনদিন ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। দিনের পাশাপাশি গভীর রাতেও বিদ্যুতের লুকোচুরি চলছে। ২১ জেলায় ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের একদিনে ১৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্যাস ও ডিজেলের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ওজোপাডিকোর সূত্রে জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ ২১ জেলায় গ্রাহক রয়েছে ১৪ লাখ ২৮ হাজার। সোমবার (৪ জুলাই) পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ১৩৪ মেগাওয়াট। এরমধ্যে দিনে অফপিক আওয়ারে ৭৬ মেগাওয়াট এবং রাতে পিক আওয়ারে ৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়।

বিএল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির সাফিন বলেন, দিনে-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতি হচ্ছে। আর ভ্যাপসা গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। ফ্রিজ-টেলিভিশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে বিদ্যুতের সমস্যায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমেছে। গণ তিনদিন এমন চলছে। এটা শুধু খলনায় নয়, সারাদেশে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্যাস এবং ডিজেলের সংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ কমেছে। দ্রুত এই অবস্থার অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।

অপরদিকে খুলনাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কোনো কোনো এলাকায় একটানা এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম ছাড়া শহর এলাকাতেও ইদানীং লোডশেডিং আবারও দেখা দিয়েছে। গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও শহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। লোডশেডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) খুলনা সদর দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার শহর অঞ্চলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। খুলনায় আমাদের প্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। ২১ জেলায় মোট ৫৮০ মেটাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর ঘাটতি আছে ৩০-৩৫ মেটাওয়াট। আর খুলনায় ঘাটতি আছে ১২ মেগাওয়াট। এটা ফিক্সড থাকে না, ওঠানামা করে।

বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার জনজীবন। সকাল হতে না হতেই সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সময় গড়িয়ে দুপুর আসতে না আসতেই সেই তাপদাহ রীতিমত অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোড শের্ডিং এর কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। শুধু পল্লী বিদ্যুৎ নয় নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর গ্রাহকরাও বর্তমানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত দু’দিন থেকে শহরের ফিডারগুলোর গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে। দীর্ঘ সময়ের শাট ডাউনের কারণে বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। গাইবান্ধা শহরের জেলা পরিষদ মোড়ের ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যবসায়ী শামিম রহমান জানান গণ কয়েকদিন দিন হলো দোকানে বিদ্যুৎ থাকছে না ফলে ফটোকপিসহ অনলাইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি না। গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফ খাঁ বাসুদেব পুর গ্রামের গরুর খামারী মর্জিনা বেগম জানান আমার খামারে ৮ টি বিদেশি জাতের গরু আছে। এগুলোর জন্য ২৪ ঘন্টা ফ্যানের বাতাস দিতে হয় কিন্তু গণ এক মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারনে গরু গুলো আমার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দিনের মধ্যে তিন চারবার গোসল করাতে হচ্ছে।

গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, তারা ৫২ টি ফিডারের মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলার ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার গ্রাহককে সেবা দিয়ে আসছে। বিপুল সংখ্যক এসব গ্রাহকের বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হলেও পল্লী বিদ্যুৎ মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকো সুত্রে জানা যায় তাদের ১৩ টি ফিডারের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও অরক্ষিত বৈদ্যুতিক লাইনের কারনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

  কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। গণ কয়েকদিনের উপজেলার সব কটি লাইনে লোডশেডিং মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েই চলছে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলায় দুর্বিষহ যন্ত্রনায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের এই বিপর্যয় বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিসের ডিজিএম কায়সার আলম।  সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাযায়, এই লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়েল্ডিং, ঝালাই, বিদ্যুৎ চালিত মোটর, মেকানিক ও যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কাজ ঠিক মতো করতে পারছেনা। ঘনঘন লোডশেডিং আর তীব্র গরমে জনগন অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছে।  উপজেলার চরভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের অটোচালক ইয়াকুব, সোলায়মান জয়মনিরহাট ইউনিয়নের মুকুল ও শফিকুল বলেন, ‘দিনে-রাতে বিদ্যুৎ কতবার আসে যায় তার কোন হিসেব নেই। আমরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাই, কিন্তু লোড শেডিং থাকায় রাতে চার্জ দিতে পারিনা। এতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে ইনকাম করতে না পারলে সংসারের খরচ চালাব কিভাবে। আবার সামনে ঈদ। পরিবারের খরচ মিটাবো কিভাবে?

উত্তরের জেলা দিনাজপুর হঠাৎ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন দিন-রাতে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দীর্ঘদিন বিদ্যুতের এমন সমস্যা ছিল না। হঠাৎ কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তার কোনো সদুত্তর মিলছে না। জেলাজুড়ে গণ ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই ভয়াবহ বিপর্যয়। একবার বিদ্যুৎ গেলে আসার কোন সময় থাকছে না। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ মিলছে মাত্র ১২-১৪ ঘণ্টা! বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার ব্যাপারে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ বিভাগ কোনো সঠিক কথা বলতে পারছে না। কেবল দিনাজপুর জেলা নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও বিদ্যুতের এমন নাকাল অবস্থা বলে খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে মানুষের কষ্ট বর্ণনাতীত।

দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে ৩ দিনেরও বেশি সময় থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। এতে অফিসে-আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। জেনারেটর, আইপিএস ও ইউপিএস কোনো কিছুই দিয়েই অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি স্বাভাবিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। পচতে শুরু করেছে বাড়ির ফ্রিজের মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ফলমূলও। ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যা নেই, রাত নেই- বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে প্রতি আধাঘণ্টা পর পর। কোনো কোনো এলাকায় আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পরপর লোডশেডিং দিচ্ছে নেসকো। দিনাজপুর বাহাদুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন- দিনাজপুরে এমন বিদ্যুৎ সংকট তিনি এর আগে কখনও দেখেননি। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা বেলায় দিনাজপুর শহর যেন এক ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়। সামনে ঈদ-অথচ এমন সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

নেসকো সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৬০ মেগাওয়াট। দিনাজপুর নেসকো লিঃ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর মোট চাহিদা ২০ মেগাওয়াট আর সরবরাহ পাচ্ছে ১১ মেগাওয়াট। একইভাবে দিনাজপুর নেসকো লিঃ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর মোট চাহিদা ২২ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গণ কয়েকদিন ধরে জেলায় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক বিদ্যুৎ বা তার থেকেও কম। ফলে দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলেও অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীনই থাকছে দিনাজপুর।

ভ্যাপসা গুমোট গরমের মধ্যে স্মরণকালের ভয়াবাহ লোড শেডিং চলছে। ফলে ভূতুড়ে অন্ধকারে কলারোয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ভেপসা গরমের তীব্রতায় বৃদ্ধদের হাপানি আর শিশুর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। জানা গেছে, গণ ১৫ দিন যাবত উপজেলা সদরের বাইরে ক্রমান্বয়ে বিদ্যুত সংকট অসহনীয় হয়ে উঠছে। আর বিগণ ৪ দিন যাবত বিদ্যুত সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত একঘণ্টা বিদ্যুত থাকলে পরে এক ঘণ্টা বিদ্যুত থাকে না। তারপর বিকাল সাড়ে ৫ টার পরে বিগণ দুইদিন যাবত রাত ১০ টার আগে একাধিক দফায় ১ ঘণ্টার বেশী বিদ্যুত পাওয়া যায় না। আর কোন দিন সারা রাতের পরে ভোরে; কোন দিন সকাল ৭ টার পরে বিদ্যুত আসে। আর শুরু হয় আগে দিনের মত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অফ অনের খেলা। এদিকে নিত্য সন্ধ্যার আগে লোড শেডিং শুরু হওয়ায় অন্ধকারের কারণে মানুষ হাট বাজার ছেড়ে ঘরে ফেরায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। সূত্র:-সংগ্রাম