ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোয় রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফলে রুশ জ্বালানি পণ্যটি আমদানি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে ইইউ’র। পরিবর্তে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ব্যাপক হারে অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়েছে ইইউ। চলতি বছরের গত জানুয়ারির পর তা ৯০ শতাংশ বেড়েছে।
জাহাজ-ট্র্যাকিং ডেটা উদ্ধৃত করে গত শুক্রবার এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। এর বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার (২৩ জুলাই) বিস্তারিত প্রতিবেদন ছেপেছে রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আরটি। এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের তেল আমদানি গত বছরের চেয়ে কাছাকাছি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্লুমবার্গের অনুমান, জুলাইয়ের প্রথম ৩ সপ্তাহে সুমেদ পাইপলাইনে মিশর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দৈনিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ইইউ। একই সময়ে সুয়েজ খাল দিয়ে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি পণ্যটি আমদানি করেছে অঞ্চলটি। যার অধিকাংশই ইরাক থেকে সরবরাহ হয়েছে।
গণমাধ্যমটির ধারণা, গত জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইইউ যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, তার চেয়ে এ হার ৯০ শতাংশের বেশি।
এর পরের মাসেই অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যার জেরে রুশ বিভিন্ন খাতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। বাদ যায়নি জ্বালানি সেক্টরও।
গত জুনের প্রথমদিকে মস্কোর ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইইউ। রাশিয়ার তেল আমদানিতে আংশিক নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা। সমুদ্রপথে জ্বালানি পণ্যটি আমদানি নিষিদ্ধ করে ওই অঞ্চল।
পরিপ্রেক্ষিতে তেলে মূল্যছাড় ঘোষণা করে রাশিয়া। এতে দেশটি থেকে তা আমদানি বাড়িয়ে দেয় ভারত ও চীন। গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য হারে রুশ জ্বালানি পণ্য আমদানি করেছে বিশ্বের শীর্ষ দুই ভোক্তা দেশ।
এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিকল্প বেছে নেয় ইইউ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় তারা। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি গতি পায়।
বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার ওপর ইইউর তেল নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। স্বাভাবিকভাবেই এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন ব্লুমবার্গের বিশ্লেষকরা।
ব্লুমবার্গ লিখেছে, এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে রাশিয়ার তেলের চালানের বীমা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। বিশ্বজুড়ে সামগ্রিক তেল চালানের জন্য যা সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ গোটা বিশ্বে বেড়ে যেতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট না মিটলে দামও ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠতে পারে।