সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিষ্ফোরণের পরই ডিপোতে থাকা আমদানি ও রফতানির বিভিন্ন মালামালবাহী কনটেইনারে আগুন ধরে যায়। এই বিষ্ফোরণে কম্পনের আওয়াজ এতটাই তীব্র ছিলো যে, আশেপাশের এলাকার অধিকাংশ বিল্ডিয়ের কাঁচের গ্লাস ভেঙে যায়। এই ঘটনায় ৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত তিন শতাধিক।
সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। শনিবার রাত ১০ টার দিকে এই ভয়াবহ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিষ্ফোরণের সাথে সাথে কনটেইনারে আগুন ধরে যায়। ডিপোতে থাকা রাসায়নিক পদার্থবাহী কনটেইনার থেকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, আগুন একটা কনটেইনার থেকে আরেকটাতে ছড়িয়ে পড়ছে।আর এতে মালবোঝাই এইসব কনটেইনারে একের পর এক বিষ্ফোরণ ঘটছে। বিষ্ফোরণে কেঁপে উঠছে আশেপাশের এলাকা। এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৬ টা ইউনিট কাজ করছে।
আতঙ্কে এলাকাবাসী এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের বেশকয়েক জন কর্মী দগ্ধ হয়েছেন। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম বলেন, ওই কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ ছিলো। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সেখান থেকেই এই বিষ্ফোরণ ঘটেছে। এই পর্যন্ত ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আরো অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।এদিকে আহতদের মধ্যে শতাধিক লোককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে তিলধারণের জায়গা নেই। একটু পরপর সাইরেন বাজিয়ে আসছে এম্বুলেন্স । আহতদের পাশাপাশি তাদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের চারপাশ।
জানা যায়, এই ঘটনায় চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সেবায় জড়িততে স্ব স্ব কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি নিজেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক মানবজমিনকে বলেন, সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে।রক্তাদাতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসছে।সবমিলিয়ে হাসপাতাল অনেকটা লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।
নিহতদের একজন বাঁশখালীর ছনুয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ মুমিনুল ইসলাম। তার ভাই মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমার ভাই বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।বিষ্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক ছিলো সে।
এদিকে ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা জানিয়েছে, ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি চালান ছিল।সেখান থেকেই রাত ১০ টার দিকে প্রথম বিষ্ফোরণ ঘটে। পরে সেখানে আগুন ধরে যায়।এই আগুন বাকি কন্টেইনারেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএম ডিপোটি চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন। এটি দেশের ৫ম বৃহত্তম বেসরকারি কনটেইনার ডিপো।
এই অগ্নিকাণ্ডের পর বিএম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়, কি কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সব হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া হবে।