০৪:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মগবাজার বিস্ফোরণ: দেখিয়ে দিলো মানুষের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৮:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
  • 47

মানুষের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন আবারও তা দেখিয়ে গেল একটি বিস্ফোরণ। শিশুসন্তান ও ছোট ভাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন জান্নাত নামের এক নারী।

রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ‘রাখি নীড়’ নামের একটি তিনতলা ভবন ধসে গেছে। এ ভবনেরই নিচতলায় ছিল শর্মা হাউস নামের ওই রেস্তোরাঁটি। বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী, শিশুসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। ওই ভবনের বাসিন্দা, সামনের রাস্তায় থাকা বাসযাত্রী, পথচারীসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস লিকেজ থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। আবার বিস্ফোরক বা অন্য কোনো ধরনের বিস্ফোরণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। বিস্ফোরণে ওই ভবনটি ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন, তিনটি যাত্রীবাহী বাসসহ বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্যাস দুর্ঘটনা এখন প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। যেমন বাসাবাড়িতে, তেমনি কারখানা বা যানবাহনে প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। প্রতিবছর বহু মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে এসব দুর্ঘটনায়। অনেকে পঙ্গু হয়ে যন্ত্রণার জীবন কাটাচ্ছেন। গ্যাসের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বারবার দাবি উঠলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে নির্বিকার। গতকালের দুর্ঘটনায় আরো একটি নাজুক বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। আশপাশের কয়েক শ বর্গমিটার এলাকায় থাকা বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে রাস্তার ওপর এসে পড়েছে। এতেও রাস্তায় চলাচলকারী অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দুর্ঘটনায় যে ব্যাপক কম্পন বা শকওয়েভ তৈরি হয়েছিল, তাতেই দরজা-জানালার কাচ ভেঙেছে। ভূকম্পন বা আরো অনেক কারণেই এমন কম্পন তৈরি হতে পারে। আর তাহলে কি রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকবে? বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বড় ভূমিকম্প হলে ভবনধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ মারা যাবে গ্যাস ও মাথার ওপর ঝুলতে থাকা বৈদ্যুতিক তার থেকে সৃষ্ট আগুনে। অথচ এমন মৃত্যুকূপ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্য জনগণকে জানাতে হবে এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিশেষজ্ঞসহ অন্য কারো কারো মতে, শুধু গ্যাস লিকেজ থেকে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না। তাহলে এখানে আর কী বিষয় জড়িত থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি দেশব্যাপী গ্যাস ব্যবহারে নিরাপত্তার দিকটি কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। জানালার কাচ অনেকভাবেই ভাঙতে পারে। কিন্তু সেগুলো রাস্তায় পড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মগবাজার বিস্ফোরণ: দেখিয়ে দিলো মানুষের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন।

Update Time : ০৬:৩৮:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১

মানুষের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন আবারও তা দেখিয়ে গেল একটি বিস্ফোরণ। শিশুসন্তান ও ছোট ভাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন জান্নাত নামের এক নারী।

রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ‘রাখি নীড়’ নামের একটি তিনতলা ভবন ধসে গেছে। এ ভবনেরই নিচতলায় ছিল শর্মা হাউস নামের ওই রেস্তোরাঁটি। বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী, শিশুসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। ওই ভবনের বাসিন্দা, সামনের রাস্তায় থাকা বাসযাত্রী, পথচারীসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস লিকেজ থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। আবার বিস্ফোরক বা অন্য কোনো ধরনের বিস্ফোরণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। বিস্ফোরণে ওই ভবনটি ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন, তিনটি যাত্রীবাহী বাসসহ বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্যাস দুর্ঘটনা এখন প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। যেমন বাসাবাড়িতে, তেমনি কারখানা বা যানবাহনে প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। প্রতিবছর বহু মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে এসব দুর্ঘটনায়। অনেকে পঙ্গু হয়ে যন্ত্রণার জীবন কাটাচ্ছেন। গ্যাসের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বারবার দাবি উঠলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে নির্বিকার। গতকালের দুর্ঘটনায় আরো একটি নাজুক বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। আশপাশের কয়েক শ বর্গমিটার এলাকায় থাকা বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে রাস্তার ওপর এসে পড়েছে। এতেও রাস্তায় চলাচলকারী অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দুর্ঘটনায় যে ব্যাপক কম্পন বা শকওয়েভ তৈরি হয়েছিল, তাতেই দরজা-জানালার কাচ ভেঙেছে। ভূকম্পন বা আরো অনেক কারণেই এমন কম্পন তৈরি হতে পারে। আর তাহলে কি রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকবে? বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বড় ভূমিকম্প হলে ভবনধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ মারা যাবে গ্যাস ও মাথার ওপর ঝুলতে থাকা বৈদ্যুতিক তার থেকে সৃষ্ট আগুনে। অথচ এমন মৃত্যুকূপ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্য জনগণকে জানাতে হবে এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিশেষজ্ঞসহ অন্য কারো কারো মতে, শুধু গ্যাস লিকেজ থেকে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না। তাহলে এখানে আর কী বিষয় জড়িত থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি দেশব্যাপী গ্যাস ব্যবহারে নিরাপত্তার দিকটি কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। জানালার কাচ অনেকভাবেই ভাঙতে পারে। কিন্তু সেগুলো রাস্তায় পড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।