শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে চলা বিক্ষোভের মুখে নিজের সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে ঢুকে পড়েছে। এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনেও অবস্থান নিয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী।
শনিবার (৯ জুলাই) প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি। এ ছাড়া লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর ও নিউজ ফার্স্ট’র খবরেও এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর ফলে বড়ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাগ্যই বরণ করতে হলো শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে’কে। তবে তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। আজ জনতার রোষের মুখে তিনি সরকারি বাসভবন থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিরর রিপোর্টে বলেছে, বিক্ষোভকারীরা আজ তার বাসভবনে জোর করে প্রবেশ করে। এর আগে তারা তার বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করে ভিতরে। এতে সংঘর্ষ দেখা দেয় নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সঙ্গে। ফলে তাতে দু’পুলিশ সহ আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন।
ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, কলম্বো ফোর্টের চাথাম সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করেছে। তাদের মুখে এ সময় শুধু গোতাবায়ার পদত্যাগের শ্লোগান ছিল।
পরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে গুলি চালায়। তবুও বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের ঢুকে যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কলম্বোয় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, চলমান বিক্ষোভে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ব্যারিকেডের কয়েকটি স্তর ভেঙে প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান ফটকে পৌঁছেছে। পুলিশকে এলাকা থেকে সরে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা গেছে। একটানা কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসও ছোড়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের খাবার নেই। ওষুধ নেই। স্কুল বন্ধ। সরকারি অফিসগুলো বন্ধ। শুধু অত্যাবশ্যক এমন সার্ভিস যেমন চিকিৎসক ও খাদ্য পরিবহনখাতে যারা যুক্ত তাদেরকে তেল দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে যেসব মানুষ টুক-টুক নামের তিন চাকার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান, জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা সহ সব শ্রেণির মানুষ জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। এ অবস্থায় আজ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘেরাও করেন তারা।