কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এখন মাঠে ব্যাপক পরিমাণে কোনো ফসল না থাকায় এ বন্যায় য ুটুকু ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। সেজন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। ফলে এ বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হবে না।
আজ ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) কনভেনশন হলে কৃষি তথ্য সার্ভিসের আয়োজনে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম’ বিষয়ক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হবে না। সারা দেশে খুব বেশি বীজতলা করা হয়নি এখনো। যা হয়েছে সেটাও নষ্ট হলে খুব সমস্যা হবে না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, পরবর্তীতে সেগুলো চাষিদের দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আউশের ক্ষতি একটু বেশি হতে পারে। এখন ১৩ লাখ হেক্টর আউশের টার্গেট করেছিলাম, লাগানো হয়েছে ১১ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন শাকসবজি আছে, সেগুলোর কিছু ক্ষতি হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই মৌসুমের ফসলগুলো প্রায় সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেভাবে প্রস্তুতি কৃষকও রাখে। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সে ক্ষতি পূরণ করব। তারপরও যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা ধেয়ে আসছে, আকস্মিক বড় ক্ষতি হবে কি না সেটা জানি না।
তিনি বলেন, এজন্য আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছি। যদি বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় ৷ সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নানাবিধ সমস্যার কারণে এ দেশে বহুবার খাদ্য সংকটের নজির রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ক্ষমতাকালীন সময়ে কখনও খাদ্যের অভাব হয়নি। এমনকি খাদ্যের জন্য হাহাকার ও করতে দেখা যায়নি কখনো। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সেটা এ দেশেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারপরও আমরা পরিকল্পিত কর্মসূচি নেওয়ার চেষ্টা করছি। কৃষি উৎপাদনে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য এ বছর ২৮ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিয়েছি। যেটা অন্যান্য দেশও পারেনি। সেজন্য বিশ্ববাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বাড়লেও এদেশে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, দেশে যেভাবে কৃষিজমি কমছে তাতে আগামীতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও বাংলাদেশ উৎপাদনের দিক থেকে সারা বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তিনি আরো বলেন, যেভাবে কৃষিজমি কমছে তাতে আগামী ২০ বছর পর যেখানে বাংলাদেশে আরো ৪ কোটি মানুষ যোগ হবে, তখন লাখ লাখ একর জমি কমে যাবে। আর আগামী শতাব্দীতে কোন কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। তখন মানুষকে কীভাবে খাওয়ানো হবে সে বিষয় মাথায় রেখে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাছান মাহ্মুদ বলেন, আমরা যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি, সেটা পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে করতে হবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সেজন্য গণমাধ্যমকে ব্যাপক ভূমিকা নিতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম কৃষিবিপ্লবে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আমি একজন পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে কৃষি ও কৃষি বিষয়ক খবরগুলো একটু বেশিই আগ্রহভরে দেখি ও পড়ি। এটিই সত্য গণমাধ্যমের কল্যাণে ছাদ কৃষি, নগর কৃষি সবার কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিবেশের প্রাণ বৃক্ষ, অপ্রয়োজনীয়ভাবে বৃক্ষ নিধন রোধে গণমাধ্যম অনন্য ভূমিকা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণার কারণে আজকে বাংলাদেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়েছে। আয়তনে ছোট ও ঘনবসতি দেশ হওয়ার পরও কৃষিতে আমাদের সাফল্য অনেক। প্রতিবছর আমাদের কৃষিজ উৎপাদন বাড়ছে। স্বাধীনতার পরে আমাদের মোট কৃষিজ উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে বর্তমান উৎপাদন বেড়েছে ৪ কোটি ৬৫ লাখ মেট্রিক টন অর্থ্যাৎ ৪ গুণের বেশি বেড়েছে। প্রতিবছর ঘড়বাড়ি, কলকারখানা, রাস্তা নির্মাণের কারণে কৃষি জমি কমলেও কৃষিতে আমাদের উৎপাদনের ধারা কমেনি। এটি আমাদের মতো উন্নয়শীল দেশের জন্য বহির্বিশ্বের কাছে একটি অবাক করা বিষয়। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে।
কৃষি সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায়।