১১:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪, ২৭ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পৃথিবী কেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-২

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫০:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 27

গত আলোচনার আলোচ্য সূরা নাহলের ৯০ নং আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াত ওলীদ ইবনে মুগিরার সামনে তিলাওয়াত করলে সে এতটাই প্রভাবান্বিত হয় যে, কুরায়িশদের সামনে বলে উঠে-আল্লাহর কসম! এই আয়াতে একটি বিশেষ মাধুর্য রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ জ্যোতি ও ঔজ্জ্বল্য রয়েছে। এর উৎস থেকে শাখা ও পল্লব গজাবে এবং শাখা ফলে সুশোভিত হবে। এটা কখনো মানুষের কথা হতে পারে না। এই আয়াতে মহান আল্লাহপাক এমন কিছু বিধান ও নির্দেশ আলোচনা করেছেন, যা সমস্ত বিধিবিধানের প্রাণ ও মূল। (ফাতহুল কাদীর)। তন্মধ্যে প্রথম নির্দেশ হচ্ছে আদল বা ন্যায়পরায়ণতা। বস্তুত আদল শব্দের আভিধানিক ও আসল অর্থ হচ্ছে সমান করা। এ অর্থের আলোকেই স্বল্পতা ও বাহুল্যের মাঝামাঝি সমতাকেও আদল বলা হয়। (ফাতহুলকাদীর)। এই অর্থের সাথে সম্বন্ধ রেখেই আলোচ্য আয়াতে বাইরে এবং ভেতরে সমান হওয়া দ্বারা আদল শব্দের তাফসীর করেছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : এর অর্থ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কারও মতে, আদল হচ্ছে ইনসাফ। আবার কেউ বলেন আদল হচ্ছে ফরয। তবে বাস্তব কথা এই যে, আদল শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তার আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা। কেননা, কোনো কিছুতে বাড়াবাড়ি যেমন খারাপ, তেমনি কোনো কিছুতে কমতি করাও খারাপ। (ফাতহুল কাদীর)। বিচারকদের জনগণের বিরোধ সংক্রান্ত মোকদ্দমায় সুবিচারমূলক ফায়সালা করাকেও আদল বলা হয়। আদল উক্তি ও কর্ম, যা মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে প্রকাশ পায় এবং অন্তরেও তদ্রƒপ বিশ^াস অটুট থাকে। (ইবনে কাসির)।

আদল ও ন্যায়পরায়ণতাকে তিনভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথম আদল হচ্ছে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে আদল করা। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহর হককে। নিজের ভোগবিলাসের ওপর এবং তাঁর সন্তুষ্টিকে নিজের কামনা-বাসনার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া আল্লাহর বিধানাবলি পালন করা এবং নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয়াদি থেকে বেঁচে থাকা। দ্বিতীয় আদল হচ্ছে মানুষের নিজের সাথে আদল করা।

মর্ম হলো দৈহিক ও আত্মিক ধ্বংসের কারণসমূহ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, ক্ষতিকর কামনা-বাসনা পরিহার করা, ধৈর্য ও অল্পে তুষ্টি অবলম্বন করা, নিজের ওপর অহেতুক বোঝা চাপিয়ে না দেয়া। আর তৃতীয় আদল হচ্ছে নিজের এবং সমগ্র সৃষ্টজীবের সাথে শুভেচ্ছা ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার করা। কোনো ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা না করা, ন্যায় ও সুবিচার করা। মোট কথা, আদলের মধ্যে বিশ^াসের সমতা, কর্মের সমতা, চরিত্রের সমতা সবই অন্তর্ভুক্ত আছে। (বাহরে মুহীত) সুতরাং এই আদল, ইনসাফ চলমান দুনিয়ার মানুষের মধ্যে নেই বলেই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পৃথিবী কেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে-২

Update Time : ১২:৫০:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

গত আলোচনার আলোচ্য সূরা নাহলের ৯০ নং আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াত ওলীদ ইবনে মুগিরার সামনে তিলাওয়াত করলে সে এতটাই প্রভাবান্বিত হয় যে, কুরায়িশদের সামনে বলে উঠে-আল্লাহর কসম! এই আয়াতে একটি বিশেষ মাধুর্য রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ জ্যোতি ও ঔজ্জ্বল্য রয়েছে। এর উৎস থেকে শাখা ও পল্লব গজাবে এবং শাখা ফলে সুশোভিত হবে। এটা কখনো মানুষের কথা হতে পারে না। এই আয়াতে মহান আল্লাহপাক এমন কিছু বিধান ও নির্দেশ আলোচনা করেছেন, যা সমস্ত বিধিবিধানের প্রাণ ও মূল। (ফাতহুল কাদীর)। তন্মধ্যে প্রথম নির্দেশ হচ্ছে আদল বা ন্যায়পরায়ণতা। বস্তুত আদল শব্দের আভিধানিক ও আসল অর্থ হচ্ছে সমান করা। এ অর্থের আলোকেই স্বল্পতা ও বাহুল্যের মাঝামাঝি সমতাকেও আদল বলা হয়। (ফাতহুলকাদীর)। এই অর্থের সাথে সম্বন্ধ রেখেই আলোচ্য আয়াতে বাইরে এবং ভেতরে সমান হওয়া দ্বারা আদল শব্দের তাফসীর করেছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : এর অর্থ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কারও মতে, আদল হচ্ছে ইনসাফ। আবার কেউ বলেন আদল হচ্ছে ফরয। তবে বাস্তব কথা এই যে, আদল শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে তার আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা। কেননা, কোনো কিছুতে বাড়াবাড়ি যেমন খারাপ, তেমনি কোনো কিছুতে কমতি করাও খারাপ। (ফাতহুল কাদীর)। বিচারকদের জনগণের বিরোধ সংক্রান্ত মোকদ্দমায় সুবিচারমূলক ফায়সালা করাকেও আদল বলা হয়। আদল উক্তি ও কর্ম, যা মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে প্রকাশ পায় এবং অন্তরেও তদ্রƒপ বিশ^াস অটুট থাকে। (ইবনে কাসির)।

আদল ও ন্যায়পরায়ণতাকে তিনভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথম আদল হচ্ছে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে আদল করা। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহর হককে। নিজের ভোগবিলাসের ওপর এবং তাঁর সন্তুষ্টিকে নিজের কামনা-বাসনার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া আল্লাহর বিধানাবলি পালন করা এবং নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয়াদি থেকে বেঁচে থাকা। দ্বিতীয় আদল হচ্ছে মানুষের নিজের সাথে আদল করা।

মর্ম হলো দৈহিক ও আত্মিক ধ্বংসের কারণসমূহ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, ক্ষতিকর কামনা-বাসনা পরিহার করা, ধৈর্য ও অল্পে তুষ্টি অবলম্বন করা, নিজের ওপর অহেতুক বোঝা চাপিয়ে না দেয়া। আর তৃতীয় আদল হচ্ছে নিজের এবং সমগ্র সৃষ্টজীবের সাথে শুভেচ্ছা ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার করা। কোনো ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা না করা, ন্যায় ও সুবিচার করা। মোট কথা, আদলের মধ্যে বিশ^াসের সমতা, কর্মের সমতা, চরিত্রের সমতা সবই অন্তর্ভুক্ত আছে। (বাহরে মুহীত) সুতরাং এই আদল, ইনসাফ চলমান দুনিয়ার মানুষের মধ্যে নেই বলেই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।