০৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ৩০ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ বিলাসবহুল হাউসবোট

নীল রঙের স্বচ্ছ পানির এক হাত নিচেই ছটফট করছে শ্যাওলা ও নাম না জানা সব গাছের দল। যেন আস্ত একটা জঙ্গলই পানির নিচে ঘুমিয়ে আছে! রোদের তীব্রতায় আয়নার মতো ঝকঝকে পানিতে সেই জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দেখে বিস্মিত হতে চাইলে টাঙ্গুয়ার হাওরে আপনাকে যেতেই হবে। কিছুদিন আগেও টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকাগুলোতে ভ্রমণ ছিল বেশ কষ্টকর। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করতে হতো নৌকায়। ছিল না স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট কিংবা পানি থেকে ওঠার পর কাপড় বদলানোর স্থান। নৌকার পাটাতনে একসঙ্গে ঘুমাতে হতো গাদাগাদি করে। ছুটি কাটাতে গিয়ে কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে গিয়ে তাই অনেকেই উল্টো ক্লান্ত হয়ে ফিরতেন। তবে এখন সেই দিন বদলে গেছে।

হাওরের পানির উপর এখন ভেসে বেড়াচ্ছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন সব হাউসবোট। এগুলোতে প্রবেশ করার জন্য এখন আর নিচু হতে হবে না আপনাকে। দিব্যি সোজা হয়ে যেমন হাঁটতে পারবেন, তেমনি আলাদা কেবিন ও হাই কমোডসহ টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে এগুলোতে। ঠিক যেন পানির উপর ভেসে বেড়ানো রিসোর্ট! নিজের রুমে বসে এক কাপ গরম চা হাতে টাঙ্গুয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বিলাসী এসব নৌকাগুলোতে।

আরশিনগর হাউসবোটের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাফিউল হক জানালেন, তার হাউসবোটে মোট ছয়টি কেবিন রয়েছে। প্রতি কেবিনে তিন জন করে মোট ১৮ জনকে নিয়ে ভ্রমণ করতে পারে আরশিনগর। অতিথিদের জন্য খাবার রান্না করা হয় নৌকাতেই। খরচটা কেবিনপ্রতি নয়, জনপ্রতি হিসেবে ধরা হয়। ৫ হাজার ৫০০ টাকার মতো খরচ পড়বে প্রতিজনের জন্য। তবে একসঙ্গে বড় দল হলে সেক্ষেত্রে কিছুটা কমে খরচ। দম্পতিদের জন্যও রয়েছে ছাড়। শিশুদের জন্য আলাদা করে কোনও খরচ দিতে হবে না।

দুই বছরের শিশু নিয়ে সম্প্রতি হাউসবোট ‘রূপকথা-দ্য ফ্লোটিং প্যারাডাইস’ থেকে ঘুরে এসেছেন অন্তরা ইসলাম। জানালেন তার দারুণ অভিজ্ঞতার কথা। সারারাত তো বটেই- দিনেও বেশ অনেকক্ষণ জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল অত্যাধুনিক এই নৌকায়। ফলে গরমে কষ্ট পেতে হয়নি। শিশুও উপভোগ করেছে ভ্রমণ। শিশু যেন পানিতে পড়ে না যায় সেদিকে শুধু লক্ষ করা গেলে শিশুসহ ভ্রমণের চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে বলে মনে করেন তিনি।

‘রূপকথা-দ্য ফ্লোটিং প্যারাডাইস’ এর স্বত্বাধিকারী এখতিয়ার শাকিল জানালেন, প্রতিটি কেবিনের সঙ্গেই ব্যক্তিগত ব্যালকনির ব্যবস্থা রয়েছে তার হাউসবোটে। মোট ৭টি কেবিনের মধ্যে ৬টি কাপল কেবিন ও একটি ট্রিপল কেবিন। দুটো কেবিনের সঙ্গে রয়েছে বাথরুম। এছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি ভিউর লাউঞ্জ রয়েছে দোতলায়, যেখান থেকে বার্ডস আই ভিউতে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

হাউসবোট জলছবির পক্ষ থেকে জানানো হয়; প্রতিটি রুমে ফ্যানের ব্যবস্থা, ওপেন লাউঞ্জ, ইনডোর গেমস, সার্বক্ষণিক চা/কফি, বই পড়ার ব্যবস্থা, সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট ও সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে তাদের হাউসবোটে।

ছুটি কাটাতে এসব বিলাসবহুল হাউসবোট এখন বেচ্ছে নিচ্ছেন অনেকেই। আনমনে টাঙ্গুয়ার সৌন্দর্য উপভোগ, এক কাপ চা ও বই হাতে পানির উপর অলস ছুটি কাটানো কিংবা নিভৃতে দুদণ্ড অবসর কাটাতে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ বিলাসবহুল হাউসবোট

Update Time : ০৪:২৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

নীল রঙের স্বচ্ছ পানির এক হাত নিচেই ছটফট করছে শ্যাওলা ও নাম না জানা সব গাছের দল। যেন আস্ত একটা জঙ্গলই পানির নিচে ঘুমিয়ে আছে! রোদের তীব্রতায় আয়নার মতো ঝকঝকে পানিতে সেই জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দেখে বিস্মিত হতে চাইলে টাঙ্গুয়ার হাওরে আপনাকে যেতেই হবে। কিছুদিন আগেও টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকাগুলোতে ভ্রমণ ছিল বেশ কষ্টকর। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করতে হতো নৌকায়। ছিল না স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট কিংবা পানি থেকে ওঠার পর কাপড় বদলানোর স্থান। নৌকার পাটাতনে একসঙ্গে ঘুমাতে হতো গাদাগাদি করে। ছুটি কাটাতে গিয়ে কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে গিয়ে তাই অনেকেই উল্টো ক্লান্ত হয়ে ফিরতেন। তবে এখন সেই দিন বদলে গেছে।

হাওরের পানির উপর এখন ভেসে বেড়াচ্ছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন সব হাউসবোট। এগুলোতে প্রবেশ করার জন্য এখন আর নিচু হতে হবে না আপনাকে। দিব্যি সোজা হয়ে যেমন হাঁটতে পারবেন, তেমনি আলাদা কেবিন ও হাই কমোডসহ টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে এগুলোতে। ঠিক যেন পানির উপর ভেসে বেড়ানো রিসোর্ট! নিজের রুমে বসে এক কাপ গরম চা হাতে টাঙ্গুয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বিলাসী এসব নৌকাগুলোতে।

আরশিনগর হাউসবোটের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাফিউল হক জানালেন, তার হাউসবোটে মোট ছয়টি কেবিন রয়েছে। প্রতি কেবিনে তিন জন করে মোট ১৮ জনকে নিয়ে ভ্রমণ করতে পারে আরশিনগর। অতিথিদের জন্য খাবার রান্না করা হয় নৌকাতেই। খরচটা কেবিনপ্রতি নয়, জনপ্রতি হিসেবে ধরা হয়। ৫ হাজার ৫০০ টাকার মতো খরচ পড়বে প্রতিজনের জন্য। তবে একসঙ্গে বড় দল হলে সেক্ষেত্রে কিছুটা কমে খরচ। দম্পতিদের জন্যও রয়েছে ছাড়। শিশুদের জন্য আলাদা করে কোনও খরচ দিতে হবে না।

দুই বছরের শিশু নিয়ে সম্প্রতি হাউসবোট ‘রূপকথা-দ্য ফ্লোটিং প্যারাডাইস’ থেকে ঘুরে এসেছেন অন্তরা ইসলাম। জানালেন তার দারুণ অভিজ্ঞতার কথা। সারারাত তো বটেই- দিনেও বেশ অনেকক্ষণ জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল অত্যাধুনিক এই নৌকায়। ফলে গরমে কষ্ট পেতে হয়নি। শিশুও উপভোগ করেছে ভ্রমণ। শিশু যেন পানিতে পড়ে না যায় সেদিকে শুধু লক্ষ করা গেলে শিশুসহ ভ্রমণের চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে বলে মনে করেন তিনি।

‘রূপকথা-দ্য ফ্লোটিং প্যারাডাইস’ এর স্বত্বাধিকারী এখতিয়ার শাকিল জানালেন, প্রতিটি কেবিনের সঙ্গেই ব্যক্তিগত ব্যালকনির ব্যবস্থা রয়েছে তার হাউসবোটে। মোট ৭টি কেবিনের মধ্যে ৬টি কাপল কেবিন ও একটি ট্রিপল কেবিন। দুটো কেবিনের সঙ্গে রয়েছে বাথরুম। এছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি ভিউর লাউঞ্জ রয়েছে দোতলায়, যেখান থেকে বার্ডস আই ভিউতে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

হাউসবোট জলছবির পক্ষ থেকে জানানো হয়; প্রতিটি রুমে ফ্যানের ব্যবস্থা, ওপেন লাউঞ্জ, ইনডোর গেমস, সার্বক্ষণিক চা/কফি, বই পড়ার ব্যবস্থা, সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট ও সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে তাদের হাউসবোটে।

ছুটি কাটাতে এসব বিলাসবহুল হাউসবোট এখন বেচ্ছে নিচ্ছেন অনেকেই। আনমনে টাঙ্গুয়ার সৌন্দর্য উপভোগ, এক কাপ চা ও বই হাতে পানির উপর অলস ছুটি কাটানো কিংবা নিভৃতে দুদণ্ড অবসর কাটাতে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে।