নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যসহ নয়টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। সেগুলোর যৌক্তিক মূল্য কত হওয়া উচিত, তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঠিক করবে ট্যারিফ কমিশন। এর পর থেকে কেউ নির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। পণ্য নয়টি হলো চাল, গম (আটা ও ময়দা), ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল), পরিশোধিত চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, এমএস পণ্য (রড) ও সিমেন্ট। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন কৃষিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সাধারণত আমাদের ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের দাম টাইম টু টাইম বসে ঠিক করে। কখনো বাড়ানোর দরকার হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে বাড়ায়। আবার যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, বাংলাদেশেও সেটা কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, বর্তমানে বিভিন্ন আইটেমের (পণ্য) দাম বেড়েছে, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও সব আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখার কথা ছিল, এমনটাও নয়। এখানে কৃষিপণ্যের ব্যাপার রয়েছে, চাল রয়েছে, যেটা খাদ্য মন্ত্রণালয় বা কৃষি মন্ত্রণালয় দেখবে। তারপর ডিমের কথা আসছে। মাঝখানে ডিমের দাম বেড়েছে। এ পণ্যটির কথা কোনোদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনায় আনেনি বা আমাদের দেখার ব্যাপারও ছিল না। তার পরও প্রশ্ন আসার পর আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল—দরকার হলে ডিম আমদানি করব। যাই হোক পরবর্তী পর্যায়ে ডিমের দাম কমেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, কীভাবে পণ্যগুলোর দাম কমানো যায় বা যথার্থ করা যায় আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের কারণে অনেক সময় হয়তো আমরা কমাতে পারব না। তবে যেটা হওয়া উচিত তার থেকে বেশি দামে যেন ভোক্তাদের কিনতে না হয়, তার জন্য আলোচনা করে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পণ্যের দাম যতটুকু বাড়া উচিত, তার চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, চালের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সরকার সেটা কমিয়েছে; যাতে আমদানিতে ৮ টাকার মতো খরচ কম পড়বে। আবার কোনো কোনো পণ্যে আমরাও মনে করি দাম বাড়া উচিত, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তার থেকেও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর জন্যই আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে—এখন থেকে এসব পণ্যের দাম যেটা হওয়া উচিত, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ট্যারিফ কমিশন তা ঠিক করবে। বাজারে সে দামেই পণ্যগুলো বিক্রি হতে হবে। এর থেকে বেশি যদি কেউ নেন, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাই শুধু নয়, আমরা ঠিক করেছি সোজাসুজি মামলায় চলে যাব। এ বিষয়ে আইনে জেল-জরিমানার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনে আছে তিন বছরের জেল বা কোথাও কোথাও তার থেকে বেশি জরিমানাও আছে। সেই পদক্ষেপ আমরা এবার নেব। বলে দেয়া হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে আইটেমগুলো ক্যালকুলেশন করে বাজারে ডিক্লেয়ার (ঘোষণা) করে দেয়া হবে—দিস ইজ দ্য প্রাইস। এর পরও যারা অনৈতিকভাবে দাম বাড়াবেন, যা যা আমাদের ক্ষমতা আছে, সেটা শুরু হবে ইমিডিয়েটলি।
তিনি বলেন, যদি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর আমাদের ডিপেন্ড করতে হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম উঠলে এখানেও মূল্যবৃদ্ধি পাবে। সেটাও কতটুকু বাড়ানো উচিত, তা ঠিক করে দেয়া হবে।
টিপু মুনশি বলেন, বিভিন্নভাবে কথা আসছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। হ্যাঁ সত্যি কথা, কমেছে। আমরা সয়াবিন তেলের বা পাম অয়েলের দাম কমিয়ে রেখেছি। পাশাপাশি যেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য, ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছে। তাই হিসাব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে সুফলটা আমরা পেতে পারতাম, সেটা পাচ্ছি না। যাই হোক আমরা ক্লোজ মনিটরিং করে দেখব, হোয়াট শুড বি দ্য রাইট প্রাইস। সেটাই আমরা ডিক্লেয়ার করব। মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে, এটার প্রভাব কী পড়ে তা দেখব। বর্তমানে যে অবস্থা বাজারের বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে-কমছে, ডলারের দাম অস্থির হয়ে রয়েছে, সবগুলো সমন্বয় করা কঠিন। কিন্তু আমরা সিরিয়াসলি সবগুলো ধরব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে আমরা নয়টি পণ্য ঠিক করেছি। এর বাইরেও যদি এসেনশিয়াল কিছু থাকে, সেটাও পলিসিতে আনব। যেমন ডিম যে একটা আইটেম হবে, এটা নিয়ে যে আলোচনায় বসতে হবে, এটা কিন্তু আমাদের ধারণায় ছিল না। তো প্রতিদিনই নতুন নতুন যোগ হবে। আমরাও প্রয়োজন অনুসারে আইটেম বাড়াব। বৈঠকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি রড, সিমেন্ট ও ডিম নিয়ে। মন্ত্রী আরো বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যদি কোথাও মনে করি শুল্ক কমানো দরকার, যেমন করে চালেরটা কমিয়ে দেয়া হয়েছে, এসব পণ্যের ডিউটিও কমিয়ে দেব। যাতে কেউ মনোপলি সুবিধা নিতে না পারে। আমরা আসলে শক্ত অবস্থায় যেতে চাই।
নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্য একমত নন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কতটা বাস্তবসম্মত—গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মার্কেটে সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ডের (সরবরাহ ও চাহিদা) ওপর ভিত্তি করে এসব পণ্যের দাম ঠিক হয়। এটাই হলো ইকোনমিকসের বেসিক থিউরি। সেনাবাহিনী দিয়ে, মিগ ফিট করে কিছু করা সম্ভব না। দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
Leave a Reply