1. [email protected] : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  2. [email protected] : rahad :
জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি জিতুর কাছে ছিল। | JoyBD24
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি জিতুর কাছে ছিল।

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৫) হত্যায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ও জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক একযোগে কাজ করেছে।

দেশে তাদের হয়ে কয়েকজন সরাসরি খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কিলিং মিশনের দেড় মাস আগে দুবাইয়ে পলাতক সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশে অস্ত্রের জোগান দেয় ইশতিয়াক আহমেদ জিতু নামের একজন।

ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা সুমন সিকদার মুসার সমন্বয়ে জিতুর মগবাজারের বাসায় মোল্লা শামিমের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় সে।

কিলিং মিশনের আগে সেই অস্ত্রটিই দেওয়া হয় শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশের হাতে। অস্ত্রটিতে দুই রাউন্ড গুলি ছিল। পরে তাতে আরও ১০-১২ রাউন্ড গুলি ‘লোড’ করা হয়। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি ও একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

২৪ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কে প্রকাশ্য গুলি করে খুন করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। পেশাদার কিলার বাহিনী এক থেকে দেড় মিনিটের অপারেশন শেষে পালিয়ে যায়। ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এরমধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলে সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি (২২) নামের এক নিরীহ কলেজছাত্রী নিহত হন। এই ঘটনার পর ১২ দিন আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দুবাই পালায় খুনের সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী মুসা। সেখান থেকে মে মাসের শুরুতে ওমানে যায়। ১৭ মে এনসিবি মাস্কাট তাকে গ্রেফতারের খবর জানায় ঢাকা এনসিবিকে। ৯ জুন তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন তাকে আদালতে নেওয়া হলে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। বৃহস্পতিবার ডিবি হেফাজতে তার ৬ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজ তাকে আদালতে উপস্থাপন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের রিমান্ড চাইবে ডিবি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় ইশতিয়াক আহমেদ জিতুকে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিবি হেফাজতে আজ থেকে ৩ দিনের রিমান্ডে থাকবে সে। এছাড়া এ ঘটনাসংশ্লিষ্ট আরও অন্তত তিনজন এখন ডিবির নজরদারিতে আছে। টিপু হত্যার ঘটনায় জিতুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া জিতুর সঙ্গে জিসান ও তার দুই ভাইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ছাড়াও দেশে থাকা তার এক ভাই শামীম এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা বড় ভাই হাসানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল জিতুর। তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জিতুর বিভিন্ন আলাপের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশে জিসানদের একজন ‘মামা’ আছে। তার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে জিতুর। জিসানের নামে মতিঝিলে যতো চাঁদা ওঠে তা ওই মামা ও জিতুর তদারকিতেই হয়। এই চাঁদাবাজির সঙ্গে মতিঝিলের রাজনৈতিক খোলসে থাকা আরও অন্তত অর্ধডজনেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে।

ডিবি সূত্র জানায়, টিপু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি জিতুর কাছে ছিল। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশে সে শামীমকে অস্ত্রটি দেয়। এর আগে জিসানের কাছে ‘কিলিং মিশন’র জন্য অস্ত্র চায় মুসা। তখন জিসান একটি মোবাইল নম্বর দেয় মুসাকে। সেই নম্বরটিই ছিল জিতুর। সুচতুর মুসা এখানে কিছুটা কৌশলী ভূমিকা পালন করে। সে সরাসরি অস্ত্রটি না নিয়ে টিপুর কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মোটরসাইকেলচালক মোল্লা শামীমকে জিতুর কাছে অস্ত্র আনতে পাঠায়। একটি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল ব্রাজিলের তৈরি তাওরাস ব্র্যান্ডের। এই অস্ত্রটিতে দুই ধরনের গুলি ব্যবহার করা যায়। টিপু হত্যাকাণ্ডে যে দুই ধরনের গুলির ব্যবহারের কথা বলছিলেন গোয়েন্দারা। এখন ধারণা করা হচ্ছে-একই পিস্তলে দুই ধরনের গুলি ঢুকানো হয়েছে। জিতুর কাছ থেকে নেওয়ার সময় তাতে দুই রাউন্ড গুলি ছিল। পরে আরও নতুন গুলি ঢুকিয়ে ব্যবহার করা হয়। সেজন্যই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে দুই ধরনের গুলি পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত অস্ত্রটিতে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ ও পয়েন্ট থ্রি টু গুলির ব্যবহারের কথা জানা গেছে। মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি থেকে অস্ত্র ও গুলির এ বিষয়গুলো এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে গোয়েন্দারা গুলির জোগানদাতাদের নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মুসাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন অনেক দরজা খুলতে শুরু করেছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, মোল্লা শামীম মূলত ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের লোক। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে শামীম ‘ডুয়েল গেম প্লে’ করেছে। একদিকে যেমন মুসার লোক হয়ে কাজ করেছে, অন্যদিকে আবার সে মানিকের ‘ডাইরেক্ট লোক’। হত্যার আগে মানিককে সব বিষয়ে অবহিত করেছে শামীম। টিপু খুন, দেশে প্রভাব বাড়ানো এবং অনুসারীদের প্রচেষ্টায় মানিক ও জিসান এক হয়ে এখন কাজ করছে বলেও জানান গোয়েন্দারা। এক্ষেত্রে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রধান লক্ষ্য-তাদের প্রতিনিধিকে দেশে ক্ষমতাশালী করা। যাতে সহজেই মতিঝিল এলাকার টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অনেক রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ রয়েছে। ফলে কে, কোথায়, কোন সুযোগ নেওয়ার জন্য, কোন পর্যায়ে এতে জড়িত, তা মেলানো কঠিন হচ্ছে। হত্যায় জিসান-মানিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও তাদের সহযোগীদের সম্পর্কে এখনও বেশ কিছু তথ্য নিশ্চিত হওয়া বাকি। গ্রেফতার হওয়া জিতু শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের লোক হলেও দেশের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এমন একজনের ছত্রছায়ায় এতদিন ছিল। তার সঙ্গে মতিঝিল এলাকার জনৈক সোহেল শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠতার কথাও জানা গেছে। ডিবি সূত্র বলছে, মগবাজারের একটি হোটেলে ডিবি ইন্সপেক্টর খুনের ঘটনায় জিতু এর আগে দুই বছর জেলে ছিল। ২০০৩ সালে অভিযানের সময় ডিবির একটি দলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জিসান ও তার সহযোগীরা।

টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ২৫ মার্চ শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ আকাশের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় সুমন শিকদারের নাম আসে। ঘটনার দুই মাস পরেও চাঞ্চল্যকর এ খুনের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি। গোয়েন্দাদের আশা, মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং জিতু গ্রেফতার হওয়ায় খুব শিগগিরই অস্ত্রটির খোঁজ পাবেন তারা। পাশাপাশি এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের একটি ওয়ার্ডের এক নেতা, ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ও এক ব্যবসায়ী গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2012 joybd24
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Joybd24