কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। নতুন এই মেয়র সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, রিফাত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মানুষের জন্য সে কাজ করেছে। সে ছাত্রলীগ করা ছেলে। শিবির তার চার হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছিল। তবুও সে থমকে যায়নাই।
রিফাতের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাহার বলেন, খন্দকার মোস্তাক কুমিল্লায় কখনো মিটিং করতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ৫০০০ পুলিশ এনে মিটিং করেছিল। আমরা সেই মিটিং ভেঙে দিয়েছিলাম। সেই সময়ে সামরিক ট্রায়ালে সাড়ে তিন বছর জেলও খেটেছে রিফাত।
আরফানুল হক রিফাত ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি এবং স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। জিলা স্কুলে পড়াকালীন তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮০ সালে তিনি শহর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগের প্যানেলে তিনি বহিঃক্রীড়া ও ব্যায়ামাগার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ওই সময় কলেজ ছাত্র সংসদে প্রথম জাতির পিতার ছবি উত্তোলন করেন। একই বছরে জামায়াত শিবির কর্তৃক আক্রমণের শিকার হন। ওই সময় তার দুই হাত এবং দুই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ১৯৮৩-৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদ লাভ করেন। পরে তিনি কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেন।
এছাড়া গত ১২ বছর যাবত তিনি কুমিল্লা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রিফাত কুমিল্লা ক্লাবের দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনেও নতুন কুসিক মেয়র জড়িত উল্লেখ করে বাহার বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর রিফাতকে কয়েকটি স্কুল-কলেজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এসব স্কুল কলেজের কোনো ফান্ড ছিল না। আজকে এমন স্কুলও আছে যেখানে ১০ কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে।
রিফাতের জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাহার বলেন, জয়ের নিয়ামক আমার নেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক। এই নৌকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এই নৌকার পক্ষে আমি ছাত্রজীবনে কাজ করেছি। এই নৌকার জন্য আমি স্লোগান তুলেছি।
প্রসঙ্গত, বুধবারের (১৫ জুন) নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে আরফানুল হক রিফাত ও মনিরুল হক সাক্কুর (টেবিল ঘড়ি) মধ্যে। সাক্কুর থেকে ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন মোট ৫০ হাজার ৩১০টি ভোট। আর মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯টি ভোট।