১৯৭১-এ ছিলেন টগবগে তরুণ। গুলির বাক্স নিয়ে যেতেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গেই খাওয়া-দাওয়া হতো। কিংবা উপোষও করতেন দুয়েক বেলা।
সেই জবেদ আলী মাইন বিস্ফোরণে পা হারালেন একবারে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশে ফেরার সময়।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার গাজীপুর গ্রামের জবেদ আলীর শুরু হয় অন্যরকম লড়াই। নুন আনতে পানতা ফুরায় তার।
বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিলেন। দিতে পারলেন না জামাইকে চাহিদা মতো যৌতুকের টাকা। মেয়েটা অভিমানে আত্মহনন করে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে। থেমে থাকে না তার লড়াই। বাড়ির কাছেই রাস্তায় বসে থাকেন। দুয়েক টাকা সাহায্য পান। তাই দিয়ে চলে সংসার।
এক গভীর রাতে হু হু করে কাঁদতে থাকেন জবেদ আলী। স্ত্রীকে বলেন বড় মেয়েটাকে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় সে আত্মহত্যা করলো। দ্বিতীয় মেয়েটা বড় হয়ে গেছে, তাকে বিয়ে দেবেন কিভাবে, টাকা কোথায়।
বাবার কান্নায় ঘুম ভেঙে যায় মেয়ের। চুপ করে থাকে সে। সহ্য হয়নি বাবার কষ্ট। বাবা সকালে আবার রাস্তায় যাবেন কিছু পাওয়ার আশায়। তার আগে মেয়েকে ডাকেন বিছানা ছাড়তে।
মেয়ের জবাব নেই। কাছে যান তিনি। দেখেন বিছানার পাশেই কীটনাশকের বোতল। ডাকাডাকি করেও আর লাভ হলো না। এই মেয়েটিও চলে গেছে।
তারপরও বন্ধ নেই জবেদ আলীর লড়াই। বছরকাল আগেও খোঁজ নিয়েছিলাম। জবেদ আলীর সংগ্রাম চলছে তখনও। জানি না এখনও বেঁচে আছেন কি না, আর থাকলেও কেমন আছেন?