১১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জঙ্গল সলিমপুরে বসছে সিসি ক্যামেরা চেকপোস্ট, অবরোধের ঘটনায় ছয় মামলা

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২
  • 15

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের চার পয়েন্টের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে সলিমপুরের প্রবেশমুখে বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকায় চেকপোস্ট এবং সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া মঙ্গলবার ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার ঘটনায় জঙ্গল সলিমপুরের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে পুলিশ ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশের ওপর হামলা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিষ্ফোরক আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ছয়টি মামলায় ৪৫ জন এজাহারভুক্ত এবং ১৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি, পুলিশের ওপর হামলা, কর্তব্যকাজে বাধা, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিষ্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আরও ১৪০ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। যারা মহাসড়ক অবরোধে অংশ নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে তারাই আসামি। তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা রাজনৈতিক পরিচয় এখানে বিষয় নয়।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিচ্ছিন্ন করা গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগরের বাসিন্দারা। পরে পুলিশ, জেলা প্রশাসনের সাথে স্থানীয়রা মিলে মহাসড়ক থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুর ছিল এক সময়ে দাগী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র্র। নিজেদের আশ্রয়কে নিরাপদ করতে পাহাড় কেটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কাছে কম দামে সরকারি জমির দখল বিক্রি করতো সন্ত্রাসীরা। আর নগরীর অসংখ্য বস্তির নেতারা সেখানে বিভিন্ন সমিতির নামে করেছেন পাহাড় দখল।
প্রসঙ্গত, বর্তমান জেলা প্রশাসন নগর থেকে কারাগারসহ বিভিন্ন দফতর স্থানান্তরের পাশাপাশি বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল, আইকনিক মসজিদ, বেতার ভবন, জাতীয় তথ্য কেন্দ্র, নভোথিয়েটার, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে। পুরো পরিকল্পনায় ইকো সিস্টেম রক্ষাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। থাকছে প্রাণ প্রকৃতির অভয়ারণ্য ইকোপার্কও। সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। কয়েকদফা চালানো অভিযানে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে প্রথমদিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা উচ্ছেদে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে।
সীতাকু-ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে চারটি পয়েন্টে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। যেন গ্যাস পাইপ লাইন ঝুঁকিমুক্ত থাকে এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি নির্মাণের কাজে ভারী যন্ত্রপাতি-ভারীযান চলাচল করতে না পারে। চেকপোস্ট ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক সকল বিষয় মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন কর্ণফুলী গ্যাস পাইপ লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। গ্যাস পাইপ লাইনের উপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভারী যানবাহন চলাচল করছিল। চেকপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
এর আগে, গত ৭ আগস্ট সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকু-ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদেরকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।
জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দাবি- ওই এলাকার দুই অংশ ছিন্নমূল ও আলীনগরের সব বাসিন্দাকে সরকারি খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে সেখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে প্রশাসন বলছে, প্রকৃত ভূমিহীনদেরই শুধু পুনর্বাসন করা হবে।
এছাড়া, গত ২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের আলীনগরের প্রবেশের কয়েকটি সড়ক কেটে গর্ত করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যেতে না পারেন। সড়কের অন্তত ৬টি পয়েন্টে ৩ ফুট গভীর ও ৮ ফুট প্রশস্ত করে কাটা হয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জঙ্গল সলিমপুরে বসছে সিসি ক্যামেরা চেকপোস্ট, অবরোধের ঘটনায় ছয় মামলা

Update Time : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের চার পয়েন্টের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে সলিমপুরের প্রবেশমুখে বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকায় চেকপোস্ট এবং সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া মঙ্গলবার ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার ঘটনায় জঙ্গল সলিমপুরের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে পুলিশ ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশের ওপর হামলা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিষ্ফোরক আইনসহ বিভিন্ন ধারায় ছয়টি মামলায় ৪৫ জন এজাহারভুক্ত এবং ১৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি, পুলিশের ওপর হামলা, কর্তব্যকাজে বাধা, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিষ্ফোরক আইনে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আরও ১৪০ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। যারা মহাসড়ক অবরোধে অংশ নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে তারাই আসামি। তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা রাজনৈতিক পরিচয় এখানে বিষয় নয়।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিচ্ছিন্ন করা গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগরের বাসিন্দারা। পরে পুলিশ, জেলা প্রশাসনের সাথে স্থানীয়রা মিলে মহাসড়ক থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুর ছিল এক সময়ে দাগী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র্র। নিজেদের আশ্রয়কে নিরাপদ করতে পাহাড় কেটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কাছে কম দামে সরকারি জমির দখল বিক্রি করতো সন্ত্রাসীরা। আর নগরীর অসংখ্য বস্তির নেতারা সেখানে বিভিন্ন সমিতির নামে করেছেন পাহাড় দখল।
প্রসঙ্গত, বর্তমান জেলা প্রশাসন নগর থেকে কারাগারসহ বিভিন্ন দফতর স্থানান্তরের পাশাপাশি বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল, আইকনিক মসজিদ, বেতার ভবন, জাতীয় তথ্য কেন্দ্র, নভোথিয়েটার, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে। পুরো পরিকল্পনায় ইকো সিস্টেম রক্ষাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। থাকছে প্রাণ প্রকৃতির অভয়ারণ্য ইকোপার্কও। সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। কয়েকদফা চালানো অভিযানে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে প্রথমদিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা উচ্ছেদে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে।
সীতাকু-ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে চারটি পয়েন্টে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। যেন গ্যাস পাইপ লাইন ঝুঁকিমুক্ত থাকে এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি নির্মাণের কাজে ভারী যন্ত্রপাতি-ভারীযান চলাচল করতে না পারে। চেকপোস্ট ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক সকল বিষয় মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন কর্ণফুলী গ্যাস পাইপ লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। গ্যাস পাইপ লাইনের উপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভারী যানবাহন চলাচল করছিল। চেকপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
এর আগে, গত ৭ আগস্ট সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকু-ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদেরকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।
জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দাবি- ওই এলাকার দুই অংশ ছিন্নমূল ও আলীনগরের সব বাসিন্দাকে সরকারি খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে সেখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে প্রশাসন বলছে, প্রকৃত ভূমিহীনদেরই শুধু পুনর্বাসন করা হবে।
এছাড়া, গত ২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের আলীনগরের প্রবেশের কয়েকটি সড়ক কেটে গর্ত করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যেতে না পারেন। সড়কের অন্তত ৬টি পয়েন্টে ৩ ফুট গভীর ও ৮ ফুট প্রশস্ত করে কাটা হয়েছে।