০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:১৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২
  • 23

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিলে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে চা খেতে কোন অসুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে বাধা দেয়া হবে না, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন।

ঘোষণা করুন যে, আপনি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবেন। তাহলে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই। তা না করে এই সমস্ত হালকা কথা বলে লাভ নেই, এই সমস্ত চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নেই। আমাদের একটাই কথা- পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে আপনি দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন একটা সত্যিকার অর্থেই যেন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অমানিশা : দুর্নীতি আর লুটপাটের খেসারত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করছি, মানুষকে আহবান করেছি যে, আসুন এই ভয়াবহ দুর্বৃত্ত, ডাকাতদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতে হবে এবং রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে আমাদের বাংলাদেশের যে স্বপ্ন ছিলো, একাত্তরের যে স্বপ্ন ছিলো তাকে বাস্তবায়িত করতে হবে।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের এই সরকার তাদের যে মাপের জুতা লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি বড় জুতা পরতে চায়। ফলে তারা এখন হাঁটতে পারছে না, হোঁচট খেয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, আনবিক শক্তির পাওয়ার প্ল্যান্ট সব কিছু তারা করছে কিন্তু এর জ্বলানি তেল আসবে কত্থেকে সে চিন্তা তারা করেনি।

বিদ্যুত খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এতো কিছু ঘটছে কেনো? দেয়ার ইজ নো একাউন্টিবিলিটি। কারো কাছে কোথাও জবাব দিতে হয় না। শতকরা ৫১ ভাগ জ্বালানি আসে গ্যাস থেকে। সেই গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা সরকার গত ১৫ বছর করেনি। জ্বালানির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে আজকে বিদ্যুত সংকট দেখা দিয়েছে। এই ১৫ বছরে তারা একটা জিনিসের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে কি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করা যায়। দেখুন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সাথে কারা কারা জড়িত তা দেখলেই আপনারা বুঝবেন এরা কারা?

তিনি বলেন, এই সরকার কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে দায়মুক্তি দিয়েছে। ইনডেমনিটি যদি দেয়া হয় তাহলে কি করে আশা করতে পারেন যেখানে দুর্নীতি হবে না, বিদ্যুতে লুট হবে না। একটা খনার বচন আছে-রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। আজকে আমাদের যারা শাসন করছে শাসনকর্তা- তাদের দুর্নীতি, তাদের লুটপাট, তাদের অশিক্ষা, ব্যর্থতা সব মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জনগণের জীবনটা দূর্বিষহ করে ফেলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা কষ্ট পাচ্ছে। অথচ সরকারের মুখের ভাষা কি তারা সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিচ্ছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিচ্ছে, কানাডাও বানিয়ে দিতে চায়, সানফ্রান্সিসকো বানাতে চায়। আবার নিজেদের সেফটির জন্য বেগমপাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন। এটাই তাদের আসল চরিত্র। শুধু মিলিটারিরা ডিকটেটর হয় না, নির্বাচিত দলও চরম ডিকটেটর হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ ৪০ থেকে ৪২ ভাগ হয়েছে দারিদ্র্যের হার, দুই বেলা খেতে পারছে না। আজকে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ- এই জায়গাগুলোতে ২১ ভাগ লোক দুই বেলা খেতে পারে না। এটা আমাদের কথা নয়, এটা একটা জরিপের ফল এটি। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমে আসছে। চোখে সর্ষের ফুল দেখবেন, দেখা শুরু করেছেন যার জন্য আবোল-তাবোল কথা বলতে শুরু করেছে তারা।

বিদ্যুৎ সঙ্কটে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হওয়ার কারণে ফসলাদি উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গ্রামের লোডশেডিংয়ের ভবিষ্যত কী হবে? ফসল উৎপাদন কমে যাবে, ধান উৎপাদন কমে যাবে, ফুড সিকিউরিটির সমস্যা হবে। সারের সঙ্কট আসছে। এভাবেই পতন অনিবার্য। হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রকৌশলী খান মনজুর মোরশেদ। এ্যাবের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্ন’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এ্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাছিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী মুইদ রুমি, আবদুস সালাম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, জহিরুল ইসলামসহ প্রকৌশলীরা বক্তব্য রাখেন।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন।

Update Time : ০৪:১৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিলে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে চা খেতে কোন অসুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে বাধা দেয়া হবে না, চা খাওয়াব, কথা বলতে চাইলে শুনব’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এরকম বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, চায়ের নিমন্ত্রণ নয়, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিন।

ঘোষণা করুন যে, আপনি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবেন। তাহলে চা-টা খাওয়া যাবে অসুবিধা নেই। তা না করে এই সমস্ত হালকা কথা বলে লাভ নেই, এই সমস্ত চা-টা খাওয়ার কথা বলে লাভ নেই। আমাদের একটাই কথা- পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে আপনি দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন একটা সত্যিকার অর্থেই যেন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অমানিশা : দুর্নীতি আর লুটপাটের খেসারত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করছি, মানুষকে আহবান করেছি যে, আসুন এই ভয়াবহ দুর্বৃত্ত, ডাকাতদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতে হবে এবং রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে আমাদের বাংলাদেশের যে স্বপ্ন ছিলো, একাত্তরের যে স্বপ্ন ছিলো তাকে বাস্তবায়িত করতে হবে।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের এই সরকার তাদের যে মাপের জুতা লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি বড় জুতা পরতে চায়। ফলে তারা এখন হাঁটতে পারছে না, হোঁচট খেয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, আনবিক শক্তির পাওয়ার প্ল্যান্ট সব কিছু তারা করছে কিন্তু এর জ্বলানি তেল আসবে কত্থেকে সে চিন্তা তারা করেনি।

বিদ্যুত খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এতো কিছু ঘটছে কেনো? দেয়ার ইজ নো একাউন্টিবিলিটি। কারো কাছে কোথাও জবাব দিতে হয় না। শতকরা ৫১ ভাগ জ্বালানি আসে গ্যাস থেকে। সেই গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা সরকার গত ১৫ বছর করেনি। জ্বালানির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে আজকে বিদ্যুত সংকট দেখা দিয়েছে। এই ১৫ বছরে তারা একটা জিনিসের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে কি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করা যায়। দেখুন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সাথে কারা কারা জড়িত তা দেখলেই আপনারা বুঝবেন এরা কারা?

তিনি বলেন, এই সরকার কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে দায়মুক্তি দিয়েছে। ইনডেমনিটি যদি দেয়া হয় তাহলে কি করে আশা করতে পারেন যেখানে দুর্নীতি হবে না, বিদ্যুতে লুট হবে না। একটা খনার বচন আছে-রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়। আজকে আমাদের যারা শাসন করছে শাসনকর্তা- তাদের দুর্নীতি, তাদের লুটপাট, তাদের অশিক্ষা, ব্যর্থতা সব মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জনগণের জীবনটা দূর্বিষহ করে ফেলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা কষ্ট পাচ্ছে। অথচ সরকারের মুখের ভাষা কি তারা সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিচ্ছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিচ্ছে, কানাডাও বানিয়ে দিতে চায়, সানফ্রান্সিসকো বানাতে চায়। আবার নিজেদের সেফটির জন্য বেগমপাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন। এটাই তাদের আসল চরিত্র। শুধু মিলিটারিরা ডিকটেটর হয় না, নির্বাচিত দলও চরম ডিকটেটর হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ ৪০ থেকে ৪২ ভাগ হয়েছে দারিদ্র্যের হার, দুই বেলা খেতে পারছে না। আজকে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ- এই জায়গাগুলোতে ২১ ভাগ লোক দুই বেলা খেতে পারে না। এটা আমাদের কথা নয়, এটা একটা জরিপের ফল এটি। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমে আসছে। চোখে সর্ষের ফুল দেখবেন, দেখা শুরু করেছেন যার জন্য আবোল-তাবোল কথা বলতে শুরু করেছে তারা।

বিদ্যুৎ সঙ্কটে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হওয়ার কারণে ফসলাদি উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গ্রামের লোডশেডিংয়ের ভবিষ্যত কী হবে? ফসল উৎপাদন কমে যাবে, ধান উৎপাদন কমে যাবে, ফুড সিকিউরিটির সমস্যা হবে। সারের সঙ্কট আসছে। এভাবেই পতন অনিবার্য। হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রকৌশলী খান মনজুর মোরশেদ। এ্যাবের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্ন’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এ্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাছিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী মুইদ রুমি, আবদুস সালাম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, জহিরুল ইসলামসহ প্রকৌশলীরা বক্তব্য রাখেন।