আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় কোনোভাবেই চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে যাতে অব্যবস্থাপনা তৈরি না হয়, সেদিকে সবাই লক্ষ্য রাখার আহবান জানান শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, কোরবানীর চামড়া সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণের মজুদ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোরবানীর চামড়া ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সরংক্ষণে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোরবানীর জন্য দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক গবাদি পশু রয়েছে এবং কোনো গবাদি পশু আমদানি করতে হবে না। আসন্ন ঈদে যাতে দেশে অবৈধভাবে গবাদি পশু প্রবেশ করতে না পারে এবং পশুর চামড়া যাতে পাচার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
চামড়াখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় সভাপতিত্বকালে শিল্প মন্ত্রী গতকাল রবিবার ভার্চ্যুয়ালি এসব কথা বলেন। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান এনডিসি, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ শাহেদ আলী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শাহিন আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদ-উল-আযহা ২০২১ উপলক্ষে ট্যানারি মালিকদের সহজশর্তে ঋণ প্রদান এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের পূর্বের ঋণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থবিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে দ্রুত সভা করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শিঘ্রই সভা করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবে। সঠিকভাবে পশুর চামড়া ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার বিষয়সমূহ বিজ্ঞাপন/টিবিসি আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আসন্ন ঈদে দেশে অবৈধভাবে পশু প্রবেশ করতে না পারে এবং পশুর চমড়া যাতে পাচার না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, টাস্কফোর্সের কর্মপরিধি (টিওআর) অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য সাব কমিটি গঠন করা হবে।
সভায় আরও জানানো হয়, আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন উদ্যোগে মসজিদের ইমাম, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া ছড়ানোর সাথে জড়িতদের চামড়া ছড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে এবং বাকি দিনগুলোতে আরও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সভায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদ-উল-আযহার কয়েকদিন পূর্ব হতে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, খুব শিঘ্রই ব্যবসায়ীদের নিয়ে চামড়ার মূল্য নির্ধারণের সভা করা হবে এবং নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় বিক্রয়ের জন্য মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বলেন, কোরবানীর পশু জবাইয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মতভাবে বিধি নিষেধ অনুসরন করতে হবে। যেখানে সেখানে কোরবানীর পশু জবাই করা যাবে না। বিশেষ করে, রাস্তার উপর কোরবানীর পশু জবাই করা যাবে না।
সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে চামড়া সঠিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনা বাড়াতে হবে এবং চামড়ার ন্যায্য মূল নিশ্চিত করতে হবে।
জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ শাহেদ আলী বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে অবৈধ গবাদি পশু আসা এবং কোরবানির পশুর চামড়া চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক; মহাপরিচালক বিজিবি, ঢাকা ও মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, ঢাকাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে। ঈদের দিন ও পরদিন চামড়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এ সময় যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, সে বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
সমাপনী বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের অবস্থান, করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে চামড়া শিল্পখাত যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে ট্যানারী মালিক, আড়তদার, চামড়াখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আসন্ন ঈদ-উল-আযহার সময় চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।