০৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে গতকাল সোমবার সকালে পানিবদ্ধ একটি বাড়ীতে বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়ে ২ জন নিহত হয়েছে।

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২
  • 58

চট্টগ্রামে থেমে থেমে টানা বর্ষণ অব্যাহত আছে। রোববার দিবাগত রাতে টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। এ ছাড়া নগরীতে পানিবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২জন, পাহাড় ধসে এক শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল সোমবার সকালে পানিবদ্ধ একটি বাড়ীতে বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়ে ২ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ আব্দুল্লাহ খান লেইনের ‘খান হাউস’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- ওই ভবনের সুপারভাইজার আবু তাহের (৬৫) ও গাড়িচালক মো. আবুল হোসেন (৩৮)। পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান  জানান, টানা বৃষ্টিতে তিনতলা ভবনটির নিচতলা পানিমগ্ন ছিল। নিচতলায় কেউ ছিলেন না। সকালে তাহের ও হোসেন আইপিএস’র সংযোগ খুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন।পরে তাদের উদ্ধার করে নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ভবনের সিঁড়ির নিচে ছিল আইপিএস। পানির নিচে থাকা আইপিএস’র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন তারা। সংযোগ খোলার পর পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ভবনের বাসিন্দারা হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের টিম পুরো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাহেরকে সিঁড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে অতিবৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফের পাহাড়ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন হল। তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে রোববার (১৯ জুন) দিবাগত রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার গ্রিনভ্যালি আবাসিক এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।নিহত মো. রায়হান (১২) স্থানীয় ভাসমান চা দোকানি দীন মোহাম্মদের ছেলে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, গ্রিনভ্যালি আবাসিক মসজিদের পেছনে পাহাড়ের পাদদেশে দীন মোহাম্মদের একটি ভাসমান চা দোকান আছে। রাতে ওই দোকানে ঘুমিয়েছিল রায়হান। বৃষ্টির মধ্যে রাতের কোনো একসময় পাহাড়ধসে পড়ে দোকানের ওপর। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় রায়হান। ভোরে দীন মোহাম্মদ দোকান খুলতে গিয়ে এ ঘটনা দেখেন। স্থানীয়রা মিলে মাটি সরিয়ে রায়হানের লাশ উদ্ধার করেন।তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবার আগেই রায়হানের লাশ নিয়ে তার স্বজনরা গ্রামে বাড়ি লাকসামে চলে গেছেন বলে ওসি জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ,সাবেক এক যুবলীগ নেতা কয়েকবছর ধরে গ্রীণভ্যালী আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে প্রায়ই বৃষ্টিতে কাটা পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে।

এদিকে গত রোববার দিবাগত সারা রাত ও সোমবার বিকালে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়।এতে নগরীর বেশীরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।সোমবার সকাল ১০টার পর পানি নামলেও বিকালে বৃষ্টিতে আবার পানিমগ্ন হয়ে পড়ে নগরী। রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, কাপাশগোলা, কে.বি. আমান আলী রোড, রাহাওারপুল, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, মোল্লা পাড়া, পোর্ট কনেকটিং রোড, মুহুরী পাড়া, হাজী পাড়া, প্রর্বতক মোড়, মুরাদপুর, হালিশহরবড়পুল, ছোটপুল, হালিশহর, চান্দগাঁও, জিইসিমোড়, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, চাক্তাই, মিঞাখান নগর, রাজাখালী, পাথরঘাটা, মুরাদপুর, বায়েজীদ, মোহাম্মদপুর,  চান্দগাও  খাজারোড, হামজারবাগ, মোহাম্মদপুর,  নয়াবাজার বিশ্বরোড, রেয়াজউদ্দিন বাজার, তিন পোলের মাথা, হেমসেন লেন, জামালখান বাই লেন, ফিরিংগীবাজার, এয়াকুবনগর, মেহেদীবাগ, ওয়াসার মোড়, কাট্রলি, পাহাড়তলী, খুলশী ষোলশহর ২ নম্বরগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানির কারণে এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগ পোহায় সাধারণ মানুষ। অনেক বাড়ী,বাসায় পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায়    কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে গেছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জমে থাকা পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এরমধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে জোয়ারের পানি। জোয়ারের ফলে আগ্রাবাদ, বন্দর, ইপিজেডের বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে।বৃষ্টির কারণে ড্রেনগুলোতে পানির গ্রোত সৃষ্টি হয়েছে। নালা-নর্দমায় পলিথিন ও আর্বজনা জমে থাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় জমে আছে পানি।চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এদিকে, পানির কারণে চার দিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ আছে কাপাসগোলার অনেক বাসিন্দাদের ঘরে। সেখানের এক বাসিন্দা আফসানা বেগম জানান,শুক্রবারে বাসায় পানি ঢুকেছে, আর যেন নামছেই না। দিনে বালতি ভরে পানি বাইরে ফেলি। কিন্তু পানি পরিষ্কার করতে না করতেই আবার ঢুকছে। রান্নাবান্না বন্ধ। খাটের ওপর বসে রাত কাটাচ্ছি সবাই। কি যে অবর্ণনীয় কষ্টে আছি বলে বোঝানো যাবে না।

এদিকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বহাদ্দারহাটের বাড়ীও পানিবদ্ধ হয়ে পড়ে।  বহদ্দারহাটের বহদ্দারবাড়িতে মেয়রের দোতলা ভবনের নিচতলা, উঠান ও সামনের সড়ক প্রায় কোমরসমান পানিতে ডুবে ছিল।

আগের রাতে পানি ওঠে। এ নিয়ে চার দিন ধরে মেয়রের বাড়ি এলাকা পানিতে তলিয়েছে। মেয়রের বাড়িতে বারবার পানি ওঠার জন্য চাক্তাই খালসহ আশপাশে খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়কে দায়ী করে আসছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে রেখেছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না। তাই বারবার পানিবদ্ধতা হচ্ছে। এদিকে পতেংগা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৪১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে হাটহাজারী সংবাদদাতা মো: আকরামুল হক জানান, হাটহাজারীতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে আশপাশের এলাকা। এতে স্থানীয় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। হাটহাজারী মহাসড়কের বড় দীঘির পাড় ও হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কের মুন্সি মসজিদ এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায় কোমর পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেসব এলাকায় পানির কারণে কয়েক ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।উপজেলার শিকারপুর, বুড়িশ্চর, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা, গড়দুয়ারা, মেখল, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, ধলই, মির্জাপুর, ফরহাদাবাদ ও হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এছাড়া বিস্তীর্ণ এসব এলাকায় মৌসুমি ফসল ও খামার-পুকুরে থাকা মাছ, মৎস্য খামার, ২০-৩০টি গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে গেছে।

এদিকে রাউজান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজানে ৩টি কাঁচা বসতঘর অর্থাৎ মাটির গুদাম ধসে পড়ার ঘটনায় আশা দাশ নামে  ৮০ বছর বয়সী  এক বৃদ্ধা ও বৃত্তি দাশ নামে ৪০ বছর বয়সী  দুই নারী আহত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণবাগ পাড়ার গৌঙ্কিম দাশের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। আহত আশা দাশ জুনু দাশের স্ত্রী ও  বৃত্তি দাশ গৌঙ্কিম দাশের স্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন গৌঙ্কিম দাশ, মিন্টু দাশ, সিবু দাশ।স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারণে পানি বেড়ে ওই এলাকার একাধিক বসতঘরে প্রবেশ করেছে। এসময় তিনটি কাঁচা বসতঘর  ধসে পড়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে ৩শ’ রুপির গয়না ৬ কোটিতে বিক্রি করে মার্কিন নারীর সঙ্গে প্রতারণা।

চট্টগ্রামে গতকাল সোমবার সকালে পানিবদ্ধ একটি বাড়ীতে বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়ে ২ জন নিহত হয়েছে।

Update Time : ১১:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২

চট্টগ্রামে থেমে থেমে টানা বর্ষণ অব্যাহত আছে। রোববার দিবাগত রাতে টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। এ ছাড়া নগরীতে পানিবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২জন, পাহাড় ধসে এক শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল সোমবার সকালে পানিবদ্ধ একটি বাড়ীতে বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়ে ২ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ আব্দুল্লাহ খান লেইনের ‘খান হাউস’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- ওই ভবনের সুপারভাইজার আবু তাহের (৬৫) ও গাড়িচালক মো. আবুল হোসেন (৩৮)। পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান  জানান, টানা বৃষ্টিতে তিনতলা ভবনটির নিচতলা পানিমগ্ন ছিল। নিচতলায় কেউ ছিলেন না। সকালে তাহের ও হোসেন আইপিএস’র সংযোগ খুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন।পরে তাদের উদ্ধার করে নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ভবনের সিঁড়ির নিচে ছিল আইপিএস। পানির নিচে থাকা আইপিএস’র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন তারা। সংযোগ খোলার পর পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ভবনের বাসিন্দারা হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের টিম পুরো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাহেরকে সিঁড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে অতিবৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফের পাহাড়ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন হল। তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে রোববার (১৯ জুন) দিবাগত রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার গ্রিনভ্যালি আবাসিক এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।নিহত মো. রায়হান (১২) স্থানীয় ভাসমান চা দোকানি দীন মোহাম্মদের ছেলে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, গ্রিনভ্যালি আবাসিক মসজিদের পেছনে পাহাড়ের পাদদেশে দীন মোহাম্মদের একটি ভাসমান চা দোকান আছে। রাতে ওই দোকানে ঘুমিয়েছিল রায়হান। বৃষ্টির মধ্যে রাতের কোনো একসময় পাহাড়ধসে পড়ে দোকানের ওপর। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় রায়হান। ভোরে দীন মোহাম্মদ দোকান খুলতে গিয়ে এ ঘটনা দেখেন। স্থানীয়রা মিলে মাটি সরিয়ে রায়হানের লাশ উদ্ধার করেন।তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবার আগেই রায়হানের লাশ নিয়ে তার স্বজনরা গ্রামে বাড়ি লাকসামে চলে গেছেন বলে ওসি জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ,সাবেক এক যুবলীগ নেতা কয়েকবছর ধরে গ্রীণভ্যালী আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে প্রায়ই বৃষ্টিতে কাটা পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে।

এদিকে গত রোববার দিবাগত সারা রাত ও সোমবার বিকালে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়।এতে নগরীর বেশীরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।সোমবার সকাল ১০টার পর পানি নামলেও বিকালে বৃষ্টিতে আবার পানিমগ্ন হয়ে পড়ে নগরী। রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, কাপাশগোলা, কে.বি. আমান আলী রোড, রাহাওারপুল, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, মোল্লা পাড়া, পোর্ট কনেকটিং রোড, মুহুরী পাড়া, হাজী পাড়া, প্রর্বতক মোড়, মুরাদপুর, হালিশহরবড়পুল, ছোটপুল, হালিশহর, চান্দগাঁও, জিইসিমোড়, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, চাক্তাই, মিঞাখান নগর, রাজাখালী, পাথরঘাটা, মুরাদপুর, বায়েজীদ, মোহাম্মদপুর,  চান্দগাও  খাজারোড, হামজারবাগ, মোহাম্মদপুর,  নয়াবাজার বিশ্বরোড, রেয়াজউদ্দিন বাজার, তিন পোলের মাথা, হেমসেন লেন, জামালখান বাই লেন, ফিরিংগীবাজার, এয়াকুবনগর, মেহেদীবাগ, ওয়াসার মোড়, কাট্রলি, পাহাড়তলী, খুলশী ষোলশহর ২ নম্বরগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানির কারণে এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগ পোহায় সাধারণ মানুষ। অনেক বাড়ী,বাসায় পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায়    কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে গেছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জমে থাকা পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এরমধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে জোয়ারের পানি। জোয়ারের ফলে আগ্রাবাদ, বন্দর, ইপিজেডের বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে।বৃষ্টির কারণে ড্রেনগুলোতে পানির গ্রোত সৃষ্টি হয়েছে। নালা-নর্দমায় পলিথিন ও আর্বজনা জমে থাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় জমে আছে পানি।চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এদিকে, পানির কারণে চার দিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ আছে কাপাসগোলার অনেক বাসিন্দাদের ঘরে। সেখানের এক বাসিন্দা আফসানা বেগম জানান,শুক্রবারে বাসায় পানি ঢুকেছে, আর যেন নামছেই না। দিনে বালতি ভরে পানি বাইরে ফেলি। কিন্তু পানি পরিষ্কার করতে না করতেই আবার ঢুকছে। রান্নাবান্না বন্ধ। খাটের ওপর বসে রাত কাটাচ্ছি সবাই। কি যে অবর্ণনীয় কষ্টে আছি বলে বোঝানো যাবে না।

এদিকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বহাদ্দারহাটের বাড়ীও পানিবদ্ধ হয়ে পড়ে।  বহদ্দারহাটের বহদ্দারবাড়িতে মেয়রের দোতলা ভবনের নিচতলা, উঠান ও সামনের সড়ক প্রায় কোমরসমান পানিতে ডুবে ছিল।

আগের রাতে পানি ওঠে। এ নিয়ে চার দিন ধরে মেয়রের বাড়ি এলাকা পানিতে তলিয়েছে। মেয়রের বাড়িতে বারবার পানি ওঠার জন্য চাক্তাই খালসহ আশপাশে খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়কে দায়ী করে আসছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে রেখেছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না। তাই বারবার পানিবদ্ধতা হচ্ছে। এদিকে পতেংগা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৪১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে হাটহাজারী সংবাদদাতা মো: আকরামুল হক জানান, হাটহাজারীতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে আশপাশের এলাকা। এতে স্থানীয় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। হাটহাজারী মহাসড়কের বড় দীঘির পাড় ও হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কের মুন্সি মসজিদ এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায় কোমর পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেসব এলাকায় পানির কারণে কয়েক ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।উপজেলার শিকারপুর, বুড়িশ্চর, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা, গড়দুয়ারা, মেখল, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন, ধলই, মির্জাপুর, ফরহাদাবাদ ও হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এছাড়া বিস্তীর্ণ এসব এলাকায় মৌসুমি ফসল ও খামার-পুকুরে থাকা মাছ, মৎস্য খামার, ২০-৩০টি গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে গেছে।

এদিকে রাউজান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজানে ৩টি কাঁচা বসতঘর অর্থাৎ মাটির গুদাম ধসে পড়ার ঘটনায় আশা দাশ নামে  ৮০ বছর বয়সী  এক বৃদ্ধা ও বৃত্তি দাশ নামে ৪০ বছর বয়সী  দুই নারী আহত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণবাগ পাড়ার গৌঙ্কিম দাশের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। আহত আশা দাশ জুনু দাশের স্ত্রী ও  বৃত্তি দাশ গৌঙ্কিম দাশের স্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন গৌঙ্কিম দাশ, মিন্টু দাশ, সিবু দাশ।স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণের কারণে পানি বেড়ে ওই এলাকার একাধিক বসতঘরে প্রবেশ করেছে। এসময় তিনটি কাঁচা বসতঘর  ধসে পড়েছে।