০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামে বসেই দু’লাখ টাকা আয় করছেন তৃষ্ণা দেও

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৩১:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২
  • 97

গ্রামে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ থাকে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। ইন্টারনেটের গতিও দুর্বল। সম্বল বলতে নিজের সাদামাটা একটি কম্পিউটার।

আর তা দিয়েই মাসে প্রায় দু’লাখ টাকা আয় করছেন শেরপুরের গারো সম্প্রদায়ের একমাত্র ফ্রি-ল্যান্সার তৃষ্ণা দেও। জানান, অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েও ফিরিয়ে দেয়ার গল্প।

শেরপুরের শেষ গ্রাম- কাকরকান্দি। গারোপল্লীর তৃষ্ণা দেও’র দিন শুরু হয় গ্রামের আর দশটা মেয়ের মতই। ভোরের আলো ফুটতেই, উঠোনজুড়ে ব্যস্ততা।

তবে কিছু পরে এই তৃষ্ণাই হয়ে ওঠেন তথ্যপ্রযুক্তির পেশাজীবী এক নারী। নিজের কম্পিউটারটি খুলে ডুবে যান গ্রাফিক্স ডিজাইনের জগতে।

২০১৯ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে এমবিএ শেষ করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন তৃষ্ণা দেও।

দিও। তবে কাজের ধরনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে যান কাকরকান্দিতে। এ সময় এক পরিচিতের কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা।

দেরি না করে ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে। প্রতি শুক্র ও শনিবার গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে।

প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রায় ছয় মাস পর তৃষ্ণা ৮৬ ডলারের একটি কাজ পান। কাজের মান ভালো হওয়ায় সেই গ্রাহকের মাধ্যমে আরও সাতটি কাজ পেয়ে যান তিনি।

সেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের বয়স ছয় মাসও হয়নি, অথচ এই ছোট্টঘরে বসেই এখন আয় করছেন প্রায় দুই লাখ টাকা।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে করছেন বিভিন্ন পোস্টারের নকশা, ভিজিটিং কার্ড, রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকা, ফুডক্যাটালগ ডিজাইনসহ অনেক কিছু।

তৃষ্ণা বলেন, শুরুতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতে সমস্যা হয়েছিল। মনে আছে, বাংলাদেশের এক গ্রাহক আমাকে তাঁর একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়ে আমার। ভালো মানের কাজের অর্ডার পেতে থাকি। ফলে আয়ের পরিমাণও বাড়ে।

তৃষ্ণা জানান, বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট কাঠামো ভালো হলে মাসে দুই লাখ টাকা আয় হবে।

তৃষ্ণার বড় উৎসাহ তার বাবা। আর বাবা রবার্ট রেমা জানান, তৃষ্ণার মাধ্যমে এই পেশা নিয়ে আগ্রহ ছড়িয়েছে গোটা সম্প্রদায়ের মধ্যে।

এরিমধ্যে নিজের কাজের পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদেরও ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছেন। ভবিষ্যতে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চান তৃষ্ণা দেও।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে ৩শ’ রুপির গয়না ৬ কোটিতে বিক্রি করে মার্কিন নারীর সঙ্গে প্রতারণা।

গ্রামে বসেই দু’লাখ টাকা আয় করছেন তৃষ্ণা দেও

Update Time : ০৩:৩১:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২

গ্রামে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ থাকে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। ইন্টারনেটের গতিও দুর্বল। সম্বল বলতে নিজের সাদামাটা একটি কম্পিউটার।

আর তা দিয়েই মাসে প্রায় দু’লাখ টাকা আয় করছেন শেরপুরের গারো সম্প্রদায়ের একমাত্র ফ্রি-ল্যান্সার তৃষ্ণা দেও। জানান, অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েও ফিরিয়ে দেয়ার গল্প।

শেরপুরের শেষ গ্রাম- কাকরকান্দি। গারোপল্লীর তৃষ্ণা দেও’র দিন শুরু হয় গ্রামের আর দশটা মেয়ের মতই। ভোরের আলো ফুটতেই, উঠোনজুড়ে ব্যস্ততা।

তবে কিছু পরে এই তৃষ্ণাই হয়ে ওঠেন তথ্যপ্রযুক্তির পেশাজীবী এক নারী। নিজের কম্পিউটারটি খুলে ডুবে যান গ্রাফিক্স ডিজাইনের জগতে।

২০১৯ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে এমবিএ শেষ করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন তৃষ্ণা দেও।

দিও। তবে কাজের ধরনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে যান কাকরকান্দিতে। এ সময় এক পরিচিতের কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা।

দেরি না করে ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে। প্রতি শুক্র ও শনিবার গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে।

প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রায় ছয় মাস পর তৃষ্ণা ৮৬ ডলারের একটি কাজ পান। কাজের মান ভালো হওয়ায় সেই গ্রাহকের মাধ্যমে আরও সাতটি কাজ পেয়ে যান তিনি।

সেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের বয়স ছয় মাসও হয়নি, অথচ এই ছোট্টঘরে বসেই এখন আয় করছেন প্রায় দুই লাখ টাকা।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে করছেন বিভিন্ন পোস্টারের নকশা, ভিজিটিং কার্ড, রেস্টুরেন্টের খাবারের তালিকা, ফুডক্যাটালগ ডিজাইনসহ অনেক কিছু।

তৃষ্ণা বলেন, শুরুতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতে সমস্যা হয়েছিল। মনে আছে, বাংলাদেশের এক গ্রাহক আমাকে তাঁর একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়ে আমার। ভালো মানের কাজের অর্ডার পেতে থাকি। ফলে আয়ের পরিমাণও বাড়ে।

তৃষ্ণা জানান, বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট কাঠামো ভালো হলে মাসে দুই লাখ টাকা আয় হবে।

তৃষ্ণার বড় উৎসাহ তার বাবা। আর বাবা রবার্ট রেমা জানান, তৃষ্ণার মাধ্যমে এই পেশা নিয়ে আগ্রহ ছড়িয়েছে গোটা সম্প্রদায়ের মধ্যে।

এরিমধ্যে নিজের কাজের পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদেরও ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছেন। ভবিষ্যতে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চান তৃষ্ণা দেও।