গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে আরব দেশগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করছে যে যুদ্ধবিরতি হলে হামাস পুনরায় সংগঠিত হবে, এবং আবারো সাতই অক্টোবরের মতো হামলা চালাতে পারে সংগঠনটি। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন গাজায় কোন যুদ্ধবিরতি চায় না। তবে দেশটি যুদ্ধে মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইল সফরের পর শনিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে লেবানন, কাতার, জর্ডান, মিশর, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে আরব নেতাদের তোপের মুখে পড়েন ব্লিঙ্কেন। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, ‘মানুষ হিসাবে, আমরা এই হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারি না। …এই হত্যাকাণ্ড আর ধ্বংসযজ্ঞকে আমরা কীভাবে ন্যায্য বলে মেনে নিতে পারি? এটা কোন আত্মরক্ষা হতে পারে না।’ সাফাদি সতর্ক করে বলেন, ‘কোন অজুহাতে এই হামলাকে ন্যায়সঙ্গত করা যাবে না এবং এটি ইসরাইলে নিরাপত্তা আনবে না, ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে না।’
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি গাজায় কোনো শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সাথে আলোচনার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিমুখী আচরণ থেকে সরে আসতে বলেন। তবে ব্লিঙ্কেন যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে যুদ্ধে মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তার মতে, এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি অর্জনের বিষয়ে আরব নেতাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত না হলেও তাদের লক্ষ্য একই। ইসরাইলের সাথে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করতে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সাথেও দেখা করেছেন। ওই সীমান্ত এলাকায় হেজবুল্লাহ এবং ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মধ্যে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, গতকাল দুই দিনের সফরে তুরস্কে গিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের সাথে সংঘাতের বিষয়ে তার আলোচনার কথা রয়েছে। ব্লিঙ্কেন মূলত তথাকথিত ‘মানবিক বিরতি’র বিষয়ে আরবের নেতাদের সাথে কাজ করছেন এবং শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছেন যে এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
ফের শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের হামলা, নিহত ৫১ : এবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের মাগাজি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিনে গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরাইল দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে এবং সর্বশেষ শনিবার রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটল।
এর আগে শনিবার রাতের এই হামলায় দুটি আবাসিক বাড়ি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গিয়েছিল। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা বলেছে, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান আল-মাগাজি ক্যাম্পের সাম’আন পরিবারের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালালে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া হামলায় আরও বহু মানুষ আহতও হয়েছেন। বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, ইসরাইলি বোমা হামলায় ওই বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ি ও অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার গাজা ভূখণ্ডের বুরেজ শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। গাজা সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র সেসময় বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্য গাজার এই শিবিরে আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু লোক চাপা পড়েন। বুরেজে বোমা হামলার পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো জাবালিয়া ক্যাম্পেও হামলা চালায় ইসরাইল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাবালিয়ায় ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ১৯৫ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ১২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
হামাসের হাতে আটক ৬০ বন্দি নিখোঁজ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামাসের হাতে আটক ৬০ জনেরও বেশি বন্দি নিখোঁজ হয়ে গেছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার কারণে নিখোঁজ হয়েছেন তারা। হামাসের সশস্ত্র শাখা একথা জানিয়েছে। এর আগে গত মাসের শেষের দিকে হামাস বলেছিল, গাজায় ইসরাইলি হামলায় তাদের হাতে বন্দিদের মধ্যে আনুমানিক ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
ইজ এল-দ্বীন আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা হামাসের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে বলেছেন, নিখোঁজ ৬০ জন ইসরাইলি বন্দির মধ্যে ২৩ জনের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। তিনি বলেন, গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের ক্রমাগত নৃশংস আগ্রাসনের কারণে আমরা কখনোই তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব না বলে মনে হচ্ছে। এদিকে হামাসের হাতে আটক বন্দিদের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্র গাজার ওপর নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বলে গত বৃহস্পতিবার দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা সহ্য করা যাচ্ছে না : ইসরাইল-হামাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিয়ে মুখ খুললেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তেল আভিভে হামাসের হামলার কোনও ব্যাখ্যা হয় না বলেই মত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তবে খোঁচা দিয়ে ওবামার মন্তব্য, ‘সকলের হাতেই রক্ত। কারও হাতই পরিষ্কার নয়।’
এক মার্কিন পডকাস্টে অংশ নিয়ে ছিলেন বারাক ওবামা। সেখানেই ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বলেন, ‘হামাস যা করেছে তা মারাত্মক। এর পিছনে কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। তবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বর্তমানে যা হচ্ছে তা সহ্য করা যায় না। এখন যারা মারা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে হামাসের কাজের কোনও যোগ নেই।’ এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকৃত সত্যটা জানা দরকার বলেও মত ওবামার। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধান করার আগে এটা মানতে হবে যে কারও হাতই পরিষ্কার নয়।’ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনে আমেরিকাকে গঠনমূলক পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছেন সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট। সূত্র : এপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স।