রাজশাহী থেকে নাটোর শহরের হাফরাস্তা এলাকায় প্রেমিককে বিয়ে করতে এসে গণধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী শহরের একটি কেন্দ্র থেকে অংশ নিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তার মা জানিয়েছেন, আটক ৫ জনসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে বুধবার তিনি নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহম্মেদ জানিয়েছেন, আটকদের বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে মেয়েটির বড়বোন জানান, এত বড় ঘটনার পর পরীক্ষায় অংশ নিলেও শারীরিক ও মানসিক কারণে তার পরীক্ষা ভালো হয়নি।
মামলায় বাদী বলেন, তার মেয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার একটি ব্যবহারিক খাতা স্বাক্ষর করানোর জন্য স্কুলে এসে আর ফিরে না যাওয়ায় তারা সন্ধ্যার পর রাজশাহীর মতিহার থানায় জিডি করেন। কিছু সময় পর একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে তার মেয়ে তাদের জিম্মায় আছে জানিয়ে দুই দফায় ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে নাটোরে এসে জানতে পারেন মেয়ের বন্ধু আবির হোসেনের সঙ্গে সে নাটোরে আছে।
তিনি জানান, আবিরের বন্ধু মুহিম তাদের নাটোরের কথিত স্বামী-স্ত্রী নূরুননাহার মিথিলা ও মৃদুল আহম্মেদের হাফরাস্তায় ভাড়া বাসায় রাতযাপনের জন্য নিয়ে যায়। পরে নূরুননাহার মিথিলা নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকার পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী আফজাল হোসেনের ছেলে রনি, মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে রকি ও আব্দুল মজিদের ছেলে সোহানকে ডেকে আনে। তারা টাকা দাবি করে মেয়ের বন্ধু আবিরকে আটকে মারপিট করে। পরে রকি ও রনি তার মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করে এবং সোহান ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ও ছবি তোলে। টাকা না দিলে এসব ভিডিও এবং ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
তিনি আরও জানান, একপর্যায়ে তার মেয়ে ও মেয়ের বন্ধু ছাড়া পেয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ নূরুননাহার মিথিলা ও মৃদুল আহম্মেদের বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তাদের এবং পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে বাকি তিনজনকে আটক করে। এ ঘটনায় আটক ৫ জন ছাড়াও আবিরের বন্ধু মুহিম এবং শহরের কানাইখালি এলাকার শ্রী তুষার কুমারের ছেলে শ্রী সুজন কুমারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহম্মেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান, পলাতক মুহিম ও সুজন মিথিলা ও মৃদুলের খদ্দের ধরার দালাল। এ ঘটনাতেও ঘর ভাড়া করে দেওয়ার নামে তারা সেই কাজটি করেছে। এ কারণে অন্য পাঁচজনের সঙ্গে তাদের দুইজনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, আটকদের আদালতে পাঠানো হয়। নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এএসএম গোলজার রহমান অভিযুক্তদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় পুলিশ আটকদের বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে পরবর্তীতে শুনানি শেষে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণে সহযোগিতা করায় আটক জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার আমতলী গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে মৃদুল আহম্মেদ ও তার স্ত্রী পরিচয়দানকারী নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা গ্রামের নূরুল ইসলামের মেয়ে নূরুননাহার মিথিলার বিরুদ্ধে তাদের ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন থেকে অন্য নারী পুরুষকে অসামাজিক কাজ চালানোর অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এলাকার অনেক নামি দামি মানুষকেও এই দম্পতি প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফাঁসিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি চলছে।
Leave a Reply