০১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এএসআইকে সরওয়ার কাবেরী , “তোর অবস্থা ওসি প্রদীপের মতো হবে”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 16

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টে অন্যের খতিয়ানি জমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। তার নেতৃত্বে দখলদার চক্র কোন বাঁধা তোয়াক্কা না করে রাত-দিন সমান তালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দখল বন্ধে আদাতলে গিয়ে ১৪৪ ধারার আদেশ নেয়ায় জমির খতিয়ানি মালিককে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

ডায়রি ও ১৪৪ ধারার নির্দেশনা পেয়ে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এএসআইকে চরম ভাবে বকাঝকা করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

পুলিশকে গুন্ডা বাহিনীসহ নানা অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি করে তার দখলকান্ড দেখতে আসা এএসআইকে ওসি প্রদীপের পরিণতি করে ছাড়বেন বলে হুশিয়ারি দেন কাবেরী। এমনটি জানিয়েছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ।

সকল বিষয় নিয়ে চকরিয়া উপজেলার ভেওলা ইউনিয়নের মাইজপাড়ার বাসিন্দা নুরুল আবছার গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন (নং-৮০৬/২০২২)।

জিডিতে দাবী করা হয়, আদালতের ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরও তার মায়ের খতিয়ানভূক্ত জায়গা জোরপূর্বক দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাবেরী ও তার সহযোগীরা। আবছার ও তার ভাই জামাল মার্কেট নির্মাণে বাঁধা দিতে গেলে আ’লীগ নেত্রী কাবেরী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদেরকে গুলি করে মারা হুমকি দেন।

জিডিতে অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমলের বোন নাজনিন সারওয়ার কাবেরী (৪০), মহেশখালী পৌরসভা মধ্যম গোরকঘাটার নুরুল আমিনের ছেলে আতা উল্লাহ সিদ্দীকি (৪৫), চকরিয়ার ডুলহাজারা ইউনিয়নের কালু মেম্বারের ছেলে কহিল মাহমুদ (৪২) ও মো. কায়েস (৩৮)।

বিরোধপূর্ণ জমির লাগোয়া অংশের মার্কেট মালিককেও একইভাবে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে কাবেরীসহ একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একইরাতে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৭৭৩/২২) করেছেন ওবায়দুল হোছাইন নামে কক্সবাজার পৌরসভার এক ব্যক্তি।

তিনি উল্লেখ করেন, আমার মার্কেটও একই দাগের জমিতে। তাই আমাকে বলেছেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে জমি খালি করে চলে যেতে। তা না হলে গুলি করে বা কুপিয়ে মারবে।

সূত্র মতে, কলাতলীর ঝিলংজা মৌজার সুগন্ধা এলাকায় চকরিয়ার ভেওলা এলাকার মৃত আবুল ফজলের স্ত্রী সায়েরা খাতুনের নামে (জিডি কারি নুরুল আবছারের মা) বিএস-২০০৩ খতিয়ানে এক একর ১০ শতক জমি নামজারি আছে। সেই জমি মহেশখালীর আতা উল্লাহ সিদ্দীকিরা পণমূলে কিনেছে দাবি করে নাজনীন সরোয়ার কাবেরীকে সাথে নিয়ে দখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কক্সবাজার জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে নানা অসহায় মানুষের পক্ষ হয়ে ফেসবুক লাইভ ও মানববন্ধন করে সমস্যা সমাধান করায় ইতোমধ্যে কাবেরীকে মানবিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গণ্য করেন সাধারণ মানুষ। এ সুবিধাকে কাজে লাাগিয়ে আতা উল্লাহ তাকে হাত করেন। কিন্তু জমির দখল নিয়ে দেওয়ানি আদালতে একাধিক মামলা চলমান। হোটেল-মোটেল জোনের জমির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় যে যার মতো জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে আছে। বছর খানেক আগে গোলাগুলির পর একপক্ষ গুলিবিদ্ধ হলে যে যার মতো চুপচাপ ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি গ্রুপগুলো আবারও বিরোধীয় জমিতে এসে স্থাপনা গড়া শুরু করলে এডিএম কোর্টে ১৪৪ ধারার আবেদন করে নিষেধাজ্ঞা নেয় আবছার গ্রুপ। তা অমান্য করে কাবেরী উল্টো পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পর্যটন এলাকায় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবার আশংকা করেন স্থানীয়রা।

ঘটনাস্থলে যাওয়া কক্সবাজার সদর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোশাররফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ওসি স্যারের আদেশে গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকার বিরোধীয় জায়গায় যায়। গিয়ে দেখি কিছু লোক কাজ করছে। এখানে পৌঁছার সাথে সাথেই কাবেরী ম্যাডাম এগিয়ে এসে আমি কেন সেখানে গেছি এ নিয়ে গালমন্দ করেন। পুলিশকে গুন্ডাবাহিনীসহ নানা কটুবাক্য করে আমাকে এবং আমার উর্ধতনদের ওসি প্রদীপের পরিণতি করাবেন বলে শাসান। আমি তৎক্ষণাৎ আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি অবহিত করেছি।

অভিযোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরোয়ার কাবেরী বলেন, রাত নয়টায় পুলিশ আমার কেনা জমিতে এসে অনুমতি না নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আমাদের প্রতিপক্ষ লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন এবং যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া এসেছিলেন। তাই এসব হয়রানির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করবো বলেছি। পুলিশ অনেক অন্যায় কাজ করে-বেশ কিছুর স্বাক্ষি আমি। বলতে গেলে অনেক কিছু বলা যাবে।

এসব বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইনারা সবাই দায়িত্ব সচেতন। লোভের কারণে ইনারা যদি আদালতের আদেশ অমান্য করেন- সেটা চরম দুঃখজনক। উভয় পক্ষকে আদালতে আদেশ মানতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

এএসআইকে সরওয়ার কাবেরী , “তোর অবস্থা ওসি প্রদীপের মতো হবে”

Update Time : ০৯:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টে অন্যের খতিয়ানি জমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। তার নেতৃত্বে দখলদার চক্র কোন বাঁধা তোয়াক্কা না করে রাত-দিন সমান তালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দখল বন্ধে আদাতলে গিয়ে ১৪৪ ধারার আদেশ নেয়ায় জমির খতিয়ানি মালিককে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

ডায়রি ও ১৪৪ ধারার নির্দেশনা পেয়ে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এএসআইকে চরম ভাবে বকাঝকা করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

পুলিশকে গুন্ডা বাহিনীসহ নানা অশ্রাব্য ভাষায় কটুক্তি করে তার দখলকান্ড দেখতে আসা এএসআইকে ওসি প্রদীপের পরিণতি করে ছাড়বেন বলে হুশিয়ারি দেন কাবেরী। এমনটি জানিয়েছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ।

সকল বিষয় নিয়ে চকরিয়া উপজেলার ভেওলা ইউনিয়নের মাইজপাড়ার বাসিন্দা নুরুল আবছার গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন (নং-৮০৬/২০২২)।

জিডিতে দাবী করা হয়, আদালতের ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরও তার মায়ের খতিয়ানভূক্ত জায়গা জোরপূর্বক দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাবেরী ও তার সহযোগীরা। আবছার ও তার ভাই জামাল মার্কেট নির্মাণে বাঁধা দিতে গেলে আ’লীগ নেত্রী কাবেরী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদেরকে গুলি করে মারা হুমকি দেন।

জিডিতে অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমলের বোন নাজনিন সারওয়ার কাবেরী (৪০), মহেশখালী পৌরসভা মধ্যম গোরকঘাটার নুরুল আমিনের ছেলে আতা উল্লাহ সিদ্দীকি (৪৫), চকরিয়ার ডুলহাজারা ইউনিয়নের কালু মেম্বারের ছেলে কহিল মাহমুদ (৪২) ও মো. কায়েস (৩৮)।

বিরোধপূর্ণ জমির লাগোয়া অংশের মার্কেট মালিককেও একইভাবে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে কাবেরীসহ একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একইরাতে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৭৭৩/২২) করেছেন ওবায়দুল হোছাইন নামে কক্সবাজার পৌরসভার এক ব্যক্তি।

তিনি উল্লেখ করেন, আমার মার্কেটও একই দাগের জমিতে। তাই আমাকে বলেছেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে জমি খালি করে চলে যেতে। তা না হলে গুলি করে বা কুপিয়ে মারবে।

সূত্র মতে, কলাতলীর ঝিলংজা মৌজার সুগন্ধা এলাকায় চকরিয়ার ভেওলা এলাকার মৃত আবুল ফজলের স্ত্রী সায়েরা খাতুনের নামে (জিডি কারি নুরুল আবছারের মা) বিএস-২০০৩ খতিয়ানে এক একর ১০ শতক জমি নামজারি আছে। সেই জমি মহেশখালীর আতা উল্লাহ সিদ্দীকিরা পণমূলে কিনেছে দাবি করে নাজনীন সরোয়ার কাবেরীকে সাথে নিয়ে দখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কক্সবাজার জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে নানা অসহায় মানুষের পক্ষ হয়ে ফেসবুক লাইভ ও মানববন্ধন করে সমস্যা সমাধান করায় ইতোমধ্যে কাবেরীকে মানবিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গণ্য করেন সাধারণ মানুষ। এ সুবিধাকে কাজে লাাগিয়ে আতা উল্লাহ তাকে হাত করেন। কিন্তু জমির দখল নিয়ে দেওয়ানি আদালতে একাধিক মামলা চলমান। হোটেল-মোটেল জোনের জমির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় যে যার মতো জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে আছে। বছর খানেক আগে গোলাগুলির পর একপক্ষ গুলিবিদ্ধ হলে যে যার মতো চুপচাপ ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি গ্রুপগুলো আবারও বিরোধীয় জমিতে এসে স্থাপনা গড়া শুরু করলে এডিএম কোর্টে ১৪৪ ধারার আবেদন করে নিষেধাজ্ঞা নেয় আবছার গ্রুপ। তা অমান্য করে কাবেরী উল্টো পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পর্যটন এলাকায় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হবার আশংকা করেন স্থানীয়রা।

ঘটনাস্থলে যাওয়া কক্সবাজার সদর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোশাররফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ওসি স্যারের আদেশে গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকার বিরোধীয় জায়গায় যায়। গিয়ে দেখি কিছু লোক কাজ করছে। এখানে পৌঁছার সাথে সাথেই কাবেরী ম্যাডাম এগিয়ে এসে আমি কেন সেখানে গেছি এ নিয়ে গালমন্দ করেন। পুলিশকে গুন্ডাবাহিনীসহ নানা কটুবাক্য করে আমাকে এবং আমার উর্ধতনদের ওসি প্রদীপের পরিণতি করাবেন বলে শাসান। আমি তৎক্ষণাৎ আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি অবহিত করেছি।

অভিযোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরোয়ার কাবেরী বলেন, রাত নয়টায় পুলিশ আমার কেনা জমিতে এসে অনুমতি না নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আমাদের প্রতিপক্ষ লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন এবং যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া এসেছিলেন। তাই এসব হয়রানির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করবো বলেছি। পুলিশ অনেক অন্যায় কাজ করে-বেশ কিছুর স্বাক্ষি আমি। বলতে গেলে অনেক কিছু বলা যাবে।

এসব বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইনারা সবাই দায়িত্ব সচেতন। লোভের কারণে ইনারা যদি আদালতের আদেশ অমান্য করেন- সেটা চরম দুঃখজনক। উভয় পক্ষকে আদালতে আদেশ মানতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।